আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালীর বাঙ্গালিয়ানা ও একজন হুমায়ূন আজাদ স্যার।

আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়, পাড়ে লয়ে যাও আমায় সহজ কিছু বলে শুরু করি,কয়েকদিন আগে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হল,বাঙ্গালীর সেই কি এলাহি প্রস্তুতি,আগুন দামে ইলিশ কেনা থেকে শুরু করে ভিড় জমিয়ে বৈশাখের কাপড় কেনা,কিনা বাদ ছিল?ভাবটা এমন যে,আমাদের মতো স্ব-সংস্কৃতিমনা জাতি আর কোথাও নেই এই ধরণীতে। আমি জানি,সবই মিথ্যা,ভণ্ডামি। বৈশাখের দ্বিতীয় দিন থেকেই আমাদের মা বোনরা আবার হিন্দি সিরিয়ালগুলো গলাঃধকরন করা শুরু করেছেন। আমি বা আমার মতো তরুণেরা মেটাল- ডেথ মেটাল নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। এটাই সত্য।

আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারবো,দুই বা তিন মাস পর কাওকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়,আজকে বাংলা কোন মাসের কত তারিখ,তাহলে?শতকরা ৭০%-৮০% মানুষ বলতে পারবে না। কিন্তু,কেন এই ভণ্ডামি?মিথ্যা লোক দেখানো কাজকারবার?পরিবার থেকে শুরু করে আমরা বাঙ্গালীরা সমাজের সব জায়গায় এমন ভণ্ডামি করে যাচ্ছি। আমাদের কাজের সাথে আমাদের বিশ্বাসের মিল নেই। তাই ফলাফলে আমরা দিনদিন ভাগাড়ে যাচ্ছি। স্বদেশ উদ্ভট উটের পিঠে চলছে।

হুমায়ূন আজাদ স্যারের সাথে অনেক বিষয়ে আমি একমত না। কিন্তু স্যার বাঙালি নিয়ে যা বলে গেছেন,তাতেই স্যার আমার চোখে অনেক অনেক উঁচু আসনে বসে গেছেন। আঙ্গুল দিয়ে স্যার আমাদের বাঙ্গালীর নোংরামি দেখিয়ে গিয়ে গেছেন। তাঁর লেখনীতে বুঝিয়ে গেছেন। স্যার বলেছেন- "বাঙালির জাতিগত আলস্য ধরা পড়ে ভাষায়।

বাঙালি ‘দেরি করে’, ‘চুরি করে’, এমনকি ‘বিশ্রাম করে’। বিশ্রাম ও বাঙালির কাছে কাজ। " "মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক। " "বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।

" "বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনোকখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো। " "এদেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক : দারোগার শোকসংবাদেও লেখা হয়, ‘তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন’। " "আমাদের সমাজ যাকে কোনো মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা করে। শিক্ষকের কোনো মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ পঞ্চমুখ; চোর, দারোগা, কালোবাজারি সমাজে অত্যন্ত মুল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা করে। " "কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা।

বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী। " "বাঙালি মুসলমান জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে। " "বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কি চাই?’ বাঙালির কাছে আগন্তুক মাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’।

বসতে বলার সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই। " "মানুষ মরণশীল, বাঙালি অপমরণশীল। " "এ ব-দ্বীপে দালালি ছাড়া ফুল ফোটে না, মেঘও নামে না। " "বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাদখলকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দুর্বৃত্তের সংঘ। " "মসজিদ ভাঙলে আল্লাহর কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের।

ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে। " সবশেষে- "সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়। " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।