আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্যাতন !!

এখন নয়। কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমন করছি না কিংবা ছেলেমেয়ে ধরেও বলছি না কথাগুলো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে চলমান ঘটনাগুলোতে কয়েকটা শব্দ নাড়া দেয় বিবেককে। 'নারী নির্যাতন' - 'পরকীয়া' - 'সম্পর্কছিন্ন' - 'ডিভোর্স' - 'নাটক' - 'অভিনয়' - jealous ' অত্যাচার-নির্যাতন' -আমরা কি আমাদের নৈতিক-মানবিক-মুল্যবোধ থেকে অনেক দূরে সরে আসছি না ! being smart - being westernize! - westernization এর খারাপ দিকগুলোতেই আমাদের আগ্রহ। ভাল দিকগুলো খুব কমই আমরা গ্রহন করতে শিখেছি।

এখনকার জামানার মেয়েদেরকে 'you looks hot/sexy/spicy' বললেই তারা অধিক খুশি হয় । তেমনি এখনকার ছেলেদের একটু ড্যাসিং -'hippo' না হলে ঠিক যেন মানায় না । অর্থ-বৃত্তশালী / উচ্চ শিক্ষিত / বিদেশে থাকে/ মেধাবী এগুলো মানেই যেন আকাশের চাঁদ পাত্র পাত্রী হিসাবে । স্বাধীনতা মানে যদি নৈতিকতা/মানবিকতা/বিবেকবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে 'যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা' -বুঝায় তাহলে সেটাকে কি ' স্বাধীনতা' বলে নাকি সমাজে পচন সৃষ্টিকারি ক্যান্সার বলে! - এটা ছেলে-মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা প্রায়ই বলে আক্রোস দেখাই - 'আমাদের শিক্ষিত সমাজ এই কাজ কি করে করছে!!' - তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আমরা কি আসলেও শিক্ষিত!?! 'জিপিএ' আর পরীক্ষায় পাশের জন্য আমাদের সকল হম্বিতম্বি!! শিক্ষা আমাদের এখানে আলো ছড়ায় না - শিক্ষা অর্থ উপার্যনের পাথেয় মাত্র ।

এরকম অবস্থায় আমরা কি করে বলি 'আমাদের শিক্ষিত সমাজ এই কাজ কি করে করছে!!' আমার প্রায়ই আমাদের বাবা-মা দাদা-দাদী নানা-নানু দের দেখে ঈর্ষা হয়। তাদের সময়ই কি ভালো ছিল না ?! অন্তত সমাজের এরকম পচন ছিলো না ! সামাজিক পচন কখনো আইন দিয়ে ঠিক করা যায় না। সেটাতে ঈর্ষা-অবিশ্বাস এগুলো বৃদ্ধি হয় মাত্র! আমি - আপনি - আমরা জন্ম থেকেই একটা বিকৃত সামাজিক পারিপার্শিকতার মাঝে বড় হয়েছি। রাস্তার যেই ছেলেটা , মহল্লার যেই পোলাপাইন খারাপ কথা কয় অশ্লীল ইংগিত করে তারা কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয় নি। আপনি আমি একদিনে মানুষের মানষিকতা পরিবর্তন করতে পারবো না।

আইন দিয়ে আপনি গুটি কয়েক আটকাতে পারবেন। একজন নির্যাতনকারীর দৃষ্টন্তমুলক শাস্তি দিয়ে সমাজের আনাচে কানাচে জন্ম নেয়া লুকানো নির্যাতনকারীদের কি থামানো যাবে !? আপনি একটা বিষ বৃক্ষ ধিরে ধিরে বড় করে পরে এর শাখা প্রশাখা কেটে সমাধান খুজছেন। আমি-আপনি-আমরা 'দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চেয়েই খালাস। আর নিজেরাই বপন করে যাচ্ছি বীজ- অবহেলায় অগোচরে তৈরী করছি/হচ্ছি ভবিষ্যত প্রজন্ম । আমাদের নিজেদের মাঝে নেই কোন মুল্যবোধ।

আমাদের মাঝে যারা শিক্ষিত তারা মুল্যবোধ এর অর্থ মুখস্থ করে রেখেছে বইএর পাতায়। পরীক্ষায় আসলে গড়গড় করে লিখে যাচ্ছে। কিন্তু মুল্যবোধ সৃষ্টি হচ্ছে না নিজেদের মনে। আমার অনেক পরিচিত মেয়েকেই বলতে শুনেছি 'আমার বিয়ে করতে ভয় করে' । অনেক ছেলেকেই বলতে শুনেছি 'আজকের অনেক শিক্ষিত মেয়েরা নারী অধিকারের ধুয়া তুলে ছেলেদের মানষিকভাবে নির্যাতন করে।

' - ছেলে-মেয়ের পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গায় স্থান পাচ্ছে লোভ-লালসা-ভয়-অবিশ্বাস-সন্দেহ। Money- career - own life - social climbing - trying to reach upper class status - এতশত শব্দের মাঝে আমরা একটা খুবই মৌলিক কথা ভুলে যাই - 'মানুষ সামাজিক জীব' । সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ আর নৈতিকতাকে পাশ কাটিয়ে বড় হই - হতে চেষ্টা করি - তাই আজ আমাদের এই অবস্থা। যেই ছেলেটা নির্যাতন করেছে তাকে 'নরপশু' আর যেই মেয়েটা নির্যাতিত হয়েছে তার প্রতি 'আহা উহু' কিংবা যেই মেয়েটা পরকিয়া করে বেরাচ্ছে তাকে ডাইনী আর যেই ছেলেটার সহধর্মিনী এই কাজ করে বেড়াচ্ছে তার প্রতি 'আহা উহু' করেই আমরা খালাস। আবার অনেকে পরকিয়াকে ব্যক্তি স্বাধীনতা - open relationship ইত্যাদি নামকরন করে স্বীকৃতি দিতে চাইছে।

পচন মাত্র শুরু হয়েছে। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝে সম্পর্ক মানে শুধু দৈহিক নয় - ভালোবাসা নয় - এর থেকেও অনেক বড় অর্থ আছে বলেই আমার মনে হয়- আর তা হলো শ্রদ্ধাবোধ-সম্মানবোধ। যেই ছেলেটা কিংবা যেই মেয়েটা পরকিয়া করে বেড়ায়, নিজের স্বামী/স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ-সম্মানবোধ থাকলে তা কোনোদিনই হতো না । 'এই সম্পর্ক আর ভালো লাগে না', 'ডিভোর্স চাই' - এইগুলোও মাথায় আসতো না। আর ভালোবাসা থেকে শ্রদ্ধা আসে না।

শ্রদ্ধা থেকে ভালোবাসা আসে। আমার নিজের দৃষ্টিভংগী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য নয়। কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.