আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইহার নাম হরতাল



( লেখাটি লেখকের কল্পনা প্রসূত কাকতলীয় ভাবে কারও সাথে মিলে গেলে লেখক সহ কেউ দায়ী নয়) আমরা বাংলাদেশী। আমাদের অনেক কিছুই নেই। আমরা প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বিদেশীদের অনুকরন করি। কয়েকটা মাত্র জিনিস আমাদের নিজস্ব। হরতাল তার মধ্যে অন্যতম।

যানজট, বাস-গাড়ীর ঘ্যাড় ঘ্যাড় শব্দ মাঝে মাঝে নিজেদের বাচাই আমরা। যে তালে মিষ্টি নেই, রাস্তায় গাড়ী নেই, সেই ভিন্নধর্মী তালকে আমরা হরতাল বলি। হরতালের আবিস্কারক কে বা কারা আমার জানা নেই। জানা থাকলে উহাকে কিংবা উহাদেরকে এই সুন্দর হরতাল আবিস্কারের জন্য নোবেল পুরুস্কার দেয়ার জন্য সুপারিশ করা যেত। যে যাই বলুন হরতালের দৃশ্যটা কিন্তু মজাদার।

গাড়ীর কাচ ভাঙ্গার ঝন ঝন শব্দ। সাইকেল কিংবা রিকশার হাওয়া ছাড়ার ফুস্…স শব্দ। টায়ার কিংবা গাড়ী পোড়া থেকে উৎপন্ন কালো ধোয়া। পক্ষ-বিপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের টিয়ার সেল নিক্ষেপ।

জনতার উর্ধ্বশ্বাসে পালানোর পদক্ষেপ। সব মিলিয়ে বলা যায় চমৎকার। চমৎকার হরতাল করি আমরা। অনেকে বলেন, দেশের ক্ষতি হয়। দেশের ক্ষতি দিয়ে আমাদের কি দরকার! আমরা কি সরকার না সরকারী দলের লোক! যখন ছিলাম তখন হরতাল ঠ্যাঙ্গাতাম।

এখন করি। চেৌত্রিশ পাটি দাত বের করে বলি, আগামী কাল দেশব্যাপি হরতাল। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তারা বুঝতে পারেন হরতালে দেশের কি ক্ষতি হয়। একদিন হরতাল হলে অর্থনৈতিক ভাবে কি পরিমান ……. কি পরিমান ক্ষতি হয় সেটাও সংবাদপত্র সহ প্রচারমাধ্যম দ্বারা জানানো হয়। সরকারী দলের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করা হয় ক্ষমতা থাক বা না থাক তারা আর হরতাল করবেন না।

কিন্তু কখনো কখনো ক্ষমতা হারালে দেশ ও দশের প্রয়োজনে সুর পাল্টাতে হয়। একটা গল্প বলি: এক ছেলে ফুটবল খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেল। ছেলেটি ব্যাথা নিয়ে মাঠ ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‌’ শালা, ফুটবল কি মানুষের খেলা!’ কয়েকদিন পর ব্যাথা সারতেই ছেলেটি মাঠে গিয়ে হাজির। তাকে দেখে একজন ব্যাঙ্গ করে বললো, ‌ ‘ ফুটবল জানোয়ারের খেলা, মানুষে ফুটবল খেলেনা। ’ তখন সেই ব্যাথা পাওয়া ব্যাথা সারা ছেলেটি বলল,‌ ‘ ফুটবল মানুষেই খেলে।

মানুষে ফুটবল খেলেনা একথা জানোয়ারেই বলে। ’ রাজনীতিকরা নীতির রাজাকে বুকে আকড়ে পথ চলেন, ওঠা- বসা করেন। রাজহাস যেমন হাসের রাজা; রাজনীতি তেমন নীতির রাজা। নীতিবান মানুষগুলোর আজকে বলে কালকে ভুলে যাওয়াও হয়তো একটা নীতি। রাজনীতি! আমরা এসব বুঝিনা।

আমাদের অল্প-সল্প জ্ঞানে রাজনীতিকদের রাজজ্ঞান, রাজচাল বোঝা কিভাবে সম্ভব? যত রাগ আমাদের বাসগুলোর উপর। মরেছে বাস ভাঙ্গো! মেরেছে বাস ভাঙ্গো। বাস ভাঙ্গো। সরকারের গদিতে আগুন জ্বালাবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমরা আগুন জ্বালাই বাসের গদিতে। বাসের গদিও সরকারের গদির বড় অংশ।

