আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ বিমান বন্দর এবং বিমান : সব জানে বাবা শাহজালাল-পর্ব ২

প্রবাসে-পরবাসে : বিমান, নেড়ি কুকুর এবং যাত্রী-সেবা সমাচার। লেখাটি বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত হবার পর বিমানে কর্মরত কয়েকজনের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা জানান বর্তমানে বিমানের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। অতীতের সকল সরকারের ন্যায় দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি প্রাপ্ত, সরকার সমর্থিত ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পাইলট এসোসিয়েশন (বাপা), দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তা, বিমানবন্দর পুলিশ, দলীয় লোকদের তদ্বিরে বিমান এবং বিমান বন্দরের সকল সিস্টেম ভেঙ্গে পড়েছে। "একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট" বিমান বন্দরের গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন সর্বত্র হরিলুটে ব্যস্ত।

এখানে কেউ কারো কথা শোনে না। নিজদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে বড় ধরনের চোরাচালানি এবং চোরাচালানের মালামাল তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে বিমান বন্দর পার করে দিচ্ছে। কাস্টমস: বিদেশ প্রত্যাগত বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয়েশিয়া প্রত্যাগত শ্রমিকদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে। এসব প্রবাসী শ্রমিকদের প্রদেয় 'কাস্টমস পণ্য' সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না। আগত যাত্রীদের ব্যাগেজ তল্লাশির নামে কম্প্যুটারের এলসিডি মনিটর, টেপ রেকর্ডার, স্বর্ণ, প্রসাধনী, নানা 'House Hold' সামগ্রীর কাস্টমস দিতে হবে বলে আটকে রেখে নগদ নারায়ণের ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়।

বিনা কাস্টমসে মালামাল ছাড়ানোর জন্য দালাল চক্রের কথা পূর্বের পোষ্টে বলেছি। অপরাধের প্রকৃতি: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে সকল ধরনের আমদানিকৃত পণ্যের কাস্টমস শতকরা ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পণ্য ভেদে শুল্ক-কর, মূসক অনেক বেশি। চোরাচালানিরা গরম-মশলা, মুঠো ফোন, মুঠো ফোনের কভার, ব্যাটারি, শিশুদের কাপড়-চোপড়, যৌন উত্তেজক ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট, স্বর্ণ-গহনা, কৃত্রিম গহনা ইত্যাদি পণ্য বিনা কাস্টমস ঘোষণায় প্রবাসীদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে " Personal Affect" নামক আইনের অপ-ব্যবহার করে, দুর্নীতিবাজ চক্রের সাথে চুক্তি করে বিমানের ফ্লাইটগুলোতে তুলে দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরো জানায়, "নিয়ম অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা, কাস্টমস কর্মকর্তার সম্মুখে লাগেজ/ব্যাগেজ স্ক্যান করার নিয়ম থাকলেও চক্রটি তাঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মালামাল ছাড়িয়ে নিচ্ছে।

" পাচারকারী: শাহজালাল বিমান বন্দরকে পাচারকারীরা ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। হিরোইন সহ সব ধরনের নারকোটিক, বিদেশী মুদ্রা, কচ্ছপ, কষ্টি-পাথরের মূর্তি সহ দুর্লভ প্রত্মতাত্বিক সম্পদ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত ইত্যাদি দেশে পাচারের জন্য বিমান বন্দরকে ব্যবহার করে আসছে। মাঝে মধ্যে বেশ কিছু চালান নিরাপত্তা তল্লাশিতে আটক করা হলেও অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ব্যাগেজ ক্লেইম: প্রবাসীদের দোষ দিয়ে সূত্রটি বলেন অনেক যাত্রী মালামাল খুঁজে না পেলে বিমান বন্দরে রিপোর্ট করেন না। অনেকে ট্যাগ হারিয়ে ফেলেন, রিপোর্ট না করে বিমান বন্দর ছেড়ে চলে যান ফলে তাঁদের কিছুই করার থাকেনা।

প্রবাসী শ্রমিকদের উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, "প্রত্যেকে যেন নিজের ব্যাগেজ ক্লেইম পেপার হারিয়ে না ফেলেন। " ব্যাগেজ ক্লেইম করে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পাবার বিষয়টি মান্ধাতা আমলের বলেও জানান তারা। বলেন বিদ্যমান সিস্টেমে ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরন পেতে বিমান অফিসে যাওয়া-আসা করে কয়েক পাটি চপ্পল ক্ষয় করে ফেলেন। কার্টুন Wrapping: ছুটি কাটিয়ে ফেরত আসার সময় অনেক প্রবাসী শ্রমিক কার্টুনে করে মালামাল এনে থাকেন, যেখানে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের মালামাল থাকে। বর্তমানে কার্টুন Wrapping (প্লাস্টিক মোড়কে প্যাঁচানো) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এই Wraping জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ৩০০ টাকা। প্রবাসীদের জন্য কার্টুন Wrapping ফ্রি করা হোক। বিমানের আভ্যন্তরীণ রুট: বিমানের আভ্যন্তরীণ রুটে অনেক বড় বড় শিল্প কল-কারখানার মালিক চলাচল করে থাকেন বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট যাতায়াতকারীদের সাথে হুইস্কি,বিয়ার, সিগারেট সহ নানান নিষিদ্ধ দ্রব্য থাকে। উৎকোচের বিনিময়ে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা এসব পণ্য বিমান বন্দর পার করে ভ্রমণকারীর গাড়িতে তুলে দেয় বলে জানা গেছে। বিমানের কার্গো বা গোডাউন: বিমানের কার্গো বা গোডাউন ঘিরে বেশ কয়েকটি চক্র সংঘবদ্ধ বিভিন্ন মালামালের কার্টুন, প্যাকেট খুলে হাত সাফাইয়ের কাজটি বেশ ভালো ভাবেই করে যাচ্ছে।

জানা গেছে সরকার দলীয় নেতা/কর্মী পরিচয়ে দক্ষিনখান, টঙ্গী, ইব্রাহিমপুর এবং বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট এলাকার কতিপয় ব্যক্তি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বিমানের কাস্টমস অধিদফতর: বিমানের এয়ার-ফ্রেইটের কাস্টমস আদায়ের জন্য বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত কাস্টমস অধিদফতরের ঘুষ-বাণিজ্য চলছে প্রকাশ্যে। বিভিন্ন সি.এন্ড.এফ প্রতিষ্ঠান আমদানি-কারকদের আন্ডার ইনভয়েস, "Sample" বা "No Commercial Value" উল্লেখ করে কাস্টমসে কর্মরত পিওন-চাপরাশি-ইন্সপেক্টর-এসি(কাস্টমস)কে ঘুষ দিয়ে দিনের পর দিন অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। কোন কনসাইনমেন্টের দাবীদার পাওয়া না গেলে স্হানীয় সরকার দলীয় নেতা/কর্মী তা ছাড়িয়ে নিচ্ছে। এই ভবনটিকে ঘিরে অনেক অস্থায়ী ছালা-দিয়া,বেরা-দিয়া হোটেল গজিয়ে উঠেছে।

সি.এন্ড.এফ প্রতিষ্ঠানের লোকজন, বিভিন্ন কাজে আগত লোকজনকে ঘিরে এলাকাটি দেশী-বিদেশী মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল সহ সকল মাদক বিক্রির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো ঘুষ লেন-লেনদেনের সময় এরা নাকি নিজেদের মধ্যে খুব হাস্য-রসিকতাও করেও থাকে! তাদের প্রিয় ডায়লগ হলো, " সব জানে বাবা শাহজালাল"! ছবি: ইন্টারনেট  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।