আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরবানী হবার পূর্ব পর্যন্ত একটি গরুর ভাবনা ! ফান + ইমোশন যুক্ত!

"মাসুদ পারভেজ মিঠু" দ্যা "পেক পেক পেক" বয়!!! ঈদের দিন আজ কোরবানী ঈদের দিন। আমার নতুন মালিক নামাজ পরতে গেছেন। উনি আসলেই আমাকে জবাই করা হবে। আল্লাহর রাস্তায় আমাকে কোরবানী করা হবে। আমার জীবনের শেষ কিছু সময়।

কত কিছুই যে আমার মনে আসছে এখন। মন চাচ্ছে জীবনটাকে যদি আগের জায়গায় নেয়া যেত। আবার পরক্ষনেই মন বলছে যে আমি তো একটা মহৎ কাজে ব্যবহার জন্য যাচ্ছি। চিন্তা করার কোন দরকার নাই। এই মুহূর্তে আমার খুব মনে পরছে আমি কিভাবে এই জায়গায় আসলাম।

যাওয়ার আগে জীবনের শেষ বারের মতো আপনাদের কাছে শেয়ার করে যাচ্ছি। ঈদের ১ মাস আগে আমার মালিকের মন তখন অনেক আনচান আনচান করছিল। কেমন জানি মনে শান্তি পাচ্ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল যে ও টাকার সমস্যায় ভুগতেছে। আমার প্রতি খেয়াল ও জানি ওর কমে গেল।

খাইতে দিচ্ছে না। ভালো ভাবে গোসল করাচ্ছে না। এদিকে আমার শরীরটাও রি রি করতেছে। কখনো এত লম্বা সময় গোসল না করে থাকি নাই তো! একদিন কষ্টে আমার আখিঁ দিয়ে পানি বাহিত হচ্ছে। এই জিনিসটা আমার মালিকের চোখ এড়লো না।

ও আমার সামনে দাড়িয়ে কি যেন ভাবলো। তারপর চলে গেল। আমিও ভাবতে লাগলাম যে সে কি ভাবলো এতক্ষন! ঈদের ২৫ দিন আগে এই পাঁচ দিন আমার মালিক আমার কোন খোঁজ নিল না। আজ হঠাৎ আমার কানে আসলো তার গলার আওয়াজ। সে কার সাথে কথা বলছে।

কথার ধরনে বুঝতে পারলাম যে সে আসন্ন ঈদে আমাকে বিক্রীর পরিকল্পনা করছে। আমি বুঝতে পারছি না যে এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত। আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। অবশ্য আর কিছু করার ও ছিল না। ঈদের ২৩ দিন আগে দীর্ঘ ১০ দিন পর আজ আমি গোসল করলাম।

আমার গলা বাধন মুক্ত হলো। ভালোই লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি এই মুহূর্তের সবচেয়ে সুখী গরু। গোসল করে এসে দেখলাম আমার জন্য খানাপিনা রেডী। বহুদিন পর পেট পুরে খেলাম।

মনে হচ্ছিল যেন মধূ খাচ্ছি। আরামে আমার চোখ বুঝে এলো। খেয়ে দেয়ে দিলাম ঘুম। ৩ ঘন্টা ঘুম দেয়ার পর আমি জাগ্রত হলাম। তখন মনে হল হঠাৎ করে এই প্রীতির কারনটা কি।

মনে হলো দুই দিন আগের কথা। সে তো আমাকে আসছে কোরবনী ঈদে বিক্রী করবে। আমার মন অনেক খারাপ হয়ে গেল। দিন ঘুনতে লাগলাম। ২৩...২২...২১...২০...১৯...১৮...১৭...১৬...১৫...১৪...১৩...১২...১১...১০ ঈদের ৯ দিন আগে এই কয়দিন যে সে আমাকে কি খাওয়াইলো।

