আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালীর নৈতিকতা ... (পর্ব-৫)

গভীর কিছু শেখার আছে ....

আজ হরতাল থাকায় দুপুরে অফিস যাবার সময় বাইরে কেমন পরিস্থির সম্মুখীন হবো তা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। তবে আশ্বস্থ ছিলাম এই ভেবে যে, কেয়ারটেকার সরকারের সময় কার্ফু থাকা সত্বেও তেজগাঁতে যায়যায়দিনে গিয়ে অফিস করেছিলাম। সে সময়ের ভয়াবহ নানা কাহিনীর তুলনায় তো এই হরতাল তেমন কিছুই না। যা হোক, যতটা না ভেবেছিলাম সে তুলনায় বরং অনেকটা নির্বিঘ্নেই অফিস পৌঁছালাম। শ্যামলীতে গিয়ে ২২নং রুটের (পূর্বের ৮নং) বাসে অন্য দিনের চেয়ে অর্ধেক সময়েই অফিস পৌঁছালাম।

তবে বিড়ম্বনায় পড়তে হলো অফিস থেকে ফেরার সময়। ভেবেছিলাম, সন্ধ্যা পর্যন্ত যেহেতু হরতাল, তাই সন্ধ্যার পর এভেলেবল ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে দেখি গতকাল রাতের মতো অবস্থা! খুবই কম বাস চলাচল করছে। অবশেষে ফার্মগেট থেকে মিরপুর (২নং) রুটের একটি বাসে বহু কষ্টে উঠলাম। কিন্তু বাসে উঠেই দেখলাম গেটে হট্টগোল।

কারণ, বাসে ড্রাইভারের পাশে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত সিটে ৩ জন মহিলার পাশে ৩০-৩২ বছর বয়সী একজন পুরুষ বসে আছেন। আর তার ঠিক সামনেই একজন চল্লিশোর্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। বাসের লোকজন সবাই সেই ব্যক্তিকে অনুরোধ করছে মহিলা সিটটি ছেড়ে দিতে। কিন্তু মহিলা সিটে উপবিষ্ট ব্যক্তির একই কথা, সে যখন বাসে উঠেছে তখন কোন মহিলা ছিলো না। তাই সে এই সিটে বসেছে।

ফলে মহিলা সিট খালি না থাকা সত্বেও কেন হেলপার-কন্ট্রাক্টর এই মহিলাকে বাসে উঠিয়েছে, এই নিয়েই তার যত আপত্তি! যখন দেখলাম কারো কথাকেই সে লোক পাত্তা দিচ্ছে তখন নিজেই উদ্যোগী হয়ে তাকে কড়া স্বরে বললাম, মহিলা সিট ছেড়ে দিতে। এরপর দেখলাম আরো কিছু ব্যক্তি আমার সঙ্গে সমস্বরে তাকে মহিলা সিট ছেড়ে দিতে ধমকা-ধামকি শুরু করলো। তখন সে বাধ্য হয়ে সিট ছেড়ে দাঁড়ালো। এরই মধ্যে বাস চলা শুরু হয়েছে। বাস যখন শ্যামলীর কাছাকাছি এসেছে বাস থেকে মাত্র নেমে সামনে এগিয়েছি, তখন সেই ব্যক্তিও দেখলাম বাস থেকে নেমে আমাকে ডাকলো।

আমার পাশে পাশে হাঁটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলো, "কোথায় থাকেন?" ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় সিগনাল দিলো যে, কিছু একটা ঘাপলা হতে পারে। তাই সেই লোককে চার্জ করার ইচ্ছে শত-কষ্টে দমন করে প্রত্যুত্তর দিলাম। - সে তখন আরো উৎসাহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো, "কি করেন?" তবে এবার জানানোর পরে দেখলাম সে খানিকটা দমে গেলো। - এবার আমি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনার পরিচয়?" সে তখন বললো, আমার পরিচয় একটু পরেই পাবেন। তারপর তেজের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো, "কোন পত্রিকার?" - এবারও তাকে জানালাম।

খানিকক্ষণ থেমে এবার সে আমার নাম জিজ্ঞেস করলো। - এটাও জানালাম। তবে উল্লেখ করাটা জরুরী যে, সেই লোকের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। কারণ আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সে কেন আমাকে বাস থেকে নেমে চার্জ করেছে। এক্ষেত্রে সামান্য আত্মবিশ্বাসহীনতাও বিপদের কারণ হতে পারে।

আর এই বিশ্বাসও ছিলো যে, যেহেতু কোন অন্যায় করি নি, তাই এই টাইপের লোকদের প্রতিহিংসা থেকে আসা করি বেরিয়ে আসতে পারবো। যা হোক, আমার পরিচয় নেওয়া হলে সেই ব্যক্তি চুপ মেরে গেলো। একটু পরে সে কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বললো, "আপনি একজন সাংবাদিক হয়েও আমার সঙ্গে যেভাবে রূঢ় স্বরে কথা বললেন তা কি ঠিক করেছেন?" আমিও পাল্টা তেজে জবাব দিলাম, "বে-ঠিক কোনটা করেছি? আপনি মহিলা সিট থেকে উঠতে চাচ্ছিলেন না বলেই তো এভাবে বলেছি। আমি কি ভুল কিছু বলেছি?" সে তখন বললো, "না ভুল বলেন নি। তবে এভাবে না বলে ভালো ভাবে বললেও তো পারতেন?" সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বললাম, "বাসের সবাই-ই তো ভালো ভাবেই আপনাকে সিট ছেড়ে দিতে রিকোয়েস্ট করছিলো।

কিন্তু আপনি কি তা শুনেছেন? তাই বাধ্য হয়েই আপনাকে এমন রূঢ় ভাবে বলেছি। " তখন সে বললো, "আপনাকে কি আর বলবো, আপনি একজন সাংবাদিক। তাই আপনাকে আর কিছু বললাম না। আমিও এই এলাকাতেই হক সাহেবের গ্যারেজের কাছেই থাকি। আমার বন্ধুরা সবাই চলে এসেছে, আপনি যদি এখানে না নামতেন তবে বাস আটকে দিতাম।

" ভালোই বুঝতে পারলাম যে আমাকে পরিস্কার হুমকি দেয়া হলো। এরপর দেখলাম কাকে যেন সে ফোনে তার লোকেশন জানালো। এরপর সেখানে লম্বা-সুদর্শন এক যুবক আসলো। নবাগত যুবক সবিস্তারে পুরো ঘটনা শুনে আমার পরিচয় নিলো। এরপর ঐ দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিকশা ঠিক করলাম।

রিকশায় উঠে যাবার সময় মাঝ পথে খেয়াল করলাম সেই দুজন অন্য একটি রিকশাতে যাচ্ছে। দুজনেই একেবারে নিরব, থমথমে। বোধহয় হাত থেকে এমন একটি "শিকার" হাতছাড়া হয়ে যাওয়াতেই তাদের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা! তবে আসার পথে ভাবলাম যে, আমার জায়গায় অন্য একজনকে এরা পেলে কি করতো? সেই একজন যদি সাধারণ যুবক হতো, তবে একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেও হয়তো এইসব ক্ষমতার খেলা দেখানোর ক্রীড়ানকদের হাতে তাকে নাজেহাল-হেনস্তা হতে হতো। ফলে পরবর্তীতে কি আর কখনো সেই প্রতিবাদী কন্ঠ সোচ্চার হতো? সেই উত্তরের ভার আমি ব্লগারদের উপরই ছেড়ে দিলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।