আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ -- শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা গুজব নিয়ন্ত্রণে বৈঠকঃ বৈঠকের মিষ্টান্নটা বড্ড তেতো ছিল তবে পানীয়টা বেশ সুস্বাদু ছিল !

আমারোতো কিছু বলার থাকতে পারে ! শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সহিত এসইসির শ্বাসরুদ্ধকর রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সকল প্রতিষ্ঠানের বড় বড় হর্তাকর্তারা আসিয়াছেন। (এসইসি) এর চেয়ারম্যান কে ক্লান্ত দেখাইতেছিল। তিনি দুর্বল কন্ঠে বলিলেন, "এইবার তো বুঝলেন আসল কালপ্রিট কে ?" (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহসাই যেন সব বুঝিয়া উঠিলেন। উল্লসিত কন্ঠে বলিলেন, "আলবৎ বুঝেছি !" (সিএসই) সভাপতি কিছু বুঝিয়া না উঠিয়াই বলিলেন, "আলবৎ বুঝেছি।

আলবৎ বুঝেছি। " (ডিএসই) সভাপতি উসখুস করিতেছিলেন। গতরাত হইতে তাঁর উদারাময় দেখা দিয়েছে। নিতান্তই চেয়ারম্যান সাহেব আজ আবার বৈঠকের কথা না বলিলে তিনি হয়ত সারাদিন তার শয়নকক্ষস্থ পায়খানাতেই কাটাইতেন। সদ্য গতকল্যই বৈঠক হইয়াছে।

অদ্য আবার বৈঠকের কি দরকার ছিল ? তাঁর এখন বদ্ধমূল ধারনা হইতেছে গতকালের মিষ্টান্নই তাঁর উদারময়ের নিয়ামক হিসেবে কাজ করিয়াছে। গতকল্যের মিষ্টান্ন তক্ষুনি তাঁর নিকট বড্ড তেতো মনে হইতেছিল । তাহারপরেও খাইতে ভালই বোধ হচ্ছিল বলিয়া সবকয়টাই খাইয়া নিয়াছিলেন। কারন পানীয়টা বেশ সুস্বাদু ছিল। অমন সুস্বাদু পানীয় ইতোপূর্বের কোনো বৈঠকে দেয়া হয়নাই।

তবে এখন বুঝিতে পারিতেছেন কি ভুলটাই না হইয়া গিয়াছে ! আজ এখনো পর্যন্ত মিষ্টান্ন ও পানীয় আসিয়া পৌঁছায় নাই দেখিয়া আশ্বস্তবোধ করিতেছিলেন। এই তেতো মিষ্টান্ন খাইয়া গতকল্যের বৈঠকের সকলেরই তো একই অবস্থা হইবার কথা। সকলের মুখপানে চাহিয়া তিনি অবশ্য তেমন কিছু বুঝিতে পারিলেন না। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি বরাবরই বালকসুলভ চপলতায় ঠোঁটকাটা। তিনি মুখ খিঁচিয়ে বলিলেন, "যা বলিবেন জলদি বলুন।

আমি আর আমার বেগ আর আটকে রাখতে পারছিনা। " বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলিলেন, "স্যার আমিও সহমত পোষণ করছি। আমারও একই অবস্থা। " চেয়ারম্যান সাহেব এবার খানিক রাগিয়া বলিলেন, "খামোখা বাহাস করছেন কেন? আমাদের সকলেরই একই অবস্থা। গতকাল সারারাত পায়খানায় বসিয়া বসিয়া কে এই অবস্থার জন্যে দায়ী সেটাই আমি বের করেছি।

তা বলার জন্যই জরুরী বৈঠক ডেকেছি। নইলে তো গতকাল বৈঠক করে আজ আবার বৈঠকের কি দরকার ছিল??" এবিবি সভাপতি চুপসে গিয়া বলিলেন, "তা স্যার কে দায়ী ?" আইসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন, "কে দায়ী ?" সিএসই সভাপতি বলিলেন, "কে দায়ী?" এবিবি সভাপতি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাইলেন। ডিএসই সভাপতি মিটিমিটি হাসিয়া ভাবিবেন, "যাক সকলেরই তাহলে এই অবস্থা। মিষ্টান্নটা আসলেই তেতো ছিল ! কিন্তু পানীয়টাতো সুস্বাদু ছিল !" চেয়ারম্যান সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলিলেন, "আমাদের এহেন তরল অবস্থার জন্যে দায়ী আর কেউ নয়, এর জন্য কেবল গুজবই দায়ী। " এবিবি সভাপতি টেবিল চাপড়ে চিৎকার করিয়া উঠিলেন, "গুজবই এর জন্য দায়ী।

" আইসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলিলেন, "সকল দায় গুজবের। " সিএসই সভাপতি বলিলেন, "সকল দায় গুজবের। " ডিএসই সভাপতির চক্ষু চড়কগাছ ! তথাপি তিনি তাঁর মনোভাব গোপন করিয়া অস্ফুট স্বরে বলিলেন, “ উদারাময়ের জন্যে স্যার গুজব দায়ী ? ” চেয়ারম্যান সাহেব বলিলেন, “ সে ছাড়া আর কে? আমরা তো গতকাল মিষ্টান্ন আর পানীয় ছাড়া আর কিছু খাইনি ! গুজবই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই তরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ” এবিবি সভাপতি মনে মনে ভাবিলেন, “কিন্তু গতকালের মিষ্টান্নটাতো বেশ তেতো ছিল। আমিতো ভাবছিলুম………তাহলে গুজবই দায়ী ! হুম্মম্ম।

” আইসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভাবিতে লাগিলেন, “গুজবই দায়ী ! আমিতো ভেবেছিলাম তেতো মিষ্টান্ন দায়ী। কিন্তু পানীয় তো বেশ সুস্বাদু মনে হয়েছিল !” সিএসই সভাপতি ভাবিতে লাগিলেন, “যাক বাবা ! সব দায় তাহলে গুজবের। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ” ডিএসই সভাপতি বিড়বিড় করিতে লাগিলেন, “কিন্তু পানীয়তো বেশ সুস্বাদু ছিল !” চেয়ারম্যান সাহেব এবার উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, “তাহলে বৈঠক শেষ। এখানে আমাদের আর কিছুই করার নেই।

সবাই বাড়ি যান। ” এসইসির মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনিতেছিলন। চেয়ারম্যান সাহেব আচমকা বৈঠক শেষ করিয়া দেয়ায় তিনি সসব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “স্যার, বাহিরে সব ছাংবাদিকরা বসে আছে। শেয়ারবাজারের নিয়ে সর্বশেষ বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হল সবাই এখন জানতে চাইবে। আমি কি বলব? আর অর্থমন্ত্রী সাহেবের বক্তব্যও তো নেয়া হয়নি।

” চেয়ারম্যান সাহেব তাঁহার মুঠোফোনটি বাহির করিয়া বলিলেন, “ভাল কথা বলেছ। অর্থমন্ত্রী। হ্যালো স্যার, আসসালামু আলাইকুম। স্যার এসইসির চেয়ারম্যান বলছিলাম। ” অর্থমন্ত্রী গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলেন, “ওয়ালাইকুম সালাম।

সংক্ষেপে বল। ” “স্যার শেয়ারবাজার নিয়ে একটা এইমাত্র একটা বৈঠক……….” এতটুকুন শুনিয়াই অর্থমন্ত্রী তেলে বেগুনে জ্বলিয়া উঠিলেন, “আবার সেই শেয়ারবাজার ?? আমি তাঁর ব্যাপারে আর কিছুই বলবনা। কিছুই না। আমার মান সম্মান কিছুই কি সে বাকি রেখেছে? আমি ‘ক’ বললেও সে বেয়াদবি করে, আমি ‘ৎ’ বললেও সে বেয়াদবি করে। তাই আমি আর কিছুই বলবনা।

যত্তসব ফটকাবাজ। শোনেন শোনেন। আমি কিন্তু কিছুই বলিনি। কিছুই না। আমার সাথে আপনার কোনো কথাই হয়নি।

বুঝতে পেরেছেন কি বলতে চাচ্ছি?” চেয়ারম্যান সাহেব পাংশু মুখে বলিলেন, “জ্বি স্যার। বুঝতে পেরেছি। ” “ওকে বাই। ” অর্থমন্ত্রী লাইন কাটিয়া দিলেন। মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক বলিলেন, “স্যার, ছাংবাদিকদের কি বলব এখন?” চেয়ারম্যান সাহেব নাকমুখ খিঁচিয়ে বলিলেন, “কি বলবেন মানে কি?? এতদিন যা বলেছেন তাই বলবেন।

আস্থার সংকট, তারল্যের সংকট এগুলো বলবেন। আগামীকাল আবার বৈঠক বসবে কি প্রতিকার করা যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য। এতদিন ধরে আছেন আর কি বলবেন সেটাও আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে ?? যত্তসব ফটকাবাজ। আমি যাচ্ছি। বেশ বেগ পাচ্ছে।

দেখেন আবার, ফটকাবাজ বলেছি এটা যেন ছাংবাদিকদের কানে না যায়। ” মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক গজরাইতে গজরাইতে ভাবিলেন, “ছাংবাদিক গুলো একেকটা যা বিচ্ছু হয়েছে ! পুরানো ডাল আর গেলানো যাবেনা। নতুন ডাল দিতে হবে। বলতে হবে, আস্থার সংকট, তারল্য সংকটের পাশাপাশি এখন গুজবও দায়ী। সব দায় গুজবের ঘাড়েই তুলে দিতে হবে।

কাল আবার বৈঠক। ” চেয়ারম্যান সাহেব বেশ তাড়ার সহিত বাহির হইয়া গেলেন। বাকিরাও তাহাকে অনুসরণ করিয়া একে একে বাহির হইয়া গেল। তবে সকলের মনেই উঁকি দিতেছিল, “গুজবই যদি দায়ী হয় তাহলে আমরা এতদিন আর কি ঘোড়ার ঘাস কাটিলাম ! কিন্তু, তেতো মিষ্টান্নর কি কোনোই দোষ ছিল না ? তবে যাই হোক, পানীয়টা বেশ সুস্বাদু ছিল ! ” শেয়ারবাজারমূল সমস্যা গুজব, তারল্য ও আস্থাহীনতা : এসইসি ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।