আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি

নাজমুল ইসলাম মকবুল বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি নাজমুল ইসলাম মকবুল আমাদের দেশে শান্তির মা বাপ চৌদ্দ গুষ্টি যেন কবরস্থ হয়েছে অনেক আগেই। দেশের মানুষ যেন শান্তির আশা এক্কেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকেই বিবি বাচ্ছাসহ পালিয়ে দুর বিদেশে গিয়ে বসবাস করছেন একটু শান্তি সুখের আশায়। অনেকে হতাশ হয়ে বিদেশে স্থায়ী আবাসনের চেষ্টা তদবিরও চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কয়েক বছর পুর্বেও আমাদের দেশ থেকে যারা প্রবাসে গিয়েছিলেন তাদের উদ্দেশ্য ছিল কয়টা বছর কিছু আয় রোজগার করে দেশে এসে কিছু একটা করে শান্তিতে বসবাস করা।

কিন্তু বর্তমানে জান বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার খবর শুনতে হচ্ছে হর হামেশা। এতে যেন অবাকও হচ্ছেননা কেউ। কারণ যেভাবে গুম খুন অপহরণ নির্যাতন হত্যা লুন্টন মারামারি কাটাকাটি হানাহানি ধর্ষন স্বেচ্ছাচারিতার সয়লাব চলছে তাতে অবাক না হয়ে বরং নির্বাক হওয়াটাই শ্রেয় মনে করছেন অনেকেই। গণতান্ত্রিক এদেশে নামে শুধু গণতন্ত্র আছে কাজে অনুপস্থিত। মত প্রকাশে স্বাধীনতা নেই।

সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি লেখক কবি সাহিত্যিক রাজনীতিবিদ নেতা কর্মী জনপ্রতিনিধি এমনকি সাধারন পথচারি যাকে যে সময় ইচ্ছা গ্রেফতার করে নিয়ে জেলে গাদাগাদি ঠাসাঠাসি করে অমানবিকভাবে রেখে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। ইচ্ছেমতো রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়ে বাপ দাদা চৌদ্দ গুস্টির নাম ভুলায়ে দেয়াটা যেন ডাল ভাতে পরিণত হয়েছে। প্রবীণ ও বয়বৃদ্ধ হলেও একটু সৌজন্যতা পাচ্ছেননা তারা। অনেকে জানের ভয়ে মুখ বন্ধ করে আছেন। অনেকে হতাশ হয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েও উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন গুজরান করছেন।

তবে রাগব বোয়াল সুবিধাভোগী কালো টাকার মালিক যারা সরকারী দলের সাথে সংশ্লিষ্ঠ এবং তাদের সাথে যাদের গলায় গলায় ভাব তারা তাদের রতœভান্ডারকে সযতনে করছেন সমৃদ্ধ মহাসমৃদ্ধ। বিদেশেও তাদের নামে বেনামে বাড়ী গাড়ী সহায় সম্পদের অভাব নেই। লুটেরারা পরিকল্পিতভাবে দেশের শেয়ার বাজারকে ধ্বংস করে দিয়ে ল ল বিনিয়োগকারী ও তাদের পরিবার পরিজনকে পথে বসিয়েও আস্কারা পাচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় বর্তমানে দেশের মানুষ ভালো নেই। স¤প্রতি সিলেট সফরে এসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিলেট কারাগার পরিদর্শনের জন্য গেলে দেড় ঘন্টা অপোয় রেখেও তাকে বিভিন্ন বাহানা দেখিয়ে কারাগারে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

