আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

::::মাউন্ট এভারেস্টঃ ম্যালোরি- আরভিন অন্তর্ধান রহস্য! ::::

::::: দেখবো এবার জগতটাকে ::::: বাঁএর জন আরভিন (এখনো নিখোঁজ) আর ডানের জন ম্যালোরি (৭৫ বছর পর ফিরে আসা) প্রথম এভারেস্টে পা রাখার জুটির নাম কি? সবাই এক কথায় বলবে তেনজিং-হিলারী? কিন্তু মজার ব্যাপার বিশাল একটা অংশের ধারনা জুটির নাম আরভিন-ম্যালোরি জুটি? ২৯শে মে ১৯৫৩সালে তেনজিং-হিলারী এভারেস্ট পদানত করে। তেনজিং নিজের জন্মদিন জানতেননা, তাই ২৯শে মে’কে এর পর থেকে নিজের জন্মদিন হিসাবে পালন করতেন। প্রতিবছর এই জুটির সম্মানে সারা পৃথিবীর অগুনিত এডভেঞ্চার পাগল মানুষ ২৯শে মে’কে এভারেস্ট ডে হিসাবে পালন করে। ১৯৫৩সালে জন হান্টের নেতৃত্বের অভিযানটা ছিল তেনজিং এর ৭ম চেষ্টা (৬ষ্ঠ চেষ্টায় সুইস’দের সাথে চুড়ার মাত্র ৮০০ফিট দূর থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন), ব্রিটিশদের ছিল নবম জায়ান্ট অভিযান (প্রায় ৪০০ মাউন্টেনিয়ার অংশ নেন)। আর বিতর্কিত মতবাদটা বলে সফল অভিযানের ২৯ বছর আগেই ব্রিটিশদের ৩য় অভিযানে ১৯২৪ সালে আরভিন-ম্যালোরি প্রথম এভারেস্ট জয় করেন।

কিন্তু সেই সাফল্য দাবী করার জন্যে জীবিত ফিরতে পারেননি দুজনের কেউই। এন্ড্রু আরভিনঃ (১৯০২-১৯২৪) স্যান্ডি আরভিন মাত্র ২২ বছর বয়সে এভারেস্টে হারিয়ে যাওয়া অভিযাত্রি এন্ড্রু আরভিনের ডাক নাম ছিল স্যান্ডি। স্কটিশ মাউন্টেনিয়ার। খুব উচু মাপের শারীরিক সামর্থের সাথে সাথে উচু মাপের প্রাকৃতিক জ্ঞান। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের সাথে সাথে অক্সফোর্ডের নাম করা এথলিট ছিলেন।

সে সময়ে অক্সফোর্ড-কেম্ব্রিজ এ ধরনের জায়গা গুলোতে ছাত্রদের মাঝে রোয়িং খুব জনপ্রিয় খেলা ছিল। এন্ড্রু আরভিন ছিলেন রোয়িং এ ডাকসাইটে চ্যাম্পিয়ান। বলা হয়ে থাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্কুল বয় থাকাকালীন অবস্থাতেই নাকি আরভিন মেশীন গানের ব্যাতিক্রমী ডিজাইন বানান। আরভিনের জীবনে খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা ঘটলো ১৯১৯ সালে, আজীবন এডভেঞ্চার প্রেমী ১৭ বছরের তরুন এন্ড্রু আরভিন তার মোটর সাইকেল নিয়ে ব্রিটেনের ৩০০০ ফুট (কেওকারাডং এর উচ্চতা ৩১৭২ফুট) উচু একটা চুড়ায় উঠে দেখেন সেখানে একটা জুটি তার আগেই উঠে বসে আছে। এরা ছিল সুন্দরী তরুনী মোনা (পরবর্তিতে আরভীনের প্রেমিকা এবং স্ত্রী) এবং নোয়েল ওডেল (আরভিন-ম্যালোরিকে শেষবার জীবিত দেখা ব্যাক্তি, ১৯২৪এ ব্রিটিশ অভিযানে অংশ নেয়া অভিযাত্রী)।

