আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুদ্রঋণ কী দারিদ্র বিমোচনে সক্ষম?

দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। কিন্তু ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রত্যয়টি প্রতিদিনই বহুবার শোনা যায়। এটি যতবার শোনা যায় সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক ততবারই শোনা যায় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে ৭০ এর দশকে ক্ষুদ্রঋণ এর পথচলা শুরু। শুরু থেকেই এ ধারণা বিতর্কের জন্ম দেয়।

ক্ষুদ্রঋণের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি নিয়ে বিতর্কও প্রলম্বিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুদ্রঋনের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। দিন দিন একে নিয়ে বিতর্ক যেমন বাড়ছে, তেমনি এর বাজারও স¤প্রসারিত হচ্ছে। তাই ক্ষুদ্র কোন হেলাফেলা করার বিষয় নয়, কারণ এটি কতগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। মাইক্রো ক্রেডিট সামিট ক্যামপেন বলছে, ক্ষুদ্রঋণের জালের মধ্যে আছে প্রায় ১০ কোটি পরিবার।

আর এ ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ এ দুনিয়ায় সবচেয়ে গরীব সাড়ে ১৭ কোটি পরিবারের, বিশেষ করে, এসব পরিবারের নারীদের কাছে ক্ষুদ্রঋণ পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে কাজ করে যাওয়া। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিগত প্রায় চার দশক ধরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ব্র্যাক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, প্রশিকা ও আরো কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী দুই কোটিরও বেশি মানুষ এখন ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে যুক্ত, যাঁদের মধ্যে দেড় কোটি গ্রহীতা এখনো সক্রিয় আছেন। একই সূত্রে অন্য আরেক হিসাবে বলা হয়েছে, একই ব্যক্তি একাধিক সংস্থার কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নেন শতকরা ৩৩ ভাগ। এই বিবেচনায় মোট ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতার সংখ্যা এক কোটি।

তবে মোট ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৭০.৩৬ ভাগ এবং সক্রিয় ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৮৫.৬৬ ভাগ মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীভূত। এগুলো হলো গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা এবং প্রশিকা। গত বছর মোট ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকাই বিতরণ হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও আশার মাধ্যমে। (মুহাম্মদ : ২০১১) গ্রামীণ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে ৮৩ হাজার ৩৪৩টি গ্রামে।

মোট কর্মী সংখ্যা ২৪ হাজার ৩২৫ জন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে মোট ৪০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। টার্গেট গ্রুপ তথা বিত্তহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, গ্রামীণ গরীব মহিলা ও বেকার যুবকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের আত্মসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা দানের মাধ্যমে তাদের আত্মকর্মসংস্থানে নিয়মিত করে আয় বৃদ্ধি করাই এর মূল লক্ষ্য। পল্লীর পুরুষ ও মহিলাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দিলে তারা অন্যের সাহায্য ব্যতিরেকে স্ব-কর্মসংস্থানের ও বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন, এ ধারণা নিয়ে অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে।

‘গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা দিন মজুর, ক্ষেত মজুর, তাঁতী, মুচি, ঋনী, ভিক্ষুক, সর্বহারা বিধবা, স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা ও পরিত্যক্তা নারীসহ সকল শ্রেণীর ভূমিহীন ও বিত্তহীনদেরকে একটি ঋণ দান কাঠামোর মধ্যে এনে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছেন এবং তাঁদের শ্রম দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছেন। ’ ( শফিক: ১৯৯০) ১৯৮৮ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের শতকরা হার ছিল ৯৮ ভাগ। এরপরই ছিল ব্র্যাকের অবস্থান, তাদের ঋণ পরিশোধের হার ৮৩-৯২%। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থা ছিল রুপালী ব্যাংকের, তাদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল শতকারা ৭৮%। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংকের, মাত্র ৩২%।

ফলে তখনকার বিভিন্ন গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বলা হয়। যদিও তখনও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে তখনকার গবেষণাগুলোতে এগিয়ে রাখা হতো গ্রামীণ ব্যাংককে। ‘ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক অস্ত্র। এক অর্থে এটি সম্পদও বটে।

এ তরল সম্পদের নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তি এবং শ্রেণী আয় ও ক্ষমতা বাড়াতে পারে। বাংলাদেশের ঋণ বিতরণ অভিজ্ঞতা মোটেই সমতাভিত্তিক নয়। কি শহরে কি গ্রামে এ সম্পদের একচেটিয়া অধিকারী শ্রেণী গড়ে উঠেছে। ফলে প্রকৃত উৎপাদক শ্রেণী এ থেকে যথেষ্ট লাভবান হতে পারেনি। অবশ্যি গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

’ ( রহমান, ১৯৮৯) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের গ্রামীণ কর্মসূচী, গ্রামীণ ব্যাংক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন গ্রামীণ দরিদ্রদের সংগঠিত করছে। সংগঠিতদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে মহিলা। উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা নিয়ে কাজ করে ‘এসোড’ নামের একটি এনজিও। এক গবেষণায় দেখা যায়, তাদের যোগাযাগ কাঠামো ততোটা শক্তিশালী নয়। তাছাড়া প্রকল্পের কার্যক্রমের কোন ফলোআপও ছিল না।

