আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবাস্তব গল্পঃ প্রিজন সেলে আগুন !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! লোকটর বয়স ৯১ বছর । কদিন আগেই তাকে ৯০ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে । কিন্তু অসুস্থতা এবং বয়সের কারনে কাশিমপুরের কারাগারে তাকে রাখা যাচ্ছে না । এখন বর্তমানে শাহবাগের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রিজন সেলে আছে । সাধারন ভাবে যে কোন বয়স্ক মানুষ দেখলেই মানুষের মনে একটা সহানুভুতি আসে কিন্তু সাহিনার কেন জানি এই ৯১ বছরের বৃদ্ধকে দেখলে একটা বমি বমি ভাব আসে ।

ইচ্ছা করে মুখ ভর্তি বমি করে দিতে ইচ্ছা করে লোক টার মুখের উপর । কিন্তু মানুষ চাইলেই তার বস ইচ্ছা পুরন করতে পারে না । সাহিনাও পারছএ না । সাহিনা হাসপাতালের প্রিজন সেলের একজন নিয়মিত নার্স । এখানে যারা আছে তাদের নিয়মিত চেকআপ করার জন্যই তাকে রাখা হয়েছে ।

-আপানর আর কিছু লাগবে ? ৯১ বছরের বৃদ্ধ এক অদ্ভুদ ভাবে হাসলেন । সঙ্গে সঙ্গেই সাহিনার বুকটা কেঁপে উঠল । কারো হাসি যে এতো ভয়ংকর হতে পারে সাহিনার জানা ছিল না । ৯১ বয়সী বৃদ্ধ বললেন -কাছে আসো ! অতো দুরে থ্যাইকা কি সব কিছু বলা যায় ? আবার ৯১ বয়সী বৃদ্ধ হেসে উঠল ! সাহিনার গা গুলিয়ে উঠলো । না কাল থেকেই এখানে ডিউটি বদলাতে হবে ।

এই বুইড়ার কাছে কিছুতেই থাকা যাবে না । এমন ভাবে তাকায় মনে হয় একটা আস্ত একটা হায়না । সাহিনা বলল -কি বলবেন বলেন ? বৃদ্ধ বললেন -তোমার নাম কি ? -সাহিনা ! -আগে পিছে কছু নাই ? -সাহিনা হায়দার ! বৃদ্ধ একটু যেন বিরক্ত হলেন ! বললেন -নামের আগে কিছু গালাইতে হয় জানো না ? -মোছাঃ সাহিনা হায়দার ! -এই তো ঠিক আছে ! -আর কিছু বলবেন ? -তোমার বিবাহ হয়েছে ? -কেন ? বৃদ্ধ লোক আবারও হেসে উঠলো ! তারপর বলল -এসিটা কালকে থেকে কাজ করতেছে না । -এসি নষ্ট । আগামী কাল লোক আসবে ।

এর আগে ঠিক হবে না । ফ্যান তো আছেই । -না ঠিক আছে । একটা মশায় কয়েল জোগার কইরা দাও । কালকে রাতে অনেক মশা কামড়াইছে ।

জানোই তো আমি নড়তে পারি না ঠিক মত । মশা গুলা আমার গায়ে হুল ফুটায়ে চলে যায় ! -আচ্ছা দেখতেছি ! ৯১ বছরের বৃদ্ধ একটু উদাস হয়ে যান । আগে তিনি কি না করেছেন । তখন বয়স ছিল । গায়ে একটা অন্য রকম বল ছিল ।

পুরা পাকিস্তান যেন তার কথায় চলত ! আর এখন সামান্য একটা মশা তাকে কামড়িয়ে চলে যাচ্ছে তিনি কিছু করতে পারছেন না ! কদিন আগেই তাকে জেলে ঢুকানো হইছে ! তিনি কিছু করতে পারেন নাই । বাইরে থেকে অনেকেই চেষ্টা করতেছে । এমন কি তরস্ক থেকে এই সরকারের কাছে চিঠিও আইছে কিন্তু কিছু হয় নাই ! তবে তিনি কিছু বলেন না ! মনে মনে সহ্য করে নিলেন ! আর মাত্র কয়েকটা দিন । সরকার বদলাইলেই তিনি ছাড়া পেয়ে যাবেন । তখন সবাইকে দেখে নিবেন ! আর এই মশাকেও দেখে নিবেন ।

তখন এই বদ মশা মারার জন্য আলাদা একটা লোক রাখবেন । যাক আর কয় দিন । আবারও আগের দিন ফিরে আসবে । মরার আগে তিনি বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানে রূপান্তরিত হয়ে যেতে দেখতে চান । তাহলে মরে একটু শান্তি পাবেন ।

৯১ বছরের বৃদ্ধ চোখ বন্ধ করে পুরানো দিনের কথা মনে করতে লাগলেন । তখন তার বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি । দেশে বিরাট গন্ডগোল । একদল নাস্তিক তার প্রাণের পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুটুকরো করতে ব্যস্ত । তিনি এবং তার রাকাজার বাহিনী নাস্তিকদের ধরতে ব্যস্ত ! সাথে পাক বাহিনী ! তার মনে আছে এই রকমই একটা নাস্তিক পরিবারকে তার লোকেরা ধরে এনেছিল ।

