আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেফাজতের লংমার্চ

ইকার এর নিঃসঙ্গ বচন বৃহৎ উদ্দেশ্য হাসিলের স্বার্থে "কোদালকে কোদাল না বলা" এর একটা ব্যাপার আছে । হেফাজতে ইসলাম যখন ৬তারিখে লংমার্চের ঘোষণা দিল - তখন থেকেই উচিত ছিল এই পলিসি প্রয়োগ করা । তাহলে সাপও মরত, লাঠিও ভাঙত না । তা না করে কি করা হল ? উলটো হেফাজতে ইসলামিকে প্রথমে "শান্তিপুর্ন লংমার্চে বাধা দেয়া হবে না" বলে পরে ৫ই মার্চের হরতালে সমর্থন দিয়ে ঢাকা কে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন করে ফেলা হল । কেন ? হেফাজত ইসলামকে কিসের এত ভয় ? তাদের লংমার্চকে এত "যুদ্ধংদেহী" মনোভাবের সাথে নেয়া হচ্ছে কেন ? এই ঢাকা আসতে না দেয়া - এটার মাধ্যমে কি তাদেরকে আরো গুরুত্তপুর্ন করে তোলা হচ্ছে না ? উলটো তারা এখন ভাবতে শুরু করবে - সরকার আমাদের ভয় পায় ! তারা নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ আছে , আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনি আছে - তারা সেটা দেখবে ।

তাদের প্রস্তুত রাখুন । আজকের দিনে উলটো কাজ করা মানে দেশের বিরাটাকার এক মুসলিম গোষ্ঠীকে খেপিয়ে তোলা । হেফাজতে ইসলামের যে জামায়াতের সাথে আঁতাত রয়েছে সে বিষয়টি স্পষ্ট । জামায়াত মদদপুষ্ট নাহলে ২০১০ সালে গঠিত হওয়া একটি দল কখনো এত অর্গানাইজড হতে পারে না । তাছাড়া সাউন্ডক্লাউড ও ইউটিউবেও অনেক ফোনালাপ ফাস হয়েছে ।

তাই জামায়াত-হেফাজতের মধ্যে মওদুদিবাদের আদর্শিক মতপার্থক্য থাকলেও আদতে হেফাজত যে তাদের দোসর - সেটি পরিস্কার । কিন্তু এই জিনিসটা একজন নেট ইউজ করা,বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞাত , সচেতন মুসলিম যেরকম বোঝেন সেরকমটা কিন্তু সবাই বোঝেনা এই জিনিসটুকু বুঝতে হবে । গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কথা বাদই দেইলাম ( তাদের কাছে ব্লগার=নাস্তিক) , যারা শহুরে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে ক্রমান্বয়ে গরীব (অন্তরজাল ব্যাবহার থেকে বঞ্চিত) , তারা কিন্তু এই ব্যাপারগুলি জানেনা । সাথে মাহমুদুর আমার দেশ গং এর তারা জামায়াতের সমর্থক না হলেও কিন্তু হেফাজতের আন্দোলন তাদের কাছে "ইসলামি আন্দোলন" (যেহেতু হেফাজত তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে জামায়াতকে তাদের থেকে পৃথক করতে চেয়েছে) । সাথে যোগ করুন মাদ্রাসার নিরীহ ধর্মপ্রান ছাত্র ।

এদের তো দোষ নাই । এমনি এমনি তো আর লাখ লাখ মানুষ হয়নাই , তাইনা ? তাই যেকোনও পদক্ষেপ নেয়ার আগে সেটার ব্যাপারে ভাবতে হবে ১০ বার । হেফাজতে ইসলামির মহাসমাবেশে কত লোক হয়েছিল ? হলুদ সাংবাদিকতা না করলে অন্তত ৯০ হাজার ? কিংবা তারও বেশি । এদের সবাই ই কি জামায়াত শিবির ছিল ? অবশ্যই না । খেয়াল করলে দেখবেন বেশিরভাগের পিঠে ছিল র‍্যাকস্যাক জাতীয় ব্যাগ ।

এবং তারা বয়সে তরুন । তারা হল আমাদের মাদ্রাসা পড়ুয়া ভাইগন । তাদের কি দোষ বলেন ? তারা একদম ছোটবেলা থেকেই এমনভাবে বড় হচ্ছে , যে তারা বাধ্য এইখানে আসতে । কারন বলছি । দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা একদমই প্রযুক্তিবর্জিত এবং "তুমি আমার বাবাকে পছন্দ করনা তাই তোমার তোমার রাঁধা খাবার আমি খাবনা" টাইপের ।

প্রযুক্তিবর্জিত বলছি এ কারনে - একজন স্কুলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী প্রযুক্তির অর্থাৎ মোবাইল,কম্পিউটার,ইন্টারনেট এর সম্পর্কে যে রকম দক্ষ - একটি মাদ্রাসার ছাত্র কিন্তু সেরকম দক্ষ নয় ( ব্যাতিক্রম থাকতে পারে ) । সুতরাং তাদেরকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে বিভ্রান্ত করাটা তুলনামুলক ভাবে সহজ । তাই তারা বাইরের দুনিয়া থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ভাবে বেড়ে ওঠে । আর কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্যে তাদের পাঠ্যসূচী এবং শাস্তিও সময়োপযোগী নয় । হাফেজ হতে হলে যে আদর্শিক দ্বন্দ্বযুক্ত ব্যাক্তি বা জ্ঞান বর্জন করতে হবে - একথা কুরআন শরীফের কোথায় লেখা আছে ? মাদ্রাসার ছাত্রদের আউট বই পড়া নিষেধ ।

অবসরে তাদের পড়তে হয় কিশোর কন্ঠ , "আর রাহিকুল মাখতুম" , চার খলিফার জীবনি ইত্যাদি বই । হুমায়ুন আহমেদের সাথেই তারা পরিচিত না - আর জাফর ইকবালের কথা বাদই দিলাম । বেশিরভাগ মাদ্রাসায় রাখা হয় "সংগ্রাম" । প্রতিদিন তারা সেই সংগ্রাম পত্রিকা পড়ে দেশের খবরটা তারা ওইভাবেই জানে । ক্রমাগত শারীরিক শাস্তির মধ্য দিয়ে ( অনেকটা বিএমএ ট্রেনিং এর মত) তাদের চিন্তা করার সুযোগটাও দেয়া হয়না ।

সুতরাং ব্লগারদের বিপক্ষে কিছু ভুল ভাল ভুজুং ভাজুং দিয়েই যে তাদেরকে যেকোনও জায়গায় জমায়েত করা যায় - সেটা আর অবাক কি ! আর তাতে কাজ না হলে বেতের বাড়ি তো আছেই ! সুতরাং তাদেরকে ব্যাবহার করা হচ্ছে , "মরলে শহীদ বাচলে গাজী" এই প্রোপাগান্ডা ব্যাবহার করে । তারা নির্দোষ । সুতরাং যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন করে তাদের খেপিয়ে তোলা মানে - নিজ হাতে আরও এক প্রজন্ম শিবিরের জন্ম দেয়া । এই ব্যাপারটাও মাথায় রেখে আগামী কর্মসুচি দেয়া উচিত । যাতে কর্মসুচিটি ম্যাস মুসলিম মানুষজনও অপছন্দ না করে এবং আসল কাজ - সাপ ভাঙ্গাও হয় ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.