আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা কেন মামা? ( স্বামী কেন আসামী, বাবা কেন চাকর ইত্যাদি বাংলাছবির প্রশ্নবোধক নামের অনুপ্রেরনায় লেখা একটি গল্প)

আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo ১. একসময় প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় আমার বাসার ছাদের টাংকির উপর একটা জমজমাট আড্ডার আসর বসত। আমার ইউনিভার্সিটির কিছু বন্ধু এবং এলাকার কিছু ছোট ভাই ছিল সেই আড্ডার মুল সদস্য। আমি ঘোষনা করেছিলাম আমাদের এই আড্ডাটি একুশোর্ধ সকল তরুনের জন্য উন্মুক্ত। একুশ বয়স বছর যার, আড্ডায় যাবার তার শ্রেষ্ট সময়- এটা ছিল আমাদের স্লোগান।

তাই আমাদের সেই আড্ডাতে সিনিয়র জুনিয়র মধ্যে কোন ক্যাচাল ছিল না। আমাদের সান্ধ্যকালীন সেই আড্ডার অন্যতম মূল আকর্ষন ছিল আম্মার হাতের বানানো চা-মুড়ি এবং কিছু বিশেষ 'সাহিত্যচর্চা' যা কিনা কেবল এলাকার সুন্দরী তরুনী কেন্দ্রিক। ফরিদ ছিল আমাদের এই ধরনের সাহিত্য চর্চার অন্যতম প্রান পুরুষ। প্রেম না করেও যে কেউ ছ্যাঁকা খেতে পারে, এটা আমরা তাকে দেখেই জেনেছিলাম। সর্ম্পকে সে আমার ইউনির্ভাসিটির ছোট ভাই।

একবার পাশের বাড়ির জলিল চাচার ভাতিজী সোমার উদ্দেশ্যে ফরিদ একটা কবিতা লিখেছিল, দেখিয়া তোমার মাথার চুল, চোখে দেখিলাম ভুল। চুল তো নয় যেন মেঘ মালা, বাড়িল বড়-ই বুকে জ্বালা। ওগো দিবে কি একটা এন্টাসিড, খাইয়া মিটাইব এই জ্বালা। আমরা সবাই ফরিদের এই ধরনের কাব্যিক প্রতিভায় মুগ্ধ। তবে আমাদের চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিল খুব সম্ভব ফরিদ নিজেই।

ফলে সেই রাতেই সোমার কাছে এই কবিতা লেখা একটি চিরকুট পৌছে গেল এবং আমাদের অবাক করে কিছুক্ষনের মধ্যে চিরকূট বাহক জবাব সমেত ফেরত আসলো। ফরিদ এই সাফল্যের আনন্দে প্রায় দশ হাত লাফিয়ে উঠল এবং তৎক্ষণাৎ চিরকূট বাহককে নগদ ২০ টাকা বখশিশ দিয়ে সবার জন্য ঠান্ডা আনতে বলল। এই বলে সে খাম খুলতে গেল। আমরাও অতিব উত্তেজনার সাথে একটি প্রেমের সুত্রপাত দেখব বলে অপেক্ষা করছি। খাম খোলা হল।

কিন্তু খাম খোলা মাত্রই দেখলাম ছাইয়ের মত কি যেন পড়ল। ভালো করে চেয়ে দেখি এটা সেই কবিতার চিরকুটের পোড়ানো অংশ। সাথে নতুন একটা চিরকুট, সেখানে লেখা, ' বাসায় এন্টাসিড নাই, তাই চেষ্টা করেও আমি আপনার এই জ্বালা থামাতে পারছি না, তাই মনে হয় জ্বলে গেল। তবে আপনি বললে আমি চাচার কাছে চাইতে পারি, চাইব?' ইতিমধ্যে চিরকূট বাহক ঠান্ডা পেপসি নিয়ে চলে আসল। সবাই বেশ উৎসাহের সাথে পেপসি খেতে শুরু করল।

ফরিদকেও খেতে দিলাম। তার পেপসি খাওয়া দেখে মনে হলো, পেপসির স্বাদ মনে হয় চিরতার রসের মত। যাই হোক, এই ভাবে আমাদের দিন কেটে যাচ্ছিল। একদিন শুনলাম ফরিদের নাকি সত্যি সত্যি প্রেম হয়েছে। কার সাথে প্রেম হলো? কে সেই মেয়ে? ফরিদ জানালো, অতি আনন্দের সংবাদ নাকি খালি মুখে শোনা অপরাধ।

