আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশিকে প্রোপজ করে কি বিপদেই না পড়লাম !!!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -এই সুমন ! এই সুমন দাড়াও ! কে ডাকে ? আমি এদিক ওদিক তাকালাম । আশেপাসে হাজার খানেক লোকজন । কার দিকে তাকাবো ? অবশ্য কণ্ঠটা খুবই পরিচিত । আমি ঐ পরিচিত মুখটাকে দেখার জন্য আবারও এদিক ওদিক তাকালাম । কিন্তু কোথায় ? কোথাও দেখতে পেলাম না ওকে ! -এই সুমন ! দাড়াও বলছি ! আমি এবার শব্দের উৎস লক্ষ্য করে তাকালাম ।

সামনে দাড়িয়ে থাকা বাসটার থেকে মনে হল আমাকে ডাক দিলো । সত্যিই তাই । একটু ক্ষনের মধ্যে নিশির মুখটা দেখতে পেলাম । হাসি মুখ । আমার দিকে তাকিয়ে হাসল ।

তারপর হাসলো । হাত নেড়ে বলল -হাই !! আমিও হাত নাড়লাম । -হাই !! হাতের ইশারায় আমাকে দাড়াতে বলল । আমি বললাম -আরে নামতে হবে না । নামতে হবে না ।

কিন্তু নিশি আমার কথা শুনলো না । তাড়াহুড়া করে বাস থেকে নেমে পড়ল । আমার সামনে দাড়িয়ে আর একবার হাসি দিল । ভুবন ভূলানো হাসি । আমি খানিকটা অস্বস্তিতে পড়লাম ।

অবশ্য অস্বস্তির কারনও আছে । আজ রবি বার । ঠিক বৃহস্পতিবারে আমি ওকে প্রোপজ করেছিলাম । মুখে বলার ঠিক সাহস হয় নি । একটা চিঠি লিখে দিয়েছিলাম ।

গত বৃহস্পতিবারে যখন চিঠিটা দিয়েছিলাম ও বলল -কি এটা ? আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম - কিছু না । বাসায় নিয়ে পড় । নিশি হাসি মুখেই নিল । -এখন খুলবো না? -না না এখন না । বাসায় গিয়ে ! নিশি হাসলো ।

আর কিছু বলল না । তারপর দুদিন পার হয়ে গেছে । নিশি আমাকে একবারও ফোন দেয়নি । আমি ও দেই নি । আমি অনেকবার দিতে চেয়েচিলাম ।

কিন্তু কেন জানি দিতে পারি নি । বারবার মনে হয়েছে না জানি নিশি কি বলবে ? আমি ভেবেছিলাম ও নিজেই আমাকে ফোন করবে ! ভাবছিলাম ঐদিন রাতেই ও ফোন দিবে ! বলবে যে আমিও তোমাকে পছন্দ করি । কিন্তু সব কিছু তো আর আমি যেভাবে ভাববো ষেভাবে হবে না । নিশি আর ফোন করে নি । কাল পর্যন্ত আমি আশায় ছিলাম ।

কিন্তু আজ জানো সেটা আর বে না । তারমানে ও আমার প্রোপজ গ্রহন করছে না । অস্বস্তিটা বেড়েই চলছে । একবার মনে হল কি দরকার ছিল এমন একটা গাধামী করার । নিশির সাথে কি সহজ সম্পর্কই না ছিল ! দেখা হত ।

কথা হত । দিন তো খারাপ যাচ্ছিল না । তাহলে এতো তাড়াহুড়ার কি দরকার ছিল ? আর কয়দিন অপেক্ষা করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত !! এখন হয়তো আর কোনদিন ওর সাথে থিক মত কথাই বলতে পারবো না অস্বস্তির জন্য । বাস থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে এল ও হাসিমুখে । আমর অস্বস্তিটা আরো এক ধাপ বেড়ে গেল ।

বললাম -এখানে নামলে কেন? একবারে ক্যাম্পাসে গিয়ে নামতে ! -সমস্যা নাই ! বেশিতো দুর না । টোমার সাথে গল্প করতে করতে যাই । সমস্যা তো তোমার নাই । কিন্তু সমস্যাতো আমার । এখন আমি তোমার পাশাপাশি হাটবো কেমন করে ! বললাম - না মানে একটু হাটতে হবে তো !! -আহা!! হোক না !! সমস্যা তো নাই ।

তাই না? নাকি আমার পাশে হাটতে তোমার সমস্যা আছে ? -না সমস্যা থাকবে কেন ? কি যে বল না !! আমি হাসার চেষ্টা করলাম । নিশি কেমন চোখে যেন আমার দিকে তাকাল । তারপর হাসলো । ওর হাসি দেখে আমার মনটা আরো একটা কেমন করে উঠল । বার বার মনে হচ্ছিল নিশি যদি এখন চিঠির প্রসঙ্গ তোলে !! তাহলে লজ্জার সীমা থাকবে না ।

