আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নব্য সুশীলদের উদ্ভট প্রশ্ন

শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... ভারতীয় পণ্য আমাদানির পক্ষে দাঁড়ানো কিছু সুশীল ভদ্রতার মোড়কে সুশীলীয়তার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা নানা প্রশ্ন করে এই যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধকরার নানা অপকৌশল করছে। "আসুন ভারতীয় পণ্য বর্জন করি[আমাদের প্রতিবাদ] " এই গ্রুপে কাজ করতে গিয়ে কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় হয়েছে। এই সব প্রশ্ন নিয়ে আগে কখনো চিন্তা করার সুযোগ হয়নি। তাই এসব গতানোগতিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা দরকার বলে মনে করিছি।

[আমার নিজেরও বিষয় গুলো পরিস্কার হওয়া দরকার] সুশীলীয়দের আরেক হিপোক্রেসি হচ্ছে তারা কোন দেশের পণ্য বর্জন নীতিকে প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ বলে থাকে। আমরা কেন তাদের পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত করবো? তার চেয়ে বরং আমরা নিজেদের পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। হিপোক্রেসিটা কোথায় ,দেখলেন? সুশিলীয়তা কত সুন্দর প্যাকেটজাত করেছে স্বদেশী মোড়কে! অথচ তারা ভাল করেই জানে। আমাদের দেশের অনেক পণ্যই ভারতে ঢুকার অনোমোদন পায়না। তাদের টিভি চ্যানেল গুলো এই দেশে হরদম দেখানো হচ্ছে অথচ আমাদের দেশের টিভি চ্যানেল গুলো তাদের দেশে ঢুকার কোন সুযোগ নাই।

কি প্রহসন? তিস্তা পানী চুক্তির বিরুধীতা করে কলকাতায় আন্দোলন হয়। এসব কি এই নব্য সুশীলরা জানে না? তার পরেও তাদের সাথে এই সুশিল আচরন যারা করতে চায় তাদের দেশপ্রেম নিয়ে আমরা প্রশ্নতো করতেই পারি? আরো কিছু উদ্ভট প্রশ্ন হয়তো আপনাকে শুনতে হবে। ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করতে চান না, তবে রবীন্দ্রনাথ পড়া বাদ দেন? সুনীল পড়া বাদ দেন? রবীন্দ্র সঙ্গীত না শুনে দেশের গুন শুনোন? তাদের বই এদেশে না আসলে আমাদের প্রকাশনা উন্নতি করতো না? এবার বুঝেন ঠেলা? এই সুযোগে সুশীলরা রবীন্দ্রনাথকে পণ্য বানিয়ে ছেড়েছে। আমরা ভাল করেই জানি জ্ঞান,সৌন্দর্য্য এসব কোন দেশের সীমানার কাঁটাতার দিয়ে বাঁধা যায়না। যদি যেত তবে আইনস্টাইন হয়ে যেত কেবল জার্মানির সম্পদ? আসলেই আইনস্টাইন,নিউটন এর তত্ত্ব কি কোন দেশের? পিকাসো কি কেবল দেশজ সম্পদ? গ্যাটো,সেক্সপিয়ার সৃষ্টি কি কোন দেশের? এসব প্রশ্ন খুবই স্থুল মানষীকতার লক্ষন।

এখন থেকে বলতে হবে এসব হলো সুশীলীয় মানষীক বিকলাঙ্গতার লক্ষন। নজরুল পৃথিবীতে একজনই হয়, রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীতে একজনই, মার্কেজ পৃথিবীতে একজনই, লালন পৃথিবীতে একজনই। এসব পৃথিবীতে দুইটা হয়না। তাই তাদের বিকল্প কেবল তারাই। অন্য কেউ নয়।

একটা শিল্পসাহিত্যেরও কোন বিকল্প অন্য কোন শিল্পসাহিত্য হয়না। তাই আমাদের সেলিম আল দীন তুলনা কেবল সেলিম আল দীন। শাহ-আব্দুল করিমের তুলনা কেউ নেই। ......................... এসব তো চিপস নয় যে লেইস এর পরিবর্তে সান নিলাম। বাটিকার পরিবর্তে মেরিল নিলাম।

