আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার স্কুলে যাওয়ার লুলীয় ইতিহাস (কঠিনভাবে ০৪+)

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং।

আজকে সকাল ৯টার সময় ক্লাস ছিল। রেডী হয়ে নিচে নেমে রিকশার জন্য ওয়েট করছিলাম।

এমন সময় চোখে পড়ল এক বিচিত্র দৃশ্য। এক পিচ্চিকে(নার্সারী-কেজীর) তার মা রিকশায় করে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে, পিচ্চির গায়ে কিছু নেই(জুতা ছাড়া)। আর পিচ্চির মা তাকে রিকশার মধ্যেই জামা-প্যান্ট পড়াচ্ছে। মানে স্কুলের দেরী হয়ে গেছে, তাই নাগাবাবা অবস্থায়ই রাজপথে পদার্পণ। (স্কুলে পৌছার আগেই জামা-কাপড় পড়তে পারলেই হয়) ।

এই দৃশ্য দেখে আমার ছোটবেলার স্কুলের অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে গেল। ভাবলাম একটা পোষ্ট লিখেই ফেলি। পোষ্ট পড়ে আবার আমাকে কেউ চরিত্রহীন মনে করবেন না প্লিজ । একটু বুঝতে শিখার পর থেকেই(আগেও হতে পারে) স্কুল নামক বস্তুটার প্রতি আমার প্রচুর আগ্রহ ছিল। এর কারণ হল আমার মা-বাবা।

আমার ধারণা, আমার জন্ম হবার পরই আমার মা প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন তা হল, “বাবু, বলতো এ ফর অ্যাপেল, বি ফর বল, সি ফর ....” । আমার পড়াশোনা নিয়ে আমার মা-বাবা আমার উপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন অনেক ছোটবেলা থেকেই। আমার মনে আছে, একদম ছোট বেলায় একবার বাসার কারেন্ট চলে গিয়েছিল। মোমবাতির আলোয় দেয়ালে ছায়া দেখে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কি? জবাবে আমার বাবা মোমবাতি আর ছায়ার ইংরেজি বানান শিখিয়ে দিলেন। এভাবে আমি ছোটবেলাতেই অনেক ইংরেজী শব্দ জানতাম ।

তবে, সব ভালোরই কিছু খারাপ দিক থাকে। আমি যেদিন প্রথম স্কুলে ভর্তি হই, সেদিন বাসায় আসার সময় আমার মাকে জিজ্ঞেস করি, “মামণি, সুন্দর মেয়ে ইংরেজী কি? ” যাই হোক, আমার স্কুল যাত্রার গল্প বলি। আমি স্কুলে ভর্তি হবার জন্য প্রচুর কান্নাকাটি করতাম। কিন্তু ৪ বছর না হওয়ায় ভর্তি করানো হত না । একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘুমের মধ্যে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলেছি ।

আমার মা আমাকে স্নান করিয়ে কাপড় পরতে বলে রান্নাঘরে চলে গেলেন। তখনি আওয়াজ পেলাম যে পাশের বাসার ছেলেটা(নাম মনে নেই) আন্টির সাথে স্কুলে যাচ্ছে। আমি আমাদের বাসার দরজার ফুটো দিয়ে দেখার জন্য দরজার কাছে গিয়ে দেখি কাজের মহিলা দরজা খুলে ছাদে গেছে। আমাকে আর পায় কে? আমি ও আজকে স্কুলে যাব পাশের বাসার ছেলেটার সাথে । আমি দ্রুতপায়ে সিড়ি দিয়ে নীচে নামলাম।

এদিকে যে পোষ্ট-অফিস শুধু খোলা না ডাকাতি হয়ে গেছে সেদিকে খেয়াল নাই । নীচে নেমে দেখি ওরা রিকশায় উঠে চলে যাচ্ছে। অনেক ডাকাডাকির পর ও শুনল না। কিন্তু আমি তো ‘বিনাযুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী’- এ নীতিতে বিশ্বাসী। একটা রিকশা দাড়িয়ে ছিল বাসার গেটের সামনে।

রিকশাঅলাকে বললাম, “আমাকে স্কুলে নিয়ে চলেন”। কপাল ভালো যে, রিকশাঅলা ছেলেধরা টাইপের ছিলনা। সে আমার অনেক লাথি-থাপ্পর-খামচি-কামড় সহ্য করে বাসায় দিয়ে গেল। যুদ্ধ করার চান্সই পেলাম না। বাসায় নিয়ে আমার মাকে বলল, “পুলাপানরে ল্যাংটা কইরা স্কুলে পাঠান কেন”? সে কি আর আসল ঘটনা জানত? আফসুস্‌।

