আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বলতে পারিনা মা-তবু আজ শুধু একটু বলি

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই..পাই যদিবা.ক্ষণেক্ষণে হারাই
আজকে একটা দুর্ঘটনা ঘটল,মনটা অসম্ভব রকম খারাপ,চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে! দিন দিন কি যেন হয়ে যাচ্ছি আমি! আমার কাছে মৃত্যু ব্যাপারটা খুব স্পষ্ট না,কিন্তু বাঁচতে কেন হবে তাও যে স্পষ্ট না। আমি তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ না,কোথাও কোন কন্ট্রিবিউশন নাই,আমার জন্য পৃথিবীতে খুব যে মানুষজন খুশি হয়েছে,মানুষজনের কাজে এসেছি খুব তাও না। আমি না থাকলে কোথায় কোন শুণ্যস্হান ও হবে বলে মনে হয়না,আর কোন শুণ্যস্হানই তো সময় শুণ্য রাখেনা। নিজের কোন উপযোগিতা খুঁজে বেড়াই,খুব একটা কোন প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারিনা। বাসায় আসলাম,ঝিম মেরে বসে ছিলাম,আম্মু কে দেখে হঠাৎ খুব কান্না আসল,আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল -কি হয়েছে?কাঁদ কেন? আমি তাঁকে আমার কথা গুলো বললাম,অনেক দিন পর মা কে কিছু কথা বললাম।

বুঝতে পারছিলাম তাঁর খুব কষ্ট লাগছিল,কিন্তু তাঁর কষ্ট লাগবে-এই ভয়ে আমার জমে থাকা কথা গুলো যে দিন দিন বাড়ছেই,আর এই বেড়ে যাওয়া কষ্ট গুলো আমাদের যে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে দিনদিন। এটাও যে আমার সহ্য হয়না। ছোটবেলায় কত সহজে মাকে সব বলতাম, ছোটবেলায় আমার প্রায়ই জিনিস চুরি হত,কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে থাকতেও, এই দিন এটা নেই,সেদিন ওটা নাই,আর আমিও ছিলাম বেশ ভুলোমনা। হারিয়ে ফেলতাম প্রায়প্রায়ই। আমার পৃথিবীর মত দেখতে সার্পনার টা যেদিন হারিয়ে গেল-কি মন খারাপ আমার! আজ অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি হারিয়ে গেছে।

অনেক বেশি মাত্রায়ই মন টা খারাপ। আর দিন দিন সবকিছু নিয়ে বেড়ে ওঠা জন্জাল গুলোতো আছেই। অকারণে কারণ খোঁজার একটা নতুন ব্যামো তৈরি হয়েছে যেন! তারপর মা র ও মন খারাপ হয়ে গেল,আমরা মায়ে-মেয়েতে কিছুক্ষণ চেপে ধরে কাঁদলাম! হুম,অনেক দিন পর। এভাবে কাঁদলাম মন খুলে মার কাছে। বড় হয়ে যাওয়ার বাবা মার কাছে আবদার করা,সমস্ত খুটিনাটি গল্প করা ব্যাপারগুলো কিভাবে জানি কমে যায়।

ভালবাসাটা ঠিক আগের মতই থাকে,কিন্তু প্রকাশটা দুপক্ষ থেকেই খুব অন্যরকম হয়। আমি মায়ের বুকটাতে মুখ চেপে ছিলাম,আমি চুপ করেছিলাম,বুঝতে পারছি,আমি আর মা থেকে থেকে কেঁপে উঠছি। মনে হচ্ছিল কান্নার এক সমুদ্রে দুজনদুজনকে চেপে শুধু বেঁচে আছি। কান্নার পানিতে পুরাই মাখামাখি! আমি কেঁদেই যাচ্ছি,কতদিন এভাবে যে কাঁদি নাই,কেঁদেও যেন শান্তি লাগছিল খুব! আর চুপ করে জীবনের স্লাইড শোর মত একের পর এক স্মৃতি আসছিন যেন সামনে, ছোটবেলায় আমি আর সব বাচ্চাদের মতই একটু বেয়ারা ছিলাম। উচ্ছন্নে যাওয়া না,কিন্তু হালকাপাতলা লক্ষীগোছের দুষ্ট ছিলাম।

