আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেইসব স্মৃতি-১

ছায়া ছায়ায় পথ হেটে চলি--ছায়া আমার সামনে ও পিছে।

(শাবি'র শিক্ষার্থী ছাড়া বাকিরা বিরক্ত হতে পারেন) সবাই বলে অনেক বদলে গেছি। আসলেই তো, এই আমি বা আমরা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছি। যেতে হয় বলে। স্বকিয়তা কিংবা স্বাতন্ত্রতা কোনোটাই নেই এখন।

ছুটছি। গন্তব্যহীন ভবিষ্যতের ভাবনায় আমাদের বদলে যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যেদিন শেষ হলো সেই থেকেই আমার এই বদলে যাওয়া শুরু। তখন লিখতাম নিজের জন্য। ভাবতাম নিজের জন্য।

এর পেছনে কোনো স্বার্থ ছিল না। অর্থের প্রশ্ন ছিল না। কতো রাত গেছে সারা রাত একটা গানের পেছনে কাটিয়ে দিয়েছি। 'আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো। আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোলা বালি তীর ধরে বহুদূর বহুদূর হেটে এসেছো।

' কিংবা 'এক একটা দিন বড় একা লাগে। ' বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই, জুনিয়র- সব ছিল ভাবনাতে। জ্যোৎস্না রাতে মিল্টন ভাইয়ের গলায় ভূমির গান কতো যে অনুভূতি জাগাতো। মনে আছে মিল্টন ভাই তোমার সেই দিনের কথা। একটা সিগারেটের অর্ধেকটার বিনিময়ে তুমি প্রায় সারারাত গান শুনিয়েছিলে।

মনে আছে তোমার? নাকি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তাদের এসব কথা মনে রাখতে নেই! আল্লামা ভাই। তার সেই ঠোটে বাঁশির সুর আজো কানে লেগে আছে। সন্ধ্যা হলেই দূর থেকে ভেসে আসতো আল্লামা ভাইয়ের মিষ্টি সুর। কি সুতীব্র আশক্তি ছিল সেই সুরে আজ বদলে গিয়ে টের পাই। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র আল্লামা ভাই এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়ান।

মানে শিক্ষক। আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি এই লোকটা মানুষ গড়ার কারিগর হবেন। মনে আছে আল্লামা ভাই? সাগরকে স্ট্যাটিসটিক্স এর এক মেয়েকে দেখে রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই মেয়েটাকে নাকি আপনার মনে ধরেছিল। জানেন, এখন সেই মেয়েটা সাগরের বউ।

আপনি বলতেন- বেড়ায় তে খেয়ে ফেলেছে। হা..হা..। মনে আছে ভাই, আল্লামা ভাই আপনার মনে আছে? সমাজবিজ্ঞানের মাসুদ ভাইয়ের সমাজ ভাবনা। বদলে ফেলার শপথ। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম।

কিংবা ওপেলের আত্মবিশ্বাসী চোখ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতো পাগলটা। তার স্বপ্ন দেখার ধরন এমনই ছিল ঘুম থেকে জাগতে না পারায় কতো কতো পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ওপেলটা এখন কেমন আছে জানি না। শুনেছি বিয়ে করেছে। জানতে খুব ইচ্ছে করে এখনো কী সে কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায়! খুব মনে পড়ে পদার্থ বিজ্ঞানের ফাহিম ভাই, সৌমিত্র দা, সোহাগ ভাই, বন্ধু সোহেল, হাসান, আকবরদের কথা।

আর আমার বন্ধু ‘রিয়েল বন্ধু’ শাহিন, ওকে খুব মিস করি। নৃবিজ্ঞানের খোকন, রবি, টুকু, সমাজবিজ্ঞানের মহসিন, সনি, ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সজিব, মাওলা, আইপিই’র শীতল, সোমিত, আরিফ, জিনিয়াস নাজমূল, ফরেস্ট্রির স্বপন, সিদ্ধার্থ, সুজয়, ক্যামিস্ট্রির ছোট ভাই রনি, জনি, ইকনোমিক্স এর তপু কতোজনের কথা বলবো। সবাইকে খুব মিস করি। ওদের মনের রঙ আমার জানা। ইকনোমিক্সের তপুর সঙ্গে শুয়ে শুয়ে কথা বলতে বলতে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা ‘অনুসন্ধানী’ রিপোর্টের রশদ পেয়েছিলাম।

