আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ আইএমএফ-এর ঋণ এবং সুদখোর ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ক্ষুদ্রঋণ ৬৪ ভাগকে আরও গরিব করে দেশের দারিদ্র্য বাড়িয়ে চলছে।



[আমাদের হুজুরদের ডাবল সমস্যা। রাজনীতি নিয়া কথা বললে বলে ধর্ম নিয়া রাজনীতি। ছ্যা ছ্যা। আবার আরেক দল বলে, কাজ-কর্ম না করা খোদা খাসি। আল্লাহ মাবুদ জানে দীন দুনিয়ায় তারা কি কামিয়াব হাসিল করেন।

আল-ইহসান পত্রিকার সাইটে গিয়া দেখলাম, তাদের দীন আবার দুনিয়া দুই নিয়া চিন্তা আছে। তথাকথিত দাতা সংস্থা আর সামাজিক ব্যবসা নিয়া এই লেখাটা বড়ই কৌতুহলের আনজাম করল। তাই লেখাটা শেয়ার করলাম। ] প্রসঙ্গ আইএমএফ-এর ঋণ এবং সুদখোর ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ক্ষুদ্রঋণ ৬৪ ভাগকে আরও গরিব করে দেশের দারিদ্র্য বাড়িয়ে চলছে। -আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।

বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে নতুন করে ঋণচুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার তথাকথিত কোন কারণই বর্তমানে নেই। এবং মূলত অতীতেও ছিলো না। ব্যাংকিং সেক্টরে উদ্বৃত্ত তারল্য, রিজার্ভ, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি, মুদ্রানীতিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি থাকায় বাংলাদেশ বর্তমানে এ সিদ্ধান্ত সহজেই নিতে পারে। তবে এরপরেও কঠিন শর্তের পুরোনো ধাঁচের ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আইএমএফসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পাওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগী হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আইএমএফ সাধারণত ঋণ দেয় সদস্য দেশের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায়।

কিন' বাংলাদেশের আর্থিক ভারসাম্য এখনো ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে এ বিষয়টি এখন খুব স্পষ্ট। বিশ্ব অর্থনেতিক মন্দার মধ্যেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রফতানি, রাজস্ব পরিস্থিতি, ব্যাংকিং সেক্টরসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত অর্থ বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে পাঁচ শতাংশের উপরে হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে গত ২৭ আগস্ট ’০৯ পর্যন্ত ৩৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ানোর মতো যথেষ্ট সঙ্গতি রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরের।

এখন শুধু দরকার বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও প্রায় হাজার কোটি ডলার ছুঁয়েছে। গত ৬ অক্টোবর’০৯ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৯৩৬ কোটি ডলার। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আয়ও গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। গত অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বিশ্ব মন্দার প্রেক্ষাপটেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে। গত অর্থ বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় করেছে বাংলাদেশ। মন্দায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ খাত ওভেন ও নীট পোশাক রফতানিতে ১৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া চলতি জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উৎপাদন ও কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে সঙ্কুলানমুখী মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করছে। এমন অবস্থায় সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক ভারসাম্য যে অবস্থায় রয়েছে তাতে আইএমএফ-এর ঋণ গ্রহণের প্রশ্নই উঠেনা।

এদিকে সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় অর্থমন্ত্রীর একটি বিবৃতি এতদিন পর একটি নির্মম সত্যকে স্বীকৃতি দিলো। পত্রিকায় হেডিং হয়েছে, “বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান হাতিয়ার নয় -অর্থমন্ত্রী। ” খবরে বলা হয়েছে, “অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান হাতিয়ার নয়। ক্ষুদ্রঋণ একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীসহ অতিদরিদ্রদের কাছে পৌঁছায় না। ফলে ক্ষুদ্রঋণ দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের মূলধারায় কোন অবদান রাখছে না।

অর্থমন্ত্রী গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অতি দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন। ” (ইত্তেফাক : ১৯ অক্টোবর-২০০৯) অথচ নির্মম বাস্তবতা হলো- দেশে দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণের নামে দারিদ্র্যের চাষ চলছে। দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে (পিআরএসপি) রয়েছে কথার ফুলঝুরি। সুষম শব্দে বাক্যে দারিদ্র্যকে সংজ্ঞায়িত করা এবং দারিদ্র্য নিরসনে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা রয়েছে এই কৌশলপত্রে। তবে এই কৌশলপত্র দারিদ্র্য নিরসনে বিশেষ কোন ভূমিকা পালন করতে পারছে।

