আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দশটা চিঠি একটা ফাউ

ইহা একটি তেলাপোকা ব্লগ, ম্যালাদিন ধইরা টিকা আছে, তেলাপোকার মত। ১. মেয়েটার সাথে কখনো দেখা হয় নি আমার। তবুও প্রতিমাসের ১৫ তারিখে মারিয়া নামের সেই মেয়েটার কাছ থেকে আমার কাছে একটা চিঠি আসে। গত আট মাসের মধ্যে একটি বারও তার কোন ব্যতিক্রম হয় নি। কখনো লেটও হয় নি।

শুধু এমাসে তার চিঠিটা আসতে দেরি হল। অসুখ বিসুখ করল না তো? নাকি আমাকে ভুলে গেল? কোনদিন তার চিঠির উত্তর ও দেয়া হয় নি। আজকালের ইমেইল এসএমএস এর যুগেও সে এখনো চিঠি জিনিসটা ব্যবহার করছে দেখে অবাকই হয়েছিলাম। ২. ক্যাডেট কলেজে থাকার সময় চিঠি লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। প্রতি শুক্রবার ব্রেকফাস্টের পর চিঠি লিখে হাউজ অফিসে জমা দিয়ে আসতে হত।

আর ফার্স্ট ক্যাডেট নাম্বার হিসেবে সেটা কালেক্ট করার দায়িত্ব আমার ঘাড়ে পড়ায়, প্রায়ই ক্লাসমেটদের বিরাগ ভাজন হতে হত। কি করব, ফাঁসায়া তো দিতে পারি না, আবার ঝাড়ি খাইতেও ইচ্ছা করে না। শেষ পর্যন্ত ক্লাস সেভেন ডেকে পিতার কাছে পুত্রের পত্রের কয়েকটা স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট লিখিয়ে খামে ভরে জমা দিয়ে দিতাম। অবস্থা একসময় এতই খারাপ হল, বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে বিভিন্ন চিঠি কেটে খামে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া শুরু করল সবাই। ৩. এইচএসসি পরীক্ষার আগের সপ্তাহে চিঠি লিখব না বলে আমাকে আর আলমকে স্যারের কাছে পাঠানো হল চিঠি না লিখার পারমিশন আনার জন্য।

সেই স্যার চিঠি লেখার উপকারিতা নিয়ে ব্রেকফাস্টের পর থেকে মিল্কের আগ পর্যন্ত টানা বয়ান দিয়ে গেলেন এবং মিল্ক ব্রেকের পরে চিঠি লিখে জমা দিয়ে যেতে বললেন। ( ৪. জাকারিয়া পিসিসি থেকে আমারে একটা চিঠি পাঠাইছিল। আমি ওর চিঠিটাতেই আমার নাম কেটে ওর নাম, আর ওর নাম কেটে আমার নাম লিখে আবার ওকে পাঠিয়ে দিলাম। আইলসা আমি, কি করুম? ৫. সাপ্তাহিক ২০০০ এর ভালবাসা সংখ্যায় আমাদের জনৈক ক্লাসমেটের দুইটা লেখা ছাপা হওয়ায় তার নামে প্রতি দিন ২-৩ টা করে চিঠি আসা শুরু হল। সবগুলাই মাইয়া।

হাউস বেয়ারা ওই চিঠিগুলা ডিরেক্টলি সাপ্লাই দিত ওরে। এর মধ্যে একজন ছিল এক্সট্রিমিস্ট। সরাসরি প্রেম নিবেদন। শেষ পর্যন্ত কোন উত্তর না পেয়ে মেয়ে চিঠিতে খাশ বরিশাইল্লা ভাষায় লিখল, "মুই মেন্দিগঞ্জের মাইয়া, মোরে তুমি চেনো নাই, মুই টাংগাইল আইতে আছি, বোজ্জো, তোমারে আমি টোহাইয়া বাইর করুমুই, দেহি তোমাগো ক্যাডেট কেমনে আটকায় মোরে" ৬. প্রেমিকদের কাছে প্রায়ই ওদের প্রেমিকারা চিঠি পাঠাত কোন ছেলের নাম ব্যবহার করে, স্যার যাতে চিঠি পড়ার সময় বুঝতে না পারে যে এটা কোন মেয়ের লেখা। সম্ভবত আমাদের জনৈক ক্লাসমেটের প্রেমিকার নাম ছিল রাজীব।