আল্লাহর সারাটাদিন আমি খাওয়ার উপরে ছিলাম। আমার রুটিন খাওয়া, ঘুম আর গোসলের মাঝে সীমাবদ্ব ছিল। নিজের কাছে নিজেরে অনেক মোটা মনে হলো। মনে হলো এই খাবার যদি আমার মালিক আগে আমাকে খাওয়াইত তাহলে বিদেশের লোকেরা আমাকে নেয়ার জন্য নিলামে পর্যন্ত চলে আসত! আমাকে দেখতে যে কি সুন্দর লাগতেছে। আমার নিজেরই লজ্জা লাগে নিজেকে দেখলে।

মনে হয় যেন আমি কত্ত সুইট! ঈদের ৭ দিন আগে আমার মালিকটা অনেক ভালো ছিল। সে মনে হয় ঋনী ছিল। সে জন্য আমাকে বিক্রী করতে চেয়েছিল। আমাকে যাতে বেশী দামে বিক্রী করতে পারে সেজন্য সে আমাকে এতোদিন ভালো করে খাইয়ে মোটু করেছে। খাওয়ানোর টাকা আরেক লোকের কাছ থেকে ধার করে এনেছে শুনলাম।

আজ আমার বাড়ীতে আমার শেষ দিন ছিল। মালিক আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে বিক্রী করার জন্য। ওইখানে নাকি অন্নেক টাকা পাওয়া যাবে। আমি আসার সময় আমার সব বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসলাম। কেন জানি অনেক খারাপ লাগছিল ওদের ছেড়ে চলে যেতে।

মনে মনে ভাবলাম যদি আমার নিজের পাওয়ার থাকতো তাহলে আমি কখনো এভাবে সবাইকে ছেড়ে যেতাম না। ভোরে আমার যাত্রা শুরু হবে। তাহলে কাল সন্ধ্যা নাগাত আমি পৌছে যাব বলে আমার ধারনা। ঈদের ৬ দিন আগে ও মোর আল্লাহ! এ আমি কই আইলাম। এতো বাত্তি ক্যা? এতো মানুষ ক্যা? আমার কেন জানি ভয় লাগছিল।

আমাকে গাবতলী হাঁটে নিয়ে যাওয়া হলো। গিয়ে দেখী ওমা! আমার মতো হাজার হাজার গরু এইখানে পইড়া আছে। বিক্রীর জন্য মনে হয়। কিছু কিছু গরু তো আমার থেইকা অনেক লম্বা। অইগুলা না জানি কত টাকায় বিক্রী হবে।

ওদের কাছে নিজেকে কেন জানি কচ্ছপ কচ্ছপ মনে হলো। সারাদিন ওদের সাথে থাকলাম। ওদের সাথে কথা বললাম। ওদের মনের অনুভূতি জানলাম। দেখলাম যে প্রায় সবাই খুশী।

হাঁট তখনো শুরু হয়নি। তাই কোন কাজ তাজ ছাড়াই আজ আমার দিন চলে গেল। ঈদের ৫ দিন আগে সকাল বেলা একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে নাস্তা করলাম। কিছুক্ষন সীমানার মধ্যে হাটাহাটি করে শরীরটাকে জুইত করলাম।

আস্তে আস্তে হাটে মানুষের আনাগোনা বাড়তে লাগলো। একজন পাবলিক আমার সামনে এসে দাড়াইলো। কি জানি দেখছে অনেকক্ষন ধরে। আমার কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে! প্রায় ২০ মিনিট ধরে আমাকে দেখার পর আমার মালিকরে জিগাইলো “ভাইজান, দাম কতো? মালিকে কয় ৫০,০০০!! পাবলিকে কয় “কি? শুনি নাই?আপনি দাম কত কইছেন? ৫০,০০০?”। মালিকে কয়, জ্বী ভাইজান ঠিকই শুনছেন।

