আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশিকে কেবল প্রপোজ করতেই ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে হল....

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ফেরিতে নিশিদের সাথে দেখা হয়ে গেল । নিশির ছোট বোন ঐশী এতো জোরে একটা চিৎ‍কার দিল যে চারিপাশের মানুষ জন তাকিয়ে পরল । আমি খানিকটা লজ্জায় পরে গেলাম । -সুমন ভাইয়া ? আপনি ? আমি এমন একটা ভাব করলাম যে আমিও খুব অবাক হয়েছি । বললাম -তোমরা এখানে ? কোথায় যাচ্ছ ? -আমরাতো কুয়াকাটায় যাচ্ছি সবাই মিলে ? আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? যদিও আমি জানি ওরা সবাই মিলে কুয়াকাটা যাচ্ছে , কিন্তু এমন একটা ভাব করলাম যে আমি আরো অবাক হয়েছি ।

-আরে আমিও তো কুয়াকাটায় যাচ্ছি । -এটা যাচ্ছেন ? এই প্রশ্নটা করল নিশি । -হ্যা একাই ! -হঠাৎ‍ ... -না মানে এমনি । বহু দিন কোথাও যাওয়া হয় না তাই ভাবলাম একটু ঘুরে আসা যাক ! নিশি আর কিছু বলল না । কেমন একটু হাসল ।

তাহলে কি নিশি বুঝে ফেলল যে কেন আমি কুয়াকাটা যাচ্ছি ! -আচ্ছা সুমন সাহেব ! থাকুন ! কুয়াকাটায় দেখা হবে ! দুবোন চলে গেল । মনটা খানিকটা খারাপই হল । নিশি আর একটু থাকতো ! আর একটু কথা বলতো ! ওকে কি করে বোঝায় যে ঢাকার সব কাজ কারবার ফেলে আমি ওদের পিছু পিছু এসেছি কেবল নিশির জন্য ! সমুদ্র পাড়ে বসে ওয় সাথে গল্প করবো । দুজন সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাটবো । ওর হাতটা ধরে .... সুমন মিয়া অফ যাও ।

নিজের মনকে বললাম । একটু বেশি বেশি ভাবতাছো ! গাছে এখনও কাঠাল পাকে নাই আর তুমি গোফে তেল দিয়া বইসা আছো । কিন্তু আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে হাসল আমি নিশ্চিত ও কিছুতো আচ করতে পেরেছে । আর মেয়েরা এসব ব্যাপারে একটু টের পেয়েই যায় । তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কেন চলে গেল ? আর একটু কথা বললে কি এমন হত ! কিছুক্ষন পর দেখলাম দুবোন আবার হাজির ।

এবার সাথে ওদের বাবা রয়েছে । আমি সালাম দিলাম । নিশির বাবা বললেন -তুমিও নাকি কুয়াকাটায় যাচ্ছ ? -জি আঙ্কেল । -একাই যাচ্ছ ? জি ! -তা বাবা ঐশী জেদ ধরেছে যে তোমার সাথে যাবে । আসলে আমাদের গাড়ি একটু ছোটতো পাঁচ জন একটু চাপাচাপি হয়ে যায় ।

ওর একটু কষ্টই হচ্ছিল । তোমার যদি কোন ... -না না আঙ্কেল সমস্যা কেন থাকবে ? আমিতো একাই যাচ্ছি । ঐশী সাথে গেলে ওর সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে ! -তোমার কোন কষ্ট হবে না তো ? -সি আঙ্কেল কষ্ট কেন হবে ? আমি আগে জানলে তো ঢাকা থেকেই ঐশীকে সাথে নিয়ে আসতাম । হঠাৎ‍ ঐশী বলল -আব্বু আপুও আমাদের সাথে আসুক । আহা ! মনটাই খুশি হয়ে গেল ঐশীর কথা শুনে ।

বললাম -হ্যা আঙ্কেল নিশিও আসুক ! আপনারা দুজন গল্প করতে করতে যান । আন্টিও নিশ্চয় খুশি হবে । খানিকটা ভয় হল হয়তো আঙ্কেল রাজি হবে না । কিন্তু রাজি হয়ে গেলেন । ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন স্বামী স্ত্রীর একটু একা একা গল্প করতে তো মন চাইতেই পারে ।

যত বয়সই হোক না কেন এমন ইচ্ছা তো থাকতেই পারে । আর আঙ্কেল আমাকে যত ভাল জানুক তবুও একা ঐশীকে তো ছাড়তে চান না । দুবোন থাকলে তো আর কোন সমস্যা নাই । ফেরি যখন ঘাটে আসল আমাকে আর পায় কে ! কুয়াকাটা এখনও সাত আট ঘন্টার পথ, এই পুরোটা সময় নিশি একদম আমার পাশে থাকবে ! এটার থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে !! গাড়ী যখন স্টার্ট দেব দেখলাম ঐশী সামনের দরজা খুলল বসার জন্য । মনটা চাই ছিল নিশি ঐ খানটাতে বসুক ।