স্বাধীনতা উত্তর গত ৩৮ বছরেও দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় গৃহীত হয়নি কোন শক্তিশালী নীতিমালা। বর্তমান সরকার ক্ষুদ্রঋণ নীতিমালা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন' এই নীতিমালা কবে আলোর মুখ দেখবে, আদৌই আলোর মুখ দেখবে কিনা সে ব্যাপারেও বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত বাজেট অধিবেশনের আলোচনায় জাতীয় সংসদে বলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ বিশেষ সাফল্য দেখাতে পারছে না। তিনি বলেছেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে হাজার বছরেও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।

নিয়ন্ত্রণ সুদের হার এই খাতকে গরিবের রক্ত চুষে নেয়ার অভিঘাতে রূপান্তরিত করেছে। চড়া সুদে বেসরকারি খাতের এক লাখ কোটি টাকার ঘূর্ণায়মান তহবিল দরিদ্র মানুষকে প্রতিদিন নিঃস্ব করছে। নিয়ন্ত্রণহীন এই সুদ দেশের মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে। বলাবাহুল্য, ক্ষুদ্রঋণ প্রবক্তা, প্রচলনকারী এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ফেরীকারী মহাসুদখোর ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ বিরোধী এসব কথার কোন সদুত্তর তো দূরের কথা বরং প্রতিবাদস্বরূপ ‘টু’ শব্দও করেনি। বলাবাহুল্য, ক্ষুদ্র ঋণের এক চটকদার কৌশলের নাম ঘূর্ণায়মান তহবিল।

এই পদ্ধতি মাত্র এক বছরে শতকরা আড়াইশ ভাগ মূলধন তৈরি করছে। এই তহবিল সেকালের কাবুলিওয়ালা কিংবা গ্রাম্য মহাজনের মতো গরিবের রক্ত চুষে নিচ্ছে। দেশের ঋণগ্রহীতারা ‘ওভারল্যাপিং’ ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বন্দি হচ্ছেন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে। জড়াচ্ছেন অনতিক্রম্য ঋণের জালে। মূলত ঘূর্ণায়মান তহবিলের কিস্তি শোধ করতে গিয়েই ঘটছে ওভারল্যাপিং।

বাস্তবতার নিরিখে দেখলে আয় থেকে শোধ পদ্ধতিতে ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হলে গরিবের ভাগ্য হয়ত বদলে দিতে পারত। কিন' বিআরডিবি’র পদাবিক প্রকল্প আয় থেকে দায় শোধ পদ্ধতিতে সাফল্যের মুখ দেখার পর এই প্রকল্পটি স্থায়ী করা হয়নি। নানাভাবে প্রকল্পটি বন্ধ এবং প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া সরকারি অর্থ ও বিদেশী অনুদানের অর্থ লুটের জন্য বিআরডিবি’র একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। সরকারি-বেসরকারি খাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ক্ষুদ্র তহবিল দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে দৃষ্টান্তমূলক কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। সরকারি-বেসরকারি হিসাবে মতান্তর থাকলেও সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের ১২ কোটি লোক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষুদ্র ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

অথচ ৭ কোটি মানুষ এখনও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে। অপরদিকে শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারাই নয় পাশাপাশি সীমাহীন অনাচারের শিকার হচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের ক্ষুদ্রঋণ কর্মীরা। গৃহীত সুদের মধ্যে কথিত সার্ভিস ফি বাবদ অংশ নেয়া হয় তার অধিকাংশ ব্যয় হয় নগর-রাজধানী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ঋণ কার্যক্রম তদারককারী বড় কর্তাদের। ফলে মাঠপর্যায়ের ঋণ কার্যক্রম তদারককারী কর্মীদের ভাগ্য বদলায় না। ক্ষুদ্র ঋণের আরেক নাম এখন ‘মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ’।

এই কো-অপারেটিভসমূহ খোদ রাজধানীতেই দাদন ব্যবসা করছে। কাবুলিওয়ালার মতো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে কোনভাবেই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে এই মুহূর্তে দেশে বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্রঋণ তহবিলের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা। ঘূর্ণায়মান তহবিল হিসেবে বিবেচনা করলে এই পরিমাণ তহবিল দেড় লাখ কোটি টাকা মূলধনের কাজ করতে পারে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, উপ-অধিদফতর, ক্ষুদ্রঋণ দানকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনকে সরকারের দেয়া তহবিল মিলিয়ে এক লাখ কোটি টাকার উপরে মূলধন রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্য অনুযায়ী সরকারের ক্ষুদ্রঋণদানকারী মূল সংস্থা পিকেএসএফ’র বর্তমান মূলধন দুই হাজার চারশ ৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, মহিলা অধিদফতর, সমাজসেবা অধিদফতর, জাতীয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতরের সর্বসাকুল্যে পুঞ্জীভূত তহবিলের পরিমাণ ১ হাজার ৭শ কোটি টাকা। এসব তহবিল থেকে সরকার কি ফল পাচ্ছে তা যাচাই করলেই অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। ‘সোসিও ইকোনমিক অ্যান্ড ইনডেবটেডনস রিলেটেড ইমপ্যাক্ট অব মাইক্রোডিট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা গ্রনে' মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষায় দেখিয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কিভাবে প্রান্তিক জনপদে দারিদ্র্যের চাষ করছে। গবেষণা পত্রের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, ঋণ গ্রহীতাদের শতকরা মাত্র সাত ভাগ মানুষ বলেছেন, ঋণ গ্রহণের পর তাদের অবস্থা ভাল হয়েছে।

আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ বলছে ঋণ গ্রহণ তাদের জীবনে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেনি। ঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৬৪ ভাগ মানুষ বলেছেন, ঋণ গ্রহণের পর তাদের আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। ঋণ গ্রহীতাদের ৪০ ভাগ লোকের অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। এখানে ঋণ গ্রহণের পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তি দিতে হয়। ঋণ গ্রহীতাদের শতকরা ৯৬ ভাগ লোক বলেছেন, প্রথম কিস্তি ঋণের অর্থ থেকেই পরিশোধ করতে হয়েছে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ থেকে তাদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে।

এতে তাদের নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটে এবং শারীরিক মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এই গবেষণা পত্রের তথ্য উপাত্ত ২ হাজার ৫শ ঋণ গ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যে পদ্ধতিতে ঋণদান চলছে তাতে গরিব মানুষ কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া উচিত এবং ক্ষুদ্রঋণ নীতিমালা এখন জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা মাত্র ১০ থেকে ১৫ ভাগ সুদ নেয়।

এই সুদের মধ্যে তাদের সার্ভিস চার্জ রয়েছে। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সুদাসল নেয়ার কারণে প্রকৃতপক্ষে এই সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮ থেকে ৪০ ভাগ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ শতকরা ১২ টাকা হারে সুদ নিয়ে কমপক্ষে ২৮ থেকে ৪০ টাকা সুদের হারে বিনিয়োগ করে ব্যাপক মুনাফা করছে। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর নেয়া ঋণের অর্থ ঘূর্ণায়মান তহবিলের মাধ্যমে আদায় করেই তারা গরিবদের নিঃস্ব করছে। পৃথিবীর কোথাও বছরে আড়াইশ ভাগ মূলধন বৃদ্ধির ব্যবসা নেই।

উল্লেখ্য, বর্তমানে আমাদের দেশের সাত কোটি মানুষ কর্মক্ষম। আর এই সাত কোটির মধ্যে সাড়ে তিন কোটি কর্মহীন। এই কর্মহীন মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে দারিদ্র্য অনেক কমে যাবে। বলাবাহুল্য, কর্মহীন মানুষকে কর্মক্ষম করতে হলে দরকার ব্যাপক বিনিয়োগ। তবে বিশ্বমন্দা ও আস্থার অভাবের কারণে দেশে বিনিয়োগ কমে গেছে।

এদিকে এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৫৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ শতাংশ। মুক্তিযুদ্ধের কারণে ১৯৭৪ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশ। ১৯৯১ সালে তা কমে আবার ৫৬ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানে এ হার ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মধ্যে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ২০ শতাংশ মানুষ।

স্বীকৃত এক তথ্যে জানা গেছে যে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে ৭৫.৭০ শতাংশ পরিবার চাহিদার তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করে। গ্রামের ১৯ শতাংশ পরিবার তিন বেলা খেতে পায় না। আরেকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে যে, দৈনিক ১ ডলারের কম আয় করে ২৫ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ। এই সংখ্যক মানুষ দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য ও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশের সামনে যে দুটি সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে তা হলো কর্মসংস্থানের অভাব এবং কৃষি খাত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠা।

এই দুটি কারণে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব মারাত্মক আকার ধারণ করতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বছরে ৮২ হাজার হেক্টর চাষের জমি কমে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন কৃষিবিদরা। বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য পতিত জমি আছে ৩.২৩ লাখ হেক্টর। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ২০ লাখ হেক্টর জমি আছে; যা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ২০৫০ সালে ৮ শতাংশ (বর্তমানের চেয়ে) ধানের এবং ৩২ শতাংশ গমের জমি কমে যাবে।

বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় নানা সমস্যার কারণে কৃষি খাত হুমকির মুখে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক সমস্যা বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা সমপ্রতি যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তাতে বলা হয়, তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। গত ১৪ বছরের হিসাবে তাপমাত্রা মে মাসে ১ এবং নভেম্বরে ০.৫ ডিগ্রি বেড়েছে। এদিকে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বছরে ২.৫০ শতাংশ হারে খাদ্যের চাহিদা বাড়ে যার পরিমাণ ০.৩৩ মিলিয়ন টন। আর চাষের জমি কমে ১ শতাংশ হারে। চাষের জমির নিবিড়তা ১.৮ যা আর বাড়ানো সম্ভব হবে না। বর্তমানে দেশে খাদ্যের চাহিদা কত, প্রকৃত জনসংখ্যাইবা কত এসব বিষয়ে সরকারের নিকট সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। সরকারিভাবে ৪৫৩ গ্রাম (প্রাপ্ত বয়স্কদের মাথা পিছু) ধরে খাদ্যের হিসাব করা হয়।

বর্তমানে খাদ্যের চাহিদা কত এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২ কোটি ৭৪ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ২ কোটি ৭০ লাখ। আর দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণও নয়। অপর এক জরিপে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ৭৫.৭০ শতাংশ পরিবার চাহিদার তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করে। গ্রামের ১৯ শতাংশ পরিবার বছরে মাসাধিককাল ধরে শুধু এক বা দুই বেলা খেতে পারে।

জরিপে আরো বলা হয়, বিশ্বের ৮৮টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বৈশ্বিক ক্ষুধার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭০তম। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মাত্রা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে ৪০ শতাংশ। আয়ের নিরিখে নিচের দিকে ৪০ শতাংশ মানুষ জাতীয় আয়ের মাত্র ১৪.৩৬ শতাংশ গ্রহণ করে। সবচেয়ে নিচের ৫ শতাংশ মানুষের মাত্রা ০.৭৭ শতাংশ আয় জোটে।

পক্ষান্তরে সবচেয়ে উপরের স্তরের ৫ শতাংশ মানুষ ২৬.৯৩ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ, ৩৭.৬৪ শতাংশ জাতীয় আয় দখল করে। এদিকে বেকারত্ব অস্বাভাবিক পরিমাণে বাড়ছে, বাড়ছে দারিদ্র্যের হার। নতুন কর্মসংস্থান নেই। অপরদিকে প্রাকৃতিক সমস্যাসহ নানা কারণে বেকারত্বের হার বাড়ছে। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের প্রথম পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে কর্মক্ষম প্রায় ১০ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়ে।

এছাড়া দেশব্যাপী কাজ কর্ম না থাকায় বেকারত্ব বাড়ছেই। শিল্প কারখানা বন্ধ হচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে বেকার মানুষের সংখ্যা। আর এসব হতদরিদ্র বেকার মানুষগুলোকে প্রলুব্ধ করে ক্ষুদ্রঋণ প্রবক্তারা তাদের ঋণ ফেরী করে কাবুলিওয়ালার চেয়ে বড় সুদখোরের ভূমিকায় রয়েছে। অথচ তাদেরকেই ‘নোবেল প্রাইজ’ দেয়া হচ্ছে। সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রী এদের উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, সুদখোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দেশের উন্নতি হয় না।

বলাবাহুল্য, সুদখোর বলতে যে প্রধানমন্ত্রী খোদ ড. ইউনূসকে বুঝিয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, সুদ ইসলামে খুব ঘৃণিত একটি প্রথা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই সুরই যেন ধ্বনিত হয়েছে। এদিকে বর্তমান নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো, ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাস হবে না’। বলাবাহুল্য, এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর সুদখোর সম্বোধনের অভিব্যক্ত সমার্থক।

দেশের ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান সঙ্গতকারণেই ইসলামের আলোকে তাই আশা করে যে, বর্তমান দিন বদলের সরকার শুধু গরিবের রক্তচোষক, ক্ষুদ্রঋণ প্রক্রিয়া আর ক্ষুদ্রঋণ প্রবক্তা ড. ইউনূসকেই ধরাশয়ী করবেন না তিনি এবং তার সরকার সুদী প্রথার বিপরীতে সত্যিকার ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করে ইসলামের নামে সম্পূর্ণ অনৈসলামী ও সুদী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক-এর ধারক-বাহক জামাতে ইসলামকেও কুপোকাত করবেন। তাদের তথাকথিত ইসলামী ব্যাংক-এর মণ্ডুপাত করবেন। মহান আল্লাহ পাক কবুল করুন। (আমীন) মূল লেখা: প্রসঙ্গ আইএমএফ-এর ঋণ এবং সুদখোর ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ক্ষুদ্রঋণ ৬৪ ভাগকে আরও গরিব করে দেশের দারিদ্র্য বাড়িয়ে চলছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।