আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরবানী কথন

কোন প্রকার বাজারে কখনই যাই না, বেশ কিছু আগে থেকে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী মেলার প্রতিও আমার চরম বিরাগ। বিশেষ করে বাঙালির প্রধান দুই দীর্ঘমেয়াদি মেলা আমার নিয়মিত চলাচল পথে পড়াতে বছরের প্রথম দুটা মাস ট্রফিক এর গিট্টুতে আটকে আমাকে কপাল কুচকেই কাটাতে হয়। আর যত বয়স হচ্ছে, মৌসুমী সব বিষয়াদির প্রতি ব্যাপক ভীতিতে আক্রান্ত হচ্ছি মনে হচ্ছে। কোরবানির হাটে যাওয়া বলতে ছোটবেলায় মেঝমামা কিংবা বাবার সাথে হাটে যাবার কথা মনে আছে। যদিও কোরবানী সুখকর ছিল না কখনই, গরু জবেহ প্রনালী আমার কাছে বরাবরই বিভীশিকাময়।

আমার আনন্দ ছিল পশুটাকে খাওয়ানো কিংবা শান্ত হলে কাছে গিয়ে একটু আদর করার চেষ্টা কিছুই না হলে আশেপাশ ঘুরঘুর করা। এটা এখনও করি। তবে ছোট বেলায় সব কিছুতেই আনন্দ ছিল, বিষাদ বোঝার বয়স হয়নি কিংবা বিষাদটা মাথায় ঢুকলেও বুক পর্যন্ত ডাউনলোডের বয়স ছিল না। ইদানিং দেখছি বয়স বাড়ার সাথে বিষাদ জিনিসটার গমনপথ উল্টো হেয়েছে, বুকের ভিতর ঢুকে খোঁচাখুচি শুরু করে, অতপর মাথায়। গত দু’দিন অফিস ছিল না, বিকেলে বাসার সামনে রাস্তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডার যথেষ্ট সময় ছিল।

বলা ভাল, ঢাকার সবচেয়ে বড় গরু হাট থেকে ফেরার রাস্তা এটাই। মানুষজন গরু কিনে ব্যপক ফুর্তি নিয়ে ফিরছে, সবার চোখ চকচক। কিছু গরুও ব্যাপক ফুর্তি নিয়ে কোরবানী হতে যাচ্ছে, কিছু আছে যারা তা করছে না, তাদের প্রতি ক্রেতাদের যা আচরন, তাতে কোনটা পশু এটা নিয়েই চিন্তিত না হয়ে উপায় নেই। তবে অনেক ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনা মনটা খারাপ করল, একটা বিশাল গরু, যেটা হেটেই যেতে পারছে না, বার বার বসে পড়ছে কিন্তু ওটার কুরবানিদাতা সোঙ্গপাঙ্গ সহ পিটিয়ে ওটাকে চলতে বাধ্য করছে। আমরা ওনাদের অনুরোধ করেছিলাম ওটাকে কিছুক্ষন বিশ্রাম করতে দিতে, ওনারা চলে গেলেন।

কিছুক্ষন পর আমি ওখান থেকে আমার অন্য এক আড্ডাস্থলে যাবার জন্য কিছুদুর এগিয়ে দেখি গরুটা রাস্তায় নিথর পড়ে আছে, খেয়াল করলাম মোটা এক পানির একটা ধারা চোখ বেয়ে নেমে গেছে, হয়ত ওর চেয়েও নিম্নস্তরের কিছু আবিষ্কারের আনন্দে। ছোটবেলায় আমাদের বাসার একটু সামনেই একটা কালিমন্দির ছিল, বছরের কোন এক সময় বিশেষ কোন পুজোতে তারা পাঠা বলি দিত, সে বলিদান প্রক্রিয়াটিও বেশ অদ্ভুত আর লোমহর্ষকও। তখন হিন্দুধর্ম কত অদ্ভুতুরে সে সম্মন্ধে মুরুব্বীদের দ্বারা অবগত থাকলেও আমার ধর্মই ছিল শ্রেষ্ঠ। ইদানিং মনে হয়, পশুগুলোকে ব্যাপক উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বলি (এক কোপ আর আড়াই পোচ, তা সূদ আর মুনাফার পার্থক্যের মতই) দিয়ে ধর্মপালনও অধর্মেরই নামান্তর। হিসেব করলে কালীও ভালো, তাকে খুশি করতে তুলনামূলক রক্ত অনেক কমই লাগে।

কই জানি পড়েছিলাম, প্রান থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না। একটা মজার ব্যপার হল মানুষদের চোখের পানির ব্যাপক দাম সৃষ্টিকর্তার কাছে, যে কারনে মুমীনদের মুনাযাতের সময় ব্যাপক হারে কান্নাকাটির প্রচেষ্টা করতে দেখা যায়। যদিও আমার ধারনা সৃষ্টিকর্তাকে মানবসন্তানরা তা থেকে বঞ্চিতই করে যথেষ্ট, তারা উন্নিশ থেকে বিশ হলেও চোখের পানি নাকের পানি একাকার করে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্বেও তা তেমন ফলপ্রসু হয় বলে মনে হয় না। একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করে, মানবসন্তানের চোখের পানিই যদি কান্না হয়, পশুদের চোখ থেকে পানি বের হলে তাকে কী বলে। আর অধিকাংশ হাটফেরত পশুর চোখের নিচেই যে পানির ধারাটা দেখা যায়, ওটা কান্না না হলে ওটার ব্যপারে বুজুর্গগনের মতামত কী? ওর মন আছে কিনা জানি না, প্রান তো আছে।

নির্বিশেষে গনহত্যা হোক তা পশু, তাও কি কাম্য হওয়া উচিত্ কখনও? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।