বসলে ভাল লাগতো ! আমার মনের কথাটা যেন নিশি চট করে বুঝে ফেলল । ঐশীকে বলল -ঐশী তুই পেছনে বয় ! -কেন ? -আমি সামনে বসব ! যদিও আমি চাচ্ছিলাম নিশি সামনে বসুক , তবে এটা বলাটা কেমন হয়ে যায় । তাই চুপ থাকলাম । নিশি বলল -শোন বেশি কথা বলবি না । যা বলছি শোন ।

তুই না আরাম করে বসতে চাচ্ছিলি । পেছনে দুসিট নিয়ে আরাম করে বস । যাক নিশিই সামনে বসল । একেবারে আমার পাশের সিটে ! কুয়াকাটা পর্যন্ত জানিটা সত্যি অনেক চমৎ‍কার হল । আমি যা ভেবেছিলাম তার থেকেও অনেক ভাল ।

ঐশীই বেশি কথা বলছিল কিন্তু নিশিও চুপ ছিল না । তারপর রাস্তার মাঝ খানে আমরা গাড়ি থামিয়ে আমরা চা খেলাম ডাবের পানি খেলাম ! আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি স্বর্গে আছি । প্রতিটা মুহুর্ত আমাকে সত্যি খুব আনন্দ দিচ্ছিল । বরিশাল পার হতেই ঐশী ঘুমিয়ে পরল । অনেকটা জার্নি করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে ! ঐশী ঘুমানোর পর কথা বার্তা একটু কমে এল কিন্তু নিশি টুকটাক কথা বলছিল ।

হঠাৎ‍ নিশি আমাকে প্রশ্ন করলো -আপনি কুয়াকাটা কেন এলেন ? -আমি ? এই তো ঘুরতে ! -কেবলই ঘুরতে ? না আমি এসেছি তোমার পিছন পিছন । কেবল তোমার জন্যই এসেছি । এই কথাটা বলতে খুব ইচ্ছা করলো কিন্তু কেন জানি বলতে পারলাম না । বললাম -হ্যা ঘুরতেই এলাম । অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয় না তাই ভাবলাম ... নিশি কেবল একটু হাসল ।

আরকিছু বলল না । হোটেলে পৌছাতে পৌছাতে একটু রাত হয়ে গেল গেল । পরদিন সারাদিনই বলতে গেলে ঘুমিয়ে কাটালাম । কিন্তু বিকেল বেলা বের হতে হল নিশিদের সাথে , সাগর পাড়ে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে । আঙ্কেল আর আন্টি আগে আগে হাটছিল ।

আমরা পেছনে । নিশি সমুদ্রের পাড়ে রাখা সি-চেয়ার গুলো দেখে বলল -এগুলোর উপর বসা যায় না ? -হুম যাবে না কেন ? -বসার জন্যই তো রাখা হয়েছে । নিশি বসে পড়ল । -আপু বসলে কেন ? হাটবে না ? -তুই হাট । আমার ভাল লাগছে না ।

আর এখান থেকেও সূর্যাস্ত দেখা যাবে । ঐশী আর কিছু বলল না । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -আপনিও ইচ্ছা করলে যেতে পারেন । মাথা খারাপ আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো । আমি বললাম -আমিও একটু বসি ।

আমারও হাটতে ভাল লাগছে না । ঐশী চলে যাবার পর নিশি কেন জানি হেসে উঠল । -হাসলে কেন ? -এমনি ! কেন হাসলে আমাকে ভাল দেখায় না ? আমি কোন উত্তর দেই না । নিশির আচরন আমার কাছে খুব অদ্ভুদ মনে হয় মাঝে মাঝে । একবার মনে হয় আমি যে ওকে পছন্দ করি এটা ও নিজে জানে এবং ও নিজে এটা পছন্দ করছে আর একবার মনে হয় এটা ও পছন্দ করছে না ।

নিশি আমাকে জিজ্ঞেস করল -আপনি কিন্তু সত্যি কথাটা বললেন না ? -কোন কথাটা ? -এই যে কেন এলেন এতো দুর ? আমি কিন্তু লক্ষ্য করেছি ঢাকা থেকে আসার পথে আপনার গাড়িটা সবসময় আমাদের পিছন পিছন ছিল । ইচ্ছা করলেই আপনি আগে চলে যেতে পারতেন কিন্তু যান নি । কারনটা বলবেন কি ? -তুমি জানো না কারনটা কি ? খানিকটা সাহস নিয়ে কথাটা বলে ফেললাম । নিশির আমার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । বলল -জানি ।

তবুও বলেন । -নিশি সব কথাটা কি মুখ ফুটে বলার দরকার আছে ? কিছু কথা বুঝে নিতে হয় । -আমি অত কিছু বুঝতে চাই না । আমি শুনতে চাই । নিশির কণ্ঠস্বর আর একটু দৃঢ় হল ।

মনে মনে বললাম এই হল সুযোগ । আজ বলতেই হবে । -আমি ... -সুমন ভাইয়া আমার একটা ছবি তুলে দেন না !! ঐশী ক্যামেরাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । নিশির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও অন্য দিকে তাকিয়ট আছে । হাহ!!! বলা হল না ।