মানুষ শুধু এডভেঞ্চারের কারনে পায়ে হেটে পাহাড়ে উঠে জানতে পারেন এদের কাছ থেকে। আর এন্ড্রু আরভিন পরিনত হন মাউন্টেনিয়ারে। জর্জ ম্যালোরি (১৮৮৬-১৯২৪)ঃ ব্রিটিশ আর্টিলারীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অবস্থার ম্যালোরি ম্যালোরির বাবা ছিলেন ধর্ম নেতা। ২ বোন আর ১ ভাই (ছোট ভাই এয়ার চিফ মার্শাল স্যার ট্রাফোর্ড ম্যালোরি ২য় বিশ্বযুদ্ধে রয়াল ব্রিটিশ এয়ারফোর্সের কমান্ডার ছিলেন)। জর্জ ম্যালোরি ভয়ঙ্কর মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে অঙ্কে স্কলারশিপ নিয়ে উইনচেষ্টার কলেজে ভর্তি হন। টিনেজার ম্যালোরি সেখানেই প্রথম রক ক্লাইম্বিং আর মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের সদস্য হন। পরে ম্যালোরি কেম্ব্রিজের ছাত্র হন। আর সেখানে জনপ্রিয় রোয়িং এর খ্যাতি পান। কেম্ব্রিজে পড়াশূনা শেষ করে ম্যালোরি পেশা হিসাবে স্কুল শিক্ষকতাকে বেছে নেন।

টিচার হিসাবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তার ছাত্রদের মাঝে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝে প্রেমিকা রুথ টার্নার’কে বিয়ে করেন। তাদের ২ মেয়ে আর ১ ছেলে। ১৯১৫ সালে ম্যালোরি ব্রিটিশ আর্মি’তে আর্টিলারী ইউনিটে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে কমিশন্ড হন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে জর্জ ম্যালোরি আর্মি থেকে রিজাইন করেন, ১৯২১ সালে ১ম এভারেস্ট অভিযানে অংশ নেন।

সেটা ছিল ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটিশ সম্রাজের জাতীয় গৌরবের বিষয়। প্রথম মিশনটা’তে এভারেস্ট জয়ের জোরালো চেষ্টা হয়নি, বরং সেটা ছিল মুলত রেকি মিশন। ১৯২২ সালে ২য় এভারেস্ট মিশনেও অংশ নেন আরভিন। ১৯২৪ সালে ৩য় এভারেস্ট অভিযানে সর্বশেষ অংশ নেন। এর মাঝে কেম্ব্রিজে অস্থায়ী লেকচারারের পোষ্টে কাজ করেন, যাতে চাইলেই এভারেস্টের জন্যে চাকরী ছেড়ে দিতে পারেন।

এভারেস্ট রহস্যঃ ১৮৪০ সালে দেরাদুনে কর্মরত বাঙ্গালী সার্ভেয়ার রাধানাথ শিকদার (বিখ্যাত হিন্দু কলেজে, উনি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ক্লাসমেট ছিলেন) সর্বপ্রথম আবিষ্কার করলেন নামহীন পিক নাম্বার ১৫ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। তার বস জর্জ এভারেস্টের নামে উনি এর নাম প্রস্তাব করলেন মাউন্ট এভারেস্ট। যদিও উনি জানতেন না তাদের খাতায় নামহীন ১৫ নাম্বার পিকের একটা স্থানীয় নাম আছে ‘সাগরমাথা” (এখনো এভারেস্ট রেঞ্জ না বলে আমরা বলি সাগর মাথা রেঞ্জ, যেমন কারাকোরাম, লোতসে, কাঞ্চন জঙ্ঘা, ধবলগীরি রেঞ্জ)। ব্রিটিশরা সিপাহী বিদ্রোহের পর পর থেকেই শুরু করে গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্ভে। হিমালয় রেঞ্জে বিস্তর কাজ করে তারা।

