আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইহার অভিন্ন বসবাস

এডিট করলাম

এটা একটা গল্প। এবং অনেক দী্র্ঘ। খাতার শেষ পাতায় এটি শুরু হয় এবং কাগজের অভাবে কখনো শেষ হয় না। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে সবসময় যেরকম একটা না একটা গল্প শুরু হয় তেমনি সময়ের উড়ে আসা গল্প এটা। আবার, উড়ে এসে এটা বসে খোলা খাতার একেবারে শেষ পাতায়।

অনেক পতংগই উড়ে এসে পাতার উপর বসতে ভালবাসে,কিন্তু তা ক্ষনিকেরই ব্যাপার। একটু পরেই তারা উড়ে যায়। কিন্তু হালকা পলকা লম্বা লেজওয়ালা এই গল্পটা শেষ পাতায় আটকে যায়। আর ছুটতে পারেনা,উড়তেও পারেনা। অন্যদিকে খাতার সামনের দিকের অসংখ্য পাতা খালি পড়ে থাকে।

সেখানে কিছুদিন শূন্যতা বিরাজ করে। পরে সেখানে একটা দুটা রোম্যান্টিক,স্যুররিয়াল এবং বিপ্লবাত্নক কবিতা লেখা হয়। তারা(সামনের পাতার কবিতারা) ঘ্রান নিয়ে বুঝতে পারে শেষ পাতায় বন্দী হয়েছে মধ্যরাতে উড়ে এসে বসা একটা ক্লান্ত বিরক্ত গল্প, জায়গার চূড়ান্ত অভাবে যার লম্বা লেজ গুটিয়ে রাখতে হচ্ছে এবং যার ভেতর কোন নিসঙ্গ লেখকের দীঘ্শ্বাস,যা সে কৌশলে গল্প আকারে লিখে লিখে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর এইসব নিয়ে নিরূপায় হয়ে কয়েক দিন কাটায় গল্পটা । চার দিন পরে অনেকগুলো সম্ভাবনা স্রিষ্টি হয়।

প্রথমটা হল গল্পটা নামকরা পত্রিকার সাহিত্য পাতায় স্থান পাবার সম্ভাবনা। তবে এক্ষেত্রে মেদহীন গল্পটার লেজ একেবারে ছেটে ফেলতে হবে। অন্যদিকে সে আগের মতো উড়বার ক্ষমতাও ফিরে পাবে। ভোরে দুপুরে বিকালে সকালে রাতে এখানে ওখানে আজগুবি সব জায়গায়,দামী হোটেলের লাউন্জে,ট্রেনে,বাসে,লিভিং রুম এবং ছায়াময় বারান্দায় তাকে ঘুরে ফিরে আলো ঘ্রান আর তথাকথিত কয়েকটাএবং অপ্রচলিত দুয়েকটা অনুভূতি ছড়াতে হবে। আর ২য়টা হল ,সস্তা দরে সের হিসাবে আরো সব আজেবাজে,মূল্যবান,লেখা আঁকা,না লেখা না আঁকা কাগজের সাথে বিক্রি হয়ে যাবার সম্ভাবনা।

এটাতে গল্পটা নিজের অকালম্রিত্যুর সম্ভাবনা দেখতে পেল। যাই সে দেখতে পাক,লম্বা লেজ নিয়ে শেষমেশ তাকে উঠে বসতে হল দাড়িপাল্লায়। কিন্তু নিজের এই সস্তা বিকিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারল না সে। সে মন ভার করল ভীষনভাবে । এতে তাকে নিয়ে ঝুলে থাকা পাল্লাটি অদ্ভূতভাবে নিচে নেমে গেল,অথচ সেখানে একটা মাত্র খাতা রাখা হয়েছিল।

ফেরিওলা আশ্চর্য সু্ন্দর মলাটের এই খাতা খুলে দেখল মাত্র কয়েক পাতায় কিছু লেখা হয়েছে। বাকি সব পাতা খালি। যেহেতু সামনে খাতার বিক্রেতা ছিল না,(হয়তো সে আরো কিছু কাগজ আনতে গিয়েছিল) তাই ফেরিওলা তার তের বছরের মেয়ে জরিমুন নেসাকে দেয়ার জন্য খাতাটি শার্টের নিচে রেখে দেয়। পরে ভালমানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে কাগজ কেনা এবং দিনের অন্যান্য কাজ করে। সন্ধায় জরিমুন নেসা খাতাটি পায়।

সাথে একটা ম্যাটাডোর কলম এবং কমলা রং এর রাবার (কলমের সাথে রাবারের প্রয়োজন নেই এটা ফেরিওলা জানত না) । সারাদিন স্কুল ও ঘরের কাজকর্ম করে জরিমুন নেসা ক্লান্ত থাকে। তবু নতুন খাতা ও কলম পেয়ে সে বাংলা,সমাজ ও ধর্ম হোমওয়াক করতে বসে। তখন গল্পটা তার চোখে পড়ে। কৌতুহলবশত গল্পটা সে প্রথমবার পড়ে।

এর পরপরই ২য় বার পড়ে মুগ্ধ হয়ে। জরিমুন নেসার মাথা খুব ভাল নয় পড়াশুনায়। একবার পড়লে তার মনে থাকে না। তাই প্রায় সন্ধ্যায়ই সে একা একা বসে সে মনোযোগ দিয়ে গল্পটা পড়ে। এর লম্বা লেজ তাকে কখোনো বিরক্ত করে না।

এটি পরিনত হয় তার নিসঙ্গ কৈশোরের ব্যক্তিগত কোম্প্যানিতে। জরিমুন নেসা বড় হতে থাকে, লম্বায় ছাড়িয়ে যায় তার মা, দেয়ালের একটা দাগ এবং স্কুলের বারান্দার রেলিঙকেও। আর সেই লম্বা লেজওয়ালা গল্পটা পাকাপাকি স্থান পায় জরিমুন নেসার হ্দয়ে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.