আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্কুলে পড়া স্কুলেই ঘুম

আমার দেশ আমার সংস্কৃতি

সূত্র: প্রথম আলো। স্কুলে পড়ে ওরা। স্কুলেই ঘুমায়। দিনে স্কুলের পাঠদান শেষে রাতে কুপি জ্বালিয়ে চলে বাড়তি পড়া। পঞ্চগড় শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভারতীয় সীমান্তলাগোয়া শিংরোড ও জয়ধরভাঙ্গা গ্রাম দুটিতে এমনই দুটি স্কুলের খোঁজ পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের স্কুল দুটির শিক্ষকেরা পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ভালো ফলের পাশাপাশি বৃত্তি পাওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পড়ানোর এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এর জন্য শিক্ষকেরা অভিভাবকদের কাছ থেকে বাড়তি কোনো টাকা নেন না। দূর থেকে স্কুল দুটিকে দেখে মনে হয়, রাতের আঁধার ফুঁড়ে যেন আলোর মিছিল বসেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে শিংরোড এলএসএস রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে পড়াশোনা করছে। কেউ হারিকেন, কেউ চার্জার, কেউবা কুপি নিয়ে বসেছে।

প্রধান শিক্ষক দ্বিজেন্দ্র নাথ রায় ঘুরে ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকজন অভিভাবক টিফিন ক্যারিয়ার, থালা ও গামলায় করে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলেমেয়েদের পড়া শেষ হলে তাদের খাইয়ে বাড়ি ফিরবেন। দিনে ও রাতে শিশুদের পড়ানোর এই উদ্যোগ নিয়েছেন শিংরোড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বিজেন্দ্র নাথ রায়।

এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন এলাকার অভিভাবকেরাও। বছরের পাঁচ মাস বিদ্যালয়টিকে তিনি অনেকটা নিজের বাড়ি হিসেবেই ব্যবহার করেন। এ বছর ৫৪ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। এর মধ্যে ৩৪ জন ছাত্র ও ২০ জন ছাত্রী। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিজেন্দ্র নাথ রায় ১৯৮৬ সালে মাত্র চার শতাংশ জমির ওপর একটি খড়ের ঘর তুলে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী নিয়ে শুরু করেন স্কুলের কার্যক্রম।

পাশের ৬০ শতাংশ জমি নিয়ে বিদ্যালয়ের পরিধি বাড়ান তিনি। ১৯৯১ সালে সরকারের নিবন্ধন পায় স্কুলটি। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তিন কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ করে দেয়। বিদ্যালয়টিতে চারজন শিক্ষক ও ২৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শুরুর দিকে এ স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ ফল করতে পারত না।

প্রধান শিক্ষক দ্বিজেন্দ্র নাথ রায় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৯২ সাল থেকে রাতে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেন। সে সময় পড়াশোনা শেষ করে রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যেত। সে বছর দুজন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায় এবং শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিও প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। দ্বিজেন্দ্র নাথ রায় বলেন, দলবেঁধে পড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়তে সুবিধা হয়।

একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারে। সহযোগী তিন শিক্ষক খুব সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে এ কাজে সহযোগিতা করছেন। প্রধান শিক্ষক জানান, গ্রামের বেশির ভাগ অভিভাবক দরিদ্র হওয়ায় সন্তানদের জন্য বাড়িতে শিক্ষক রেখে পড়াতে পারেন না। এ ছাড়া অনেক অভিভাবক নিরক্ষর হওয়ায় নিজেরা সন্তানদের পড়াতে পারেন না। এ কারণে রাতে পাঠদান শুরু করেছেন।

তিনি আরও জানান, গত বছর পর্যন্ত এ বিদ্যালয় থেকে সাধারণ গ্রেডে ৩৪ জন আর ট্যালেন্টপুলে ২০ জন বৃত্তি পেয়েছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রফিজল হক বলেন, ‘দ্বিজেন্দ্র নাথ রায় এলাকার শিক্ষার্থীদের আলোকিত করে গড়ে তুলতেই স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। এ জন্য তিনি কোনো টাকা-পয়সা নেন না। ’ সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ হাসান বলেন, ‘এটি একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যালয়। এখানে রাতের বেলা আরেক দফা পাঠদান করার ফলে বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করছে এবং বৃত্তির হার বাড়ছে।

’ শিংরোড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই উদ্যোগকে অনুসরণ করছে পাশের জয়ধরভাঙ্গা গ্রামের জয়ধরভাঙ্গা রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ২৪ জন ছাত্রছাত্রী দিনরাত পড়াশোনা করছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, পার্শ্ববর্তী স্কুলের এই উদ্যোগ দেখে তাঁরাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অভিভাবক অলিয়ার রহমান মেয়েকে রাতে খাবার দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘স্যারেরা বিনি পয়সায় ছেলেমেয়েদের রাতে পড়াচ্ছেন।

আমরা খুবই খুশি। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।