তবে স্কুলে যাওয়ার সময় আমার খুবই বাড়াবাড়ি শুরু হত-চুল বাঁধা নিয়ে। নাহ,এভাবে হয়নাই,ঐভাবে কর-এত জ্বালাতাম!!উফ! পছন্দ না হলে,চুল খুলে ফেলতাম। আবার যখন ভাত খাওয়ার সময়-মার কথাগুলো................ আরেকটু খাও মা, আরেকটু, এই যে শেষ!! আর আমার বিছানার চাদরের তলে লুকিয়ে যাওয়া,আর আম্মুর জোরাজুরি! এত জ্বালাময়ী ছিলাম আমি!!ভাবলে নিজেরই কেমন রাগ লাগে। আম্মুর সাথে কিছু হলেই আমি আম্মুকে চিঠি লিখতাম,কেন জানি মুখে বলতে পারতামনা। বিছানার পাশে বালিশের নিচে চিঠিটা রেখে আসতাম,পরে আম্মু নরমাল হলে বুঝতাম,আম্মুর রাগ ভেঙেছে।

আমি যখন ছোট ছিলাম,আম্মু আমার পা দুটা এভাবে গালের মধ্যে নাকি ধরে রাখত,হাত ছুঁয়ে থাকা,জড়িয়ে ঘুমায়ে থাকত। এত আদর লাগে আমার মা-সন্তানের সম্পর্কটা। কেমন যেন আদর মাখা! আগে যখন রাস্তা দিয়ে আসার সময়,ছোটবাচ্চাগুলোকে দেখতাম স্কুল থেকে ফেরার পথে মায়ের হাতের মাঝে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে,খুব মনে পড়ে ছোটবেলাটা!আমি স্কুলে যাওয়ার সময় আধো ঘুম ঘুম চোখে প্রায় ঘুমিয়েই থাকতাম,আর আম্মু আমার সামনে হাতদিয়ে ধরে থাকত রিক্সাটার হুডে,আমি সেই হাতেই ঘুমিয়ে থাকতাম। আর ফেরার সময়?? কত সব রাজ্যের কথা আমার!সারাদিনের ফিরিস্তি না বলে যেন শান্তি হতনা আমার। কতশত কথা যেন জমা হত,আর হরবর করে সব বলে দিতে থাকতাম।

আর পরীক্ষার সময়,মা'র আয়তুল কুরসি দোয়া না পড়ে দিলে আমার মনে হত-আমি শেষ!সবদিন এসব ছিল রুটিনবাঁধা,পরে যখন হলে গেলাম,ফোন করে পরীক্ষার আগে দোয়া শুনতাম,আম্মুকে বলতাম ফুঁ দিতে,তারপর আমি নিজে নিজেকে ফুঁ দিতাম! আর পরীক্ষার আগের রাতের জড়াজড়ি করে ঘুমানো??বারবার ঘুম ভেঙে উঠা? সবকিছুতে যেন মায়ের বুকেই সব আশ্রয়,ঐদিন আম্মুর সাথে ঘুমাতে আমার হবেই-নাহলে যে পরীক্ষা খারাপ হবে!কত শত আহলাদি আবদার,কত শত কথা!! আর এখন কতরকমের মন খারাপ জমা হয়,কিছুই কেন যেন বলতে পারিনা। মাঝেমধ্যে মনে হয় শুনলে তুমি রাগ করবা,আবার অধিকাংশ সময় ই মনে হয় কি দরকার তোমাকে বলে মন খারাপ করে দেয়ার!আমি কি বড় হয়ে গিয়েছি মা?আমি যে তোমার কাছে কখনই বড় হতে চাইনা। কেন বয়স মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কটাকে সেরকম সহজ থাকতে দেয়না?নাকি সমস্যাটা আমাদেরই? কি জানি,শুধু জানি,মা তোমার কাছে আমি এখনও সেরকম ছোট হয়েই থাকতে চাই,জড়াজড়ি করে কাঁদতে চাই,আর তোমার মুখের একটুকরা হাসির কারণ হতে চাই,তোমার ভেতরে লালন করা প্রাণটা যত বড়ই হোক না কেন,যদি এখনও বলতে পারিনা খুব সহজে,আমাকে ক্ষমা করো মা। কিন্তু জানো মা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি,আমার বেঁচে থাকার কারণটা কি তবে তুমি??তোমরা? হুম,আমি তোমার জন্যই বাঁচব,তোমাদের জন্যই বাঁচব,কারণ আমি যদি নিজের কষ্টের কথাই শুধু ভাবি,আর জীবন-মৃত্যু নিয়ে ভাবতে থাকি,সেটা তো শুধু অকৃতজ্ঞতা নয় মা,এ যে বিশ্বাসঘাতকতা!আমি চাইনা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে মা!! তুমি শুধু থেক আমার পাশে??হুম?? ভালবাসি মা!!
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.