লক্ষ ছিল মুলত চীনকে ব্রিটিশ কলোনি বানানোর সহজ ধান্ধা অথবা রুশ’রা আক্রমন করলে পালটা জবাব দেয়া। ভারত থেকে হিমালয় দিয়ে চীনে যাওয়া যায় সেটা অনেক আগেই বিক্রমপুরের মনীষী অতীশ দিপঙ্কর প্রমান করেন পায়ে হেটে হিমালয় পাড়ি দিয়ে তিব্বতে ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে। ব্রিটিশরা বার বার এভারেস্টের দুর্গমতার কাছে হার মানে। ব্রিটিশ সম্রাজ্য অস্তগামী হতে শুরু করেছে। পরদেশ হরন ছাড়া সভ্য মানুষের মতো কোন বড় ভৌগলিক আবিষ্কারে ব্রিটশ’রা নেই এই দুর্নাম ঘুচাতেই হবে।

সমুদ্র পথে ভারত আবিষ্কার করলেন পর্তুগীজ ভাস্কো দা গামা, আমেরিকা করলেন স্প্যানীশ কলোম্বাস, নর্থ পোল অ্যামেরিকান ফ্রেডিরিখ কুক, সাউথ পোল নওরোজিয়ান রোয়াল্ড এম্বুডসন। বাকী রইলো খালি মাউন্ট এভারেস্ট। ব্রিটিশরা কোমড় বেধে নামলো তাদের সম্রাজ্যের ভেতরেই থাকা এভারেস্ট জয়ে। ১৯২১ সালের প্রথম অভিযানঃ ১৯২১ সালে রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটির টাকায় গঠিত হলো এভারেস্ট কমিটি। কর্নেল চার্লস হাওয়ার্ড বারির নেতৃত্বে প্রথম এভারেস্ট অভিযান।

মাউন্টেনিয়ার্স দলের নেতা ছিল হ্যারল্ড রেবার্ন। মাউন্টেনিয়ার দলে ছিলেন জর্জ ম্যালোরি এবং অন্যান্যরা। মুলত এটা ছিল এভারেস্টের ম্যাপিং আর রেকি অভিযান। দির্ঘ ৫ মাস ধরে এভারেস্টে ওঠার সম্ভাব্য পথ খুজতে থাকেন তারা। ম্যালোরি সঙ্গি ২ মাউন্টেনিয়ারকে নিয়ে নর্থ কোল পর্যন্ত (২৩হাজার ফুট) পর্যন্ত উঠে পরেন।

১৯২২ সালের অভিযানঃ ১৯২২ সালের অভিযানে দলনায়ক ছিলেন জেনারেল ব্রুস। এ দলেও মাউন্টেনিয়ার হিসাবে ছিলেন ম্যালোরি। এভারেস্টের ইতিহাসে এটাই প্রথম ফুল স্কেল অভিযান, এভারেস্ট জয়ের জন্যে। আগেরবারের ঠিক করা পথে ম্যালোরির দল ২৬৮০০ ফুট পর্যন্ত উঠে যান। অন্য মাউন্টেনিয়ার জেফ্রি ব্রুস আর জর্জ ফিঞ্চ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অক্সিজেন্ট টিউব ইউজ করেন, তারা ২৭৩০০ ফুট পর্যন্ত উঠেন এবং ইতিহাসের সর্বোচ্চ হাই ক্যাম্প স্থাপন করেন।

সবাই এভারেস্ট অভিযানে কৃত্রিম অক্সিজেনের গুরুত্ব টের পায়। ম্যালোরির দল চুড়া বিজয়ে তৃতীয় চেষ্টায় হ্যাভেলাঞ্চের (তুষার ধ্বস) কবলে পড়েন। ৭ জন শেরপা মারা যায় (এটাই এভারেস্ট ইতিহাসে প্রথম মৃত্যু)। বাধ্য হয়ে ব্রিটিশদের দল ব্যার্থতার মধ্য দিয়ে অভিযান শেষ করে। ১৯২৪ সালের রহস্যময় অভিযানঃ অভিযান শুরুর আগে ১৯২৪ এর টিম।

এ অভিযানের নেতা হিসাবে আমরা সবাই কর্নেল নর্টনকে চিনি। যদিও প্রথমে নেতা ছিলেন ব্রিগেডিয়ার ব্রুস বলে আরেকজন। কিন্তু দার্জিলিং পর্যন্ত যেতে না যেতেই দলে ম্যালারিয়া ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বয়ং দলনেতা ব্রিগেডিয়ার সাহেবই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দল থেকে বাদ পড়েন। এবারে মাউন্টেনিয়ার্সদের দলের নেতা করা হয় ম্যালোরিকে। দলে ছিলেন আগেরবার অক্সিজেন ব্যাবহারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেয়া জেফ্রি ব্রুস, হাওয়ার্ড সামারভেল, জর্জ নোয়েল।

