আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সৎ মানুষের গল্প।



রহমান সাহেব আমার কলিগ। কোম্পানীর শুরু থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র ষ্টোর অফিসার হিসেবে আছেন। গত ১১বছর তিনি একই পদে আছেন। তার কোন প্রমোশন হয়নী। অদুর ভবিষৎতে যে হবে তার কোন লক্ষন ও দেখছিনা।

অবশ্য এ নিয়ে রহমান সাহেব কে কখনো বিচলিত হতে দেখিনী। তিনি প্রতিদিনের রুটিন মতো সকাল ৯টায় অফিস আসেন এবং সবার পরে অফিস থেকে বের হন। নিজের কাজের পর তাকে সহকর্মিদের কাজও অনেক সময় করে দিতে হয়। তিনি মাথা নিচু করে কাজ করে যান। অন্য কলিগরা যখন গ্যালন ভর্তি তৈল নিয়ে বসদের পিছন পিছন ছুটছেন তখন রহমান সাহেব ওসব না দেখার ভান করে নিরবে তার কাজ করে যান।

আমাদের অফিসটা বেসরকারী হলেও এখানে কর্মরত কর্মচারীগন কয়েকটি দলে বিভক্ত। কেউ এমডি কেউ চেয়্যারমান আবার কেউবা ইডি স্যার পন্থি। আওমিলীগ ও বিএনপির মতই এরা একপক্ষ আরেক পক্ষের পেছনে লেগে থাকেন। কিন্তু রহমান সাহেব এসবের মধ্যো নেই। তিনি সৎ মানুষ।

শুনতে পাই স্বল্প বেতনের এই চাকরির পয়সায় ৪জন সন্তান নিয়ে তার সংসার চালাতে তার কষ্ট হয়, কিন্তু তারপরও সে এসব দুঃখ কষ্ট নিয়ে ভাবেন না। নিরলস ভাবে কাজ করে যান। এভাবেই চলছিলো। দিন কয়েক আগে অফিসে গিয়ে দেখি অন্যান্য কলিগরা রহমান সাহেবকে নিয়ে নানা আলোচনা করছেন। আমি রহমান সাহেবের কাছে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলাম।

তিনি শূন্যে তাকিয়ে বললেন কৈ কিছু হয়নীতো। তার চোখ দুটো লাল, তাকে খুব বিসন্ন লাগতে ছিল। আমি বললাম দেখুন আপনি আমাদের বহুদিনের সহকর্মি। আমি আপনাকে খুব পছন্দও করি তাই প্রকৃত ঘটনাটা জানতে চাইছি। রহমান সাহেব একটা সাদা খাম আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।

খুলে দেখলাম অসত্য তথ্য ও ঊদ্ধতন কর্মকতাদের সাথে অশোভন আচরনের জন্য তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম অবাক হয়ে বললাম এও সম্ভব? রহমান সাহেব দির্ঘ নিশ্বাষ ফেলে বললেন তানিয়া কর্পারেশন আমাদের যে সুতা সাপ্লাই দেয়। অনেক সময় ওজন বাড়ানোর জন্য ওরা ভেজা সুতা দেয়। এবারের সুতার চালানটা অনেক বেশি ভেজা ছিল তাই আমি সুতা রিসিভ করতে চাইনি। তানিয়া কর্পারেশন তখন আমাকে টাকার একটা খাম দেয়।

আমি তখন টাকা না নিয়ে চালানটা বাতিল করে দেই। ম্যানেজার কে অবহিত করি কিন্তু তাকে ওরা হয়ত ম্যানেজ করে ফেলছে তাই. .। আমি চুপ করে নিজের টেবিলে চলে আসি। রহমান সাহেব অফিস রাজনীতির কোন দলের সাথেই জড়িত ছিলনা। তার জন্য তাই কেউ সুপারিশ দুরে থাকুক সত্যটাও বলতে এগিয়ে আসেনি।

সত্য বলার সাস্তি স্বরুপ তাই তাকে কোম্পানী থেকে বহিস্কার করা হলো। অফিস থেকে রহমান সাহেব বিদায় নেবার সময় আমার চোখ ছলছল করছিল। নিজেকে ভারি অথর্ব মনে হচ্ছিল। কিন্ত রহমান সাহেব কে দেখলাম নিবির্কার। এই প্রথম তিনি মাথা উচু করে সবার দিক তাকিয়ে একটু হাসলেন।

তার হাসিটা ছিল তরবারির মত, আমার ভেতরটা ছিদ্র হয়ে গেল। তিনি শুধু বললেন সবাই ভাল থাকুন। তিনি অফিস থেকে বের হলেন মাথা উচু করে। তিনি ফুটপাত ধরে হেটে চললেন। আর আমরা মাথা নিচু করে অফিসের বাসের জন্য লাইন দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।

আমার এ লেখাটি দৈনীক আমার দেশে প্রকাশিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.