আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেইসব দিনগুলো

Raindrops falling from heaven.. Will never wash away my misery..

বড়ু তোমাকে যেন মাঝে মাঝে একটু বেশীই মনে পড়ে। ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত তোমার সাথে স্মৃতি গুলো মনের আনাচে কানাচে খুব বেশী উঁকি দেয়। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে মনে পড়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো, তোমার কোলে মাথা রেখে আস্তে আস্তে কথা বলা। এইবার যখন তুমি এসে ছিলে, আমি তোমার সাথে ঘুমানর জন্য কি পরিমান বায়না করছিলাম। তুমি বললে তুই আর বড় হলি না।

এখনও পর্যন্ত আমার সাথে ঘুমানর জন্য বায়না করিস। তারপর বালিস কম্বল সব নিয়ে তোমার সাথে ঘুমানো। মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভাঙতে দেখতাম তুমি উঠে আমার গায়ের কম্বল ঠিক করে আমার কপালে আদর করে দিচ্ছ আবার কখনও আদর করে কাছে টেনে নিচ্ছ। তোমার কাছে যখন সবাই মিলে বেড়াতে গেলাম তখনও আমি তোমার কাছেই ঘুমাতাম, সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার আগে একবার ডেকে আমার চেহারা না দেখে তোমার বের হতে ইচ্ছে করত না। সকালে ডেকে উঠিয়ে তুমি বলতে তোকে দেখতে ইচ্ছা করল তাই উঠালাম, তুই আবার ঘুমা।

তোমার খুব পছন্দের একটা কাজ হল তোমার সাথে আমার মিল খুঁজে বের করা। আমি ঘুমাই তোমার মত করে, হাঁটি তোমার করে, খাই তোমার মত করে, সব যখন খুঁজে বের কর তোমার চোখে মুখে মনে হয় হয় এক ধরনের ছেলেমানুষি আনন্দ খেলা করে। মনে আছে তুমি চলে যাওয়ার আগে আমি কি পরিমান কেঁদেছিলাম? আমি কিছুক্ষন পর পর খালি বলতাম বড়ু তুমি যেয়ো না, আর বলেই কেঁদে দিতাম। তখন তুমি আমাকে বুঝাতে তুমি পড়তে যাচ্ছ, আমিও বড় হয়ে এরকম যাব তখন তোমার কাছে থাকব। তবুও আমার কান্না থামত না।

মাঝে মাঝে তোমার চোখও যেন ছল ছল করত। তুমি চলে যাওয়ার পর আমাদের সেই বারান্দাটাতে আমি একা একা বসে থাকতাম যেখানে কারেন্ট চলে গেলে কখনও তুমি আমার কোলে মাথা রেখে, কখনও বা আমি তোমার কোলে মাথা রেখে আমার স্কুলের ঘটনার বর্ননা দিতাম। তুমি বলতে ভার্সিটি তে কি হয়েছে, তারপর ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর অফিসে কি কি ঘটল। আমাদের দু'জনের মাঝে নিঃশ্চুপ শ্রোতা থাকত আপু। আমাদের কথার যন্ত্রনার সে বেচারী কিছু বলারই সুযোগ পেত না।

মাঝে মাঝে শুধু তোমাকে প্রশ্ন করত ও কি বলে তুমি বোঝ? তুমি বলতে "আমার বোনের আহ্লাদি ভাষা শুধু আমিই বুঝি আর কারো বোঝা লাগবে না, তুমি চুপ করে বসে থাক। " এখন আমার সকল আবদারের ঝুলিটা যেন ফাঁকা হয়ে গেছে। কখনও গল্পের বই, কখনও চিপস, চকলেট, বার্গার সব কিছুই তুমিই এনে দিতে। অফিস বা ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত হয়েও আমার জন্য বই কিনতে তুমি নীলক্ষেত যেতে। সেই বই পেয়ে আমি যেন খুশি রাখার জায়গা পেতাম না।

হয়ত এই খুশিটা দেখার জন্যই তুমি দিন শেষে ক্লান্ত হয়েও নীলক্ষেত যেতে। কিংবা আমার মারের ভয়ে, কি মারটাই না মারতাম তোমাকে, পান থেকে চুন খসলেই আমা মারের হাত থেকে নিস্তার ছিল না তোমার। একবার যে ক্লাস ফাইভে থাকতে তোমাকে একটা রাবার আনতে বলেছিলাম তুমি ভুলে গিয়ে ছিলে, আর আমি তোমাকে ঘরেই ঢুকতে দেই নি। তোমার সেই রাবার এনে দিয়ে তবেই ঘরে ঢুকতে হয়েছিল। আমার শত জ্বালাতনেও তোমাকে কখনও বিরক্ত হতে দেখি নি।