তেম-ই সৈয়দ সামসুল হকের পরিবর্তে কখনো সমরেশ মজুমদার হয়না। শামসুর রাহমানের পরিবর্তে কখনো শক্তি চট্ট্যেপধ্যায় হয়না । আখতারোজ্জামান ইলিয়াসের পরিবর্তে কখনো শীর্ষেন্দু হয়না। আমের বিকল্প কখনো কাঠাল হয়না। অক্সিজেনের কাজ নাইট্রোজেন দিয়ে হয়না।

এসবই সুশীলরা জানে। ভাল করেই জানে। তবু কেন তারা বিরুধিতা করে? তারাও যে অন্ধ এসব অন্ধত্ব অন্যের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য এসব উদ্ভট চশমা পড়ে থাকে। গরিব মানুষ যেটা সস্তায় পাবে তাই কিনবে। তারা দেশি কিংবা বিদেশি বোঝেনা।

তাদের আপনি কি ভাবে বোঝাবেন? এই শেষ প্রশ্নবোধক বাক্যটাতেই আসল ব্যপার। আমি বা আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছি। কেন বলছি? একটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অধিকতর শোচনীয়তা থেকে রক্ষা করতে। এবং সীমান্তে বিএসএফের হত্যা কান্ডের প্রতাবাদে। আমরা এই রাষ্ট্রের নাগরিক ,আমরা দেশকে ভালবাসি।

একজন দেশপ্রমীক হিসেবে এটা আমার,আমাদের দ্বায়িত্ব। তাই আমরা এবং আমাদের চারপাশের মানুষকে ভারতীয় পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করি। দেশি পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করি। কিন্তু আপনি কোন পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন তোলছেন? আমাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করে থাকলে প্রশ্নের শেষ বলতেন কি করে বাধা দেব?কিন্তু তা আপনি ,আপনারা করেন না। তাহলে সত্য করে বলেনতো আনারা কাদের স্বার্থে কাজ করছেন? কোন পণ্য ব্যবহার যত বাড়বে তার উৎপাদন ততই বাড়বে।

উৎপাদন বাড়লে কমবে উৎপাদন খরচ। আশা করতে পারি মানও বাড়বে। এখন আমরা যদি চিন্তা করি উৎপাদন না বাড়িয়ে কেবল খরচ কমাবো তা কিন্তু সম্ভব নয়। বিশ্ব পূঁজি বাজারে বড়বড় কোম্পানি গুলো ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকে। যত প্রতিযোগি কমিয়ে দেয়া যায় ততই একচেটিয়া ব্যবসা করার পথ পরিষ্কার হয়।

তাই বড় পূঁজিপতিরা একটা নিদ্রিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য বাজারে ছাড়তে পারে। ( বহুজাতিক কোম্পানি গুলো এক ব্যবসা থেকে অন্যখানে সহযোগিতা করতেই পারে। শুধু পারে না করছে। যেমন আমাদের দেশের একটা গ্রুপ অবকোম্পানির একটা সংবাদ পত্রও দরকার। একটা টিভি চ্যানেলও দরকার।

) ছোট কোম্পানি গুলো পূঁজি স্বল্পতার জন্যএই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনা। নিজেরা বিলুপ্তির পথ ধরে আর বড় কোম্পানিদের একচেটিয়া বানিজ্যের পথ প্রসস্থ করে দেয়। এসব বুঝতে তত্ত্ব আওরানোর কোন দরকার নেই। কেবল চোখ কান খোলা রাখলেই বুঝা যায়। প্রতিযোগীকে হারিয়ে দেবার পরে।

পণ্যের দাম বাড়িয়ে সুদে এবং আসলে পুশিয়ে নেয়। প্রতিদন্ধীকে হারানোর এই হীন কৌশল ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানির করতো। ভারতে যে সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এদেশে ব্যবসা করে। তাদের বড় বাজার দরকার। তাদের লোলোপ দৃষ্ট আমাদের দিকে।

তারা তাদের বাজারের সীমানা অতিক্রম করে আমাদের বাজারকে আয়ত্তে নিয়েছে। তাদের পণ্য আমাদের বাজার দখল করে নিচ্ছে। কোটি কোট ডলার আয় করে নিয়ে যাচ্ছে কাঁটা তারের ঐ পাড়ে। অথচ আমাদের সীমান্তে বসবাসকারী মানুষগুলো সারাক্ষন থাকে গুলির আতংকে। দেশমাতৃকার প্রশ্নে যদি কেউ সুশীলীয় কৌশল খাটাতে আসে তবে কারো পরনে ধুতি লুঙ্গি রাখা হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।