আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্যাতন.........................................



হয় সর্দার সিরাজুলকে ধরে আন, নতুবা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে কাউেক আসতে বল। নইলে তোর উপর এভাবেই নির্যাতন চালানো হবে। বাড়ির মোবাইলে কথা বলাতে বাধ্য করে ছিকল পরানো অবস্থায় লাঠিপেটা ও সিগারেটের সঁ্যাকা দেওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা চলে যেত ঘরের বাইরে। বাইরে বসানো হতো পাহারা। দিনের বেলায় মাটি মাখানো মেশিনের সঙ্গে ছিকল বেঁধে কাজ করানো হতো।

রান্না করতে হতো একইভাবে। ছিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানোর সময় বাড়িতে মোবাইল করে স্বজনদের নির্যাতনের বিভিীষীকা শোনানো হতো। একপর্যায়ে ২৭ দিন আটক থাকার পর নিজের তিন কাঠা বাস্তুভিটা জমি বন্দক রেখে, গাছ বিক্রি করে , সোনার গহনা বিক্রি ও ধার করে চাচাত ভাই গত আব্দুর রাজ্জাক ৪০ হাজার টাকা নিয়ে মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার পর মুক্তি পান । নাটোর জেলা সদরের বন্দর আমতলার আবুল হাজীর ইট ভাটার বন্দিদশা থেকে থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে শুক্রবার সন্ধ্যায় তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে সারা গায়ে নির্যাতনের দগদগে ক্ষত চিহ্ন দেখাতে দেখাতে কানায় ভেঙে পড়েন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জিয়ালা নলতা গ্রামের আবুল হোসেন মালির ছেলে জয়নাল মালী। তিনি তার গ্রামের সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতারের পাশপাপাশি নাটোরের আবুল হাজীর ইটভাঁটায় বন্দি নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মুক্তির জন্য ওসি সাহেবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জয়নাল মালীর দু' সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সুমন মালী পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। মেয়ে সোনিয়া পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। দু' সন্তান , স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে অভাবে থাকলেও কখনো ইট ভাটায় কাজ করতে যাওয়ার কথা ভাবেননি। জমি জমা না থাকায় দিন মজুর খেটে সংসার চালিয়েছেন। নিজ গ্রাম তালা উপজেলার জিয়ালা নলতা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের অনুরোধে গত কোরবানির ঈদের সাত দিন পর এলাকার ২২ জন শ্রমিকের সঙ্গে জয়নাল মালী নাটোর জেলা সদরের বন্দরের আমতলায় আবুল হাজীর ইট ভাটায় কাজ করতে গিয়েছিলেন।

প্রতি হাজারে ১১০ টাকার বিনিময়ে প্রায় এক মাস ইট কেটেছেন ওই ভাটায়। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা আয় করেছেন। ভেবেছিলেন ভাটায় ৬ মাস পরিশ্রম করে এক বছরের জন্য সংসারে অভাব অনটন ঘুচাবেন। কিন্তু সে আর হলো কই! দলের সর্দার সিরাজুল ইমলাম শ্রমিকদের দেওয়ার নামে এক লাখ ৩১ হাজার টাকা মালিকের কাছ থেকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ৮ জানুয়ারি তিনজন মহিলাসহ ৮ জনকে পৃথক তিনটি গুদাম ঘরে ছিকল দিয়ে বেঁধে রাখে মালিক। আব্দুল আহাদ তালুকদার ও তাকে একঘরে বেঁধে রাখা হতো।

পাশের ঘরে রাখা হয় সিরাজুলের বোন সালেহা(৩৮) ও মেয়ে মাজেদাকে (১৮) । একইভাবে তালা উপজেলার ঘোনা গ্রামের ইনসান গাজী ও তার স্ত্রীকে, আগলঝাড়া গ্রামের হাফিজুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও সন্তানদের পৃথকভাবে আটক রাখা হয়। রাতে দু' পায়ে ছিকল বেঁধে তালা মারা হতো। ছিকলটি গুদাম ঘরের আড়ার সঙ্গে বাঁধার পর বাঁশের লাঠি দিয়ে মারপিট করা হতো। এ সময় বাড়ির মোবাইল নম্বরে রিং দিয়ে আত্মনাদ শুনিয়ে বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য বলা হতো।

বাড়ির কেউ যোগাযোগ না করায় অত্যাচারের মাত্র বাড়ানো হতো। হাত ও পায়ের নখের ডগায় সূচ ফোটানোর পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের সঁ্যাকা দেওয়া হতো। যাতে কেউ পালাতে না পারে সেজন্য চারটি ঘরের জন্য ৬ জন পাহারাদার নিয়োগ করা হয়। বন্দিদশা চলাকালিন তাদের দু'জনকে এক কেজি চাল, পাঁচশ' গ্রাম আলুসহ রান্নার জিনিসপত্র সরবরাহ করত মালিক পক্ষের লোকজন। আব্দুল আহাদ ছিকল পরা অবস্থাতেই রান্নার কাজ করতেন।

বন্দিদশাতে যে কাজ করানো হয় তা খাওয়ার খরচ হিসেবে দেখানো হয়। এ ব্যাপারে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই সিরাজুল ইসলামকে আটক করার জন্য এএসআই জিললুর রহমানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.