নতুন মুখ আলোচিত আরভিন এবং আরভিনের বন্ধু মাউন্টেনিয়ার নোয়েল ও’ডেল (ম্যালোরি আরভিনকে সর্বশেষ চাক্ষুষ করা ব্যাক্তি)। - ২জুন নর্থ কোল দিয়ে অভিযানে ম্যালোরি-ব্রুস দল ক্যাম্প ৪ থেকে রওনা হয় ভয়ঙ্কর ঝরো বাতাস, তুষার ঝর, আর শেরপা’দের পিছিয়ে আসার কারনে ম্যালোরি ব্রুস ব্যর্থ হয়ে নর্থ কোল ক্যাম্পে ফেরে। - ৪ জুন সামারভেল-নর্টন জুটি পার্ফেক্ট ওয়েদার পেয়ে সামিটের জন্যে বের হয়। সামারভেল ২৮০০ফুট গিয়ে ফেরত আসে কিন্তু নর্টন আরো এগুতে থাকে, শেষ পর্যন্ত নর্টন এভারেস্ট চুড়া থেকে মাত্র ৯০০ ফুট দূর থেকে ফেরত আসতে বাধ্য হয়। - ৮ জুন।

সর্বোচ্চ হাই ক্যাম্প ৬ (২৬৯০০ফুট) থেকে ম্যালোরি আর আরভিন রওনা হয় এভারেস্ট সামিটের জন্যে। তাদের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াও ক্যামেরা ছিল। নোয়েল ও’ডেল (আরভিনের বন্ধু) ক্যাম্প থেকে সাপোর্ট দল হিসাবে থেকে যায়। ২৬৯০০ফুট উচ্চতার ক্যাম্প ৬এ বসে ও’ডেল তার ডায়েরি’তে লেখেন আমি দেখলাম ম্যালোরি আরভিন জুটি এভারেস্টের ফাইনাল পিরামিডে। সেকেন্ড স্টেপ থেকে চুড়ার দিকে রওনা হয়।

তখন ঘড়িতে দুপুর ১২টা এর পরে আর তাদের দেখা যায়নি। এর পরে তারা আর কখনো ফেরত আসেনি। যদি তারা সেকেন্ড স্টেপে থাকেন তাহলে এভারেস্টের চুড়ান্ত লক্ষ মাত্র ৩ ঘন্টার রাস্তা। তাদের কাছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল। দুজনেই সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী সুস্থ ছিলেন।

সামিটে ব্যার্থ হবার সম্ভবনা খুব কম ছিল। আরভিন-ম্যালোরির রহস্যময় অন্তর্ধানের মধ্য দিয়ে ৩য় এভারেস্ট অভিযান ব্যর্থ হয়। দেশে ফেরত আসার পরে সর্বশেষ চাক্ষুষ ও’ডেলের মন্তব্য খুব বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ও’ডেলও পরে কনফিউজ হন আসলেই তাদেরকে সেকেন্ড স্টেপে নাকি ফার্স্ট স্টেপে দেখেন। ৪র্থ অভিযান হয় প্রায় ১ দশক পরে।

১৯৩৩, ১৯৩৪, ১৯৩৫, ১৯৩৬, ১৯৩৮, এর পরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিরতী। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম অভিযান চালায় কানাডিয় টিম। ১৯৫০সালে ব্রিটিশ-আমেরিকা যৌথ অভিযান। ১৯৫১ সালে আবার ব্রিটিশ’রা যেখানে হিলারী প্রথম অংশ নেন। ভারত-নেপাল তখন স্বাধীন ব্রিটিশদের খবরদারী শেষ।