যাই হোক, যথাসময়ে ৪ বছর পূর্ণ হয়ে গেল। মা-বাবা আমাকে নিয়ে চললেন স্কুলে ভর্তি করতে। পুরা কক্সবাজার শহর ঘুরে ও আমার কোন স্কুলই পছন্দ হয়না। কারণ কোন স্কুল বেড়ার দেয়ালের(সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়), কোন স্কুলের মোটা মোটা ম্যাডাম কোলে নিয়ে এমন আদরই করল যে জান বের হয়ে যাচ্ছিল(ইংলিশ মিডিয়াম), কোন স্কুলের স্যারদের গুন্ডার মত লাগে, এই সব হাবিজাবি কারণ। শেষমেষ একটা স্কুল ভাল লাগল।

কারণ, ঐ স্কুলের হেডমাস্টারের রুমে ঢোকার পর একটা ব্যাপক সুন্দর মেয়েকে দেখলাম। সে ও আমাকে দেখল এবং মিষ্টি একটা হাসি দিল। ঐ বয়সেই আমি পুরা ঘায়েল। (এখন যে কেন এমন হয় না?) আমি সাথে সাথে আমার বাবাকে বললাম যে এই স্কুলে ভর্তি হব। ভর্তি হলাম স্কুলে।

স্কুলের নাম ছিল প্রভাতী স্কুল, কক্সবাজার। বাসায় আসার সময় মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মামণি, সুন্দর মেয়ে ইংরেজী কি?” মা তো আর আমার মনের কাহিনী বুঝেনাই। বলল, বিউটিফুল গার্ল। কয়েকদিন পরে স্কুলে গেলাম ক্লাস করতে। ক্লাসে ঢুকে মেয়েটাকে খুজেঁ বের করে তার পাশে গিয়ে বসলাম।

আবার সে আমাকে দেখে হাসি দিল। আমি বললাম, “বিউটিফুল গার্ল, আমার কাছে চকলেট আছে। খাবে?” বিউটিফুল গার্ল কেন জানি আমার কথা শুনে বিরাট ভয় পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। আমি পুরাই গাধা হয়ে গেলাম। সে কেন কান্না করছে জিজ্ঞেস করার আগেই ম্যাডাম ইভটিজিং(!) এর দায়ে আমাকে অন্য টেবিলে বসিয়ে দিল।

‘হায়রে ইমম্যাচিউরড ললনা, ভালবাসা বুঝলিনা’। এই ঘটনাকেই ছ্যাকা খাওয়া বলে কিনা না জেনেই আমিও এক বিরাট কান্নাকাটির বাজার খুলে বসলাম। সাথে সাথে দেখলাম ক্লাসের অনেক বাচ্চাই কান্না শুরু করে দিল। অনেক কষ্টে ক্লাসের দুই ম্যাডাম মিলে সবার কান্না থামিয়েছিলেন। তবে আমার কান্না আর থামেনাই।

পুরা ক্লাস ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করলাম। বেগতিক খারাপ দেখে ম্যাডামরা আমার মাকে ডেকে বললেন আজকের মত বাসায় নিয়ে যেতে। আমি আমার মাকে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “আমি আর এই স্কুলে পড়বনা। একটা মেয়েকে বললাম চকলেট খেতে। ও দিল কান্না করে।

আর পচা ম্যাডাম আমাকে অন্য টেবিলে বসিয়ে দিল”। সেদিনের মত বাসায় গেলাম। পরে অবশ্য এই বিউটিফুল গার্লের সাথেই এক টেবিলে বসে দুই বছর ক্লাস করেছি। তার নাম ছিল পিংকি। দুবছর পর বাবার চাকরির সুবাদে চলে যাই সাতক্ষীরায়।

এর আগে এই দুবছর আমরা টিফিন ভাগাভাগি করতাম, এক টিচারের কাছে গান শিখতাম, একে অন্যের বাসায় গিয়ে খেলতাম। একদিন রান্নাবাটি না কি একটা জিনিস খেলার সময় পিংকি আমার গালে একটা চুমো দিল। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাড়াতাড়ি আমি আমার মার কোলে আশ্রয় নিলাম। কি লজ্জা, কি লজ্জা । মনে আছে, কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাবার আগে ওদের বাসায় শেষবারের মতন যখন গেলাম তখন অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম দুজনে।

বলেছিলাম চিঠি লিখব। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস এই যে জেমস-বন্ডের প্রতি সিনেমায় যেমন নতুন নায়িকা আসে, তেমনি জিলা স্কুলে ভর্তি হবার আগ পর্যন্ত চারটা স্কুল বদল করেছি এবং প্রতি স্কুলেই পিংকির মতন দু-একজন ছিল। এত পিংকির ভীড়ে আসল পিংকিকে বেমালুম ভুলে গিয়েছি। কারণটা বোধ হয়, সুন্দরী মেয়েদের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ। কিন্তু তাই বলে কিন্তু আমার চরিত্র খুব একটা খারাপ না।

খালি মাঝে মাঝে মনে হয় কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে যদি দু-একটা পিংকি থাকত তাহলে খুব একটা খারাপ হত না। অন্তত রেগুলার ক্লাস করতাম । পরের স্কুলের পিংকিদের কে নিয়ে আরো মজার মজার ঘটনা আছে । এই লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে আর আমার চরিত্র বেশী খারাপ মনে না হয় তাহলে পরে শেয়ার করতে পারি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।