আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭২তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই
বাংলা সাহিত্যের অমর স্রস্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক , ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক সঙ্গীত রচয়িতা, সুরস্রস্টা, গায়ক, অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। তিনি তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি প্রথম এশীয় হিসাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তার সারা জীবনের কর্মে সমৃদ্ধ হয়েছে।

বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি বিশ্বকবি, কবিগুরু ও গুরুদেব নামে পরিচিত। তিনি বিশ্বের একমাত্র কবি যিনি দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত জন গণ মন উভয়টির রচয়িতাই রবীন্দ্রনাথ। বলা যায় তাঁর হাতে বাঙ্গালীর ভাষা ও সাহিত্য,শিল্পকলা ও শিল্প চেতনা নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে। তিনি যে পরিবারে জন্মেছিলেন সেই ঠাকুর পরিবার ছিল বাংলার নবজাগরণের পীঠস্থান।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালে জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ (৭ই আগস্ট, ১৯৪১ ইং) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। আজ ৭২তম মৃত্যুদিনে কবিগুরুকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। কবিগুরু ররীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫শে বৈশাখ (৭ মে ১৮৬১ ইং) জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা দেবীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ১৩তম।

জন্মের সময় তার ডাক নাম রাখা হয় রবি। তাঁর বয়স যখন তেরো তখন তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘অমৃত বাজার’ পত্রিকায়। মূলত: কবি হলেও তিনি বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ধারা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদিকে আলোকিত করেছেন,সর্বোপরি তাঁর সংগীতের চিরন্তন আবেদন বাঙালীর হৃদয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত। কলকাতার পিরালী ব্রাহ্মণ সমাজের অন্তর্গত রবীন্দ্রনাথ তার জীবনের প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে। ১৮৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম ছোট গল্প এবং নাটক লিখেন।

এর আগেই প্রথম প্রতিষ্ঠিত কাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন যা ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। পারিবারিক শিক্ষা, শিলাইদহের জীবন এবং প্রচুর ভ্রমণ তাকে প্রথাবিরুদ্ধ এবং প্রয়োগবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তিনি ব্রিটিশ রাজের প্রবল বিরোধিতা করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তার পুরো পরিবারের পতন এবং বাংলার বিভক্তিরেখার নিদর্শন তাকে দেখতে হয়েছিল। এদিক থেকে তার জীবনকে দুঃখী বলতেই হয়।

কিন্তু তার কবিতা, অন্যান্য সাহিত্য আর বিশ্বভারতী প্রতিণ্ঠা তার জীবনকে যে মহিমা দান করেছে তা আজীবন হয়তোবা টিকে থাকবে। (১৮৮৩ সালে সস্ত্রীক রবীন্দ্রনাথ) রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাহিত্য হচ্ছে তার কবিতা এবং গান। অবশ্য উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, ভ্রমণ কাহিনী এবং নাটক রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কবিতা ও গান বাদ দিলে তার সবচেয়ে প্রভাবশালী রচনা হচ্ছে ছোটগল্প। তাকে বাংলা ভাষায় ছোটগল্প রচনাধারার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তার সাহিত্যকর্মের ছান্দসিক, আশাবাদী এবং গীতিধর্মী রূপ সহজেই সকলকে আকৃষ্ট করে। সাধারণ বাঙালিদের জীবনই ছিল তার প্রধান উপজীব্য। তার উল্লেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থ হলোঃ কাব্য- বনফুল(১২৮৬), (১২৯১), মানসী (১২৯৭), সোনার তৈরি(১৮৯৪) , চিত্রা (১৮৯৬), কল্পনা(১৩০৭), ক্ষণিকা (১৩০৭) , খেয়া (১৩১৩), গীতাঞ্জলি (১৯১০) , গীতিমালা (১৩১৮), গীতালি(১৩২১), সেজুতি (১৩৪৫), বনবানী (১৩৩৮), বলাকা (১৯১৫) পূরর্বী (১৩৩২), পুনশ্চ (১৩৩৯), সানাই পত্রপুট,জন্মদিনে (১৩৪৮), শেষ লেখা, ছোট গল্প-গল্প গুচ্ছ, গল্প সল্প , তিনসঙ্গী। নাটক-ডাকঘর (১৯১২) ,অচলায়তন(১৯১১), মুক্ত, ধারা রাজা (১৩১৭), চিরকুমার সভা , তাসের দেশ (১৯৩৩), রক্ত কবরী(১৯২৪), চোখের বালি (১৩০৯), যোগাযোগ(১৯৩৬), গোরা (১৩১৬), ঘরে বাইরে (১৩১৬ ইং) শেষের কবিতা (১৯৩৬), । প্রবন্ধ সাহিত্য- কালান্তর (১৩৩৯), সভ্যতার সংকট (১৯৪১), ভ্রমণ কাহিনী- রাশিয়ার চিঠি(১৯১৯), জাপান যাত্রী(১৯৩১), জীবন কথা - আমার ছেলেবেলা, জীবন স্মৃতি(১৯১৯), জন গন মন ‘ গানটির ভারতের , এবং 'আমার সোনার বাংলা' গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

