আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরকীয়া

ব্রেড ব্রাউন কামিনীর কে ঢুকে দেখল কামিনী অফিসের কাজে ব্যস্ত। ব্রেড কামিনীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাই সুইট ডার্লিং। ” পরে কামিনীর ঠোঁটে ঠোঁট ভেজিয়ে দিল। কামিনীর হাতের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। উঠে দাঁড়াতে ব্রেড আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

ঘড়ির কাঁটা টিং টিং করে বাজায় দু’জনের জ্ঞান ফিরল। ব্রেড সে অবস্থাতেই বলল, “চলো না ডার্লিং, আমরা কিছু দিনের জন্য কোথাও হারিয়ে যাই। এমন বন্ধী জীবন আর ভালো লাগে না। ” কামিনী ব্রেডের চোখে চোখ রেখে, “তাই বুঝি?” ঠোঁটে খানিক হাসি ফুটল। শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটপালিস ব্রেডের ঠোঁটের ঘঁর্ষণে ভিজে টসটস করছে।

কামিনী ব্রেডের সুগঠিত দেহের পানে তাকিয়ে আছে। ব্রেড বিদেশী এক আগন্তুক। চাকরির জন্য তাকে এদেশে আসতে হয়েছে। একজন ইংরেজ। ইংরেজ জাতি হলো, জীবন আছে এনজয় কর।

আজকের যৌবন ফুরিয়ে গেলে তাকে আর পাওয়া যাবে না। এদিকে কামিনী রসে ভরা কামনার কলি। তার সর্বাঙ্গে যৌবনের দীপ্ত শিখা টগবগ করছে। চোখে মুখে কামনার স্ফূলিঙ্গ কামিনীকে গড়ে তুলছে সর্বপ্রাপ্তা। ব্রেডের চোখে কেবল কামিনীর কামনা।

রাত জাগার স্বপ্ন, মিলনের বাসনা। কোন কিছু পাওয়ার জন্য যদি ইচ্ছে জাগে, যতদিন পর্যন্ত তা না পাওয়া যাবে ক্রমাগত তার প্রতি পাবার ইচ্ছে বেড়ে উঠবে। কামিনীর স্বামী কলেজের লেকচারার। কামিনীর রূপ আর সৌন্দর্য দেখে হৃদয়ের বাবা মা তাকে ঘরের পুত্র বধূ করে নেয়। দু’জনের জীবন অনেক আনন্দে কাটতে থাকে।

মেয়েদের রূপ আর যৌবন তাদেরকে মন্দ পথে নিয়ে যায়। সুন্দর স্ত্রীর স্বামীরা সুখী হতে পারে না। স্ত্রীর সৌন্দর্য তাদের মনে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে। সন্দেহ সংসারকে অসুখী করে । কামিনী এখন হৃদয়ের মনের বাইরে।

কামিনীর কামনা ব্রেড। হৃদয় তার জীবনের অভিশপ্ত অধ্যায়। হৃদয়ের সংসারে কামিনীর প্রতিটি মুহুর্ত অগ্নির বাসর। ব্রেডের প্রেমে তার মন উথল তরঙ্গে ঢেউ খেলছে। অফিসের প্রতিটি মুহুর্ত সে ব্রেডের সঙ্গ চায়।

আর কৌশলী ব্রেডও নির্লজের মত কামিনীর সাথে জড়িয়ে থাকে। অফিস যেন তাদের ফুলের বাসর, মধুমিলনের মধু-যামিনী। আজ শুক্রবার। কামিনীর অফিস বন্ধ। তবু কামিনী আজ বেরুবে।

বেরুবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সাজ বাজ ভিন্ন। হৃদয় বলল, “কামিনী, তুমি একটু পরে বের হয়। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ” কামিনী খুব ব্যস্ত।

দেরী তার সহ্য হচ্ছে না। বলল, “কি বলবে তাড়াতাড়ি বল। ” “আমি জানি, তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। নারীর সাজ পুরুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য। তোমার সাজ দেখে আমি খুশি হয়েছি।

আমি জানি তুমি ব্রেড নামের তোমার বসকে ভালোবাস। সে ভালোবাসায় আমার কোন আপত্তি নেই। বিয়ের পর স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের সাথে প্রেম বা মিলনকে পরকীয়া বলে। অবশ্য মেয়েরা প্রেমের চেয়ে পরকীয়াকে বেশি ভালোবাসে। আমি জানতাম আমার জীবনে সংসার হবে না।