মাদকের ওপর! সেই দাড়িওয়ালা বেলাল কিংবা শম্ভু মামারা কীভাবে মদ বিক্রি করে, কে খায়- সব ওর কাছ থেকেই পাওয়া। খুব অবাক হয়েছিলাম প্রথম আলোতে রিপোর্টটা প্রকাশ হওয়ার পর আমাদের অনেকের ‘প্রিয়’ শিক্ষক জাফর স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তার রুমে। আমি ভেবেছিলাম তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানাবেন। গিয়েছিলাম। এবং ফিরে আসি কান্না কান্না চোখে।

আমার অপরাধ ছিল আমি কেন লিখলাম ‘ছাত্রদের সঙ্গে কোনো কোনো শিক্ষকও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন শাবিতে’। শিক্ষক কথাটায়ই তার যতো আপত্তি! আরো অনেক অদ্ভূত সত্য জানাতে পারিনি। ঘটনা কীভাবে উল্টে যায় তা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষনবিরোধী আন্দোলনের সময়। ছাত্রদল, ছাত্রলীগ বড় কথা নয়। বড় কথা সত্য।

সমাজবিজ্ঞানের মেধাবী সাদিকে যারা ধর্ষক বানালো তারা একবারও ভাবেনি তার সামাজিক অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! ড. জাফর ইকবাল স্যার সেই কথিত ধর্ষিতাকে বানালেন তার মেয়ে। আমি সাদির কাছে গিয়ে বললাম- ‘দোস্ত, এখানে সত্যের স্থান নেই। আমি সত্য লিখলে ছাপাবে না। মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। ’ ও আমায় বলেছিল- ‘আমার বউ আছে।

প্রেম করে বিয়ে করছি। তোরা তো সত্যিটা জানিস। আশাকরি বিশ্বাসও করস। আমারে ধর্ষক বানা তাতে ক্ষতি নেই। বউটাকে নিয়ে কিছু লিখিস না।

ও ফাঁসি দিয়ে মরে যাবে। ’ এতোদিন পর সাদির সেই কথা আজো আমার কানে বাজে। খুব অনুশোচনা হয় ওর জন্য কিছুই করতে পারেনি। ফয়সলটা হঠাৎ করেই জাফলংয়ে পানিতে ডুবে মরে গেল। লিটনকে মারলো রাজনীতি।

অথচ এমন তো কথা ছিল না। এখনো ওদের মুখ স্পষ্ট মনে আছে। পরিসংখ্যানের অনু নামে একটা মেয়েকে মনে ধরেছিল। সেটা মনে ধরা পর্যন্তই। সাহস আর হয়ে ওঠেনি।

কী ভীতুর ডিম ছিলাম। কতোবার ভেবেছি একটা কবিতা শোনাবো তাকে। থাক এই গোপন কথা আগামী পর্বের জন্য তুলে রাখলাম। একটা কবিতা দিয়ে শেষ করি। কথা ছিল, শহরের সীমানা পেরিয়ে আরও কিছুটা পথ আমরা এক সঙ্গেই যাব।

তোমার বুকের নীল ওড়না সিরাজউদ্দোলার পাগড়ীর মত মাথায় পেঁচিয়ে, দু হাত ছাড়িয়ে আবৃত্তি করব-- ‘ভালবাসার রঙ যদি নীল হয়, তবে হাজারো সাপের দংশনে, সমুদ্র কিংবা আকাশের মত নীল হতে আমি রাজি আছি’। বি:দ্র: কবিতাটির এ কয়েকটি পঙতি ক্যাডেট কলেজ ব্লগ থেকে নেওয়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।