আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেয়েরা ও কোরবানীর গরু !

চাচি’র মেয়ে লতাকে দেখতে,ছেলে পক্ষ আসবে। তাই চাচি’র ফোন পেয়ে, দেশের বাড়ি এসেছি। চাচা নেই,তাঁর দুটি মেয়ে। অভিবাবকের মত দায়িত্ব নিয়ে,ছেলে পক্ষের সাথে কথা বলতে হবে। সে জন্যে আমার আসা।

দিন দিন গ্রামের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। নিত্য নতুন বিল্ডিং চোখে পড়ছে। ছেলের বাবা বলেছিল, বারোটার মধ্যে আসবে। এখন বাঁজে, একটা দশ। এখনও আসছে না! বাড়িতে অনেকদিন পর এসেছি।

নানা জন আসছে দেখা করতে। নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হচ্ছে। দেশের খবর কি ? রাজনীতির খবর,জিনিষপত্রের দাম কমবে কি ? ইত্যাদি ! গ্রামের মানুষের ধারণা, ঢাকা থাকি বলে, সব খবর আমার পকেট’এ ! কে একজন এসে বলল, ছেলেকে নিয়ে ছেলের বাবা এসেছে। উঠোনে চেয়ার পেতে লোকজন নিয়ে কথা বলছিলাম। উঠে চাচি’র ঘরে গেলাম।

ছেলে, ছেলের বাবা ও সাথে আসা অন্যান্যদের সাথে পরিচিত হলাম। দেরি হয়ে গেছে বলে, আগে ভোজন শেষ করার জন্য, পর্দার আড়াল থেকে চাচি আমাকে ইশারা করছে। আয়োজনের শেষ নেই। মুরগির রোষ্ট,গরুর মাংসের রেজালা,পোলাও, সালাদ,মতলবের বিখ্যাত গান্ধী ঘোষের ক্ষির ও দধি। চাচি’র আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে,আজই লতার বিয়ে ! ভোজন শেষে লতাকে দেখার পালা।

ছেলেসহ আমরা যে ঘরে কথা বলছিলাম,সেখানে লতাকে আনা হলো। লতার সাথে ওর ছোট বোন ও বাড়ির এক ভাবি। অপরিচিতদের মাঝে এসে, লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে লতা। ছেলের বাবা, বোন ও ভাইয়েরা নানা ভাবে লতাকে দেখছে। বোন লতাকে দাঁড় করিয়ে, শাড়ি উপরে তুলে পা দেখছে ! ঘোমটা সরিয়ে মাথার চুল দেখছে।

আমার মধ্যে একধরণের যণ্ত্রণা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হলো, কোরবানির হাটে যেয়ে গরু যেভাবে দেখি, লতাকে ছেলে পক্ষরা সেভাবে দেখছে… ! অবশেষে দেখা শেষ। মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। লতা উঠে, অন্য রুমে চলে গেল। এবার কথা বলার পালা।

ছেলের বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “ মেয়ে আমাগো পছন্দ অইছে। আমাগো লগে কথার মিল অইলে, আজই আকদ কাবিন অইবো। ” তারপর ছেলের বাবা যা বললেন, তার সার-সংক্ষেপ হচ্ছে,‘মেয়েকে সাঁজিয়ে দিতে হবে। ছেলের ব্যবহারের জন্য যা যা দরকার, তা দিতে হবে। বাজারে ছেলের, ছোট একটি দোকান আছে।

সে দোকানে টাকার অভাবে, পর্যাপ্ত মালামাল কিনে, ভালভাবে ব্যবসা জমিয়ে তুলতে পারছে না। নগদ টাকা দিতে হবে। টাকার অংক সে বলেনি। আমার বোন লতা, মেট্রিক পাশ করেছে। চাচার মৃত্যুতে, মেয়ের পড়াশুনাটা চাচি, এগিয়ে নিতে পারেনি।