তিনি স¤প্রতি ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘বিশ্ব প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবন: আগামী ৪০ দিনের করণীয়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ওই কারাগার সম্পর্কে আমাদের কাছে বেশ কিছু অনিয়ম দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আসায় আমরা কাউকে না জানিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ঝটিকা সফরে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী কমিশন কারাগার, হাসপাতালসহ এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় যখন তখন পরিদর্শন করতে পারবে। সেখানে কোন অনিয়ম হচ্ছে কিনা, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী কমিশন সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন বা সুপারিশ করতে পারবে। কিন্তু আইজি প্রিজন আমার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আমাকে কারাগারে প্রবেশ করতে দেননি। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ ব্যাপারে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সরকার ব্যবস্থা না নিলে আমরা হাইকোর্টে বিচার প্রার্থনা করবো। তিনি বলেন, আপনারা আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং কারাগারের ভেতর যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হোন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোর সাথে আলাপচারিতায় দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যা বললেন তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায়না।

বিরোধী দলের হরতালে গত ২২ সেপ্টেম্বর পুলিশের বুটের নিচে এক ব্যক্তিকে পিষ্ট হবার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের বুটের তলায় মানুষকে নিস্পেষিত হওয়ার যে ছবি দেখেছি, তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। আইন প্র¡েয়াগকারী সংস্থা আইন প্রয়োগ করবে, শক্তি প্রয়োগ করবে, এটাই স¡াভাবিক। কিন্তু সেটা তাকে আইনের মধ্যে থেকেই করতে হবে। আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে নাগরিককে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আইন রা করতে গিয়ে মানবিকতার বিপর্যয় ঘটানো যাবে না।

এটাই আমাদের সংবিধানের মূল কথা। আর এ জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কেউ যদি রাষ্ট্রের তি করে, প্রচলিত আইনে তার বিচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে কারও মানবিক মর্যাদা ুণœ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু আইন রার নামে জনসমে পুলিশ তার বুটের নিচে মানবিকতাকে ভূলুন্ঠিত করবে, এ যে ভয়ানক অপরাধ।

কেউ যদি অপরাধীও হয়ে থাকে, তাতেও তাকে অমর্যাদা করার অধিকার পুলিশের নেই। এ েেত্র পুলিশ অপরাধ করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশের ওই কর্মীর বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলেই চলবে না, দ্রুত ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ তিনি নাগরিককে অশ্রদ্ধা করে দেশের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন, মানবাধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। সরকারপরে কেউ কেউ বলছেন, সরকারের ভাবমূর্তি ুণœ করার জন্য পুলিশের ওই কর্মী এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, কেউ কেউ এমনটা বলছেন বটে, কিন্তু নৈতিক মানদণ্ডে এসব কথা আমলযোগ্য নয়।

সত্য হলো পুলিশ নাগরিকের মর্যাদা ুণœ করেছে। হরতাল মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। এটি বিশ¡ব্যাপী স¡ীকৃত। আমাদের সংবিধানেও নাগরিককে এই অধিকার দেওয়া আছে। ঘটনাটি এ কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ যে, প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘে শান্তির জন্য সর্বজনীন মডেল উপহার দিচ্ছেন, তখন তাঁর দেশের মাটিতে পুলিশের বুটের তলায় মানুষ পিষ্ঠ হচ্ছে এটা বড়ই বেমানান।

তাঁর প্রস্তাব আমার কাছে ভালোই লেগেছে। তিনি মানবসত্তার মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেই শান্তির কাজটি তাঁকে নিজের ঘর থেকেই আগে শুরু করতে হবে। অথচ হয়েছে উল্টো। তাঁর নিজের দেশেরই মানবিকতা ভূলুন্ঠিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন কোনো পদপে নিয়েছে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের প থেকে এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়েছে। ইদানিং অনেক জায়গায় মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে আপনাদের কাছে কি কোনো অভিযোগ এসেছে? এর উত্তরে তিনি বলেন বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। মানুষের হঠাৎ করে গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা একসময় দণি আমেরিকায় দেখা যেত।

এখন আমাদের দেশেও এটি হরহামেশা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সংকেত। কারণ নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নাগরিক যদি নিখোঁজ হয়ে যান, তাঁকে খুঁজে বের করে তাঁর আত্মীয়-স¡জনদের আশ¡স্ত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। আর যদি গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া না যায়, সেটা হবে রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.