ফলে তাদের প্রকল্পের অগ্রগতি আর অর্জনের কথা মুখে বললেও বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। ‘প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীদের জন্য এই এনজিওটির (এসোড) গৃহীত একমাত্র যোগাযোগ কৌশল ‘প্রশিক্ষণ’। এদের এক একটি প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল মাত্র চারদিন, যা উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার জন্য একেবারে অপ্রতুল। যদিও প্রশিক্ষণে আঞ্চলিক ভাষায় লেকচার প্রদান করা হয়, তথাপিও এর প্রভাব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীদের ওপর খুবই কম। এই এনজিওটির কার্যক্রমের কোন মনিটরিং ব্যবস্থা নেই।

... যোগাযোগ কার্যক্রমের উপাদান হিসেবে তারা ছাপিয়েছে শুধু একটি পোস্টার ও ব্রশিয়ার। স্থানীয় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য লোকজ মাধ্যম ও গণমাধ্যম কোনটির ব্যবহার তাদের যোগাযোগ কৌশলে লক্ষ্য করা যায়নি। ’ (সালাম ও সালাম : ২০১১) ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, সে আলোচনার বড় অংশ জুড়ে থাকে ক্ষুদ্রঝণ দারিদ্র্য বিমোচনে কতোটা সফল বা ব্যর্থ। কিন্তু এ ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তার চেয়ে অনেক কম আলোচনা হয়। কিন্তু ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও রয়েছে বড় ধরনের গলদ।

ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আগেই শোধ করতে হয় কিস্তির টাকা। অথচ ঋণের টাকা লগ্নি করার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর আসে লাভের টাকা। ‘... কিন্তু খুদে কর্জ বাজারে পুঁজি লগ্নি হয়ে খাতকের হাতে পৌঁছানোর আগেই খুঁদে কর্জ পুঁজি নিয়ে নেয় ভবিষ্যতে তৈরি হবে যে উদ্বৃত্ত মূল্য, তার কিয়দংশ। কর্জ দেয়ার সময় খাতকের কাছ থেকে কেটে রাখা হয় প্রথম কিস্তির টাকা। এই প্রথম কিস্তির মধ্যে থাকে আসলের একাংশ, সুদের একাংশ, ঋণ বীমার প্রিমিয়ামের একাংশ, জামানতের একাংশ, আদায় খরচের একাংশ।

’ (চৌধুরী : ২০০৭) ফারুক চৌধুরী তাঁর এক লেখায় খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যে কিভাবে একজন ঋণগ্রহীতা কতগুলো ধাপের মধ্যে দিয়ে গিয়ে অবশেষে পরিণত হন ‘ঋণদাস’ এ। তিনি দেখান, একজন ঋণগ্রহীতা প্রথম ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে উৎপাদন উপকরণের মালিক হন, অর্থাৎ তিনি ঋনের টাকা দিয়ে কেনেন রিক্সা, ভ্যান বা চালের কল ইত্যাদি। তাকে এ দিয়েই দ্বিতীয় কিস্তি শোধ করতে হয়। এসবের মালিক থেকে তিনি হয়ে ওঠেন স্বাধীন উৎপাদনকারী। এজন্য তাকে আনুসাঙ্গিক আরো অনেক কাজ করতে হয়।

তাকে কিস্তি শোধের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। কিস্তি শোধের জন্য তার পরিবারের শ্রমও যুক্ত হয়। এ অবস্থায় ব্যবসার আনুসঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য তাকে আবার ধার করতে হয় গ্রাম্য মহাজন কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে। এ পর্যায়ে তিনি স্বাধীন ব্যবসায়ী থেকে আবার খাতকে পরিণত হন। তখন উৎপাদিত পণ্য নিয়ে তাকে যেতে হয় বাজারে, যা বিশ্বায়িত পুঁজির কব্জায়।

এ পণ্যের সাথে যুক্ত থাকে পরিবারের উদ্বৃত্ত শ্রম। কোন দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের কারণে তা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার অবস্থা খারাপ। তা না হলেও পণ্য বা সেবা বিক্রির অর্থ থেকেই তাকে সপ্তাহান্তে শোধ করতে হয় কিস্তির টাকা- আর এক দিকে আছেন গ্রাম্য মহাজন। ফলে তিনি হয়ে পড়েন ‘ঋণদাস’। এভাবে অনেকক্ষেত্রে একজন ঋণগ্রহীতা বৃত্তাকার গতিপথে ঘুরপাক খেতে খেতে পরিণত হন ‘ঋণদাস’ এ, কখনো তার অবস্থা পূর্বের চেয়েও খারাপ হয়, প্রান্তিক থেকে তিন হন প্রান্তিকতর।

অথনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন। তিনি দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্যের দাবিকে মনে করেন ‘ভ্রান্ত ও প্রতারণামূলক’। এর যুক্তি হিসেবে তিনি কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো সংক্ষেপে এরকম- ১. এই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক বেশি বাজারমুখী হয়েছে। ২. এই ঋণ প্রক্রিয়া অসংখ্য মানুষকে নতুন করে ঋণগ্রস্ত করেছে, অনেককে সুদের মহাজন বানিয়েছে।