সিএমএইচে কেউ গেলে বিড়ি সিগারেট আনার পাশাপাশি তার ঘাড়ে গোটা বিশেক চিঠি পোস্ট করার দায়িত্ব পড়ত, রাজীবদের কাছে পোস্ট করার জন্য। ছয় বছরে কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা গেল, কোন রাজীব আমারে কোন চিঠি পাঠাইলো না। ৭. এইটা একটু গান্ধা। ক্লাস টেনের জনৈক গে জুনিয়র, ক্লাস এইটের অপর জনৈক গে জুনিয়রকে চিঠি লিখত। সে কি ভাষা সেই চিঠির, সুনীল বরুণার প্রেমও হার মানে।

হোমারের দশদিন আর ডিউটি মাস্টারের এক দিন। ধরা খায়া দুইটাই কলেজ আউট। হেরা কি এখন সংসার পাতছে? জানতে মুন চায়। ৮. এসএসসি ক্যান্ডিডেটদের সাধারণ পড়ালেখার সুবিধার জন্য ফাইভ সিটার দেওয়া হত, এবং যারা টেনসিটারে থাকত, তাদের রুমে অন্য কোন ক্লাসের কাউকে রাখা হত না। (এমসিসিতে এক রুমে দশজন করে থাকে) কলেজ অথরিটির কিছু অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্টের শিকার হয়েছিলাম আমরা এসএসসি পরীক্ষার আগে।

তার মাঝে একটা ছিল ক্যান্ডিডেটদের সবরুমে ভাগ ভাগ করে দেয়া, যাতে তাদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য রুমের বাকিরা চুপ থাকে। এভাবে পুরা হাউস শান্ত থাকবে। বলাবাহুল্য, এই ফালতু প্ল্যান মোটেও কাজ করে নাই, বরং আমাদের পড়ালেখার চৌদ্দটা বাজতে শুরু করল, জুনিয়রগুলারে ধইরা চুপ রাখমু, নাকি নিজেরা পড়মু? হাউস মাস্টারকে বলেও কোন কাজ হল না। এই অদ্ভুত যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেলাম চিঠির মাধ্যমে। ব্যাচের সর্বসম্মতিতে জনৈক ক্লাসমেট তার প্যারেন্টসের কাছে চিঠিতে করুণ ভাষায় লিখল, আব্বা, রুমে পড়ালেখা করতে পারি না, বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারব না, তোমাদের স্বপ্ন সফল করতে পারলাম না, মাফ করে দিও, তোমরা অনেক আশা নিয়ে ক্যাডেট কলেজে দিছিলা, ব্লা ব্লা ব্লা.... পরের দিন সকালেই রুম চেঞ্জ... বলাই বাহুল্য সেই চিঠিটা সেদিন রাতেই হাউস মাস্টার স্যার ছিঁড়ে ফেলেছিলেন... ৯. আমাদের জনৈক ক্লাসমেটকে তিনটি ইডি দিয়েছিলেন বাংলার এক স্যার, চিঠিতে বাপকে ঠিক মত সম্বোধন না করার জন্য এবং চিঠিতে বানান ভুল থাকার জন্য।

১০. ছুরি খাওয়ার পরে সাতটা চিঠি পাইছিলাম, তৎকালীন জাস্ট ফ্রেন্ডের কাছ থিকা। মইরা গেছি মনে কইরা ব্যাপক রোমান্টিক চিঠি লেখছিল। পরে বাঁইচা আছি শুইনা ব্যাপক কষ্ট পাইছে। ফাউঃ এক লম্বোরে যেই মারিয়া ফ্রস্ট নামের যেই মাইয়ার কথা কইছি, সে আমার অ্যাকোমোডেশন অফিসার, প্রতিমাসের বাসা ভাড়ার ইনভয়েস পাঠায় চিঠিতে। এই মাসে অ্যাকোমোডেশন অফিস শিফট হওয়ায় ইনভয়েস পাঠাইতে লেট হওয়ায় দুঃখও প্রকাশ করেছে সে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.