এক বৃদ্ধ লোক ছিল পরিবারে । সত্তরের কাছাকাছি বয়স হবে । আর দুটো সাট-আট বছরের কচি ছেলে । সাথে ওদের মা । বৃদ্ধের ছেলে নাকি যুদ্ধে গেছিল ! তার উপর তারা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিল ।

এতো বড় অপরাধ ? যারা এই দেশের শত্রু তাদের আহারের ব্যবস্থা । তিনি নিজ মুখে তাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন । ছেলে দুটোর মাকে পাঠানো হয় পাকিস্তানীদের মনোরঞ্জনের জন্য । আর বৃদ্ধকে বেনট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে তার সামনেই মেরে ফেলা হয় । বাচ্চা দুটো এতো ভয় পেয়েছিল যে অবাক হয়ে কেবল তাদের মৃত দাদুর দিকে তাকিয়ে ছিল ।

একটু পরেই স্টেনগানের গুলি যখন তাদের বুক ভেদ করে চলে গেল তখনও তাদের মুখে সেই অবাক হওয়া ছাপ ছিল । আর কদিন আগেই তার বিচার করা হল । বয়সের কারনেই সব কিছু প্রমান হওয়ার পরেও তাকে ৯০ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে । ফাণসি দেওয়া হয় নাই ! বৃদ্ধ আবারও হেসে ফেলল মনে মনে । আর কয়দিন ।

মাত্র কদিন । মুখে একটা হাসি নিয়েই তিনি ঘুমিয়ে গেলেন । মাঝ রাতে হঠাৎ করেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেল । প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও একটু পরেই তিনি কিছুর একটা পোড়া গন্ধ পেতে লাগলেন । কিছু একটা পুড়ছে কোথাও ।

কোথাও কি আগুন লাগলো ? আস্তে আস্তে পোড়া ঘন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । তিনি চিৎ হয়ে শুয়েই আছেন । বয়সের ভারে ঠিক মত উঠতেও পারেন না । একজনের সাহায্য লাগে । তবুও তিনি মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা করলেন ।

ঘরে ডিম লাইটের আলো আছে তবুও এতো আলো কেন ? বৃদ্ধার চোখ কোনার দিককার টেবিলের দিকে যেতেই বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল । একটুও বুঝতে কষ্ট হল না কি হচ্ছে । সাহিনাকে তিনি মশার কয়েল আনতে বলেছিলেন । সেই মশার কয়েলের ছাই যেন নিচে না পরে তাই মনে হয় নিচে পেপার দেওয়া হয়েছিল । কয়েল কোন ভাবে পেপারের উপরের পরে আগুন লেগে গেছে ।

বৃদ্ধ অল্প আগুনে পেপারটা জ্বলে যেতে দেখলেন । একটু নড়তে চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই পারছেন না । আস্তে আস্তে পেপারের আগুন বাড়তে থাকে । বাড়তে থাকে আগুনের তাপমাত্রও । দেখতে দেখতে পুরো টেবিলের আগুন লেগে গেল ।

আর খুব বেশি বাকি নেই টেবিল থেকে বিছানায় চলে আসতে । বৃদ্ধ মনে মনে আতঙ্কবোধ করলেন। যদি বিছানায় আগুন আসার আগে কেউ না চলে আসে তাহলে তাকে জীবন্ত আগুনে পুড়ে মড়তে হবে । ফায়ার এলাম কোথায় ? এখনও বাজতেছে না কেন ? কেউ কি টের পাচ্ছে না ? বৃদ্ধ চিৎকার করার চেষ্টা করল । কিন্তু খুব একটা কাজ হল বলে মনে হল না ।

গলা দিয়ে কোন স্বর বের হল না । কেবল ফাঁটা বাঁশের মত একটা খসখসে আওয়াজ বের হতে থাকলো । তিনি ইমার্জেন্সি সুইচটার দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু খুব একটা লাভ হল না । ইমার্জেন্সি সুইচটা বেডটার একটু উপরে ।

তিনি যখন খাটের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে থাকেন তখন হাতে পান । কিন্তু এখন পাচ্ছে না ! আবারও তিনি চিৎকার দিলেন । খুব বেশি আওয়াজ হল না ! কোথায় গেল সব ! কোথায় গেল ?? বৃদ্ধ চিৎকার করতে লাগলো ! আগুন চলে এসেছে । এই বেড সীটে লেগে গেছে ! আগুন লেগে গেছে ! বৃদ্ধ কেবল এগিয়ে আগুনের দিকে দিকে তাকিয়ে রইলো ! এগিয়ে আসা মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে রইলো ! তখনই তিনি কাঁচে ঘেরা কেবিনটার ওপাশে একটা মুখ দেখতে পেলেন ! তার জানে পানি এল ! যাক ! এ যাত্রায় মনে হয় বেঁচে গেলেন তিনি । তিনি আল্লাহের কাছে শুকরিয়ে আদায় রকলেন ! কয়েক মিনিট এভাবেই চলে গেল ! আগুন আরো কাছে চলে এসেছে ।