আর তাই সে কোন ভাবেই এই অপরাধে অপরাধী হতে রাজি নয়। তাই আমরা দল বেঁধে খেতে গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ এখন প্রেমিকার পরিচয় জানবার পালা। ফরিদের প্রেমিকার পরিচয় শুনে মাথা ঘুরে উঠল। মেয়ে আমাদের ইউনির্ভাসিটির বিখ্যাত ছেলে নাচানো মেয়ে রাইসা।

ছেলেদের ব্যবহার করার খ্যাতি তার অনেক দিনের। অনেক ঘাঘু ছেলেও তার খপ্পরে পড়ে বেশ নাচাকুদা করেছে। তাদের তুলনায় ফরিদ অতি নস্যি। কিন্তু আমাদের নেতিবাচক মনোভাব জানতে পেরে রাইসার প্রতি তার মনোভাব আরো ইতিবাচক হয়ে গেল। ফলে রাইসা সর্ম্পকে আমরা অতি মধুর কিছু প্রসংশা শুনেতে পেলাম।

যেমন, ও এখনো ছোট, ইমম্যাচিওরড, ওর মনটা অনেক নরম ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যিকার প্রেমে অনেক বাধা আসে, কিন্তু সেটা আমাদের কাছ থেকেই আসবে বলে ফরিদের ধারনা ছিল না। আমরা কিছুটা লজ্জিত হলাম। কিন্তু হাজার শুভ কামনা থাকা স্বত্তেও ফরিদের প্রেমের ভবিষ্যৎ পরিনতি নিয়ে আমরা সত্যিকার ভাবেই শংকিত ছিলাম। এরপর অনেক দিন পার হয়ে গেল, ফরিদ আমাদের আড্ডাতে তেমন আসে না।

ফরিদ ইদানিং ব্যাস্ত থাকে রাইসার ক্লাসের এ্যাসাইনমেন্টের কাজে কিংবা রাইসার শপিং এর কাজে। আমরা সব শুনি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। হঠাৎ একদিন দেখা গেল আমাদের ফরিদ বেশ মন মরা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব কিছুতে কেমন একটা বিষন্ন ভাব। অনেকটা কিচ্ছু ভালো লাগে না, ভাঙ্গ গাড়ি টাইপের।

তার এই রকম অবস্থা দেখে তার কতিপয় অন্যান্য বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করল,'ভাই, তার কি হইসে? সেকি ছ্যাঁক খাইসে?'। একটু অনুসন্ধান করেই জানতে পারলাম আমাদের আশংকাই সঠিক বলে প্রমানিত হয়েছে। রাইসা শহরের নাম করা এক ধনীর ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সব শুনে আমি আর কি বলব, বললাম, 'ছেলে বড় হচ্ছে। ভালোমন্দ তারও খাওয়ার ইচ্ছে হয়।

তাই ছ্যাঁক ট্যাঁক নামক নানারকম অখাদ্য খেতেই পারে। লক্ষ্য রাখো বদ হজম যেন না হয়। আপাতত একটা 'ইনো' কিনো আর তাকে খাইয়ে দাও। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। ' এহেন পরামর্শে তারা কিছুটা উজ্জেবিত বোধ করলো।

বন্ধুদের এই আন্তরিকতা দেখেই হোক আর ইনোর গুনেই হোক ফরিদ আস্তে আস্তে বেশ উৎফুল্ল এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠল। আমাদের আড্ডাটি ফিরে পেল আবারো সেই জমজমাট রুপ। ২. বছর দেড়েক পরের কথা। এক বিকেলে বাসার ছাদে বসে আড্ডা মারছি। আড্ডার বিষয় 'প্রেমের কুফল'।

প্রধান বক্তা ফরিদ। আমরা বেশ জ্বালাময়ী ভাষন শুনছিলাম। হঠাৎ জামাল চাচার বাড়ি থেকে শোরগোলের শব্দ শুনতে পেলাম। দৌড়ে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখি সোমা সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে।

