আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্যোৎস্না ( পর্ব ১ )

বুড়িটি চেচিয়েই যাচ্ছে। আর অপর দিকে ১৪ বছরের সদ্য যৌবনে পা দেয়া মেয়েটি একটু হেসে ঘরের মেঝে ঝাড় দিচ্ছে। মেয়েটি জানে যে এ বুড়ির যখন কথা বলতে ইচ্ছে করে তখন এমন করেই বকতে থাকে। দেখে মনে হয় ঝগড়া করছে আসলে তা না। এক মনে কাল্পনিক কাউকে বকে যাচ্ছে।

তার উপর সে কানেও কম শোনে। মেয়েটি ঘর ঝাট দেয়া শেষ করে কোমড় থেকে ওড়নার প্যাচ খুলতে খুলতে বুড়িটির সামনে এসে ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি ধরে রেখে বলে, - দাদি, ঘর মোছা শেষ আর কি করব বলে দাও। বুড়িটি গজ গজ করতে করতে বলে, - এত বড় ধাড়ি মেয়ে হছু ওড়না বুকত থেকে ক্যামনে পরে? থাকবি না রে থাকবি না, ওড়না ঠিক কর মাগী। আর টিফিন ক্যারিয়ার নিয়া তোর মেম সাহেব এর অফিস এ দিয়ে আয়। মেয়েটি ঠোটের হাসিটি আর একটু বিস্তৃত করে টিফিন ক্যারিয়ার টা হাতে তুলে নেয়।

বুড়ির এমন মন্তব্যে সে এতটুকুও বিচলিত হয় না। এ বুড়ি বাড়ির কর্তির অনুপুস্থিতিতে এমন খারাপ কথা বললেও সে মানুষ হিসেবে ভালো। আর সে যেখানে থাকে সেখানে এর থেকে ঢের খারাপ কথা সে বোঝার আগের বয়স থেকেই শুনে অভ্যস্ত। আর যখন সে বুঝতে শুরু করল তখন যেন সেসব কথা তার গা সওয়া হয়ে গেছে। এ বুড়িটি তবু তাকে মায়ের মত কিছুটা শাসন করে।

কখন বা দুপুরে গোসল করে আসলে কাছে টেনে চুল বেনি করে দেয়। কি এক মমতায় আপন মনে কথা বলতে বলতে সে মাথায় তেল ঘষে দেয় যে তার চোখে পানি এসে যায়। বুড়িটির উল্টা দিক হয়ে থাকে বলে বুড়িটি তা দেখতে পায় না। মেয়েটির গায়ের রঙ শ্যামলা। দু ভ্রুর মাঝে লাল বড় একটা টিপ পরে সে।

লম্বা মুখ টির দিকে তাকালে মনে হয় কালো এক উজ্জ্বল পাথর কেটে তার মুখের প্রতিটি ভাজ তৈরি। আর কাজল দেয়া কালো চোখ দুটি যেন কালী ঠাকুর এর মত। কিন্তু ঠোটের কোনে সব সময় লেগে থাকা হাসিটি তার মুখে কালী ঠাকুর এর কাঠিন্যের বদলে এমন এক মায়া তৈরি করেছে যে তা ঠিক কি তা লিখে বর্ননা করতে পারছি না। রেল লাইন ধরে দক্ষিন দিকে প্রায় ১ কি। মি।

এসে ডানে মোর নিলেই উপজেলা সদর হাসপাতাল। সেখানেই তার মেম সাহেব চাকরি করে। রেল লাইন থেকে নেমে হাসপাতাল এর গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে তার রুম টি র সামনে গিয়ে দরজা ধরে উঁকি দেয়। ভিতরে ঢোকার সাহস হয় না ওর। এ নিয়ে যে সে খুব মন খারাপ করে তাও না।

জন্মের পর থেকেই সে জানে তাদের গোত্রীয় মানুষ রা মানুষ হলেও কিছু পোশাকী সভ্য মানুষ কোন এক অজানা কারনে তাদের কে নোংরা মনে করে। আর সে কারনেই তাদের কে বঞ্চিত করে রেখেছে প্রায় সব ধরনের মৌলিক চাহিদা গুলো থেকে। মৌলিক চাহিদা সে ঠিক না বুঝলেও সে জানে সে স্কুলে যেতে পারবে না। ওর খুব ইচ্ছে করে বেণি দুলিয়ে মেয়েরা স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ কাধে দল বেধে স্কুলে যায় তেমন করে তাদের সাথে স্কুলে যেতে। ইচ্ছে করলেই ত যাওয়া যায় না।

