আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ফিজিক্স স্যার।

আমি একা তুমি একা অথচ দুজন পাশাপাশি মাঝখানে যা তা হলো দাবার দান...... চেক দিও না মন্ত্রি যাবে ভালোবেসো না খেলায় হারবে...... সচরাচর আমি যা বলি সবই সত্য ঘটনা, এখানে যা বলবো তাও ষোলআনা সত্য। স্কুল শেষ করে কলেজে যাওয়ার বেলায় আগে বাগেই আমাদের নিয়তি সিলেক্ট করে দেয়া, তো আমার ক্ষেত্রে বংশ পরস্পরায় ফিজিক্স মোশারফ স্যার, কেমিস্ট্রি মন্তুস স্যার, আর একমাস বায়োলজি শহীদুল্লাহ স্যার। এই এক মাস পড়ার পিছনে একটা ছোট ব্যাপার আছে। আমার কলিজা ছোট সাইজের সব কথা আমি সব জায়গায় টাস করে বলতে পারি না। মোশারফ স্যারকে আগে থেকেই চিনতাম এবং উনার মজার মজার সব গল্প শুনে শুনে আমাদের কলেজের স্বপ্ন দেখতাম।

আজকের গল্প আমার এই প্রিও স্যারকে। প্রথমেই স্যারকে একটু পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সাথে। তিনি আমাদের ফিজিক্সের প্রাক্টিক্যাল স্যার। মেইন যে স্যার ছিলেন তার সামনে প্রাইভেট নামক শব্দটা বলার সাহস আমাদের কারোরই ছিলোনা, না ছোট কইলজার না বড় কইলজার। যার কারনে তার নিজের ছেলে দুইবার ফেইল করার পরেও তিনি তারে প্রাইভেট নামক শব্দ মুখে আনতে দেন নি।

আমাদের মন্তুষ স্যার বলতেন বিজ্ঞান গুরুমুখি বিদ্যা, পাশে না থাকলে শিখতে পারবে না, সেই কারনে আমরা গুরুর বাসায় যেতাম সেই ভোর ৬টায়। কেমিস্ট্রি পড়া শেষ করে ৮টার দিকে আমি যেতাম মোশারফ স্যার এর কাছে, প্রথম কাজ হলো তাকে ঘুম থেকে তোলা। তিনি খুব সুন্দর করে অনুরোধ করতেন আরো ৫ টা মিনিট সময় দে বেশীদিন বাচবোনারে আরো ৫ টা মিনিট ঘুমাতে দে,। ৫ মিনিট দিতে গেলে অই ৫ মিনিট চলতেই থাকবে তাই সময় দিতাম না, যেকোন ভাবে সিরকে তুলতাম। পড়ার টেবিলে আসার সময় স্যার উনার ৬ মাসের মেয়েটাকে নিয়ে এনে বসাতেন বসিয়ে জপতে থাকতেন ও ফুরি আব্বা কো, ও ফুরি আব্বা কো………।

মেয়েটা উ আ জাতীয় কোন শব্দ করলেই স্যার ভাবীকে ডাক দিতেন ও বউ আমার ফুরিয়ে আব্বা কয়। । ঘটনা সব বিস্তারিত বলতে গেলে আমি একটা উপন্যাস লিখতে পারবো। আমি আমার এই স্যার এর একদিনের একটা ঘটনাই আজ বলবো। একদিন আমাদের পড়ানোর মুহরতে স্যার এর শ্যালক এসে হাজীর, শ্যালক কে দেখেই স্যার বলে উঠলেন ইশ তুমি এমন টাইমে আসলা এখন তো সকালের খাওয়াও খাওয়াতে হবে।

শ্যালক বললো আমার দুবাইয়ের ফ্লাইট আগামি বুধবার বিদায় নিতে আসলাম। আমাদের স্যার এর উত্তর বিদায় নেয়ার কি দরকার অখানে গয়ে যদি ফোন করে বলতা আমার মোবাইলে একটা বিদেশী কল ও আসতো আর আমি দোয়াও একটু বেশী করে দিতাম। এখন আসছো আমার কত খরচ বাড়াইলা। শ্যালক স্যার এর সাথে আর কোন কথা না বলে ভিতরে চলে গেলো। স্যার আমাদের পড়ানোতে মন দিলেন।

কিছুক্ষন পরে সে আবার এসে বললো স্যার আপনার মোটর সাইকেল টা নিয়া একটু যাবো। যে দুরত্তে যাওয়াও কথা সে বললো সেখানে যেতে আসতে প্রায় ৩ঘন্টা লাগবে। স্যার বললেন নিতে পারো এক শরতে তেল তোমার আর পঙ্কিরাজের লাখান যাবে আবার পঙ্কিরাজের লাখান আসবে এক ঘন্টা সময়। সে আবার মুখ কালো করে ভিতরে চলে গেলো। স্যার সাথে সাথে উঠে তার মোটরসাইকেলের সব তেল বের করে ফেললেন।

