আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবাস্তব নয়

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি । চোখমুখ কুঁচকে সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো পার্থ । মাথা নিঁচু করে পা দিয়ে আগুনটা নিভিয়ে নাকমুখ দিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে নিজের মনেই যেন বিড়বিড় করে বলল , " আর বাচঁতে ইচ্ছা করেনা দোস্ত ।

" এর আগে অনেককিছু শুনলেও এমন কথা শুনিনি । অপরিচিত লাগে পার্থকে । যে হাসিখুশি প্রানের বন্ধু ক্লালের ফাস্ট সেকেন্ড পার্থ রোজ একসাথে বসার জন্যে আগে থেকে এসে আমার জন্য জায়গা রেখে বসে থাকতো , যে সবসময় ওপেনিং ব্যাট করতে নেমে কতো খেলা একাই জিতিয়ে এনেছে আমাদের , ক্লাশের সবচেয়ে বখাটে ছেলে মাজেদ একবার গাঁজার পুড়িয়া খাওয়াতে চাওয়ায় যে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো তারসাথে এই চোখমুখ কোটরে বসে যাওয়া , নিকোটিনের বিষে ঠোঁট কুঁচকুচে কালো করে ফেলা পার্থর কোন মিল খুঁজে পাই না । - “ কি করবি এখন ? “ -“ জানি না । তিনমাস ধরে কোন খোঁজখবরই নেই ওর ।

ওর বাবা মোবাইলটাও নিয়ে নিয়েছে । এই তিনমাসের প্রতিদিন ওদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থেকেছি । একদিনও দেখা পাইনি । “ পার্থকে কিছু বলার ছিলো । আসলে ঐ জন্যেই দেখা করতে আসা ।

আরেকটু পরে বলবো ভেবে আবার প্রশ্ন করি , ওর বাবা তোকে দেখে নি কোনদিন ? - “ প্রায় রোজই দেখেছে । অনেকবার হুমকি দিয়েছে এরআগে । আর কাল বাবাকে ডেকে নিয়ে বলল আরেকদিন যদি আমাকে তাদের বাড়ির আশেপাশে দেখে খুন করে ফেলবে । বাবাও বলে দিয়েছে তার বাসায় আর জায়গা হবে না । কাল সারারাত বাইরেই ছিলাম ।

বাবা গেট খোলে নি । সারারাত রাস্তায় ছিলাম । আপুর বাসায়ও যাই নি । দুলাভাই আমাকে একদমই দেখতে পারে না । “ চেহারা দেখে মনে হলো না খেয়ে আছে সারাদিন ।

সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম না । সেদিনই নতুন টিউশনিটার বেতন পেয়েছিলাম বলে পকেটে কিছু টাকা ছিল । একসাথে খাওয়ার কথা বলতে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল ক্ষুধা নেই , খেয়েছে । মিথ্যাও বলা শেখে নি আজো ভালমতো , সহজেই ধরে ফেললাম । রাগ হয় পার্থর বাবার উপর ।

ছেলেকে পৃথিবীতে এনে সুন্দর একটা নাম দেওয়া ছাড়া আর কিছু কি করেছেন তিনি ? ভেবে পেলাম না । একটা কাজ করেছিলেন অবশ্য । পার্থর মা মারা যাবার দেড় বছরের মধ্যে নিজ দায়িত্বে তড়িঘড়ি করে আরেকজন মা নিয়ে এসেছিলেন ওর জন্য । একটু চিন্তাও হলো পার্থর জন্য । কণার বাবা যদি ওমন কথা বলে থাকে তাহলে তা করেও ফেলতে পারেন ।

ঐ লোক এম.পির পিএস । আমাদের এলাকায় কুখ্যাত মানুষ । যা বলতে এসেছিলাম তা আর বললাম না । দুই তিনটা অর্থহীন আশ্বাসের কথা , যা আমি নিজেই বিশ্বাস করি না , শুনিয়ে উঠে চলে এলাম । কণার কোমড় ঢাকায় বেশ শার্প চেহারার একছেলের প্রায় খামচি দিয়ে জড়িয়ে রিকশায় করে ঘোরার দৃশ্যের কল্পনা আমার বন্ধু নিতে পারবে না ।

আর কণার মোবাইল নেই কথাটাও ভুল । ডান হাত ঐ ছেলের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে বা হাতের মোবাইল নাড়তে নাড়তে গল্প করতে আমার নিজের চোখে দেখা । এখন এসব বললে মনেহয় ও সুইসাইড করে ফেলতে পারে । কিছুটা সময় যাক , একটু স্থির হোক আগে । সময় পাওয়া গেলনা ।

তিনদিন পর সকালে খবর পেলাম স্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে একটু দূরে রেল লাইনের ওপর পার্থর লাশ পাওয়া গেছে । শরীর পেট থেকে দু টুকরো । মাথা , বুক আর গলার কয়েকজায়গায় ছুরির পোঁচ আর পাড় দেয়ার গর্ত । পুলিশ ব্যাপরটা সুইসাইড হিসেবে চালিয়ে দিলো । পার্থর ছোট মুদীর দোকান চালানো বাবাও কোন মামলা করার সাহস পেলেন না ।

পার্থকে যেদিন কবরে রেখে এলাম আকাশ ভেঙ্গে সেদিন বৃষ্টি নেমেছিল খুব । *** কণাকে মাঝেমাঝে দেখি রাস্তায় । পাশের ছেলে আবার বদলে গেছে । ওকে হাসতে দেখে মাথার ভেতর যেন আগুন ধরে যায় । রাগে মনে হয় পাগল হয়ে যাব ।

ইচ্ছে করে মাজেদের থেকে এক বোতল এসিড এনে ছুড়ে মারি সুন্দর, নিষ্পাপ মুখটায় আর না হয় সবাই মিলে একদিন কিডন্যাপ করে . . . . . . . তারপর ওদের বাড়িতে ঢুঁকে খুন করি ওর বাবাকে । কিছুই করতে পারি নি এখনো । চোখের সামনে ভালোই আছে কণা । কণারা ভালোই থাকে । ( অবাস্তব নয় ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।