কোন একদিন সরকার বা সরকারি দলের কেউ আগুন জ্বালানো বাসের গদিতে বসেনি তার গ্যারান্টি কি!হে: হে:। সে কি আনন্দ! আমরা উৎফুল্ল হই। সরকারকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হচ্ছে বটে! হরতালে পর্যাপ্ত কাচ ভাঙ্গা হচ্ছেনা বলে গাড়ীর কাচ ব্যাবসায়ীরা বৈঠকে বসেছে। লিটন, মনির, প্রশান্ত, মিরাজ, রুবেল, মার্বেল, হেলাল, খেলাল সহ অনেক ব্যাবসায়ী। কি করা যায়! সবার একই প্রশ্ন।

নেতা মনির সাহেব সিদ্ধান্ত দিলেন, হরতালে কাচ ভাঙ্গার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। সবাই নেতার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। হরতালের দিন সকাল বেলা কাচ মালিক সমিতি কাচ ভাঙ্গা গ্রুপ নামে রাস্তায় নামে। ঝন ঝন মার্কা কাচ ভাঙ্গার ঝড় তোলে তারা। সমানে গাড়ীর কাচ ভাঙ্গছে।

রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা গাড়ি গুলোও ভাঙ্গছে। এক লাইনে বেশ কয়েকটা গাড়ী দাড় করানো। প্রথম গাড়িটা ভাঙ্গার পর গাড়ীর মালিক এসে বলে, ‘ এ তো নীরব গাড়ী। ভাঙ্গলেন কেন? ’ ‘ সামনের হরতালে এটা চলার সম্ভাবনা ছিল। ’ ওনাদের কথা শুনে পেছনের গাড়ির মালিক এসে বলে, ‌‌‌‘ ভাই আমার গাড়িটা সামনের হরতালে চলবে না।

দয়াকরে নষ্ট করবেন না। ’ সেটাও ভাঙ্গা হলো। ‘ সামনের হরতালে না চললেও ভবিষ্যত হরতালে চলার সম্ভাবনা ছিল। ’ তৃতীয় গাড়ির মালিক এসে বলে, ভাই আমার গাড়ীর কাচ ভাঙ্গবেন না। এটা ভবিষ্যত হরতালে চলবে না।

’ সেটাও ভাঙ্গা হলো। বলা হলো, অতীতে হরতালে চলেছিল। চতূর্থ গাড়ীর মালিক এসে কাকুতি মিনতি করে বলে, ‘ ভাই, present tense অনুযায়ী আমার গাড়ী বর্তমান হরতালে চলছে না। past tense অনুযায়ী অতীতকালে কোন হরতালে চলেনি। future tense অনুযায়ী ভবিষ্যতেও কোন হরতালে চলবে না।

ভাই দয়া করুন। কাচ ভাঙ্গা গ্রুপ জাবাব দিল, চলুক না চলুক ভাঙ্গাই আমাদের সাধনা! হরতালের দিন শাহজালাল আন্তর্যাতিক বিমান বন্দরে এক বিদেশী পর্দাপন করলেন। এয়ারর্পোট থেকে বের হয়ে তিনি দেখলেন জনশূন্য রাস্তা। অনেক কষ্টে একটা রিকশা ঠিক করলেন। কোন এক ভাল আবাসিক হোটেলে উঠতে চান তিনি।

বিদেশী বলে রিকশা ড্রাইভার অতিরিক্ত টাকার লোভ সামলাতে না পেরে হরতাল ভেঙ্গে ছুটল সামনের দিকে। কিছুদূর যাওয়ার পর রিকশা পাকড়াও করা হল। ১০-১২ এসে হাওয়া ছেড়ে দিল। বিদেশী কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলেন, ‘ What is this?’ ` This is hortal, sir ’ ‘ This is hortal! Oh fine! সংবাদপত্রে ইহার কথা পড়েছি। ’ ‘ fine বলবেন না।

this is the first step!’ ‘ অ্যা! দ্বিতীয় পর্যায়ে কি হবে। ’ ‘ আপনাকে এবং রিকশা ড্রাইভারকে কিছু উত্তম মাধ্যম প্রদান করা হবে। ’ ‘ উত্তম-মাধ্যম?’ ‘চড়-ঘুষি, কিল-লাথি। ’ ‘ অ্যা…….!’ ‘ অ্যা বলে চোখ বড় বড় করবেন না স্যার। রকের মতো ওগুলো আপনাকে হজম করতে হবে।

’ ‘ তারপর!’ ‘ তারপর কোন হাসপাতালে কিংবা রাস্তায় পড়ে মৃত্যূর সাতে পাণ্জা লড়বেন। মরে গেলে কবর স্থানে যায়গা পাবেন। বেচে থাকলে মরার জন্য পরর্বতী হরতাল পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে স্যার। ’ ‘ অ্যা…….!’ ‘ হ্যা। ’ বিদেশী ভয়ে কাপতে কাপতে বলেন, This is hortal?! Very bad, very bad. ’ (দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.