আমরা নিরবাক বসে বসে দেখছি। এবার ভিতর থেকে ভাবীর তলব আসলো স্যার ভিতরে গেলেন আমাদের রেখে। তিনি কোনভাবেই এক ঘন্টার বেশি সময়ের জন্য সাইকেল দিবেন না। অবশেষে তার শ্যালক বিদায় নিয়ে চলে গেলো। স্যার আমাদের পড়ানো শুরু করলেন।

হটাৎ করে আমাদের সাম্নের দরজা দিয়ে একটা এলুমিনিয়ামের হাড়ি উড়ে গেলো। আমরা সতরক হলাম ব্যাপার কি, ওমা সাথে সাথে ব্যাপারটা বেড়ে গেলো কাপ, পিরিচ, চা চামচ, টেবিল চামচ, কাচের গ্লাস সব সব উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আমি বললাম স্যার ব্যাপার কি স্যার বললেন দাড়াও দেখে আসি। স্যার ফিরে আসে বললেন ব্যাপার ভালো না বুশ ইরাক আক্রমন করছে তোমরা তোমাদের জীবন বিপন্ন করে লাভ নাই তোমরা ব্যাগ ঘোচাও। বড়ো বড়ো বোমা পড়লে ইশারার অপেক্ষা না করে দৌড় দিবা।

স্যার আবার ভিতরে গেলেন না আক্রমন থামানো গেলো না। স্যার দৌড়ে আসলেন তোমরা ভাগো, নিজের জীবন বাচানো ফরজ। আমি বললাম স্যার আপনি, স্যার বললেন আমি চলে গেলে আমার গাড়ীটা বাচানো যাবে না। আমি না হয় মারা গেলাম কিন্তু আমি ছাড়া তো আমার এই ঘাড়ীর কেউ নাই। মাঝে মাঝে স্যার তার সাইকেল কে হাতি বলতেন।

অনেক আদরের হাতি তার। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম সামনের দিন কোনদিন আসবো স্যার বললেন যদি আজকে বেচে যাই যদি কোনো ইন্না লিল্লাহিতে আমার নাম না শোন তবে বুঝবা বেচে আছি কিন্তু তবু কিছুটা আহত হবার সম্ভাবনা আছে, যে হারে বোমা এবং গুলী বরষন হচ্ছে, চারপাচঁ দিন পরে গোপনে একবার স্যার এর খবর নিয়ে যেও। হটাৎ স্যার দৌড়ে এসে বললেন ভাগো ভাগো বড়ো বড়ো বোমা রেডি হইছে আইজ আমার হাতি শেষ। আমরা নিজের জীবন বিপদে ফেললাম না। ছোট সাইজের কইলজা নিয়া স্যার রে সেই বিপদে কোন সহযোগীতাও করতে পারলাম না।

চলে আসলাম। কয়েক দিন পড়ে আমি পড়তে গেলাম গিয়ে দেখি স্যার মাঠিতে পাঠি বিছিয়ে মাথা মুখ সব ঘুরে শোয়ে আছেন আমি ডাক্লাম স্যার স্যার আমি সাগর। স্যার উঠে বললেন স্যার তো মারা গেছি মাইকিং এর ব্যবস্তা করো। আমি বললাম স্যার টাইম কি বলবো। স্যার বললেন এখনো মরি নাই সাগর কিন্তু আজ যদি পরাতে বলিস এখুনি মারা যাবো।

আমি শিক্ষক হত্যাকারী হতে চাইলাম না চলে আসলাম, আবার কয়েকদিন পরে গেলাম স্যার কি অবস্থা, স্যার সেই মাঠিতে পড়েই চাটাচাটি করছেন। উত্তর নাই, জ্বর, স্যার জ্বরে মারা যাচ্ছেন। আমি কোন কথা না বলে চলে আসলাম পরের দিন স্যার এর খবর নিতে গেলাম গিয়ে দেখি স্যার খুব সুন্দর করে চা খাচ্ছেন, তিনি টাইম পেলেন না মাঠিতে শুয়ে পরার। এর মাঝেই আমি সোজা তার রুমে উপস্তিত স্যার সুন্দর করে একটা হাসি দিলেন একেবারে ছোট বাচ্ছাদের মতো। আমি বললাম স্যার জ্বর কমছে ? স্যার বললেন কিসের জ্বর কার জ্বর? তোমার তো পড়ালেখা হবে না, তুমি আমার জ্বরের অপেক্ষা করো।

পুরা এক জগ পানি এনে আমার গায়ে দেলে দিলে না কেনো, না তোমারে দিয়া কিচ্ছু হবে না। তোমার আরো শিক্ষা দরকার। বাড়ীতে গিয়ে বড়দের কাছ থেকে শিক্ষা নাও কিভাবে আমার কাছে পড়তে হয়। আমি অবশ্য শেষের দিকে স্যার এর কাছে কিভাবে পড়তে হয় শিখে গিয়েছিলাম । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.