আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেত যেতে কুমারীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে ৮০ এশীয় নারীকে



১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদন নিয়ে ব্রিটেন ও ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাপক হৈচৈ পড়ে যায়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, বাগদত্তাকে বিয়ের উদ্দেশ্যে ব্রিটেনে যাওয়া এক ভারতীয় নারীকে হিথ্রো বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে কুমারীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। শুধু ওই নারীই নন, বাস্তবে তাঁর মতো আরো অনেক নারীকেই ওই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, সত্তরের দশকে বাগদত্তাকে বিয়ের উদ্দেশ্যে ব্রিটেনে যাওয়া অন্তত ৮০ জন নারী ওই পরীক্ষার শিকার হন। তাই এখন দাবি উঠেছে, নির্মম ওই আচরণের জন্য ব্রিটেনকে ক্ষমা চাইতে হবে।

এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বর্তমান ব্রিটিশ সরকার। লন্ডনের জাতীয় মহাফেজখানায় (ন্যাশনাল আর্কাইভ) সংরক্ষিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নথিপত্র অনুযায়ী, সত্তরের দশকে ভারত-পাকিস্তানসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে ব্রিটেনে যাওয়া অন্তত ৮০ নারীকে ডাক্তার দিয়ে 'কুমারীত্ব' পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই নারীরা সত্যিই অবিবাহিত কি না কিংবা তাঁদের বয়স সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়েছেন কি না অথবা তাঁদের কোনো ছেলেপুলে আছে কি না তা যাচাই করার জন্যই অভিবাসন কর্মকর্তারা ওই পদক্ষেপ নেন। ওই সময় ব্রিটেনের অভিবাসন আইনে বলা ছিল, কোনো নারী বিয়ের উদ্দশ্যে ব্রিটেনে এলে তাঁর ভিসার প্রয়োজন হবে না। তবে ওই যুগলের বিয়ে হতে হবে ব্রিটেনে পেঁৗছানোর তিন মাসের মধ্যে।

তা সত্ত্বেও ব্রিটেনে যাওয়া উপমহাদেশের নারীদের বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ১৯৭৯ সালে গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ৩৫ বছর বয়সী ভারতীয় এক স্কুলশিক্ষিকা হিথ্রো বিমানবন্দরে ওই হয়রানির শিকার হন। তিনি ব্রিটেনে তাঁর বাগদত্তার কাছে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ওই শিক্ষিকাকে বিমানবন্দরে পুরুষ ডাক্তার দিয়ে 'কুমারীত্ব' পরীক্ষা করানো হয়।

তাঁকে হিথ্রো থেকেই ভারতে ফেরত পাঠানো হতে পারে_এমন আশঙ্কায় ওই শিক্ষিকা অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে ওই 'পরীক্ষা' দিতে বাধ্য হন। এ ঘটনার পর ব্রিটেন ও ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সংবাদমাধ্যম ব্রিটেনের এমন আচরণকে 'জঘন্য' ও ধর্ষণের শামিল বলে অভিহিত করে। এমন অবস্থায় ওই বছরই ব্রিটিশ সরকার অভিবাসন কর্মকর্তাদের এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ জানিয়ে একটি আইন করে। প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ওই ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।

আর অভিবাসন কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এর যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, নারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ হওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সে সময় ব্রিটেনের লেবার দলীয় প্রধানমন্ত্রী জিম কালাহান এ ঘটনার জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেরারজি দেশাইয়ের কাছে পাঠানো এক বার্তায় জানান, ভবিষ্যতে আর এমন ঘটনা ঘটবে না। এসব নথিপত্র খুঁজে পান অস্ট্রেলিয়ার ড. ম্যারিনেলা মারমো ও ড. ইভান স্মিথ। তাঁরা জানান, ওই সময় যতটা ধারণা করা হয়েছিল, আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি নারীকে কুমারীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তাঁদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের সনাতনি ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত ও ধৈর্যশীল বলে মনে করা হয়।

একটা সাধারণ ধারণা রয়েছে, এসব দেশের নারীরা বিয়ের আগ পর্যন্ত তাঁদের সতীত্ব ধরে রাখেন। এই বিবেচনা থেকেই তাঁদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করা হয়। ইউকে বর্ডার এজেন্সির এক মুখপাত্র বলেন, 'এমন আচরণ ৩০ বছর আগে ঘটলেও তা ছিল সম্পূর্ণ ভুল। অভিবাসন নীতি ও অভিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষার দায় সরকারেরই। ওই আচরণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা হয়েছে।

সূত্র : গার্ডিয়ান http://www.dailykalerkantho.com ১১-০৫-২০১১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.