সমাজসেবী, মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক মহান দার্শনিক ও চিত্রশিল্পীও বটে। তাঁর প্রতিভা বিশ্বময় স্বীকৃত। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয় রবীন্দ্রনাথকে। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, দর্শনকে পরিচিতি এবং খ্যাতির আসনে বসান তিনি। রবী ঠাকুরের ভ্রমণের নেশা ছিল প্রখর।

একজন বিশ্ব পর্যটক হিসেবে তাঁর খ্যাতি আজো অম্লান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সনের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশী দেশ ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে অনেকগুলো সফরেরই উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষের বাইরে এবং অবাঙালি পাঠক এবং শ্রোতাদেরকে তার সাহিত্যকর্মের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়া এবং তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করা। যেমন ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময় তিনি তার এক তাক বইয় নিয়ে যান এবং এই বইগুলো বিভিন্ন মিশনারি ব্যক্তিত্ব, গ্রান্ধী প্রতিজি চার্লস এফ অ্যান্ড্রুজ, অ্যাংলো-আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েট্‌স, এজরা পাউন্ড রবার্ট ব্রিজেস, আর্নস্ট রাইস প্রমুথ অনেককেই মুগ্ধ করেছিল। এমনকি ইয়েট্‌স গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকা লিখেছিলেন এবং অ্যান্ড্রুজ শান্তিনিকেতনে এসে তার সাথে যোগ দেন।

১৯১২ সালের ১০ নভেম্বর ঠাকুর যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ভ্রমণে যান। যুক্তরাজ্যে তিনি অ্যান্ড্রুজের চাকুরিজীবী বন্ধুদের সাথে বাটারটন এবং স্ট্যাফোর্ডশায়ারে অবস্থান করেছিলেন। ১৯১৬ সালের মে ৩ থেকে ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিনি জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রে বক্তৃতা করেন। এইসব বক্তৃতায় তিনি জাতীয়তাবাদ- বিশেষত জাপানী এবং মার্কিন জাতীয়তাবাদের নিন্দা করেন। তিনি "ভারতে জাতীয়তাবাদ" নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন যাতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতি বিদ্রুপ এবং এর প্রশংসা উভয়টিই ছিল।

বিশ্বজনীন শান্তিবাদে বিশ্বাসীরা অবশ্য এর প্রশংসাই করে থাকেন যেমন করেছেন রোমাঁ রোঁলা। সেখান থেকে ভারতে ফিরে আসার পরপরই ৬৩ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ পেরুভিয়ান সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশে যান এবং একই সাথে মেক্সিকো যাওয়ার সুযোগটিও গ্রহণ করেন। তার সফরের সম্মানে উভয় দেশের সরকারই শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী শিক্ষাঙ্গণের জন্য ১০০,০০০ মার্কিন ডলার অনুদান দেয়। শান্তিনিকেতনের মহান স্রষ্টা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। আজ ৭২তম মৃত্যুদিনে কবিগুরুকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.