যদি বলে -আবির তোমার কাস থেকে আমি এটা আশা করি নি । আমি তোমাকে কেবল বন্ধু মনে করতাম । দুঃখের বিষয়টা এখানেই । মেয়েরা কেবল আমাকে বন্ধুই মনে করে । উপকারি বন্ধু ।

-এই নাস্তা করছো ? - না এখনো করি নি । ক্যান্টিনে গিয়ে করি ? -ঐখানে খুব ভীড় থাকে । ঢুকতে ইচ্ছা করে না । আসো এই হোটেল টাতে ঢুকি ! -চল । ওকে হোটেলে ঢুকে পড়লাম নাস্তা করার জন্য ।

কোনার দিকে একটা টেবিল নিলাম । নাস্তা আসতে আসতে নিশি আমাকে বলল -সুমন -বল । -আজকে একটা বিশেষ দিন জানো ? - কি বিশেষ দিন ? -এখন বলবো না । পরে । -পরে কেন? এখনই বল ।

-না এখন বললে মজা নষ্ট হয়ে যাবে । পরে । না জানি কি বলবে । আমার মনের ভীতর কু ডাকতেই থাকে । বারবার ঐ একই কথাই মনে হতে থাকে ।

কি দরকার ছিল ? কি দরকার ছিল ওকে প্রোপজ করার । আজ নিশিটাও কেমন জানি রহস্যময় আচরন করছে । আগে তো আমার সাথে এমন করে কথা বলতো না । যা মনে আসে বলে ফেলতো । হাসতো আমাকে হাসাতো ।

আমিও ওর সাথে মজা করতাম । কিন্তু আজ কিছুই করতে পারছি না । মোট কথা ওর সাথে সহজই হতে পারছ না । মোটামুটি চুপচাপই নাস্তা খেলাম দুজনে । তবে নাস্তা খাওয়ার সময় দেখলাম ও বারবার আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে ।

আর কেমন একটা অদ্ভুদ হাসির রেখা ফুটে উঠছে ওর মুখে । ঐ হাসির রেখটাই আমার অস্বস্তিটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে । ক্যাম্পাসে ঢুকতে ঢুকতে নিশি বলল -আজ ক্লাস কখন শেষ ? -আজ একটু দেরি হবে । -কত দেরি ? -এই তিনটা ! -এতো দেরি ?? - হুম এক্সেম আছে । -ও ! ওকে খনিকটা হটাশ মনে হল ।

আমি বললাম -তুমি বাসায় চলে যেও কেমন ! কাল কথা হবে আবার । এই বলে আমি ডিপার্টমেন্টের দিকে হাটা দিলাম । ও চলে গেল ওর ডিপার্টমেন্টের দিকে । আসলে আমি চাইছিলাম ওর সাথে আর আমার দেখা না হোক ! খুব লজ্জা লাগছিল ওর সামনে দাড়াতে ! ছি! কি লজ্জার একটা বিষয় !! ওকে কেন যে প্রোপজ করতে গেলাম ! নিশি সব সময় আমাকে বলতো যে এই ঢাকা শহরে আমি নাকি ওর সব থেকে ভাল বন্ধু । সব থেকে কাছের মানুষ ।

তাই ও সব সময় আমার সাথে সব কিছু শেয়ার করতো । আর আমি কি করলাম !!! গাধার মত ওকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়া বসলাম !! কি এমনটা প্রয়োজন ছিল ! নিশি কখনই আমাকে ঐ রকম কিছু ইঙ্গিত দেই নি । ভার্সিটিতে আসতো আমার সাথে দেখা করতো । আড্ডা মারতো এই । তবে এটা সত্যি যে আমি ছাড়া ওর আর কোন ভাল বন্ধু নেই ।

নেই মানে ওকে আর কখনও অন্য কারো সাথে আমি কথা বলতে দেখি নি । এর যা কথা বার্তা সব কিছু আমাকে ঘিরেই । একেবারে ভার্সিটির ভর্তির প্রথম দিন থেকেই । ওর সাথে পরিচয় হয় খানিকটা অদ্ভুদ ভাবেই । ঐ দিন ভর্তির শেষ দিন ছিল ।

টাকা পয়শা ব্যাংকে জমা দিয়ে যখন বের হব ঠিক তখন দেখলাম একটা মেয়ে ব্যাংকের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে চুপচাপ । এমনি সাধারন ভাবেই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম । ঠিক তখনই মেয়েটার চোখের দিকে আমার দৃষ্টি গেল । কি মায়াময় একটা চোখ ! আর ঐ মায়াময় চোখদুটোতে পানি টলমল করছে । যে কোন সময় পানি গড়িয়ে পড়বে ।

কৌতুহল কিছুতেই দমাতে পারলাম না । কাছে গিয়ে বললাম -কি হয়েছে ? মেয়েটা আমাকে একবার দেখল । একবার মনে হল হয়তো বলবে না । কিন্তু একটা পর মুখ খুলল । যা বলল তার সারমর্ম হল আজ টাকা জমা দেবার শেষ সময় ।