পাবলিকে রাইগা কয়, ওই মিয়া, কইত্তে আইছেন? এই বকরী সাইজ গরুর দাম ৫০,০০০? ভালা কইছেন? তো আপনি এই জিনিসখান কারে দিবেন? এর থেইকা হাত্তি কিন্না এইবার কোরবানী দিমু, তবুও এই মাল নিমু না। আপনের তো এই মালরে যাদুঘরে নিয়া রাইখেন। বিক্রী হইবো না তো। আমার মালিক ও কম যায় না। কয়, জান ভাইজান।

হাত্তি কিনের। মোড়ে একটা হাত্তি দেইখা আইলাম। ১০০০ ট্যাকা দাম চায়। আপনে নিতে পারবেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে পাবলিক চলে গেল।

শেষ পর্যন্ত বিকেল বেলা অনেক দামাদামি করার পর ৪০,০০০ টাকায় আমাকে বিক্রী করে। আমার মালিকের সাথে এই আমার শেষ দেখা। অনেক কান্না পাচ্ছিল তার কাছ থেকে যেতে। তবুও কি করা। মহৎ একটা কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিব এই ভেবে শান্তি পাচ্ছিলাম মনে।

যাওয়ার পথে একটা পাজি ছেলে আমার পিঠের উপর চড়ে বসলো! মনে হয় আমার নতুন মালিকের বাচ্চা ছেলে। ভাবসাবে এমন মনে হচ্ছে যেন ঘোড়ায় চড়েছে সে! রাস্তায় অনেক লোকই আমার দিকে তাকালো। আমি এতো অসস্ত্বিতে কখনো পরিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম যাতে আমি মানে মানে করে বাসায় গিয়ে পৌছাতে পারি। গাবতলী থেকে পুরান ঢাকা।

বাব্বাহ। অনেক লম্বা পথ পার করে আসলাম। আমার নতুন মালিকের ঘরটাও অনেক ভালো লাগলো। সব মানুষ আমার কাছে এসে আমাকে দেখছিলো। আমার মালিকিন তো আমাকে দেখে অনেক খুশী।

খুশীর চোটে সে তো মালিকরে ধরে একটা যাদু কি ঝাপ্পি দিয়ে দিল। সেইদিনের মতো আমার কাজ ছিল ঠায় দাড়িয়ে থাকা আর খাওয়া। আমার থাকার জায়গা ঠিক করা হলে আমি সেখানে গিয়ে অনেক লম্বা একটা ঘুম দিলাম। শান্তি!! ঈদের ১ দিন আগে বিগত কয়েকদিনে আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন। আমার মাথায় আর শিং এ লাল কাপড় শোভা পায়।

ভালো ভালো খাবার খাই। বাসার পিচ্চিরা আমার সাথে খেলে। প্রতিদিন ভালো করে গোসল করানো হয়। ভালোই লাগছিল। কিন্তু রাতের বেলা মন খারাপ হয়ে গেল।

মনে পড়লো যে এই রাতই আমার জীবনের শেষ রাত। কেন জানি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এইসব ভাবতে ভাবতে আমার ঘুম এসে গেল। পুনরায় ঈদের দিন ওহ! মালিক নামাজ পড়ে এসে পড়েছেন। হুজুর ও আসলেন।

তার হাতে লম্বা একটা ছুরি। মাথাটা কেমন জানি ভনভন করে ঘুরছে। ৬ জন লোক আমাকে এসে ধরল। রশি দিয়ে বেধে ফেলল। আমি যাতে ব্যাথা না পাই সেইভাবে মাঠিতে ফেলল।

হুজুর কি জানি পড়লেন। তারপর আমার গলায় হাত বুলালেন এবং ছুরিটি আমার গলার কাছে আনলেন। স্পর্ষ করলেন আমার গলা। ঠিক সেই মুহুর্তে জীবনের শেষবারের মতো আমার চোখের কোনে আবিষ্কার করলাম “পানি”! বিদায় পৃথিবী!!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।