তার পায়ে তাপ লাগছে । তিনি পায়ে সরানোর চেষ্টা করছেন আর অবাক হয়ে কাঁচের ওপাশে দাড়ালো লোকটা দিকে তাকিয়ে আছে । লোকটা একভাবেই দাড়িয়ে আছে । কো নড়া চড়া নাই । কেন নাই ? তখনই বৃদ্ধর মনে হল লোকটা তাকে বাঁচাবে না ।

দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার মৃত্যু দেখবে ! ঠিক যেমন টা তিনি দেখতেন ৭১ এ ! তার সামনে কত শত মানুষকে মেটে ফেলা হয়েছে । চাইলেই তিনি তাদের কে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু তিনি না করেন নি । বরং তিনি আরো উস্কে দিয়েছেন ! হঠাৎ বৃদ্ধ চিৎকার করে উঠলো ! অশ্রাব্য ভাষায় গালী দিতে শুরু করলেন সামনে দাড়ানো লোকটাকে । কিন্তু কাঁচের কারনে কোন কিছুই লোকটা শুনতে পেল না ! আগুনে তার পা পুরে যাচ্ছে । বৃদ্ধ যন্ত্রনায় চিৎকার করছে ! কিন্তু সেই চিৎকার শোনা রকেউ নাই ! কেউ নাই ! মোহাম্মাদ আলীর ডিউটি এই প্রিজন সেলের ঠিক সামনেই ! যদিও সব গুলো এমনিতেই তালা দেওয়া থাকে তবুও রাতের বেলা তিনি সমানের একটা টুলে বসে সারা রাত ঘুমান তিনি ।

এই সেকশনে মোট তিনটা প্রিজন সেল রয়েছে । দুইটাই ফাকা । একটাতে এক ৯১ বছর বয়সী রাজাকার আছে । ঐ লোকটা কে আনার পর থেকে একবারও তিনি তাকে দেখতে যান নি ! তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। যুদ্ধে মারা গেছে ! এর থেকে আফসোসের আর কি হতে পারে একজন রাজাকার কে খানদানী পায়ারায় রাখা হয়েছে যার পাহারাদার এজকন মুক্তি যোদ্ধা ছেলে ! মোহাম্মাদ আলী এখানে আর থাকবে বলে ঠিক করেছে ।

এই রাজাকার কে পাহারা দেওয়া থেকে রিক্সা চালিয়ে খাওয়া ভাল । রাতে মোহাম্মাদ আলী ঘুমিয়েই পরেছিল কিন্তু হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে যায় ! একটু একটু পোড়ার ঘন্ধ পাচ্ছেন তিনি ! কোথাও আগুন লেগেছে ! কোথায় ? একটু চোখ ডলে নিলেন হাত দিয়ে । তখনই করিডরের শেষ মাথায় আলো দেখতে পেলেন । পুরো হাসপাতাল ঘুমিয়ে আছে কিন্তু করিডরেরে শেষ মাথায় আলো ! মোহাম্মাদ আলীর বুঝতে কষ্ট হলে না যে আগুন ওখানেই লেগেছে । একদৌড়ে তিনি হেড ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলেন ।

কারন সব প্রিজন সেলের চাবি তার কাছে আছে । মোহাম্মাদ আলী দৌড় লাগাবেন তখনই তার খিয়াল হল তিনি কি করতে যাচ্ছেন ? আর কেনই বা করতে যাচ্ছেন ? একটা রাজাকার কে বাঁচানোর জন্য ? মোহাম্মাদ আলী পায়ে পায়ে প্রিজন সেলটার দিকে এগিয়ে গেল ! পুরো ঘরে প্রায় আগুন লেগে গেছে । ধোঁয়াও হচ্ছে বেশ । কাঁচ দিয়ে ঘেরা বিধায় বাইরে থেকে খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না ! ধোঁয়াও খুব একটা বের হতে পারছে না । মোহাম্মাদ আলী বৃদ্ধ রাজাকারকে দেখতে পেলেন ! কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে ।

কিন্তু মোহাম্মাদ আলী শুনতে পেলেন না ! শোনার চেষ্টাও করলনে না ! এই তো বিছানায় আগুন লেগে গেছে । রাজাকার চিৎকার করছে ! মোহাম্মাদ আলীর লোকটা কে বাঁচানোর উচিৎ কিন্তু মোহাম্মাদ আলী বিন্দু মাত্র করুনা বোধ করছে বৃদ্ধর জন্য ! এই তো । রাজাকারে গায়ে আগুন লেগে গেছে ! চিৎকার করছে । চিৎকার কর ! আরো চিৎকার কর ! মোহাম্মাদ আলী একটা পৌচাশিক আনন্দ অনুভব করতে লাগলো ! রাজাকার মরতেছে । যন্ত্রনা পেয়ে মরতেছে ! যে ভাবে মানুষ মারছে সেই ভাবে মরতেছে !! Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।