তোমার সাথে আমার যে বাঁধন সে ছিল আমার সংসার ত্যাগের মূল ভিত্তি। তুমি তন্ময়কে সাথে নিয়ে যেও। মায়ের চেয়ে সন্তানকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারে না। সংসারহীন মানুষের পথই ঠিকানা। ছোট্ট শিশুকে এখনই পথে চলা শিখাইও না।

” “তন্ময়কে আমি নিতে পারব না। ও তোমার কাছে থাকবে। ” “পরকীয়া প্রেমে বেশি আদর। স্বামী স্ত্রীর মাঝে সে আদর কল্পনাতীত। ভয়ের মাঝে পাওয়া সবটুকু পাওয়া যায় না।

সবটুকু পাওয়া যায় না বলে আশা থেকে যায় হয়তো ও আরো দিতে পারে। তুমিতো নিজেই দেখছ, কাঁশ বন দূর থেকে দেখলে বেশি ঘন দেখায়। ” “আমি ওকে কথা দিয়েছি, তন্ময়কে নিতে পারব না। ” “আমাকেও কথা দিয়েছিলে, ‘তোমাকে ছেড়ে কোন দিন কোথাও যাব না। ’ তোমাদের দুই একটা কথা উল্টো পাল্টা হলে কি এমন আসে যায়।

তাছাড়া তন্ময় তোমার সন্তান। ওকে ফেলে যেতে তোমার একটুও কষ্ট হবে না?” “না। তন্ময় এখন মা ছাড়া বাঁচতে পারে। ” “কিন্তু তুমি ব্রেডকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। ” “ওর জীবনে মা’র প্রয়োজন খুব একটা হবে না।

” “তেমন তোমার জীবনে স্বামীর প্রয়োজন। মনে রেখ, তোমার এ যৌবনের উথল ঢেউ একদিন কমে যাবে। অধিক পাওয়া না পাওয়ার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। একদিন তোমাকে আবার সন্তানের কাছে ফিরতে হবে। আমি আশীর্বাদ করি সেদিন যেন তন্ময় তোমাকে মা বলে না ডাকে।

তোমাকে মনে করিয়ে দেয় ঠিক এমন একটি মুহুর্ত। চল, আমরা তন্মকে এতিমখানায় রেখে আসি। ” “ঠিক আছে। ” যৌবনের ঢেউ ন্যায় অন্যায়কে ভুলে যায়। ণিক সুখের আশায় সারা জীবন শেষ হয়ে গেলেও মাতাল মন বোঝে না।

তন্ময়কে এতিমখানায় রাখার সিদ্ধান্ত ঠিক হলো। কাল সকালে তন্ময়কে এতিমখানায় নিয়ে যাবে। কামিনী যেতে চাইল না। কিন্তু হৃদয় তাকে ছাড়া গেল না। তন্ময়কে রেখে যখন ফিরছে তন্ময় দৌঁড়ে এলো।

বলল, “মা, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?” “তুমি আজ থেকে এখানে থাকবে। ” “আমি একা?” “হ। ” “না। আমি একা এখানে থাকব না। তোমার সাথে যাব।

” মা’র আঁচল টেনে ধরল। কিন্তু মদের নেশা উপহার দেখে না। নিজেকে বিক্রি করে হলেও সে নেশা মেটাতে চেষ্টা করে। কামিনী খুব জোরে একটা ধমক দিল। ভয়ে তন্ময়ের হাত থেকে আঁচল খসে পড়ল।

“আমি তোমার মা না। ” “তয় কে?” “কেউ না। ” তন্ময় বাবার কাছে গেল। হৃদয় তন্ময়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল, “বাবা, সব কিছুই সবার জীবনে থাকে না। তোমার জন্ম হয়েছে এতিমখানায় থাকার জন্য।

এতিমখানায় যারা থাকে তাদের মা বাবা থাকে না। আমি আর সংসারে থাকব না। যে সংসারে মা ছেলেকে ফেলে যেতে পারে, পরকীয়ার নেশা প্রেমের চেয়ে গভীর হয় সে সংসারে নিরাপত্তা নেই। সংসার হচ্ছে নিরাপত্তার আশ্রয়। সুখে দুঃখের বন্ধন।

