আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারেক রহমান সৌদি আরবে হাওয়া ভবনের পঞ্চ পাণ্ডবরাও সেখানে, বিএনপির মধ্যে গুঞ্জন, দলের ভেতর আবার হতাশা

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পবিত্র ওমরাহ পালনে এক সপ্তাহের সফরে লন্ডন থেকে সৌদি আরব যান। তাঁর সাথে দেখা করার জন্য হাওয়া ভবনের 'পঞ্চপাণ্ডব'দের কয়েকজনসহ ওই ঘরানার বেশকিছু নেতাও সৌদি আরব গেছেন। যার মধ্যে সেই বিতর্কিত নাম অপু-আশিকদের সেখানে উপস্থিতি নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। কেন তারা সেখানে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কয়েকদিন ধরেই মুখে মুখে রটে যায়, তারেক রহমান দেশে আসছেন।

কেউ কেউ বলেন, তারেক নয় আসছেন জোবায়দা রহমান। কিন্তু এরই মধ্যে দেখা গেল- তারেক লন্ডন থেকে ওমরাহ পালনের নামে সৌদিতে গেলেন তার পুরনো সঙ্গী সাথীদের সাথে গোপণ বৈঠকে মিলিত হওয়ার জন্য। পারিবারিক সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং মেয়ে জাইমা রহমান রয়েছেন। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত মদিনায় থাকবেন তিনি। সেখানে থেকে যাবেন মক্কায়।

সেখানে ৪ থেকে ৬ এপ্রিল মক্কায় ওমরাহ করবেন। ৭ এপ্রিল লন্ডন ফিরে যাবেন তারেক রহমান। জানা গেছে, ২৯ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে সৌদি আরব পৌঁছেছেন তারেক রহমানের পিএস মিয়া নূরুদ্দিন অপু। হাওয়া ভবনের সাবেক মুখপাত্র আশিক ইসলাম আমেরিকা থেকে সেখানে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা আখতার আহমেদ বেলায়েত, সাজ্জাদুল সিরাজ তালুকদার জয় এবং ডা. আমান।

তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, তারেকের স্ত্রীর বড় বোন শাহিনা খান জামান এবং তার স্বামী এয়ার কমডোর (অব.) সৈয়দ শফিউজ্জামান সৌদি আরব যাবেন। তাছাড়া মোছাদ্দেক আলী ফালু সহ তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সাবেক এমপিও সেখানে আছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে যেমন উঠেছে গুঞ্জন, তেমনি চরম হতাশা আর ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো-প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীসহ জামাতে ইসলামীর কয়েকজন নেতা মার্চের মাঝামাঝি রিয়াদে জমায়েত হন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে সেখানে বিএনপি জামাতের নেতাদের মধ্যে মাসিক চাঁদার পরিমান ১০ সৌদি রিয়াল থেকে বাড়িয়ে ১০০ সৌদি রিয়াল করা হয়।

পরে সেখানকার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মি. মাকসুদের নেতৃত্বে তারেক রহমানের হাতে উত্তোলনকৃত টাকা হস্তান্তর করা হয় যা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। সেখানে বিএনপির মধ্যেও বিভক্তি দেখা যায়। যার মধ্যে একটি গ্রপের নেতা আব্দুর রহমান এবং অন্য গ্র“পে মুকিম। কিন্তু তারেক রহমান আব্দুর রহমানের গ্র“পের নেতাদের সাথে দেখা করনেনি। গোয়েন্দা তথ্য মতে, সিলেটি একটি গ্র“প ডা. জোবায়দা রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন যিনি একই সাথে তারেক রহমানের অবস্থান করা পাশ্ববর্তী একটি স্থানে অবস্থান করছিলেন।

তারেক রহমান যখন রিয়াদে পৌঁছান তখন সেখানকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মি. রফিক মক্কা থেকে সেখানে যান তারেক রহমানের সাথে দেখা করতে এবং আরেকটি খবরে প্রকাশ জোবায়দা রহমান তারেক রহমানকে ছাড়াই ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ মধ্যরাতে দুর্নীতির অভিযোগে তারেক রহমান ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন। পরের বছর ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তারেক রহমান। তারপর থেকে তারেক রহমান লন্ডনেই আছেন।

সাড়ে চার বছর পর সোমবার প্রথম লন্ডনের বাইরে আসেন তিনি। তার সৌদি আরব আসার খবর অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই জানেন না। বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, সৌদি আরবে তারেকের সফর নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার সঙ্গে হাওয়া ভবনের সেই বিতর্কিতরা কেন দেখা করার অনুমতি পেলেন, তা-ই সবার প্রশ্ন। যাদের কারণে তারেক রহমানকে অনেক অপবাদ নিতে হয়েছিল, তারা কেন আবার তার সান্নিধ্য পেলেন।

তাহলে কি ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা থেকে তার কোনো পরিবর্তন আসেনি? যাদের জন্য তার কোমর ভেঙেছে, সেই 'দুর্বৃত্তদের' কীভাবে আপন করে নেন তিনি? এর আগে পত্রিকায় সংবাদ এসেছে- আবার সক্রিয় হচ্ছে হাওয়া ভবনের দোর্দণ্ড-প্রতাপশালী ও ক্ষমতাধর বিতর্কিত কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, ওয়ান-ইলেভেনের পর গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বিদেশে পালিয়ে গেলেও এখন তাদের মধ্যে অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। আর বাকিরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে আসার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে হাওয়া ভবনের যেসব প্রভাবশালী কর্মকর্তা দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন তাদের কথা দেশের মানুষ এখনও ভুলতে পারেনি।

তাইতো ঘুরে ফিরে বার বার মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে হাওয়া ভবনের সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখন কে কোথায়? তবে তারা আবার সক্রিয় হচ্ছেন জানতে পেরে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে তাদের মনে একটি প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে যাদের কারণে গত নির্বাচনে বিএনপির ভারাডুবি হয়েছে তারা কি আবারও বিএনপির ছায়াতলে আসার সুযোগ পাবে? কথিত আছে-হাওয়া ভবনের এই কর্মকর্তারাই তারেক রহমান ও বিএনপিকে ডুবিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওয়া ভবনের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অধিকাংশই এখনও বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া একজন জেলে এবং কেউ কেউ দেশে থাকলেও তারা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে। বিএনপি কার্যালয় কিংবা দলীয় কোন কর্মসূচীতে তাদের আর দেখা যায় না।

তবে বিএনপির কোন কোন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটির নাম ছিল হাওয়া ভবন। এটি ছিল মূলত বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়। তবে এখানে খালেদা জিয়া নিয়মিত না বসলেও তাঁর ছেলে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান তার ঘনিষ্ঠ জনদের নিয়ে নিয়মিতই বসতেন। আর আলোচিত-সমালোচিত এই হাওয়া ভবন থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রিত হতো সবকিছু।

তবে ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি বনানীর হাওয়া ভবনটি ছেড়ে দিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বসার জন্য গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি ভাড়া করা হয়। বর্তমানে এখানে নিয়মিত বসে খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন। জোট সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তারেক রহমান তাঁর আত্মাভাজন কিছু লোককে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসে তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য, নিয়োগবাণিজ্য ও মনোনয়নবাণিজ্য থেকে শুরু করে আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য এমন কোন কাজ নেই যা করতেন না। আর এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে হাওয়া ভবনের এই কর্মকর্তারাই একদিন এই ভবনকে দুর্নীতি ও অনিয়মের ভবন হিসেবে পরিচিত করেন।

এর ফলে এই ভবনের প্রতি মানুষের মনে ঘৃণা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.