মেম সাহেব এর দরজায় দাঁড়িয়ে সুন্দর সাদা পোশাক পরা মহিলা দের দিকে তাকিয়ে এসব কথা সে আপন মনে ভাবে। তার মেম সাহেব কাজে ব্যাস্ত। তার পাশের মোটা করে মহিলা টি পানের পিক ফেলতে ফেলতে তার দিকে চোখ ফিরিয়ে কঠিন স্বরে বলে, - এই ঢুকবিনা ভেতরে ঢুকবি না। আর নাক সিটকিয়ে আড় চোখে তাকায় পাশের মহিলা টির দিকে যার জন্য ও ভাত নিয়ে এসেছে। সে জানে কঠিন ধরনের মহিলা সে।

তাই তার সামনে কিছু বলে না শুধু আড়ালে বা কোথাও কাউকে পেলেই বলে, - দেখছেন মালেকা আপার রুচি? ছিঃ, ওরা হাত দিলে সে জিনিস কি ভদ্র কেউ ধরতে পারে? আর সে কি না ভাত পর্যন্ত খাচ্ছে? ওয়াক থুঃ...... সবাই এ মহিলা র কথা ও ভাবে না ধরলেও এ ব্যাপারে কেন জানি এক মত না হয়ে পারে না। অনেকে বলে, - মানলাম তার স্বামী মারা যাবার পর এখন প্রায় একা। বাচ্চা গুলোও ভালো যায়গায় পড়ছে কাজ করছে তাই বলে এদের কে বাড়িতে নেয়া, এদের হাতে ভাত খাওয়া এটা কি ধরনের রুচি? এদিকে ও কে দেখে ওর মেম সাহেব মানে যার জন্য ভাত নিয়ে গেছে, সে এগিয়ে গিয়ে ভাতের বাটি নিয়ে ওকে ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাসার কাজের কথা কিছু বলে পাঠিয়ে দেয়। সে জানে ও কখন ও ভ্যান এ যাবে না, এমনিতেই ওদের কে ভ্যানে কেউ নিতে চায় না। আর এ রাস্তা টুকু হাটা এমন কোন কঠিন কাজ না।

এ টাকা টা ও কাছে রাখে। এ মেয়ে টির জন্য তাকে নিয়ে অনেক কথা হয় আড়ালে আবডালে কিন্তু সে এসব গায়ে মাখে না। শুধু তার একটা কথাই মনে হয়, আকার আকৃতি বা অন্যকিছুতে সে মানুষ ই। তাহলে সমস্যা টা কোথায়? অফিস থেকে বাসায় আসার সময় মেয়েটি রাস্তা থেকে তার সঙ্গী হয়। এ ভ্যানে সে উঠতে পারে।

তার মেমে সাহেব আছে তাই অন্য কেউ কিছু বলবে না এ ভরসা টুকু সে পায়। কন্তু রাস্তায় অনেক মানুষ ই যে এ ব্যাপারটা অন্যভাবে দেখছে তা বুঝতে পারে মালেকা। কিন্তু কোন এক অদম্য জেদ আর যৌক্তিক কিছু কারনে সে এসব দৃষ্টিকে সহজেই উপেক্ষা করতে পারে। স্বামীর মারা যাওয়ার পর সে দেখেছে কত মানুষ এর কত প্রতিশ্রুতি কিন্তু এ মেয়েটি তাকে কিছু না বুঝেই যেভাবে সাহায্য করে তা এসব মানুষ কখনই করেনি। কি আজব দুনিয়া যার কিছু নেই সেই আসে সব কিছু দিয়ে সাহায্য করতে আর যার আছে সে হারানোর ভয়ে কাছে ভেরে না।

আজ ভ্যানে উঠে মেয়েটির মন টা খারপ করে বসে আছে। অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে কান্নার ফোপানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মালেকা জিজ্ঞেস করল, - জ্যোৎস্না, কি হইছে রে? সে কথায় জ্যোৎস্না র কান্না আরো বেরে যায়। মালেকা কিছু টা ধমক দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করেন, - বল কি হইছে? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।