৩. মোট ঋণগ্রহীতাদের খুব সামান্য অংশ তাদের অবস্থার পরিবর্তন আনতে পেরেছে। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার কারণে ক্রমে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার মানুষ ক্ষুদ্রঋণের আওতা থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছেন। ৪. বেশিরভাগক্ষেত্রে নারী ঋণগ্রহীতা হলেও খরচ করে পুরুষ। ঋণ ব্যবহারে অনেক নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও ঋণ পরিশোধের চাপ তাদের ওপরই পড়ে। ২০০৬ সালে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ দুই হাজার পাঁচশ এক জন (২৫০১ জন) ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতার ওপর একটি গবেষণা করেন।

এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই হলো নারী। তার গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এনজিওগুলোর মূল সুদের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ , কখনো কখনো ১৮ শতাংশ। তবে কার্যকর সুদের হার এবং ঋণ গ্রহণের কার্যকর খরচের হার যথাক্রমে গ্রামীণের ক্ষেত্রে ২৭% ও ৩১%, প্রশিকার ক্ষেত্রে ৩৯% ও ৪১% এবং ব্র্যাক ও আশার ক্ষেত্রে ৪২% ও ৪৫%। একই গবেষণার ফলাফলে আরো দেখা যায়, ৯৬ শতাংশ বলেছে এক সপ্তাহ পর ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে তারা চাপ বোধ করে। ৯০ শতাংশ নারী ঋণের টাকা স্বামী বা পুত্রের হাতে তুলে দেয়।

অধিকাংশের আয়ের ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি ঘটে নাই। ছোট ব্যবসা ও কুটির শিল্পের জন্য যারা ঋণ নিয়েছে তারা অনেকদিন ঋণের চক্রে ঘুরপাক খায়। তিন চতুর্থাংশ ঋণের টাকা থেকে অংশ বাঁচিয়ে এক সপ্তাহর মধ্যে কিস্তি দেয়। অধিকাংশ কিস্তি পরিশোধ করে মজুর হিসেবে খেটে বা আগের জমানো টাকা বা স্বামীর আয় থেকে। কেবলমাত্র চার ভাগের একভাগ ঋণের টাকা থেকে আয় করতে সক্ষম হয়।

৫২ শতাংশ জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধ করতে তাদের খাবার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। (ওয়াসিফ, ২০০৮) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ১৯৯৬, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে। এসব সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা মাত্র পাঁচ থেকে ৯ ভাগ ঋণগ্রহীতা এই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে। শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ ঋণগ্রহীতার অবস্থা একইরকম আছে কিন্তু তাদের অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে। শতকরা ৪০ থেকে ৪২ ভাগের অবস্থার অবনতি ঘটেছে।

যাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাদের অধিকাংশের অন্যান্য আয়ের উৎস ছিল। (মুহাম্মদ : ২০১১) ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে নারীকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়, আবার এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা শুধু নারীকেই ঋণ সাহায্য দিয়ে থাকে। এটিকে নারীর ক্ষমতায়নের স্বার্থে করা হয় বলা হলেও এর পেছনে আরো কতগুলো বিপরীত ও সহজ কারণ রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সে সব বিষয়ের সারমর্ম হলো: ১. পুরুষ ঋণগ্রহীতা অনেকক্ষেত্রে ঋণ আদায়ে ঝামেলার সৃষ্টি করে। ২. অনেকসময় পুরুষ ঋণগ্রহীতার ঋণের অর্থ ফেরত প্রাপ্তি অনিশ্চিত করে তোলে।

৩. পুরুষ ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে। ৪. পুরুষ ঋণ গ্রহীতাকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা নাও যেতে পারে। ৫. কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ঋণ গ্রহীতা ঠিক পুরুষের বিপরীত। নারীর কাছ থেকে তুলনামূলক সহজে ঋণ আদায় করা যায়, তার পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পুরুষকে সবসময় ঘরে পাওয়া না গেলেও তাকে পাওয়া যায়।

তাই নারীই হলো ক্ষুদ্রঋণের প্রদান গ্রহীতা। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণের টাকা খরচ করেন একজন পুরুষ। তাহলে কেন নারীকে বেশি ঋণ দেয়া হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে, উপরের বিষয়গুলো চলে আসে। সাউদার্ন মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের পরিচালক সুসান এফ ফেইনার বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির গোষ্ঠীতান্ত্রিক মনোভাব নারীদের জন্য যৌথ দায়বদ্ধতার সমস্যা সৃষ্টি করেছে। কোনো একজন নারী যখন ব্যক্তিগতভাবে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন তখন এই ব্যর্থতার দায়ভার তার গ্রুপের অন্য নারীকেও বহন করতে হচ্ছে।

ফলে তাদের পরস্পরের মধ্যে একধরনের বিরোধ দেখা দিতে শুরু করে, যা নিজেদের মধ্যেকার ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে খবু বেশি প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়নি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.