আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

////////জন্মদিন/////// ছোট গল্প


কিন্তু সখিনাকে কেউ ভাল কিছু খেতে দেয়না। সামান্য ছোলা আর মুড়ি দিয়ে ইফতার সারে সে। মাঝে মাঝে কিছু ছোলা লুকিয়ে নিয়ে আসে বাদশা আর শাহজাদার জন্য। কিন্তু তাতে দুইজন এর ভাল মত পেট ও ভরে না। তাই দুই ভাই একসাথে ইফতার এর মিনিট দশেক পরে ভিক্ষায় বের হয়।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করে যা পায় তাতে দুই জনের চলে যায়। মাঝে মাঝে রাতের ভাত এর অভাব ও দূর হয়ে যায়। আজ বাদশার জন্মদিন। কিন্তু ঘরে ভাল কিছু নেই। দুই দিন ধরে সামনের মোড়ের মুদি দোকানের থেকে চাল আনতে পারছেনা।

রাতে তাই খাওয়া হয়নি ওদের তিন জনের। ভোর রাতে ভাল কিছু না খেলে সারা দিন কেউ ই ঠিক মত কাজ করতে পারবেনা। ভেবেই সখিনা বলল- “বাবা আইজ রাইতে আমরা চাল ভাজা খামু রে। ঐ যে মনে আছে তোর ছোট মামা আনছিল গত মাসে। পোলাওর চাইল।

আজকা আমার সোনামানিক বাদশার জন্মদিন। তাই আজকা আমরা তিন জনে পোলাওর চাইল ভাজা খামু” বলেই শুষ্ক ঠোটে হাসার চেষ্টা করল সখিনা। বাদশার মনটা খারাপ হয়ে গেল শুনে। আজ ওর জন্মদিন। কিন্তু ভাল মন্দ কিছু খেতে পারেনা এই দিনে।

জ্ঞান হবার পর থেকে ই নিজেকে আবিষ্কার করেছে গরম কারখানায় লোহার মিস্ত্রি হিসেবে। সামান্য বেতন- তাতে নিজের খাওয়ার খরচ ই চালানো যায়না। এই অবস্থায় তাকে বড় ভাই শাহজাদার সাথে ঘরের খরচ চালাতে হয়। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরায় ওদের। ঢাকা শহরের বস্তি জীবন এমনই হয় হয়ত।

মাকে মন খারাপ করে বাদশা বলল- “আম্মা আইজ আমার কত বছর হইল আম্মা? “আজ মিলাইয়া সাতটা সাবান মাস। তোর আজ থেইকা আট বছর হইল আব্বা”- আস্তে আস্তে প্লেটে করে চাল ভাজি বাড়তে বাড়তে বলল সখিনা। “আম্মা আমার কোন দিন জন্মদিন করনাই আম্মা”?অবুঝ চোখ দুটোতে রাজ্যের প্রশ্ন নিয়ে মায়ের দিকে তাকালো বাদশা। বুকের মাঝে এক রাশ দুঃখ জমা রেখে সখিনা বলল- “না রে আব্বা- আমাগো কি এত টেহা আছে রে? আমরা হইলাম বস্তির মানুষ। আমরা জন্মদিন আইলে পোলাউর চাইল ভাজা খাই ।

আমাগো মত মাইনসের লাইগা এই দুনিয়াতে কিছুই নাই রে বাজান- আয় আমি তোরে কোলে তুইলে খানা খাওয়াই দেই। আয় নে মুখ হা কর আব্বা”- বলেই এক মুঠ চাল ভাজা ছেলের মুখে তুলে দেয় সখিনা। মুখে নিয়ে কড়মড় করে চিবাতে চিবাতে বাদশা বলল- “আম্মা ঐ যে একদিন আমি শুনছিলাম বড় লোকেরা নাকি জন্মদিন আইলে কি একটা কয়?” রহিমার চোখে হটাত করে পানি চলে আসে। চোখের পানি মুছতে মুছতে সখিনা গাইতে লাগলো “ হাপি বারড্ডে আমার আব্বা- হাপি বারড্ডে আমার বাদশার” বাদশার চোখে পানি চলে আসে সেই গান শুনে। গুন গুন করে এই গান গাইতে গাইতে আবার ঘুমিয়ে পড়ে দুই ভাই।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে ঊঠে ই কাজে চলে যায় মা ছেলে তিন জনেই। সকালে বাদশারা চলে যাবার আগে সখিনা বলে রাখে আজ যেন বড় বাড়িতে কাজের যায়গায় চলে আসে দুই জনে। আজ সেখানে ভাল খাবার দেবে। কিছু যদি ছেলে দের খাওয়ানো যায় এই আশায় সেখানে চলে আসতে বলে ওদের। ওরা ও চলে যায় যে যার কাজে।

কাজ শেষে সেই বাড়ীতে ঢুকতে গেলেই বাড়ির দারোয়ান বাঁধা দেয়। সেখান থেকে বাড়ি ওয়ালার বৌ ওদের ভেতরে ঢুকতে দেয়। ভেতরে গিয়ে আলো ঝলমলে ইফতার পার্টির দামী খাবারের গন্ধে চোখ চক চক করতে থাকে দুই জনের। কিন্তু পেট তো চোখের দেখায় ভরে না। তাই সখিনা বুয়া কে খুঁজে বের করে রান্না ঘরে।

সেখানে সখিনাকে আজকের ইফতার উপলক্ষে খাবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু সারা দিন রোজা রেখেও ছেলে দের জন্য বসে ছিল সখিনা। বাদশা আর শাহজাদা আসতেই ওদের সামনে খাবারের প্লেট তুলে দেয় সখিনা। নিতান্ত সামান্য খাবার দাবার। সামান্য ছোলা, মুড়ি আর একটা করে জিলিপি।

এই মাসে বাড়ি বাড়ি খুঁজে ও জিলিপি দেয়নি কেউ। তাই আজ জিলিপি দেখেই চোখ চকচক করে উঠে বাদশার। শরবত টুকু খেয়েই রোজা ভাংগে তিনজন। তারপর বাকি খাবার খেতে থাকে ওরা। কিন্তু বাদশা ওর জিলিপির টুকরা টা লুকিয়ে রাখে জামার পকেটে।

ইফতারি শেষ হতেই দুই ভাই বের হয়ে যায় সেই বাসা থেকে। সখিনাকে অনেক বাসন পরিষ্কার করতে হবে বলেই থেকে যায় সে। রাস্তায় বের হয়েই দুই ভাই একটু দূরে ল্যম্প পোষ্টের আলোতে বসে পড়ে। তারপর শাহজাদা আর বাদশা পকেট থেকে বের করে লুকিয়ে আনা খাবার। বাদশার হাতে একটা বেগুনির অর্ধেক আর বাদশার হাতে সেই জিলিপি।

হাতে নিয়ে খাবার গুলো দুই ভাই মজা করে খেতে থাকে। শাহজাদা শুনতে পায়না বাদশা বিড় বিড় করে কি যেন গাইছে। কান পেতেই হেসে ফেলে দুই জন। তারপর দুই জনেই গুন গুন করে গাইতে থাকে - হাপি বারড্ডে টু বাদশা, হাপি বারড্ডে টু ইঊ ... পুরোটা জিলিপি খায়নি বাদশা – অর্ধেক টা রেখে দেয় রাতের জন্য। কে জানে রাতে হয়ত কালকের মতই চাল ভাজি খেতে দেবে ওদের মা... (সমাপ্ত) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.