আত্মনির্ভরশীল,দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি মুক্ত একটি শিল্পোন্নত আধুনিক সুশিক্ষিত বাংলাদেশ আমরা তরুনরাই গড়ে তুলতে পারি। আর সে জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। স্কুল জীবনে মোটামুটি ভাল ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। রোল সবসময় দশের ভিতরেই থাকত,আইডিয়ালের মত স্কুলে এটারো দাম আছে। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা সবাই ই বেশ ভাল ছাত্র,যদিও কেউ কেল্টু নয়।
আমরা স্কুলে ভাল ছাত্র কাম চরম দুষ্ট হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। এখনও স্কুলের কিছু স্যারের শরীরে জ্বলুনি উঠে আমাদের কয়েকজনের নাম শু্নে ... যাই হোক,এস এস সির পর নটরডেম কলেজে টিকতে পারলাম না। আমার আব্বুর খুব কনফিডেন্স ছিল যে,উনি আমাকে নটরডেম কলেজে ভর্তি করতে পারবেন। কিন্তু কোনো পদ্ধতিই কাজ করলো না। সোজা,বাঁকা কিছুই না।
অতঃপর ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। এটা আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। রং টার্ন। /
ঢাকা কলেজে গিয়ে বলা যায় পাখা গজালো। এই প্রথম স্বাধীনতা পেলাম বাসা থেকে,নিজেকে বেস বর বড় লাগা শুরু করলো।
ঢাকা কলেজে এসে যে সিস্টেম লুজ পেলাম তার কোনো তুলনা নাই। ক্লাস করা লাগে না, কুইজ,ক্লাস্টের ঝামেলা নাই,পরীক্ষা হলে ইচ্ছা মত দেখাদেখি করা যায়। তো যা হবার তাই হল,আমার ভিতরে যে চরম ফাঁকিবাজ সত্বাটা এতদিন স্কুলের চাপে লুকিয়ে ছিল,সেটা বেরিয়ে এল। গা ভাসিয়ে দিলাম। শুধু যতটুকু না পড়লেই নয়,ততটুকুই পড়তাম।
বিভিন্ন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতাম। ওইখানে পড়া বোঝার চেয়ে ব্যাচকে বিভিন্ন মন্তব্য করে হাসানোতেই আমার উৎসাহ ছিল বেশি।
তো এভাবেই হাল্কা ঝাপসা লেখাপড়া করে কলেজের দুই বছর কাটালাম। টেস্টের রেজাল্ট যথারীতি বেশি সুবিধার হলনা। আব্বুর তো মাথায় হাত।
এতদিন একাডেমিক রেজাল্টের কোনো খবর নেননি। এখন শেষ সময়ে এসে দেখেন অবস্থা কেরোসিন। তারপর বাসায় দামি প্রাইভেট টিচার এনে চলল তিন চার মাস ধরে পালিশ। তো, কোনো রকমে ভালয় ভালয় এইচ এস সি পরীক্ষার ঝামেলা শেষ করলাম।
আমি মেডিকেল সহ্যই করতে পারিনা।
আমার মুখস্ত বিদ্যাও ভাল না। আর লাশ-টাশ তো আমার চিন্তার বাইরে। আমি হরর মুভিও দেখি না। তাই আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সিধান্ত নিলাম। একটা কোচিংয়ে ভর্তি হলাম।
কিন্তু এরপর আমার খাবি খাওয়া শুরু হলো। কোচিং এর ভাইয়ারা যে স্পিড ও স্কেলে পড়ানো শুরু করলেন,কেবল পুরো বই আয়ত্ত্বে থাকলেই সেটার সাথে তাল মিলিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমার মূল বইয়েই অনেক গ্যাপ। আমি কয়েক সপ্তাহ পরেই বুঝলাম,বুয়েট আমার জন্য না,যদি কোচিং এর স্ট্যান্ডার্ডে প্রশ্ন হয়। আমি কোনো রকমে বলা যায় তাল মিলিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলাম।
/
দেখতে দেখতে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা এসে পরলো। আমার ওই সকালতা স্পষ্ট মনে আছে,খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গার পর বুঝলাম,আমার শরীর কাঁপছে আর আমি এটা থামাতে পারছি না। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে গেলাম পরীক্ষা দিতে। সব কিছুই ওইদিন অন্যরকম লাগছিল। আমার সিট পড়েছিল সিভিল ভবনে।