১৯৫২ সালের অভিযানের দায়িত্ব পান সুইস টিম। সুইস’রা তেনজিং এর সহায়তায় আধুনিক গিয়ার নিয়ে মাত্র ৯০০ ফুট দুরত্ব বাকী থাকতে ব্যর্থ হয়। রুশ মিডিয়া দাবী করে চীন-তিব্বত বেজ ক্যাম্প দিয়ে রুশ’রাও নাকি এসময় অভিযান চালায় কিন্তু তার কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। সম্ভবত স্নায়ুযুদ্ধের একটা মিডিয়া স্টান্ট বাজী ছিল। এর পরে ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া, নেপাল-নিউজিল্যান্ডের যৌথ অভিযানে ভারতীয় নাগরিক তেনজিং নোরগে তার সপ্তম প্রচেষ্টায় এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিক এডমন্ড হিলারী তার ২য় প্রচেষ্টায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এভারেস্ট জয় করে ফিরে আসে।

ম্যালোরি-এবং আরভিন। ম্যালোরি-আরভিনের প্রত্যাবর্তনঃ ১৯২৪ সালে ম্যালোরি-আরভিনের হারিয়ে যাবার অনেক অনেক বছর কেটে গেছে। রহস্যের সমাধান হয়নি। ১৯৩৩ সালে প্রায় ২৬০০০ফুট উপরে আরভিনের আইস এক্স পাওয়া গেলে বিতর্ক আরো উসকে ওঠে। ১৯৭৫ সালে ওয়াং নামের একজন চায়নিজ মাউন্টেনিয়ারের নেতৃত্বে একটি জাপানি টিম এভারেস্ট অভিযান চালায়।

অভিযানে ওয়াং জানায় তাদের ক্যাম্পের কাছে তারা এক শেতাঙ্গ মাউন্টেনিয়ারের মৃতদেহ দেখতে পায় যার পোষাক আশাক ১৯২৪ সালের স্টাইলে। কিন্তু ওয়াং বেশী প্রমান দিতে পারেননি, কারন পরদিন তুষার ধ্বসে ওয়াং এর পরিনতিও আরভিন-ম্যালোরির মত হয়। ১৯৯৯ সালে বিতর্কের অবসান করতে ম্যালোরি-আরভিন রিসার্চ টিম অভিযানে নামে। ওয়াং এর কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জায়গার কাছে তারা ম্যালোরির মৃত দেহ আবিষ্কার করেন। ম্যালোরি মারা যাবার ৭৫ বছর পরে ম্যালোরি আবার সভ্য জগতে প্রত্যাবর্তন করে।

ম্যালোরির কোমড়ে ইনজুরি থেকে ধারনা করা হয় তিনি সম্ভবত আরভিনের সাথে নিজেকে দড়ি দিয়ে বেধে উপরে ওঠার বা ওঠানোর কিংবা নামা বা নামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হন এবং সেকেন্ড স্টেপ বা ফার্স্ট স্টেপ থেকে পরে নিহত হন। কিন্তু আরভিন কই? মৃত্যুর ৭৫ বছর পরে ম্যালোরি ফিরলেও এভারেস্ট থেকে আরভিন এখনো ফেরেননি। সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যাচ্ছে, আরভিন সার্চ কমিটি স্যাটালাইট ইমেজ থেকে আরভিনের দেহ খুজে পেয়েছে। আরভিনকে ফিরিয়ে আনতে ২০১০ সালে একটা অভিযান চালানো হয় কিন্তু সেটার কোন সাফল্য আসেনি। এবছর ২য় অভিযান হবার কথা।

আরভিনকে ফিরিয়ে আনতে। ম্যালোরি আরভিনের রহস্য ভেদ নিশ্চিত ভাবে হবে যেদিন ম্যালোরির ক্যামেরাটা পাওয়া যাবে। কারন এভারেস্ট সামিট করলে অবশ্যই ম্যালোরি ছবি তুলতেন। ম্যালোরি-আরভিনের আসল ঘটনা যাই হোক না কেন, প্রতি বছরের মতো আগামী কালকেও ২৯শে মে আসবে, সারা পৃথিবীতে এভারেস্ট ডে পালন হবে আর ম্যালরির অমর উক্তি বার বার ফিরে আসে- I want to climb mount Everest because it is in there.  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.