আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাস্টবিন থেকে বলছি...

আজ ভোর হয়নি। হয়তো কাল-ও হবেনা। চারিদিকে ভীষণ কাল। ভোর হবার প্রতিক্ষায়.... ইয়াহু! আমি ফার্স্ট হইসি! কিন্তু এ কিরকম খেলা হলো?সবাই মিলে কোথা থেকে যেন সাঁতরানো শুরু করলাম,আর এখন একলা একলা কই এসে পড়লাম! কি অদ্ভুত লালচে ছোট্ট একটা ঘর। না পারি বের হতে,আবার ওরাও হয়তো বাইরে আমাকে খুঁজছে... -খুব বিরক্ত লাগছে তাই না?(আবহ একটা কথায় থকথকে ঘরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল) তুমি কে!কোত্থেকে বলছ?আর সামনেই বা আসছ না কেন??? -আস্তে,বতস্য আস্তে...এতো উতলা হচ্ছ কেন?ধরে নাও আমি তোমার আপৎকালিন বন্ধু... সে তো বুঝলাম!কিন্তু আমার তো অনেক জিজ্ঞাসা!তুমি পারবে বলতে আমি কে? -অনেক্ষন সাঁতরে তুমি অনেক ক্লান্ত...তোমার সব প্রশ্নের-ই উত্তর দেয়া হবে।

আগে তো বিশ্রাম নাও। তবে এটুকু যেনে রাখ এই বয়সে তোমাকে সবাই শুক্রানু বলে। কিছুদিন পর হয়তো তোমাকে ভ্রূণ বলা হবে... কি! কি বললে?শুক্রানু!ভ্রূণ!এগুলো কোন নাম হলো?-সে যাই হোক,এখন আসি। আবার কথা হবে...(অবচেতন বানী অবচেতনায় মিলিয়ে যায়......) -জোনাপেলুসিডায় স্বাগতম... ও!তুমি আবার এসেছ?এতদিন কোথায় ছিলে?এর মধ্যে আমাকে কতবার ছিঁড়ে আবার জোড়া লাগাল তার ইয়ত্তা নেই! -তুমি বড্ড বেশী কথা বল!আরে...এ তো প্রকৃতির নিয়ম,না মানলে চলবে কি করে? প্রকৃতি?এটা আবার কি জিনিস?আর আমি-ই বা কে? -প্রকৃতি কি সে তো আমি নিজেও জানিনা বাপু। শুধু জানি সে খেলাবে আর তুমি খেলবে... এটা আবার কেমন কথা?যাগগে এটা তো বলো আমি কে?আর আমাকে এতবার ছিড়ছ-ই বা কেন? -তুমি?তুমি হতে যাচ্ছ সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ দের একজন... কি সব বলো কিছুই বুঝি না! -শোন...আমার জানা মতে মানুষ সৃষ্টির সর্বসেরা।

আর তুমিও তাদের-ই একজন হতে যাচ্ছ! সর্বসেরা মানে নিশ্চয়ই অনেক ভাল,তাইনা?সে যাই হোক আমাকে এভাবে আটকে রেখেছ কেন? -এটা যে নিয়ম...আর তুমি এখন আছ দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ যায়গায়! নিরাপদ জায়গা?এ আবার একটা জায়গা হলো?চারিদিকে বদ্ধ একটা ঘরে সেই কবে থেকে আটকে রেখেছ তার ইয়ত্তা নেই...ভাল কথা,তুমি আসলে কে? -আমি তো এখন আছি তোমার বন্ধু হয়ে...আমাকে তুমি বিবেক অথবা মানবতা বলতে পার... নাহ!তুমি কি সব বিদঘুটে কথাবার্তা বলো না!কিচ্ছু বুঝি না! -(মৃদু হাসি......)আচ্ছা,তুমি যে বললে নিরাপদ যায়গা। এটা কি? -তুমি এখন তোমার মা'র কাছে আছ...একটা কথা বলতে পারি,তোমার সবচেয়ে বিপদের দিনগুলোতেও ইনি তোমাকে ছেড়ে পালাবেন না। তাই!আমি ওনাকে দেখব!তুমি একটু দেখা করিয়ে দাও না! -হাহাহ...দেখবে,অবশ্যই দেখবে...কিন্তু তোমার তো চোখ-ই খোলেনি!দেখবে কি দিয়ে?সময় হলে ঠিক-ই দেখতে পাবে। তোমার কথার কিচ্ছু বুঝিনা!যাও দেখলাম না!কিন্তু মা-কে নিয়ে কিছু বলো না...উনি কেমন? -মা?মা যে কি তা তো তোমাকে অনুভব করতে হবে...তুমি যখন জগতের ঘৃণ্য লীলা দেখার মত্তে এই বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাবে,তোমার মা সেদিন মৃত্যুসম ব্যথা মেনে নেবে,এরপর শুরু হবে তোমাকে আগলে রাখার পালা। তুমি হয়তো তীব্র শীতে বিছানা ভেজাবে,মা তোমার ভেজা জায়গা দখল করে তোমাকে আবার ভেজানোর শুকনো জায়গা করে দেবে।