তোমাকে আর আপুকে ক্লাস ফোরে থাকতে একবার বলেছিলাম তোমাদের বল্টু হলে তুমি কিন্তু আমার থেকে বল্টুকে বেশী আদর করতে পারবা না। কি ছেলেমানুষি কথা ছিল তাই না?তুমি আর আপু অনেক হেসে বলেছিলে আচ্ছা করব না। তোমার মনে পড়ে তোমার গেন্জির ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে তোমার পায়ে পা রেখে হাঁটা, ক্লাস সেভেনে উঠেও প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও কোলে ওঠা। বড় হলেও দিন দিন যেন তোমার জন্য আমার আহ্লাদিপনাটা বেড়েই যেত! আমি যখন একদম ছোট ছিলাম তুমি আমাকে তোমার কোলে বসিয়ে তোমার পড়া পড়তে। আমিও চুপ করে বসে তোমার পড়া দেখতাম।

তা নিয়ে তোমার কি গর্ব ছিল যে ওইটুকু বয়সেও তোমার বোনটা কি শান্ত ছিল, একটুও ডিসটার্ব করত না। ছোট বেলায় তোমার হাত ধরেই ঘুরে বেড়াতাম, তুমি বেশীরভাগ সময় যেখানে যেতে আমাকে নিয়ে যেতে। তোমার মনে আছে তুমি কলেজে পড়ার সময় যেদিন প্রথম তুমি আমাকে এ্যানি আপুদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলে? তখন আমার বয়স কতই বা হবে, আড়াই বা তিন। দুষ্টুমি করার জন্য তুমি নিচে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে বলেছিলে উপরে গিয়ে দরজা নক করে তোমার নাম বলে বলতে যে আমি তোমার বোন। আর আমি কি লজ্জার কান্ডটাই না করেছিলাম! দরজা নক করার পর আঙ্কেল আন্টি যখন জিঞ্জেস করল আমি কে? আমি ভাইয়ার বোন বলে ভাই্য়া ডাক দিয়ে ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।

তুমি দৌড় দিয়ে এলে আমাকে শান্ত করার জন্য। তুমি যে কিভাবে আমাকে ১-১০০ পর্যন্ত গুনতে কিভাবে শিখিয়েছিলে তা মনে পড়লে এখনও অনেক হাসি পায়। ১০০ বার কান ধরে উঠাবসা করালে আর আমি একদিনেই ১০০ পর্যন্ত গুনতে শিখে গেলাম। এরপর শুরু হল A-Z পর্যন্ত লেখা শেখানর পালা। আমাকে বলেছিলে আমি যদি ১ সপ্তাহের মাঝে A-Z পর্যন্ত মুখস্ত লিখে দেখাতে পারি আমাকে একটা গাড়ি কিনে দেবে।

মুখস্ত লিখে দেখানর পর কলেজের টিফিনের টাকা জমিয়ে আমাকে একটা গাড়ি কিনেও দিয়েছিলে, সেই গাড়ি আমি সুতায় বেঁধে সারা ঘরময় ঘুরে বেড়াতাম। সেইসব দিন গুলো আজ খুব মনে পড়ে, ফিরে যেতে ইচ্ছে করে তোমার কোলে। তুমি খুব আদর কর বলেই তুমি একটু জোরে কথা বললেই কেঁদে ঘর ভাসিয়ে ফেলতাম, যদিও জীবনে মনে হয় ২-৩ বারের বেশী আমি তোমার কাছ থেকে বকা শুনি নি। খুব অভিমান হয়েছিল আমি এস.এস.সি তে গোল্ডেন ৫ না পাওয়ার যখন তুমি আমার সাথে ২ মাস ২৫ দিন কথা বল নি। খুব কষ্ট হত, তোমারও হত আমি জানি।

যেদিন তুমি আম্মুকে বললে "আমি না হয় ওর সাথে কথা বলি না, ও কি একবার আমার সাথে কথা বলতে পারে না?" সেই দিনও খুব অভিমান হয়ে ছিল, আবার তোমার সাথে কথা হবে সেই আনন্দও হচ্ছিল। মনে আছে তুমি যখন আমাকে কদমের মা, ডিম, হাঁসের পঁচা ডিম বলে ডাকতে, আমিও যে খেপে গিয়ে বড়ু, বল্টুর বাপ বলে ডাকতাম। এখন আর কেউ এগুলো বলে ডাকে না। খুব মনে পড়ে সেই ডাক গুলো কিংবা সেই ছড়াটা- "আমাদের ছোট ডিম চলে ঘরের বাঁকে বৈশাখ মাসে তার কাঁচা চুল পাকে"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।