ভাল সুযোগ ছিল । রাতে খানিকটা মন খারাপ নিয়েই ঘুমাতে গেলাম । আজ কিছু একটা নিশ্চয় হয়ে যেত ! আজ যদি ওকে প্রোপজ করতাম ও নিশ্চয় রাজি হয়ে যেত ! অন্তত ভাব চক্করে তো তাই মনে হচ্ছিল । কিন্তু ঐশী ! শালীর শালী আসার আর টাইম পেলি না । শালীর শালী !! অবশ্য ঐশী আমার শালীই হয় সম্পর্কে ! দেখি কালকে আবার চেষ্টা নিতে হবে ।

কিন্তু কে জানে কাল আবার সুযোগ আসবে কিনা । -এখনও ঘুমাচ্ছ ? -হুম । -উঠো জলদি । -কে ? এতো রাতে আবার কে উঠতে বলে আমাকে । ঘুমের ঘোরেই বিরক্ত লাগে ।

ফোন কেটে দেই । কিন্তু পর মুহূর্তেই ঘুম চটে যায় । কে ফোন দিল ? রিভিস কল চেক করে দেখি নিশি ? সময় দেখলাম পাঁচটার মত বাজে । অল্প অল্প আলো ফুটেছে কেবল । এতো সকালে নিশি কেন ফোন দিবে ? আর সব থেকে বড় কথা ও আমাকে তুমি করে কেন বলছে ? বলতে বলতে আবার ফোন এসে হাজির ।

-ফোট কেটে দিলে কেন ? -আসলে ঘুমের ঘোরে টের পাই নি । -তোমার ঘুম বের করছি ! পাঁচ মিনিটের মধ্যে হোটেলের সামনে হাজির হও । আমি আর কিছু বলি না । তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে হাজির হই । বাইরে হালকা শীত পরেছে তবে কুয়াশা নেই একদমই ।

আর চারিদিকটা এখনও অন্ধকার । দেখলাম সেই অন্ধকারের মধ্যেই আলো করে নিশি দাড়িয়ে আছে । পাতলা একটা চাদর জড়ানো গায়ে । আমি সামনে আসতেই বলল -এতোক্ষন লাগে ? -কই পাঁচ মিনিটের বেশিতো লাগে নি । -হয়েছে এসো ।

এই বলে নিশি হাটতে লাগল । আমার মনে কেন জানি একটু সন্দেহ হল । নিশি সত্যিই নিশি তো ? অন্য কিছু না । আমি খানিকটা সংকোচ নিয়ে ডাক দিলাম -নিশি । -হুম ।

-তুমি নিশিই তো ? -মানে ? কি বলছো ? -না এই সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙ্গালে , আমাকে তুমি করে বলছ , এমন বিহেব করছ যেন ... -যেন কি ? -না মানে ঠিক মেলাতে পারছি না । -শোন এতো কিছু মেলাতে হবে না । এখন জলদি চল । সূর্যোদয় দেখতে যাবো । হোটেলেই বাইরেই ভ্যান পেয়ে গেলাম ।

ভ্যানে যাওয়ার নিশি বলল -তোমার কি মনে হচ্ছে আমি নিশি না ? কোন পেত্নী ? যে তোমাকে ... এই কথা বলে খুব হাসতে লাগল । আমার সন্দেহ দুর হল । এই রকম সুন্দর করে কেবল নিশিই হাসতে পারে । যখন ভ্যান থেকে নামলাম তখন চারিদিক বেশ আলোকিত হয়ে গেছে । এখনই সূর্য উঠবে ।

পূর্ব দিগন্ত কেমন উজ্জল লালচে রং ধারন করেছে । নিশি ঐ দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি । আস্তে আস্তে সূর্য উঠছে আর চারিদিকের উজ্জলতা বাড়ছে । আর সেই আলো পরছে নিশির মুখের উপর । ক্ষনে ক্ষনে সেই আলো পরিবর্তন হচ্ছে ।

আর আমি তাকিয়েই আছি ওর মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে । কিছুক্ষন পর নিশির আমার দিকে তাকিয়ে বলল -আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন ? সূর্যোদয়ের দিকে তাকাও । -কি হবে ? -কি হবে মানে ? কুয়াকাটায় কেন এসেছে ? -আমিতো তোমাকে দেখতে এসেছি ! -আমিতো পালিয়ে যাচ্চি না । -সূর্যোদয়ও পালিয়ে যাচ্ছে না । নিশি যেন একটু খুশি হল আমার কথা শুনে ।

এই আবার সুযোগ এসেছে । আমি আরো খানিকটা সাহস যুগিয়ে নিশির হাতটা ধরলাম । বললাম -এই সূর্য যেমন পৃথিবীকে আলো দিয়ে বাচিয়ে রেখেছে, ওই ভাবে আমিও কেবল তোমার ভালবাসায় বাঁচতে চাই । আমাকে ভালবাসবে কি? নিশি দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এক ভাবে ।

কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করলাম ওর চোখে জল জমতে শুরু করেছে । সকালের শুভ্র সূর্য কিরন সেই জলে প্রতিফলিত হয়ে আশ্চার্য দূত্যি ছড়াচ্ছে ... ফেবু লিংক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।