দেবে স্নেহ,দেবে আদর...আর শত বিপদেও নিরাপদ আঁচল... আমার তো আর সইছে না বন্ধু!আমি মা-কে দেখব!কি আশ্চর্য,মা-র ভেতরেই আছি অথচ দেখতে পাইনা............ -ও!তুমি তাহলে মেয়ে হতে যাচ্ছ? মেয়ে!এটা আবার কি?আর,তুমি বুঝলেই বা কি দেখে? -(মৃদু হেসে)...সে তোমার না বুঝলেও চলবে...তবে এটুকু জেনে রাখ তুমি মেয়ে,আর অন্য আরেক প্রজাতি পাবে। ওরা ছেলে... ছেলে,মেয়ে এত বাছাইয়ের কি দরকার?তুমি না বলেছিলে আমরা মানুষ?-হুম,তা ঠিক। তবে এভাবেই যে হয়ে আসছে...যেমন তোমার মা হলেন মেয়ে আর বাবা ছেলে... বাবা!ওনার কথা তো কথন-ও বলোনি?উনি কে? -আরে ভুলে গেলে?তোমার বাবাই তো তোমাকে ওই সাঁতার প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিল!হুম...তোমার কাছে তো পৃথিবীর কম গল্প শুনলাম না...কবে যে বের হই... -সে আর বেশী দেরি নেই বোধ হয়... সত্যি বলছ?!জানো?আমি না এখন মা-কে অনুভব করতে পারি!সেদিন আমার ঘরের দেয়ালে লাথি দেয়ায় মা'র সে কি আনন্দ! -সময় প্রায় হয়ে এসেছে। এবার তোমার জীবনযুদ্ধের পালা... জীবনযুদ্ধ?এটা আবার কি! -সেটা না হয় সময়ের কাছ থেকেই জেনে নিও... -কি হল?আজ এত ভীত দেখাচ্ছে যে? কেন যেন ভয় হচ্ছে!কেমন একটা চাপ পাচ্ছি! -ভয় নেই...আর একটু পরেই তুমি তোমার মা কে দেখতে পাবে...তুমি আমার সাথে যাবে না?। ।

। কি হলো?উত্তর দাও!একি!সবকিছু কাঁপছে কেন!এ আমি কোথায় যাচ্ছি!আআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ............ সার্জারি চেম্বার। মা'র পাশে শুয়ে আছে সদ্যজাত শিশু। তবে মা'র মুখ টা ভাবলেশহীন। বাইরে চলছে মৃদু উত্তপ্ত বাক্যব্যায়... -আরে!আমি নিজেও কি জানতাম এমন হবে?কত করে বললাম এবরশন টা করে ফেলতে!শুনলো না! তাহলে আর কি?বিয়ে করে ফেল! -বললেই হলো!এখনো ক্যরিয়ারের ভাল করে শুরুই হয়নি!আর এই বাচ্চা সমাজে দেখাব কি করে?! তো সেক্স করার সময় মনে ছিল না? -আরে আমি কি অতশত ভেবে কিছু করেছি নাকি!রিলেশনশিপে তো এটা স্বাভাবিক! ও তাই!এই সব বুলশিট মেন্টালিটি নিয়ে চলিস বলেই তো আজ এই দশা তোর!তা এই পাপের জিনিসটা এখন কি করবি? -যা করব ভাবা আছে।

ও নিয়ে তোকে না ভাবলেও চলবে... ভোরের ব্যস্ত ঢাকা। রাস্তার পাশে একটি ডাস্টবিনের পাশে মানুষের ভিড়। ভিড়ের উপলক্ষ ডাস্টবিনে ক্রন্দনরত এক মনুষ্যশিশু... ভিড়ে অংশ নেয়া এক জনের মতামত -আহারে...মাইনশের পাপ এই ছুডু বাইচ্চাডার উপর খাডাইতাসে রে!আল্লা,অগো মরণ দেও না ক্যান! বাচ্চাটি তখন-ও কাঁদছে!তার কান্নার সাক্ষী কিছু পচা মাছের আঁশটে আর হোটেলের বেঁচে যাওয়া কিছু নস্ট ভাত...বারবার-ই তার মনে পড়তে থাকে তার মা-র কথা। কোথায় তার মা?কোথায় তার নিরাপদ আঁচল?মানবতা কিংবা বিবেক কি এই প্রশ্নের উওর দিতে পারবে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।