আমি জানি ছেলের বাবার চাহিদা, চাচি মিটাতে পারবে না। মেয়ের বিয়ের জন্য যা জমিয়েছে,তাতে লতার গয়না ও বিয়ের খরচ বড়জোর হবে। তাছাড়া লতার চেয়ে দু’বছরের ছোট বোনটি’র কথাও ভাবতে হবে। ছেলের বাবার কথা শুনে, আমি বললাম,“আপনি তো যা চাচ্ছেন, তা যেীতুক। ” ছেলের বাবা জিভেকাঁমড় দিয়ে বললেন “যেীতুক ন্যায়া অপরাধ।

আমি যেীতুক চাইবো ক্যান ? আমি ত আফনাগো মাইয়ার সুখের কথা চিন্তা কইরা, কিছু জিনিষ আর ছেলের দোহানের ট্যাহা…” আমার কিছু সমস্যা আছে। রেগে গেলে, নিজেকে স্থির রাখতে পারি না। মুখে যা আসে, তাই বলি। স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করিনা। আজও তেমন হলো।

হঠাৎ আমি রেগে গেলাম। রেগে যেয়ে জোরে চিৎকার করে বলতেলাগলাম, “আপনি যেীতুক চান ? সাথে করে যে স্যাম্পল এনেছেন, আপনার ছেলে, তার কানে সাবানের ফেনা এখনও লেগে আছে। প্যান্টের জিপার অর্ধেক খোলা। আপনি অন্যের কাছ থেকে কি যেীতুক চাইবেন,এই ছেলেকে বিয়ে করাতে উল্টো আপনার, মেয়ের বাবাকে বিয়ের খরচাদি দেয়া উচিত। ” ছেলের বাবা উত্তেজিত হয়ে, দাড়িঁয়ে গেলেন।

উপস্থিত অন্যরা আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে। ছেলের বাবা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। সাথে ছেলেসহ অন্যরা। যেতে যেতে ছেলের ভাইয়েরা উত্তেজিত হয়ে,আমাকে নানা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। চাচি এসে, আমার সামনে দাঁড়ালেন।

চাচির চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি, তিনি আমার প্রতি বিরক্ত। সম্পর্ক ও আমাকে ভাল করে, চিনে জানে বলে কিছু বলছে না। আমি চাচির সামনে অস্বস্থি বোধ করছি। তাই আমি বললাম“ চাচি আমি এখন ঢাকা চলে যাব। ” “তুমি না বলেছিলে,আজ রাতটা বাড়িতে থাকবে ?” কষ্ট ও হতাশায় নিমজ্জিত আমার চাচি, আস্তে আস্তে বললেন।

“না চাচি,আবার আসবো। ” বলে লতাকে বললাম, আমার ব্যাগটা এনে দিতে। লতা ব্যাগটা নিয়ে এসে, আমার হাতে দিল। ওর চোখে মুখে যন্ত্রণা স্পষ্ট। চোখে পানি ভরে আছে।

কিন্তু গড়িয়ে পড়ছে না। নানা প্রশ্ন আমার প্রতি কিন্তু করতে পারছে না। আর দেরি না করে, ব্যাগ হাতে বেড়িয়ে আমি হাঁটছি। গ্রামের রাস্তা। দু’পাশে গাছের সারি।

শরীর জুড়িয়ে দেয়া বাতাসের আমেজ নিয়ে, আমি হেঁটে চলেছি …। আর মনে মনে একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করাছ, আমি অপকবি ‘শওকত হোসেন বাদল। ’ যেীতুক: ওই ব্যাটারে ধর, মেয়ের বাবা থেকে, চায় যে কর ! বলে, মেয়েকে কিছু দিলে, হয় না যেীতুক ? তুই কি শালা করিস, আমাদের সাথে কেীতুক ? নতুন প্রজন্ম ওই দেখ- আসছে তেড়ে.. পালিয়ে পাবি না পার, লেজটি নেড়ে.. খেতে হবে কিল, ঘুষি আর চড়। ওই ব্যাটারে ধর… মেয়ের বাবা থেকে, চায় যে কর ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.