আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁচা মসজিদ নাকি পাকা মসজিদ? কোনটায় পূণ্য বেশি?

শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... বছর খানেক আগে একবার রাবার বাগান দেখতে গিয়েছিলাম। ভৈরব বাজারে( মৌলভীবাজা)। বাগানের ভিতর দিয়ে হাঁটছি। ছোট ছোট পাহার, কিছু দূর পরপরই বাড়ি ঘর দেখা যায়। প্রায় সকল বাড়িই মাটির দেয়াল টিনের অথবা ধানগাছ বা ছনের ছাওনি।

ঘর গুলো আকারেও খুব ছোট। মাটির ঘরের দেয়াল অনেক পূরু হওয়ায়। বাহিরে যতটুকো দেখায় ভেতরের ফাঁকা জায়গা থাকে অনেক কম। সেই তুলনা করলে ঘর গুলো বেশ ছোট ছোট। বিকালের আলো আঁধারিরে আমরা চারদিক দেখতে দেখতে হাঁটি উদ্দেশ্যহীন ভাবে।

কাজ নেই বলেই এভাবে ঘুরতে যাওয়া। এই উঁচু নিচু পথের পাশেই দেখি এটা ইটের ঘর। এখানের বাড়ির ঘর গুলো থেকে কিছুটা বড়। লাল মাটির রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আমরা কথা বলছিলাম বৃষ্টি হলে এই পথের কি অবস্থা হবে এই নিয়ে। নিশ্চয় ভয়াবহ অবস্থা হয়।

পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, এই রাস্তা পাকা হওয়ার আপাদত কোন সম্ভাবনা নেই। এই পাহাড়ি রাস্তায় (পায়ে হাঁটা পথ)বাগানের বাইরে থেকে বয়ে ইট নিয়ে আসা হয়েছে ঘর করার জন্য। এই ঘরের মালিক নিশ্চয় প্রতিবেশীর তুলনায় ধনী মানুষ? আমার কৌতুহল হলো। আরো কাছে গেলাম। ঘরটি ইটের তৈরি হলেও খুবই করুন অবস্থা,দেয়ালে প্লাস্টার করা হয়নি, দরজা, জানালায় চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখা।

দেখে বোঝা যায়, ইট বালি সিমেন্ট যত কম পারা যায় তার চেয়ে কম ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁশের খুটির উপরই টিনের চালা দেয়া আছে, বাইরে বেড়া দেয়া হয়েছে ইট দিয়ে। চার দিকে ঘোরে বুঝতে পারলাম এটা একটা মসজিদ। এই বাগানের যারা বাস করে তাদের কোন ইটের ঘর নেই। তাদের হয়তো ঘর করারই সঙ্গতি নেই।

কিন্তু মসজিদটা ইটের করার কারনটা কি? রাস্তায় চলতে আমরা প্রায়ই দেখি, মসজিদের সামনে মাইক লাগিয়ে পরকালের কথা বলে গান গেয়ে পয়সা চাওয়া হচ্ছে। "কত দিলে কত পাবেন" এই লোভনীয় অফারটা সব সময় জোরে জোরে উচ্চারণ করা হয়। গাড়িতে মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য টাকা তোলা তো খুবই সাধারণ ঘটনা। মসজিদ কমিটিন তাদের মসজিদকে উন্নত থেকে উন্নত করার জন্য কত কিছু করে। জুমার নামাজের দিন, কোথাও কোথাও বাক্স চালান করা হয়( মসজিদের প্রতিটা লাইনে এক মাথা থেকে ছোট ছোট কাঠের বাক্স ছেড়ে দেয়া হয়, লোক জন তাতে টাকা পয়সা দিয়ে পরের জনের কাছে দেয়।

এভাবে সবার কাছেই টাকার জন্য বাক্স গুলো যায়)। শীত মৌসুমে বড় বড় আলেম এনে ওয়াজ করানো হয় তারা মসজিদের জন্য ওয়াজ করার মাঝে বড় বড় ডোনেশন কালেক্ট করে দেন। আমার অভিজ্ঞতায় আমি কখনো দেখিনি মসজিদ কমিটির উদ্দ্যোগে, শীত বস্ত্র সংগ্রহ,বন্যাত্রদের জন্য ত্রান সংগ্রহ, দুস্তদের জন্য সাহায্য করা অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ( ব্যতিক্রম থাকলেও থাকতে পারে)। কিন্তু মাসজিদ নির্মাণের টাকার জন্য যায় নাই এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা।

আজ তিনটার দিকে একটি বড় মসজিদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। চোখে পড়লো কয়েজ জন মুসল্লি তাদের সবারই মাথায় সবুজ পাগড়ি। এবং এদের আয়োজন দেখে বুঝতে পারলাম এরা তাবলিগে আসছে। কিন্তু সবুজ পাগড়ি কেন? এরও একটা উত্তর আমার জানা ছিল। বাজারে নবী মুহাম্মদের লাঠি ও পাগড়ির ছবির পোষ্টার কিনতে পাওয়া যায়।

সেখানে দেখেছি নবী সবুজ পাগড়ি পড়তেন। নবী প্রথম যে মসজীদ নির্মাণ করেছিলেন তার গম্ভুজ নাকি ছিল সবুজ। সেই ট্রেডিশানের জন্য তারা আজো সবুজ পাগড়ি ব্যবহার করতে ভালবাসেন। নবী যা করতেন তা করা মুসলমানের জন্য সুন্নত। কিন্তু নবী তো মাটির মসজিদে নামাজ আদায় করতেন, খেজুরের পাটিতে বসতেন।

(এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে যেখানে মুসলমানরা নবীর সুন্নত মানতে রাজি নয়) মাটির মসজিদে নামাজ আদায় করা নিশ্চয় সুন্নত? খেজুর পাতার পাটিতে বসা নিশ্চয় সুন্নত? কিন্তু আধুনিক ঈমানদাররা কেন, মাটির মসজিদকে ভেঙ্গে পাকা দালাল করতে এত উঠেপরে লেগেছেন? কেন খেজুর পাতার পাটি না বিছিয়ে দামি দামি টাইলস লাগাচ্ছেন? আমাদের মসজিদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। হয়তো মুসল্লিদের স্থান সঙ্কুলনের সমস্যার কারনেই নতুন মসজিদ করতে হচ্ছে। বুঝলাম মুসল্লিও বারছে। এখন আর কাঁচা ঘরের মসজিদ খুব একটা চোখে পড়েনা। সবই পাকা দালান,টাইলস, এসি কি নেই।

মাঝে মাঝেই দেখি দাবি করা হয় ৮০-৯০% মুসলামানদের দেশ এই বাংলাদেশ। আমরা আশা করতেই পারি সবাই কম বেশি মসজিদে যায়, না গেলে এত মসজিদের হয়তো দরকার হতোনা। এত এবাদবন্দিগি এতো পার্থনা করার পরেও আমাদের দেশ কি করে দুর্নিতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।