আমি তোমার বাবা, তোমার জীবনে কেবল এই পরিচয়টুকুই থাক। ” দু’জন ফিরছে। তন্ময় ‘মা’ বলে ডাক দিয়ে খানিক দৌঁড়ে এলো। আবার থামল। কামিনী পিছন ফিরে তাকাল না।

তন্ময় কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে আবার ধীরে ধীরে এতিমখানার দিকে হেঁটে এলো। গেটের গ্রীলে হেলান দিয়ে কাঁদল। মা বাবার অন্তহীন আদরের কথা ভুলতে পারল না। কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ল। মাতাজি এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেল।

হৃদয় সব কিছু ফেলে চলে গেল। কামিনী ওখান থেকেই বাসায় ফিরল না। কেবল সেই সুখী। জীবনের অমৃত সুধা পানে সে মত্ত। জীবন যেন অনন্ত সুখের ভাণ্ডার।

ওর ডাগর চোখের কোণায় কেবল মিলনের স্বপ্ন। সৃষ্টির আনন্দ অথবা মিলনের উন্মদনা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আনন্দদায়ক। সৃষ্টিকর্তা যেন সুখের মাঝে কেবল এই একটা জিনিসই সৃষ্টি করছে। এ যেন স্বর্গের নাচমহল। মিলনের মুহুর্তগুলো সে যেন স্বর্গের নর্তকী সেজে জলসা ঘরে নাচছে।

আজ ঢাকাতো কাল খুলনা। আজ মৌসুমীতেতো কাল জোসনায়, সাধনায়, দুর্গায়। সকালের সূর্য যতটা স্বপ্ন নিয়ে উদিত হয় তার চেয়ে বেশি স্বপ্ন দিয়ে অস্ত যায়। ইংরেজ জাতি বেলেল্লাপনা আর ব্যাবিচারেই বেশি আনন্দ পায়। একদিকে ইংরেজি চোখ অপর দিকে মধুরসে সিক্ত কামিনীর শীতল নরম তুল তুলে দেহ।

এ যেন ব্রেডের শত জনমের সাধনা। লনে সাঁতার কাটা, পার্কে বসে ঠোঁটে ঠোঁটে মিলন আর হোটেলের বেডে মধু-যামিনী যাপন। মা পাখিটি যেমন তার বাচ্চাদের খাবার খাওয়ায় ওদের জীবনও ঠিক তেমনি হয়ে উঠছে। কামিনীকে দেখল মনে হয় মেয়েদের ুধা পেটে নয় মনে। ওরা যত খাদ্য চায় তার চেয়ে বেশি চায় তৃপ্তি।

ওরা হতে চায় খেলার পুতুল। সব সময় ওদেরকে হাতে হাতে রাখ। ওদের যত নাড়বে তত জৌলুস ফুটবে। কামিনীর অলসতা এখনও কাটেনি। ব্রেড ওর পাশে শুয়ে ওকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

বুকের উপর উঠিয়ে বলল, “হায়! ডার্লিং, তুমি যেন দিন দিন অধিক সুন্দরী হয়ে উঠছ। ” সৌন্দর্যের প্রশংসায় সকল মেয়েরা দুর্বল। কামিনীর ঘুম ঘুম চোখে হাসি ফুটল। বলল, “আমরা যদি সারা জীবন এমন মধু-যামিনী যাপন করতে পারতাম কেমন হোত?” “দারুণ। পৃথিবীকে আমরা অনন্ত যৌবনা করে রাখতাম।

” “চলো না, আমরা বিয়ে করে ফেলি?” “এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আমিতো আছি। তুমিও কি কম আদর পাচ্ছ?” কামিনীর এ আদর একদিন হৃদয়ের কাছেও ছিল। হৃদয় এখন পথিক। কামিনীকে এতো ভালোবেসেছিল যে তা ভোলা গেল না। ও তার সারা জীবনের কথা ভাবছে।

কত কষ্ট করে লেখা পড়া শিখেছে। কলেজের চাকরি নিয়েছে। বাবা মা আদর করে বিয়ে দিয়েছিল। বিয়ের সে দিনগুলো কত মধুর ছিল। দু’জন দু’জনকে না দেখলে যেন পাগল হয়ে যেত।

কত স্মৃতি, কত প্রতিশ্র“তি সে জীবনের। দু’জনের বন্ধন থাকবে অনাদীকাল। এই সুখের মুহুর্তে তন্ময় এসে ধরা দিল তাদের বন্ধনে। স্বর্গের দোলায় দুলতো একটি কঁচি কোমল শিশু। কোথা থেকে একজন লোক এসে প্রলোভন দিল চাকরির।