সবাই মিলে ধরা ধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ফরিদ খুবই কাজের ছেলে। খুব অল্প সময়ের ভিতরে হাসপাতালে একটা কেবিনের ব্যবস্থা করে ফেলল। জামাল চাচা একটু পরপর হাউমাউ করে কান্না কাটি করছেন। মা মরা মেয়ে বলে তার বেশি আবেগটা একটু বেশি।

ফরিদ উনাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষনের মধ্যে ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলেন। বললেন চিন্তার তেমন কিছু নেই। বেশি ব্লিডিং হওয়াতে একটু দূর্বল হয়ে গিয়েছে। এখন কেবিনে পাঠানো হয়েছে।

একদিন হাসপাতালে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে। জামাল চাচাকে বাসায় গেলেন চাচীকে আনতে। আমি আর ফরিদ হাসপাতালের বারান্দায় দাড়ালাম। আমার ইচ্ছে করছিল সিগারেট খেতে। ফরিদকে বললাম, চল নিচে গিয়ে চা-সিগারেট খেয়ে আসি।

ফরিদও রাজি হল। আমরা লিফটের জন্য অপেক্ষা করছি। লিফট আসলো। লিফটের ভিতরে ঢুকেই ফরিদ মনে হয় ইলেট্রিক শক খেলো। লিফটের ভিতরে রাইসা, তার স্বামী আর কোলে তাদের বাচ্চা।

রাইসা তো ফরিদকে দেখেই, ফরিদ ভাইইইইই বলে ইয়া চিৎকার দিল। আমরা যারা লিফটে ছিলাম তারা তো চমকে উঠলামই, সেই সাথে রাইসার বাচ্চাও চমকে উঠে কান্না শুরু করে দিল। রাইসা তার হাসব্যান্ড এর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল। ফরিদকে দেখিয়ে বলল, 'ঐ যে বলেছিলাম না, এক ভাইয়া আমাকে এ্যাসাইনমেন্টের কাজে অনেক হেল্প করত, এটাই সেই ভাইয়া। আল্লাহ! জানো হাসান, ফরিদ ভাইয়া আমাকে কত কবিতা শুনাত, কত প্রশংসা করত, যেন আমি ভালো রেজাল্ট করি।

উনি ছাড়া আমি একদমই অচল ছিলাম। ' এরপর রাইসা কোলের বাচ্চার দিকে চেয়ে বলল, সোনামনি দেখেছো কে এসেছে? মামা এসেছে। মামার কোলে যাবে? ফরিদ ভাই নেন আপনার ভাগিনাকে একটু কোলে নেন। ফরিদ আমার দিকে একবার চাইল আর একবার রাইসার দিকে তাকাল। রাইসা বেশ একটা হাসি হাসি মুখ করে ফরিদের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফরিদ রাইসার বাচ্চাকে কোলে নিল। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে একবার আমার দিকে তাকায় আর একবার রাইসার দিকে তাকায়। লিফট খুলে গেল। সবাই আমরা বের হলাম। রাইসা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে চলে গেল।

যাবার সময় বলে গেল, ফরিদ ভাই অবশ্যই বাসায় আসবেন। আমি আর ফরিদ হাসপাতালের সামনের চা এর দোকানে গেলাম। চুপচাপ চা খাচ্ছি। পরিস্থিতি যদিও ভয়াবহ কিন্তু কেন যেন আমার পেট ফেটে হাসি আসছে। আমাকে বাঁচিয়ে দিল ফরিদ।

মুচকি হেসে বলল, রাইসা হতে চাইলাম তোমার বাচ্চার বাবা, আর হয়ে গেলাম তোমার বাচ্চার মামা। আচ্ছা ভাই বলেন তো বাবা কেন মামা?? আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। প্রচন্ড অট্রহাসিতে ফেটে পড়লাম। আমার হাসি দেখে ফরিদও হাসতে লাগলো। বার বার কানে বাজতে লাগল ফরিদের সেই বিখ্যাত ডায়লগ, বাবা কেন মামা???? 'বাবা কেন মামা' ছবির পোষ্টার _____________________________________________ আজকে সামুতে অর্ধবছর পূর্ন হইল।

অর্ধবছর পূর্তিতে এটা আমার হাফসেঞ্চুরীর পোস্ট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.