আমি রুমে গিয়ে আমার সিট কোনটা তা ঢুকেই হিসাব করে দেখে নিলাম। প্রতি বেঞ্চে চার জন করে বসতে পারে। আমি দূর থেকেই দেখলাম আমার পাশেই একটা মেয়ের সিট পড়েছে,বোরকা পরা। কিন্তু সে খুব হেসে হেসে তার অন্য পাশে বসা ছেলের সাথে কথা বলছে। আমি ভাবলাম ,মনে হয়্ পূর্ব পরিচিত।
কিন্তু পরে বুঝলাম,তা নয়। একটু অবাক লাগলো। যাই হোক, আমি সিটে বসে কলম,কাগজ পত্র রেখে হেড ডাউন করে রইলাম। আমার শরীর তখনও কাঁপছে,মনে মনে দোয়া দুরুদ যা জানি পড়তেসি। হঠাৎ খেয়াল করলাম,আমার পাসের মেয়েটি আমার সাথে কথা বলতেসে।
আমি প্রথমে বুঝলাম না। তারপর শুনলাম আমার নাম জিজ্ঞেস করছে। আমি টোটালি ইগনোর করলাম। কারণ আমি শুনেছিলাম যে বুয়েট পরীক্ষায় সাইলেন্স এক্সপেল করে। তো আমি পরীক্ষার একটু আগে কথা বলে স্যারদের নজরে পড়তে চাইছিলাম না।
মেয়েটি যখন বুঝলো যে আমি ইচ্ছা করে ইগনোর করতেসি,সে অদ্ভুত একটা কান্ড করলো। বললো, "কি? এক্সপেল হবার ভয় খুব বেশি নাকি?এরকম করে ভাব মারলে কিন্তু তোমারে এক্সপেল আমিই করায় দিব(!)":-*
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম,স্কার্ফ পরা মোটামুটি সুন্দর চেহারার একটা মেয়ে। আমি আবার সামনের দিকে তাকিয়ে খুব হাল্কা গলায় বললাম,"খবরদার,আজেবাজে কথা একটাও বলবানা",শুনলাম সে হাসতেসে। আবার জিজ্ঞেস করা শুরু করলো,কলেজ কোনটা ছিল,স্কুল কোনটা ছিল,দুনিয়ার আজাইরা প্রশ্ন। য়ামি দাঁত চেপে মনে মনে বললাম,"যখন টাংকি মারতে যাই তখন কই থাকো তোমরা?? এখন এইরকম পরিবেশে জ্বালানো শুরু করসো?" তবে স্যারদের দিকে চোখ রেখে হালকা কথা বার্তা করলাম।
কিছুক্ষন পর চোখের কানি দিয়ে টের পেলাম কেঊ আমাদের বেঞ্চের কাছে আসছে। তাকিয়ে দেখলাম আরেকটা মেয়ে,অই আগের মেয়েটার পুরো বিপরীত। চেহারা বেশি সুন্দর না হলেও পাংকুর সীমা নাই। বুঝা যায় ব্যাপক বড়লোকের মাইয়া,পরীক্ষা দেয়ার জন্য আসছে,টিকার খায়েস নাই। ওর কথা বার্তায় তেমন উৎসাহ দেখলাম না, টুকটাক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেসিল।
হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বসলো যে আমার পরীক্ষা দিবার মুডই নষ্ট হয়ে গেল। বলে কি,"আচ্ছ,কেমিস্ট্রি থেকে কি প্রস্ন আসবে?" আমি কি বলবো? বেকুবের মত ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। :-*
এই দুই রমনীর সাথে সিট পড়াতে একটা সুবিধা পাইসিলাম। যেহেতু পরীক্ষা দিয়ে বুঝেসিলাম যে বুয়েটে আর হচ্ছে না,তাই হল থেকে বের হয়ে আব্বু আম্মু কে খুব মন খারাপ করে বললাম যে,মনে হয় এক্সপেলড হয়ে গেসি। কাহিনী একটু রংচং মেরে বললাম আরকি।
আম্মু তো আমার কাহিনী শুনে আমার পাশে বসা মেয়েটাকে (বোরকাওয়ালী)খুঁজে মারেন আরকি। ওর সাথে টেক্সটাইলে পরীক্ষা দিতে গিয়েও সিঁড়িতে দেখা হয়েছিল। আজকে এটা লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে,ওর কোনো ট্রেইলই আমার কাছে নাই,জানি না সে কোথায় ভর্তি হয়েছে। তবে বুয়েটে চান্স পায়নাই,ওইটা আমি চেক করসিলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।