কিন্ত বাসে আসার সময় ওর ব্যাগ হারিয়ে গেছে । ব্যাগের ভিতর ওর মোবাইল আর ভর্তি ফি ছিল ! বলতে বলতে মেয়েটা চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল । আমি বললাম -ঢাকায় কোন আত্মীয় আছে ? মেয়েটা মাথা নাড়াল । আমি বললাম -বাসায় ফোন কর আমার মোবাইল দিয়ে ? -বাসায় ফোন করে লাভ নাই । আজকের মধ্যে টাকা পাঠানো সম্ভব হবে না ।

মেয়েটা নিরবে কাঁদতে লাগল । আমার কেন জানি খুব মায়া লাগলো । বুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে এসব ঝামেলায় নিজেকে জড়ানোর কোন দরকারই নাই । কিন্তু মন সাই দিলো না কিছুতেই । মেয়েটাকে ছেড়ে আসতে পারলাম না কিছুতেই ।

উপকার করলামই! প্রথম প্রথম ঢাকায় এসেছি বলে বাবা বেশ মোটা অংকের টাটাই দিয়ে ছিল । মেয়েটার টাকা জমা দিয়ে দিলাম । ঐ দিনই জানলাম মেয়েটার নাম নিশি । তারপর থেকে নিশির সাথে আপনা আপনি বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । আর এখন আমার মনে হচ্ছে সেই বন্ধুত্বের সমাপ্তির সময় চলে এসেছে ।

পরীক্ষা শেষ করতে করতে প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেল । পরীক্ষা খুব বেশী ভাল হয় নি । তাই মেজাজটা একটু খারাপ ই ছিল । কিন্তু যখন ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হলাম দেখলাম সামনের মাঠটাতে নিশি বসে আছে । বেশ খানিকটা অবাকই হলাম ।

এই মেয়েটা এতোক্ষন বসে আছে কেন ? আমাকে বের হটে দেখে এগিয়ে এল । -বাব্বাহ !! বের হলে শেষ পর্যন্ত ? আমি বললাম -তুমি এতোক্ষন বসে আছো কেন? কোন দরকার ছিল নাকি ? আশ্চর্য ! কাল বলা যেত না?? নিশির মন যেন একটু খারাপ হল । ও আমার দিকে না তকিয়া অন্য দিকে তাকাল । -কি হল কথা বলছো না কেন ? এটার কোন দরকার ছিল ? -এটার কি কোন দরকার ছিল ? তিন ঘন্টা কি কেউ এমনি এমনি বসে থাকে ? নিশি এবার আমার দিকে তাকাল !। -তুমি বুঝবে না ।

আমি এতোক্ষন ধরে তোমার জন্য বসে আছি আর তুমি কিনা.............!!! নিশি কথা শেষ করলো না । ঠিকই তো । মেয়েটা এতোক্ষন ধরে আমার জন্য বসে আছে, নিশ্চই জরুরী কিছু । সকাল বেলাতেই বলেছিল যে আজ একটা বিশেষ দিন । আমি ভেবেছিলাম অন্য কিছু ।

আমার চিঠি বাদ দিয়েও তো অনেক কিছু থাকতে পারে ! আমি বললাম -আচ্ছা ! সরি । বল । কসের জন্য বসে আছো ? আজ কি বিশেষ দিন ? -বলব না । -আরে বলবা না কেন? প্লিজ বল । প্লিজ ! আচ্ছা আমি সরি তো বলেছি ।

নিশি কি যেন ভাবলো ! তারপর একটা ঘাসে ভরা জায়গা দেখিয়ে বলল -আসো ঐ খান টাতে বসি দুজন বসলাম । খানিক্ষন চুপ থাকলাম দুজন । তারপর নিশি বলল -তোমার চিঠি আমি পড়েছি। আমার অস্বস্তিটা আবার ফিরে এল । না জানি কি বলবে !! আমি খুব আসতে করে জিজ্ঞেস করলাম -তো তোমার কি .......... কথা শেষ করতে পারলাম না ।

-তোমার চিঠি দেওয়া দেখেই আমি বুঝে গেছিলাম যে ওর মধ্যে কি আছে । আমি ঐদিন হ্যা বলতাম কিন্তু.। ও হ্যা বলত !!! ও মা্ই গড !! আমি বললাম -কিন্তু....? -আজ একটা বিশেষ দিন বলছিলাম না? -হুম । কি বিশেষ দিন ? -আজ আমার জন্মদিন । আমি চাচ্ছিলাম এই দিনে তোমার প্রোপজটা এক্সেপ্ট করি ।

-ভাল করেছ । এক গিফট দিয়া দুটা অকেশন পার হয়ে যাবে । নিশি হাসলো । এতোক্ষন যে টেনশনে ছিলাম তা দুর হয়ে গেল । যাক বাবা!! বাঁচলাম।

গল্পটা এখানে আছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।