আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরবানী ঈদ।

I am a simple man.... আজ ছিলো ঈদের ছুটির আগে অফিসের শেষ কর্মদিবস। সবার মধ্যেই একধরনের চাঁপা উত্তেজনা। একটু আগেই অফিস ছাড়ার পরিকল্পনা যাদের তারা কেউই পারতপক্ষে দুপুরের পর তেমন কোন কাজ রাখছেন না। টানা পাঁচদিনের ছুটি, ভাবতেই ভাল লাগছে। অনেকেই আবার এই ছুটির সাথে আরো বাড়তি দুদিন ছুটি নিয়ে মোট নয়দিনের দীর্ঘ ছুটিতে যাচ্ছেন।

একবারের ঘটনা। আসন্ন কোরবানীর ঈদের ছুটিতে বাড়ী যাব। সারা বছর প্ল্যান করে অতি প্রয়োজনেও ছুটি নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখি, কারন বছরের এরকম দুএকটা সময়ে আরো কয়েকটা দিন এক্সট্রা ছুটি নেব। সব আনন্দ মাটি হল যখন বস্ বললেন ঈদের পরের প্রথম কর্মদিবসে আমাদের একজন ইম্পর্টেন্ট ক্লায়েন্ট এর সাথে মিটিং শিডিউল করা হয়েছে। আমাকে অবশ্যই থাকতে হবে।

অনেকভাবে রিকোয়েস্ট করার পরও বস্ মিটিং শিফট করতে রাজী হলেন না। কী আর করা। বাড়ীতে গেলাম এবং ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই, বাবা মা বোন সবার ভালবাসা উপেক্ষা করে পরেরদিনই ঢাকায় চলে এসেছি। ঈদের সময় ঢাকা যে ফাঁকা থাকে তা টেলিভিশনে দেখেছি কিন্তু কতটা ফাঁকা থাকে তা সেই প্রথম অনুভব করলাম। আমাদের হোস্টেল (ইউনিভার্সিটির খন্ডকালীন ছাত্র হওয়ার সুবাদে, হোস্টেল এ সীট পেয়েছিলাম) এর ক্যান্টিন বন্ধ।

খুলবে আরো এক সপ্তাহ পর। দোকানপাটও বেশীরভাগই বন্ধ। পরদিন অফিসে গেলাম, বেশীরভাগই ছুটিতে। বসও আসেননি। দুপুরবেলা জানতে পারলাম আমাদের ক্লায়েন্ট এর রিকোয়েস্টে মিটিংটি পরের সপ্তাহে রিশিডিউল করা হয়েছে।

আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি কেউ। কি যে খারাপ লেগেছিলো! অর্ধাহারে অনাহারে একাকীত্বে বোরিং পুরো এক সপ্তাহ কাটাতে হয়েছিলো। বছর তিনেক আগের কথা। কোরবানী দেয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের গরু কেনা হল। মেজবোন, দুলাভাই এলো বেড়াতে।

মেজবোনের একমাত্র ছেলে, বয়স চার। আমাদের ঘর মাতিয়ে রাখে হরেক রকম দুষ্টুমিতে। গরুকে নিয়েই সময় কাটে ওর। তাকে খাওয়ানো, পিঠ চুলকিয়ে দেয়াসহ যাবতীয় সকল কাজ করত ও। একটুও ভয় কিংবা সংকোচ করত না।

ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে এসে যখন কোরবানী দেয়ার উদ্দেশ্যে গরুটিকে শোয়ানো হলো, তখন সে চীৎকার করে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। কোনভাবেই এরকম একটি নৃশংস কাজ সে হতে দিবেনা। ওকে কোলে নিয়ে চলে যাওয়া হল এবং যথারীতি কোরবানী হল। সে আর ঘর থেকে বের হতে পারল না ভয়ে, রাগে এবং অভিমানে। মাংস খেতে সে খুব পছন্দ করত, কিন্তু এরপর থেকে সে আর কখনো গরুর মাংস খেতে পারে না।

ওর তুলনায় বিশালকায় একটি চতুষ্পদি জন্তু কেনা হবে, বেশ কয়েকদিন তাকে যথেষ্ট আদর যত্ন করে অবশেষে কোন একদিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে জবাই করা হবে নৃশংস ভাবে, এই ব্যাপারটিকে সে খুব সহজেই মেনে নিয়েছে এখন। কিন্তু তবুও ঈদের কয়েকটি দিন সে খুবই আতংকিত অবস্থায় থাকে। ঘর থেকে বের হয় না, রাতের বেলা হঠাৎ হঠাৎ চীৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পরে ইত্যাদি। তারপর কয়েকদিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। সবাই ভাল থাকবেন।

ঈদ মোবারক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।