আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৈশাচিক আনন্দ

তেরোর ব্লগ মানেই হাবিজাবি !! আমাকে ওরা এখানে আটকে রেখেছে অনেক দিন। ভুলে গেছি কবে থেকে !! মনে নেই। আমার কিছু মনে থাকে না আজকাল। এককালে দেয়ালে দাগ কেটে হিসেব রাখতাম এখন তাও রাখি না। চুল গুলো অপরিস্কার ময়লা,উসখো খুসখো।

নখ গুলো লম্বা কালো কালো। অন্ধকার এই ঘরে আমি দিন রাতের হিসেব রাখতে পারি না। ওরা আমাকে আঁটকে রেখেছে। কেন রেখেছে জানি না। আমার ঠান্ডা গরম লাগে না।

আমি সারাদিন রাত মাথা গুঁজে বসে থাকি। আমার ভিতরে কেমন জানি পরিবর্তন হচ্ছে। আমিও হালকা টের পাচ্ছি। প্রায়ই চোখের সামনে হাত নিয়ে আঙ্গুল গুলো নাড়াচাড়া করি। অদ্ভুত লাগে।

কি কিলবিল করছে। ছি ছি। আমার কেনো জানি আমার সব কিছুতে ঘৃণা হচ্ছে। ঐদিন দেখি একটা পোকা আমার হাতের উপর উঠে এলো। পোকাটাকে অনেক পরিচিত মনে হলো।

কি এটা ? হু মনে পড়লো। এটাকে আমি এককালে অনেক ঘৃণা করতাম হয়তো ভয়। আজকে কিছুই হচ্ছে না। তেলাপোকাটাকে তুলে ধরলাম। একটা একটা পা ছিড়তে লাগলাম।

এরপর ডানা গুলো। অদ্ভুত রকমের ভালো লাগলো। আমি নিজেই অবাক হলাম। নিজের ভেতর একটা পৈশাচিক সওা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। হয়তো ঘুমিয়ে ছিলো এতদিন।

এই সত্তাটাকে আমি ভালোবেসে ফেললাম। আমি পাগলের মত সকালের যে একটু সময়ে ঘরে আলো থাকে সেই সময়ে ঘরের ভিতর কোনো কিছুর আশায় খুঁজতে থাকলাম। আমি আরো মারবো। এত আনন্দ বহুদিন পাইনি। যখন মুক্ত ছিলাম, মনের আনন্দে গান গাইতাম তখনো কি এত আনন্দ পেয়েছিলাম?!! জানি না।

ভাবতেও চাই না। আমি প্রতিদিন পোকা সংগ্রহ করে মারতে থাকি সময় নিয়ে নিয়ে। ওরা ছটফট করে মরে। আমার অসম্ভব আনন্দ লাগে। কিন্তু আমার আজকাল নিম্ন শ্রেণীর পোকা মারতে ভালো লাগে না।

বিরক্ত লাগছে। অসম্ভব বিরক্ত। ওরা আমাকে প্রতিদিন দরজার নীচে দিয়ে কিছু খাওয়া দিয়ে যায়। আজকে সকালে দিয়েছে রুটির টুকরো। আমি খাবো না।

অসম্ভব বিরক্ত আমি। এমনেই মাথা নিচু করে বসে আছি। হঠাৎ খুব মৃদু আওয়াজে মাথা তুললাম। এটা কি???? একটা ইঁদুর !! আমার রুটি খাচ্ছে। আমার ভিতরে পিশাচটা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।

আমি ধরে ফেললাম ওটাকে। ছোট প্রাণীটা পিট পিট করে তাঁকাচ্ছে। আমার প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছে। আমি ওটার লেজ ধরে আছাড় দিলাম। কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারবো তাকে।

নখ দিয়ে আচড়ে কামড়ে। বাসার পোষা বিড়াল মেনি যেভাবে ইঁদুর মারতো হঠাৎ তা মনে পড়ে গেলো। আমি হিংস্র হয়ে যাচ্ছি। প্রচন্ড হিংস্র। প্রচন্ড ঘৃণায় কাণায় কাণায় ভরে যাচ্ছে আমার ভিতর।

প্রতিমাসের শেষের দিকে ওরা কেউ কেউ আমার ঘরে আসে। দীর্ঘদিন নির্জীবের মত পড়ে থাকায় এখন ওরা আর তেমন সাবধান থাকে না। দিন তারিখেরও হিসাব রাখি না। কবে আসবে তাও জানি না। ওরা জানে না আমার এই পরিবর্তন।

হঠাৎ করে দরজাটা নড়ে উঠলো। কেউ একজন ঘরে ঢুকলো। তাকে দেখে প্রচন্ড ঘৃণায় শরীর গুলিয়ে উঠলো। মৃত পোকা, মৃত ইঁদুরগুলোর কথা মনে পড়লো। আমার জীবনের সমস্ত ঘৃনা তার উপর জমা হতে লাগলো।

ভিতরের পিশাচ টা আমাকে বার বার খোঁচাতে লাগলো আমি এখনো স্থির কেনো??? আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম তার উপর। আমি আজ পশু। পশুর মত মানুষটাকে এই আমার মত পশু মারছি। প্রচন্ড আনন্দ পাচ্ছি। কিছুক্ষন পর লোকটা আর নড়ছে না।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমার শরীরের জায়গায় জায়গায় রক্ত। আমার রক্ত তার রক্ত। আমি দরজা ঠেলে উঠে দাঁড়ালাম। সবাই আমাকে ভয় পাচ্ছে।

তাদের চোখে আমি আতংক দেখছি। আমি বের হয়ে আসলাম। চারদিকে অন্ধকার। বাইরের দুনিয়ার কেউ হয়তো টের পেলো না, এইরাতে পরিপূর্ণ রূপে জন্ম নিলো এক পিশাচ। শুধু আকাশে জ্বলতে থাকা তারা গুলো সাক্ষী রইলো।

দূরে কিছু কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। আমি হেঁটে যাচ্ছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.