আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাফন হচ্ছে খুন হয়ে যাওয়া তিতাসের : ঘুমের ভান না করে একটু নড়েচড়ে উঠুন[/sb

ভারতের পানি আগ্রাসনে খুন হয়ে গেছে এককালের প্রমত্তা তিতাস। নদীটিকে এখন স্থায়ীভাবে দাফন করার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। চালাচ্ছে ভারতীয়রা। দৈনিক আমার দেশ-এর এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে জানা গেছে, ভারতীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিতাসের বুকের ওপর দিয়ে সড়কের নামে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করেছে। এজন্য সিমেন্টের বস্তা, বাঁশের খুঁটি, ইট-বালু ও মাটি ফেলে এবং কিছু দূরে দূরে পাকা খুঁটি পুঁতে দিয়েছে ভারতীয়রা।

এ বাঁধের ওপর দিয়েই চলাচল করছে ১৪০ চাকার ভারি ট্রেইলার। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা বাঁধটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল সড়ক নামে ব্যঙ্গ করছেন। বাঁধের কারণে উজানের পানি নামতে পারছে না। উজান ও ভাটির লোকজনের যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় যানবাহন চলাচল করার জন্য তিতাসের পাশাপাশি অন্য ১৭টি নদী এবং খালও বাঁধ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

এ বাঁধগুলোকেও সড়ক হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পরিষদের মতো জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। প্রতিবাদে তত্পর দেখা যাচ্ছে না পরিবেশবাদী কোনো সংগঠনকেও। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেকে বরং বাঁধের পক্ষে কথা বলছেন। জেলা প্রশাসক বলেছেন, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারের ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে বলে এ ব্যাপারে তার নাকি কিছুই করার নেই।

অপ্রশস্ত সড়ক এবং নড়বড়ে ব্রিজ ও কালভার্টের ওপর দিয়ে ভারতের ভারী যানবাহন চলাচল করলে বাংলাদেশের সড়কপথগুলো অচল হয়ে পড়বে বলে আমরা প্রথম থেকে করিডোর দেয়ারই বিরোধিতা করে এসেছি। গত বছরের বিভিন্ন সময়ে আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানায় যাওয়ার পথে ভারতের ১৪০ চাকার কয়েকটি ট্রেইলার মহাসড়কে আটকে পড়ায় আমাদের অনুমান সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল। সেই থেকে শুরু হয়েছে সড়কের নামে বাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম। কেবলই ভারতের স্বার্থে নির্মিত হচ্ছে বলে কোনো নিয়মনীতিরই তোয়াক্কা করছে না ভারতীয় কোম্পানি। বাঁশের খুঁটি পর্যন্ত ব্যবহার করছে তারা।

এর ফলে দুর্ঘটনার তো বটেই, এমনকি সড়ক ভেঙে পড়ার ও দেবে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আমরা বেশি উদ্বিগ্ন আসলে অপরিকল্পিত ও আড়াআড়ি বাঁধের পরিণতি নিয়ে। বাঁধগুলোর কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে তিতাস এবং সেই সঙ্গে বেশক’টি ছোট নদী ও খাল। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটবে ওই অঞ্চলে, যার শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এমন এক অবস্থায় সমগ্র জাতির যখন প্রতিবাদে ফেটে পড়ার কথা তখন বরং উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।

জাতীয় স্বার্থকে পদদলিত করে ভারতের ইচ্ছা পূরণের জন্য একদিকে সরকার এগিয়ে চলেছে নির্লজ্জভাবে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোও অবলম্বন করছে বিস্ময়কর নীরবতা। আন্দোলন করা দূরে থাকুক, ঘটনাক্রমিক বক্তৃতা-বিবৃতির বাইরে ভারতকে করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো কথাও বেরুচ্ছে না নেতাদের মুখ দিয়ে। এ ধরনের নীরবতাকে নিঃসন্দেহে সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নেয়া যায়। এর পেছনে যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতের আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ পাওয়ার উদ্ভট আশাই কাজ করছে, সেকথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। হতাশ করেছে দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও।

রাজধানীতে একটি পুকুর ভরাট করলেও যারা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে, এমনকি উচ্চ আদালতে পর্যন্ত দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দেয়, সেই পরিবেশবাদীরাও রাজনৈতিক দলগুলোর মতোই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। আমার দেশ-এর জিজ্ঞাসার জবাবে মুখ রক্ষার জন্য কেউ কেউ জানিয়েছেন, এতদিনে তারা নাকি তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করছেন! প্রতিবাদহীন এ পরিস্থিতিরই সদ্ব্যবহার করছে সরকার। পরীক্ষামূলক পর্যায় পেরিয়ে সরকার এখন স্থায়ী ভিত্তিতে করিডোর দেয়ার জন্য জোর তত্পরতা চালাচ্ছে। আমরা সরকারের পাশাপাশি মৌনতা অবলম্বনকারী রাজনৈতিক দল এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। ভারতকে করিডোর দেয়ার এবং সে কারণে নদী ও খাল হত্যা করে বাঁধ নির্মাণের কর্মকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

এরই মধ্যে নির্মিত প্রতিটি বাঁধই অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা আশা করি, এখনও যারা জেগে থেকে ঘুমের ভান করছেন, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তারা একটু নড়েচড়ে উঠবেন। কৃতজ্ঞতা: দৈনিক আমার দেশ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.