© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।
প্রায় ১০ বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ১৩ কি ১৪। বেড়াতে গেছি চট্টগ্রাম। আমার বড়চাচার বাসায়।
একদিন দুপুরে ভাত খেতে খেতে ক্যাসেটে শুনলাম ভানুর কৌতুক। শুনেই আমি পুরা ফিদা হয়ে গেলাম ঐ লোকটির উপর। এতো সুন্দর তার বাচনভংগী,আর প্রতিটি কৌতুকের ভেতর দারুন সব হিউমার লুকানো। আর তার ভেতর রয়েছে সুন্দর কিছু মেসেজ যা ভাবনার খোরাক যোগাতো। কিছু কৌতুক টানা শুনলাম,একেবারে গুণমুগ্ধ ফ্যান হয়ে গেলাম।
বাজার থেকে তার যতো অডিও ক্যাসেট আছে সব কিনে ফেললাম। মাঝে মাঝে তা বাজিয়ে শুনতাম। একেবারে মুখস্ত হয়ে গেলো। যাকে বলে ঠোঁটের আগায়। কিন্তু সবজিনিসের ঝোঁক সবসময় থাকে না।
আর একই অডিও ক্লিপ আর কতো শুনতে ভালো লাগে??আস্তে আস্তে সে ঝোঁক কমে যেতে লাগলো। একসময় টোটালি শুনা বন্ধ হয়ে গেলো। সময়ের পরিক্রমায় ভুলেও গেলাম আর আমার সেই সাধের ক্যাসেটগুলোও কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।
মাঝে মাঝে এমন হয়,কখনো কখনো ছোটোবেলার কিছু স্মৃতি আচমকা মনে পড়ে যায়। সেদিন হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ভানুর সেই হাসির কৌতুকগুলোর কথা।
নেটে গিয়ে পেয়ে গেলাম মিডিয়াফায়ারের ডাউনলোড লিংক। ঝটপট ডাউনলোড করে শুনে ফেললাম। আবারো সেই হাঁ করে শোনা। ছোটোবেলার কথা খুব মনে পড়ছিলো। নতুন করে সেই মুগ্ধতা আর অতীতের স্মৃতি মিলেমিশে একটা দারুণ অনুভূতি।
মনে আছে তখন আমরা লক্ষীপুরে থাকতাম। ঢাকায় আমাদের মামা বাড়ি। যখন গাড়িতে করে ঢাকায় আসতাম গাড়ির ক্যাসেট প্লেয়ারে সবসময় বাজিয়ে শুনতাম।
তখনকার সময়ে রবি ঘোষ কিংবা ভানুর লেগাসির মাজেজা হয়তো বুঝতাম না,তারপরেও তাদের হিউমারগুলো ১৩-১৪ বছরের অপরিপক্ক মনকেও মুগ্ধ করেছে। আর সেখানেই তাদের মহত্ব।
আপনারা ভানুর কৌতুক কখনো শুনেছেন কিনা জানি না,তবে তার দুই একটি অন্তত শুনে দেখবার অনুরোধ করছি। সববয়সের জন্য হাসির খোরাক।
আসুন ভানু সম্পর্কে কিছু ইনফো জেনে নেই। তিনি একজন ইন্ডিয়ান কমেডিয়ান এবং অভিনেতা হলেও তার জন্ম কিন্তু আমদের এখানেই। ১৯২০ সালের ২৬ অগাষ্ট আমাদের এই ঢাকায় তার জন্ম।
তিনি তার গোটা জীবনে প্রায় ৩০০ টিরও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পাশপাশি তিনি রেডিওতেও অনেক পারফরম্যান্স করেছেন। তার ছাত্রজীবন কেটেছে ঢাকার St. Gregory's High School এবং পরবর্তিতে জগন্নাথ কলেজে। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতায় যান। সেখানেই তার ক্যারিয়ার শুরু।
প্রথমে তিনি একজন stand-up comedian হিসেবে পারফরম্যানস শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তার প্রথম হাস্যরসের অডিও রেকর্ড বের হয়। এর অসাধারণ সাফল্যের পর তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি করে অডিও রেকর্ড বের করতে থাকেন। আস্তে আস্তে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার অভিনীত প্রায় সব সিনেমাতেই তিনি কমেডী রোলে থাকতেন।
তবে তিনি বেশকিছু সিরিয়াস রোলেও অভিনয় করেছেন। বাংলা ভাষার কিছু কমেডি টান এবং হাস্যকর উচ্চারনের দরুণ তিনি ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তার কৌতুকের আরও শক্তিশালী দিক ছিলো, প্রতিটির পেছনে লুকানো সোশ্যাল মেসেজগুলো যা শ্রোতাদের মুগ্ধ করতো। তার কৌতুকে কখনো রাজনীতিবিদ, কখনোবা গোটা সমাজের ঘুণে ধরা দিকগুলোর করুণ চিত্র হাসির মাধ্যমে ফুটে উঠতো।
তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ঠা মার্চ মৃত্যুবরন করেন।
এই মহান কমেডিয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তার যাবতীয় অডিও কৌতুকের ডাউনলোড লিংক এখানে শেয়ার করলাম। আপনারা শুনে দেখতে পারেন, ভালোই লাগবে আশা করি।
Click This Link
এবং
Click This Link
এছাড়া তার অনেক অডিও ক্লিপ ইউটিউবে পাবেন, সার্চ করে দেখতে পারেন। আগের আপলোড করা লিংকগুলো ডিলিট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে এডিট করে আপলোড করে দিলাম।
এনজয় !!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।