আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাইনাল মিসটেক

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে চায়নি । সময়টা খারাপ খুব ভালো করেই জানে । তবুও মোর্শেদ ঘর থেকে বের করিয়েই ছাড়লো । সামনের পথটা এখন অনেক সাবধানে যেতে হবে ।

মনে মনে রুষ্ট হলো রাকেশ । এই নামটা অবশ্যই তার আসল নয় । তাকে একেক জায়গায় একেক ছদ্মনাম ব্যবহার করতে হয় । নিজের আসল নাম ব্যবহার করে কাজকর্ম করবার কোন অধিকার রাষ্ট্র তাকে দেয়নি । এই নিয়ে তার বিশেষ ভাবাবেগ কাজ করেনা ।

কোন কারণই নেই তার । যার সামনের পরনের কাপড়ের বন্দোবস্ত করতে পিছনের কাপড়ের দফারফা হয়ে যায় তার এসব নিয়ে মাথা ঘামালে হয়না । গোঁফ উঠবার বয়সেই বাস্তবতা তার হাতে কঠিন , খটোমটো সব বই হাতে এনে দিয়েছিলো । বছর আষ্টেক হলো রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছে । সামনের অন্ধকার পথ কিভাবে সাবধানে চলবে ভাবছে ।

সাথে কিছু চিন্তার হিসাব-নিকাশ । শহরের মানুষজন প্রায় শুয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে । রাত বাজে নয়টা বিশ । মানুষজন নয়টার মধ্যেই খেয়ে নিয়ে যার যার ঘরের দোর লাগিয়ে শুয়ে পড়ে । রাস্তাঘাটে এই সময়ে মানুষজন বিশেষ চলাচল করেনা ।

সে নিজেও বের হতোনা ঘর থেকে সেরকমই ঠিক করে রেখেছিলো । কয়েকটা দিন তার বিশেষ সাবধানে থাকবার নির্দেশ আছে । তাড়াহুড়া করতে গিয়ে গামছাটাও আনেনি সাথে । মনে মনে মোর্শেদকে ক-বর্গীয় এবং চ-বর্গীয় গাল দিয়ে কিছুটা শান্তি পেলো । মালটার হাবভাব বিশেষ সুবিধার না ।

কানাঘুষা আছে গত মাসের করিমের খুনটা তার ইশারাতেই করা । রাকেশকে কেউ দায়িত্ব দেয়নি তবু সে যতদিন আছে এর মধ্যেই বের করে নিতে চায় আসল কাহিনী কি । হাঁটতে হাঁটতে দেখলো সামনের দুইটা চায়ের দোকান বিস্ময়করভাবে এখনো খোলা আছে । চায়ের তেষ্টা হলেও রাকেশ অন্য পথ বরাবর চলতে থাকে । নিজেকে উন্মুক্ত প্রকাশ করবার কোন অর্থ হয়না ।

যেই রাস্তা বরাবর এখন চলছে সেই রাস্তা মাস তিনেক আগেও ভয়াবহ রকমের খারাপ ছিলো । গ্রামে কোন একটা এনজিও চালু হবার পর থেকে তার পণ্য সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এমপির তড়িৎ নির্দেশে সময়মত রাস্তা পাকা করা হয়েছে । উদ্দেশ্য নায্য মূল্যেরও অর্ধেকের কম দামে শাক বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া গ্রামের বউটার মধ্যেও দুই টাকার মিনি প্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করার চাহিদা তৈরী করা । হয়েছেও তাই । মাচায় লাউ ঝুলতে থাকে অবিক্রিত ।

টাউনের ব্যাপারী মোবাইল ফোনেই দাম জেনে নিয়ে নিজের ভাগের বখরা খাবলে নিয়ে নেয় । টাউনের এক বাটপারের সাথে মোর্শেদের যোগসাজশের খবর জেনে তার সাথে রাকেশদের লেগে গিয়েছিলো । মোর্শেদকে বিশ্বাস করবার কোন কারণ নেই । কিছু রিকশার চলাচল দেখে রাস্তার ডান দিক বরাবর হাঁটতে থাকে । হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূর থেকে এক ল্যাট্রিনের আলো জ্বলতে দেখে বুঝলো পৌঁছতে আর বিশেষ দেরি নেই ।

নানাবিধ ঘাত - প্রতিঘাতে রাকেশ মানুষ চিনতে শিখেছিলো । কিন্তু আজকে ফেল মেরে গেছে । এটাই তার কাল হয়ে দাঁড়ালো । এই একটা জমি বিক্রী নিয়ে জরুরী কথার অজুহাতে মোর্শেদ আজকে ডেকেছিলো । সে যে ইতোমধ্যে পেইড আপ ইনফর্মারও বনে যেতে পারে ভাবতে পারেনি ।

গন্তব্যে সোজা পথের দিকে যেতেই চারপাশে লেটেস্ট মডেলের অস্ত্র হাতে কালো পোষাকে সাত জনের দাঁড়িয়ে থাকা দেখেই বুঝলো গেইম ইজ ওভার । প্রথমে মনে করলো রাস্তা প্রায় নির্জন , এখানে হয়তো মানুষজন জানান দিয়ে শুয়োরের বাচ্চারা শুট করবেনা । কিন্তু পাঁজর বরাবর গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সময়ে বুঝলো হিসাবে আবারো ভুল করেছে । দা ফাইনাল ওয়ান ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।