আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৯৬ থেকে ২০০১ বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ!



ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) নির্বাহী কমিটি ও কাউন্সিলের নবনির্বাচিত কর্মকর্তা এবং বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতারা গত ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তারিখে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাথে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে, তাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষনে তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু বেশী বেশীই বলে থাকেন। কম বলার অভ্যাস তাঁর ধাতে নেই। তবে বেকায়দায় পড়লে আবার অস্বীকারও করে বসেন! যেমন গত নির্বাচনে ১০ টাকা সের চাউল খাওয়ানোর ওয়াদা বিস্ময়কারভাবে অস্বীকার করে বসেন। সেদিন সংসদে দাড়িয়ে বললেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষকে ৮০/৯০ টাকা সের চাউল খাওয়াতো! গণকবাবাজিরা তাঁর কাছে দীক্ষা নিতে পারেন! নিজের মুরোদ নেই ১০ টাকার চাউল খাওয়ানোর অন্যের গায়ে কাঁদা মাখানোর উস্তাদ! ফেব্রুয়ারীর ৮ তারিখে ইমাম সম্মেলনে তিনি বললেন, শিক্ষিত আলেমরা ফতোয়া দিতে পারবে! আর মহামান্য হাইকোর্ট আগেই রায় দিয়ে সকলের জন্য ফতোয়া দেয়া হারাম করে দিয়েছে! জনগণ কাকে মানবে প্রধানমন্ত্রীকে নাকি হাইকোর্টকে? প্রধানমন্ত্রী কি হায়কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পাল্টা রায় দেয়ার অধিকার রাখেন? অবশ্য প্রধানমন্ত্রী তো আর মাহমুদুর রহমান নয় যে 'বেয়াদবী'র জন্য হাইকোর্ট তাকে জেলে পুরে দিবে! শক্তের ভক্ত নরমের যম কাকে বলে? ১৯৯৬-২০০১ সাল যদি হয় স্বর্ণযুগ তাহলে চরম দুঃশাসনের যুগ কোনটি? অবশ্য এক অর্থে এ যুগকে স্বর্ণ বা 'সোনা'র যুগ বলা যায়। ডেইলী স্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম ''শেখ হাসিনার দুঃশাসন'' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, 'জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-১৯৯৮ এ তিন বছরে ২০০ জনের বেশী ছাত্রীকে বলাৎকার করা হয়েছে এবং ৩০০ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে।

' দেশবাসীর হয়তো মনে আছে, ছাত্র লীগের সোনার ছেলে মানিক একাই করেছিল 'সোনাময়' সেন্সুরী। উক্ত গ্রন্থে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, 'কিছু সংখ্যক ছাত্রীকে বহুবার ধর্ষণ করা হয়েছে, কিছু সংখ্যক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে এবং অন্যদের উপর বলাৎকার করার পর তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাস হতে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ২১ মাসে ১৭৪৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৯৮ সালের জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৪০৮৯টি খুন, ২৩১০টি ধর্ষণ, ২৪৮৪টি রাহাজানি এবং ১৩৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৭ সালের ধর্ষিতদের মধ্যে ৩৯১ জন ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকা।

খোদ পুলিশের দ্বারা ৬ বছরের তানিয়া ধর্ষিত হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে! প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া তার ''ধর্ষিতা বাংলাদেশ'' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ১৯৯৭ সালের ফেব্রয়ারীতে ১১১টি ধর্ষণের অভিযোগ থানায় নথিভূক্ত করা হয়েছিল। পরের মাসে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৬৫টি। ' এই হলো কথিত স্বর্ণযুগের সোনালী আমল-নামা। প্রকৃতপক্ষে সে সময়ের কালো অধ্যায়গুলোই স্বাক্ষ্য দেয় সময়টি ছিল সোনার ছেলেদের 'সোনা' ব্যবহারের সুবর্ণ যুগ! মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম ''শেখ হাসিনার দুঃশাসন'' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, '১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংসদের বেশি আসন লাভ করার ফলে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টি ও জাসদ (রব) এর সমর্থন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। আর এর মাধ্যমে ভয়াল সন্ত্রাস, দুঃশাসন, অপশাসন, আর দুর্ভাগ্যের এক দুঃখজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়।

হত্যা, সন্ত্রাস, সহিংসতা, নৃশংসতা, অরাজকতা, দুনর্ীতি, লুটপাট, নারী লাঞ্ছনা, জাতি ধ্বংস, অর্থনীতি ধ্বংস, আইনের শাসন হরণ ইত্যাদি সহ দীর্ঘ পাঁচ বছর এই দুঃশাসন অব্যাহত থাকে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে চারদলীয় জোট সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে দেশ আওয়ামী দুর্ভাগ্য ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি পায়। ' এই হলো কথিত স্বর্ণযুগের মোটামুটি চিত্র। ফেনীর হাজারী, লক্ষীপুরের তাহের, ঢাকার ইকবাল-মহসিন এবং সারা দেশে ছাত্র লীগের সোনার ছেলেদের নৃশংস বর্বরতার কথা ভেবে আজো মানুষ আৎকে উঠে। হাজারী-তাহেররা ছিল স্বর্নযুগের এক এক জন বড় বুজুর্গ! তাদের ভয়ংকর বিভিষিকাময় অত্যাচারে প্রেতপূরীতে পরিণত হয়েছিল তাদের এলাকা।

১৯৯৬-২০০১ সালকে বরং দুর্নীতি এবং দলীয়করণের স্বর্ণযুগ বলা যায় । প্রধানমন্ত্রীর দাবিকৃত স্বর্ণযুগের দুনর্ীতির চিত্র এতই ব্যাপক ও ভংয়কর যে এরশাদ আমলের দুর্নীতির ব্যাপ্তিকেও ম্লান করে দেয়। দুনীতির মাধ্যমে তারা ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজার তথা শেয়ার বাজারে ডেকে এনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। যার কষাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে ছিল হাজার হাজার পরিবার। শত শত যুবক হয়েছিল সর্বস্বান্ত, দিশেহারা।

২১ বছরের জঞ্জাল দূর করার নামে দেশকে আরো জঞ্জালময় করে তুলে ছিল আওয়ামী বাকশালীরা। নির্লজ্জ দলীয়করণ এবং নামকরণ থেকে পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত বাদ যায় নি। কথিত স্বর্ণযুগে আলেম-উলামা তথা ইসলামপন্থীদের উপর নেমে এসেছিল খরগহস্ত। এমনকি বিশ্ববরেণ্য আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবসহ অনেক হক্কানী আলেমের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় বিনা কারণে ১০ জন মাদ্রাসা ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয় যাদের মধ্যে অনেকে ছিল কোরানে হাফেজ।

আলেম-উলামাদের জন্য সে সময়টি ছিল সাক্ষাৎ জাহান্নাম। ১৯৯৬-২০০১ সালে বিভিন্ন স্থানে দুরাত্মারা ন্যাক্কারজনক ও নগ্নভাবে পবিত্র কোরানের অবমাননা করে ছিল। আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন সে যুগটি ছিল বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ! মুনতাসীর মামুনদের জন্য ভালই হয়েছে। গবেষণা করে আর স্বর্ণযুগ আবিষ্কার করতে হবে না। ইতিহাসের পাতায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য quote করলেই চলবে!



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.