কামিনী রাজি হয়ে গেল। শুরু হলো সংশয়, সন্দেহ আর ঘর ভাঙ্গার যুদ্ধ। নারী; কিছু কিছু নরের জীবনে কেবলি তৃষ্ণা জাগায় তৃপ্তি দেয় না। শুরু হলো হৃদয় চৌধুরীর পথ চলা। এ পথ সুখ, তৃপ্তি আর ভোগের নয়।

এ জীবন কোন জীবনেরই নয়। এ পথ অন্তহীন। দিন গত হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর স্বপ্ন, সাধ, সাধনা। তন্ময় বেশ বড় হয়েছে।

এতিমখানা থেকে সে বেরিয়ে যাবে। মাতাজি বলল, “তন্ময়, তুমিতো গানে খুব নাম করেছ। একটা গান শুনিয়ে যাও না। ” “আমি গান গাইব মা? তবে আজ আর কোন বাদ্যযন্ত্র বাজবে না। ওরা নীরবে থাকবে।

ওদের আমি দেখিয়ে দিতে চাই যন্ত্র ছাড়াও মানুষ গান গাইতে পারে। ” সবাই ভিড় করল। তন্ময় গান ধরল। “মা বলে আর ডাকব না মা-আ-আ জানব আমার মা মরেছে, কেউ শুধালে বলব তারে, বলব আমার মা মরেছে। ” তন্ময়ের দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।

সে অশ্র“ বাধন হারা। ঝরে যাওয়ার জন্যই তার সৃষ্টি। সারা এতিমখানা যেন মাতৃøেহের ব্যাকুলতা আর বেদনা জেগে উঠল। সকল শিশুকে মনে করিয়ে দিল মায়ের আদর, সোহগ, ভালোবাসা। তন্ময় মাতাজিকে প্রণাম করে, “এই তোমাকে শেষ বারের মত মা বলে গেলাম।

আমার মা ডাকের সমাপ্তি হলো। ” তন্ময় বেরিয়ে গেল। গেটের বাইরে দাঁড়াল। সকল শিশুরা ওর পানে তাকিয়ে। ও অশ্র“ সজল চোখে সকলের দিকে তাকাল।

এ অশ্র“ সজল চোখেই একদিন এ আশ্রয় পেয়েছিল। চোখের জল মুছিয়ে বেরিয়ে গেল। কয়েক দিন পরে এতিমখানায় এক মহিলা এলো। তার যৌবন গত হয়েছে। চেহারার উপর বড় বড় দাগ।

কাপড়ের জৌলুস একেবারেই নেই। সোজা এতিমখানার ভিতর ঢুকে গেল। মাতাজিকে বলল, “তন্ময় নামের একটা ছেলে থাকে না?” “দুঃখিত, তন্ময় কিছু দিন আগে চলে গেছে। ” “চলে গেছে?” “হ্যাঁ। ” “কে নিয়ে গেছে?” “কেউ না।

সে নিজেই চলে গেছে। তাছাড়া এতিমদের কেউ থাকে না। আপনি কে?” “ওর মা। ” “যার মা আছে সে কোন দিন এতিম হয় না। আপনি পারলেন নিজের রক্ত মাংস আর নাড়ী ছেড়া ধনকে এতিম করতে? আপনার জীবনে কিসের প্রতি এতো লোভ ছিল যে তন্ময়ের মত ছেলেকে ফেলে যেতে পারলেন।

তন্ময় হিরের টুকরো। আমার সব কিছুর বিনিময়ও যদি অমন একটি ছেলে পেতাম আমার জীবন স্বার্থক হোত। জীবনে এমন কিছুর লোভ আছে যা পরিহার করতে হয়। যা নিয়ে বেশি ভাব্বে তার প্রতি জীবনের চাহিদা বেড়ে যাবে। ” কামিনী এতিমখানা থেকে বেরিয়েই পিছন ফিরে তাকাল।

কে যেন তাকে মা বলে ডাকছে। সেই শিশু কিশোরের একটি প্রতিধ্বনি যা প্রত্যেকটি নারীকে আবেগ আর উচ্ছ্বাসে ভরে দেয়। ০৭.১২.২০০৬ইং, নিজবাড়ি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।