আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা, তুমি কি হতে চাও??

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

যুগ যুগ ধরে চলে আসা অতীতকে আমরা সাধারণত ভুলতে পারি না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা তা নিজেদের মধ্যে লালন করে থাকি। আর তাতেই আমরা মনে করি প্রকৃত সুখ। আর যারা সেই সুখের সন্ধান পান তারাই হন সমাজে সম্মানিত। এভাবে করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আগে যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলে সবাই খুব গর্ব বোধ করতেন। নিজেকে তারা অন্যদের থেকে আলাদা চোখে দেখতেন। এমন কি সমাজে তাদের আলাদা একটা সম্মান ছিল। এমন কি বিয়ের ক্ষেত্রে অন্যসব পেশা থেকে ডাক্তার আর ইঙ্গিনিয়ারদের কদর ছিল অনেক অনেক বেশি। বাবা মা রা তাদের সন্তানকে ডাক্তার বানাবেন না ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন সে নিয়ে চলতো আলাপ।

এমনও দেখা যেত বাবা চাচ্ছেন একটা কিন্তু মা চাচ্ছেন তার সন্তান হোক আর একটা। মতের মিল না হওয়াতে শুরু হত ২ জনের মধ্যে ঝগড়া। আগে ছোট বাচ্চাদের এভাবে করেই বেড়ে উঠানো হত। এর ফলে বাহিরের কেউ জিজ্ঞেস করলে তারা কোন কথা চেপে না রেখে বলে দিত আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। সময় কিছুটা হয়ত বদলে গিয়েছে।

এখন পেশা হিসেবে আরো অনেক কিছু এসে গিয়েছে। এরকমই একটা পেশা নিয়ে আজকে কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। রেডিও জকি সংক্ষেপে একে বলা হয় আরজ়ে। গত ৩/৪ বছর ধরে বেসরকারি ভাবে শুরু হওয়া রেডিও চ্যানেল গুলো তাদের কার্য্ক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে দেশে ৪ টি এফ এম রেডিও চ্যানেল চালু আছে।

বিপুল সংখ্যক শ্রোতা এইসব রেডিও চ্যানেল গুলোর। কিছু কিছু আরজে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে শ্রোতা মহলে। তারা শুধু সবার অগচরে আরজে এর কাজ করে এমন নয় এরা মোটামোটি সবার কাছে পরিচিত টি ভি মিডিয়ার কল্যাণে। বলাই বাহুল্য যে রেডিও এর বেশির ভাগ শ্রোতারাই কম বয়শী। ক্লাস ৬ এ পড়ে এমন শোতার সংখ্যাও কম নয় দেশে।

তাদের ও একদিন আরজে হতে হবে এরকম মনের মধ্যে ইচ্ছা আছে। তাদের কে জিজ্ঞেশ করলে তারা বলে যে আমি আরজে হতে চাই। আরজে রা এখন এত বেশি জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছেন যাতে করে তাদের কথা, স্টাইল, চলন বলন, আচার ব্যবহার সব কিছু শ্রোতারা অনুকরণ, অনুসরণ করতে চায়। কারণ আগেই বলেছি ক্লাস ৬ এর একটা বাচ্চা ছেলে বা মেয়েও এখন রেডিও শুনছে। এর ফলে তাদের অবচেতন মনে অনেক আশার সঞ্চার হচ্ছে।

তারা তাদের প্রিয় আরজেদের নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার আরজে দের নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্নে বিভোর থাকেন। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। রেডিওগুলোর অধিকাংশ শ্রোতাই মেয়ে। ছেলেরা আছে কিন্তু মেয়েদের তুলনায় তা বেশ নগন্য।

এমনও অনেক রেডিও চ্যানেল আছে যেখানে ১০ টা মেয়ে এস এম এস দিলে তার বদলে ৩/৪ টা এস এম এস আসে ছেলেদের। সবকিছু যেখানে ভাল আবার সেখানে কিছু না কিছু খারাপ তো থাকবেই। প্রথম প্রথম আরজে দের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা বাংলিশ কথা বলায় অভস্থ। পুরোপুরি বাংলা অথবা পুরোপুরি ইংরেজী তাদের থেকে শোনা যায় না। আবার তাদের ন্যাকা ন্যাকা কথা অনেকের ভাল লাগে না।

এরকম কিছু কিছু আরজে আছেন যারা অতিমাত্রায় ন্যাকা টাইপ এর। আবার অনেক আরজে আছেন বেশ আতেল টাইপের। অতিমাত্রায় আতলামি, হাবলামী, ছাগলামী করে গেলেও এ যুগের ছেলেপেলেরা তাতে কিছুই মনে করে না। তাই আরজে গুলোও পার পেয়ে যায়। বেশির ভাগ মেয়ে শ্রোতাদেরই একটা কমন প্রব্লেম হল তারা ফোন করলেই ন্যাকামী করে।

যা খুবই বিরক্তিকর। তাদের আবদার শুনলে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। কেউ কেউ আছে যারা ফোন করে বাথরুম থেকে। আবার কেউ আছে লেপের তলায় মুড়ি দিয়ে। আবার কেউ আছে আরজে গুলোর ডাক শোনার জন্য ফোন করে।

আর খুব কমন এক সমস্যা শ্রোতারা বলে সেটা হল প্রেম ভালবাসা নিয়া। দুনিয়াতে মনে হয় এ ছাড়া আর কোন বিষয় নাই। আরজে গুলোর ও একটা আলাদা শক্তি আছে হয়ত শ্রোতাদের ধরে রাখার। না হলে রাত ২ টারর পরেও অনেক শ্রোতা পাওয়া যাবে যারা রেডিও শুনছে আর এস এম এস করছে। কিছুদিন হল এক রেডিও চ্যানেল তাদের একটা অনুষ্ঠান শুরু করেছে যা শুরু হয় রাত ২ টায় আর শেষ হয় ভোর ৫ টায়।

আমি ভেবে পাই না রাত ৩ টার পর কারা এই সব অনুষ্ঠান শোনে? আর এ সময় যারা শুনেন তারা নিশ্চয় চাকরিজীবি কেউ থাকেন না। তাহলে যারা শোনেন তারা ছাত্র / ছাত্রী। এত রাত অবধি তাদের এভাবে জেগে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। ডিজুস যখন প্রথম আসে এ দেশে তখন সবাই রাত জাগতো কথা বলে বলে আর এখন পোলাপাইন রাত জাগে রেডিও শুনে শুনে। বাহ!! ভালই চলছে।

তারপর ও রেডিও যুগের যে গন জোয়ার শুরু হয়েছে তা সত্যি অন্যরকম এক ব্যাপার। কারণ এই ১০ বছর আগেও রেডিও বলতে যা ছিল তাতে শোনার মত লোক খুব কম পাওয়া যেত। বয়স্ক লোকজন শুধু খবর আর বাংলা ছবি এর গান গুলো শুনে রেডিও বন্ধ করে দিত। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। তাই রেডিও চ্যানেল গুলোর উচিত প্রেম ভালবাসা টাইপ কথামালা কম শুনিয়ে বেশি বেশি শিক্ষনীয় কিছু প্রচার করলে শ্রোতারা তা শুনবে এবং তা মেনে চলবে।

আর আতলামী, ন্যাকামী না করে ন্যাচারালী আচরণ করাটাই ভাল হবে। কারণ আরজেরাই এখন তরুন / তরুনীদের মাঝে ক্রেজ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.