আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যতসব নিকনেমজ ( শেষ পর্বের আগের পর্ব )



এই লেখাখানি অনেক আগে নাগরিক ব্লগের “যত্তসব নিকনেমজ” নামে একখান খুব জনপ্রিয় সিরিজের একখান অংশ। যে সিরিজের দুইখান কিস্তি এই অধমের লেখার সুযোগ হইয়াছিল। নাগরিকের আমার সব সহ ব্লগারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এইখানে পোস্ট করিলাম। “আগুন মজিদ” আমাদের পাড়ার বিখ্যাত বড়ভাই ছিলেন আব্দুল মজিদ। উনি পাড়ার সব দায়িত্ব নিজের দায়িত্ব বলিয়া মনে করিতেন।

তাই সবার বিপদে আপদে সবার আগে উনি গিয়া ঘটনাস্হলে পৌছাইতেন। পাড়ার যাবতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে লাগাইয়া খেলাধুলা সবকিছুতেই উনার অংশগ্রহন ছিল চোখে পড়িবার মত। একদিন ক্রিকেট খেলায় শ্রদ্ধেয় আম্পায়ার সাহেব ভুলক্রমে উনাকে আউট ঘোষনা করায় উনি রাগের বশবর্তি হইয়া আম্পয়ারকে হুমকি প্রদান করিয়াছিলেন এইরকম – তুই আমাকে আউট দিয়েছিস, আমাকে তুই চিনিস??জানিস আমি কে ? আমি হইলাম আগুন মজিদ। উনার এই সংলাপের পর থেকে যে উনার নাম আগুন মজিদ হওয়া যাইবে তা হয়ত উনি কল্পনাও করেননি। আমরা এখনও উনার সম্মানার্থে সাহসী কাউকে দেখিলে তাকে মজিদ বলিয়া সম্বোধন করিয়া থাকি।

“রোন্দা আহাদ” রোন্দা শব্দটার অভিধানিক অর্থ আমার জানা নাই। তবে আমাদের সিলেটি ভাষায় কাউকে শারিরিকভাবে তুলা ধুনা করার রুপক অর্থে এই শব্দটা ব্যবহার হইয়া থাকে। আমার বন্ধু আহাদ সর্বদা এই শব্দটা ব্যবহার করিত । যদিও আমি কোনদিন দেখি নাই কিংবা শুনি নাই যে আমার বন্ধু আহাদ কাহারো সাথে কোথাও মারিমারি করিত। কালের পরিক্রমায় বন্ধুমহলে একটা সময় আহাদ হওয়া গেল রোন্দা আহাদ।

“টু ফাইভ” আমাদের বন্ধুদের মাঝে যে কয়জন চেইন স্মোকার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্টিত করিয়া ছিলেন মনসুর হইল তাহাদের অন্যতম। যদিও আমি তাহাকে নিজের টাকা দিয়া কিনিয়া সিগারেট পান করিতে খুবই কম দেখিয়াছি। তবে মাঝেমাঝে সে সিগারেটের ব্যাপারে খুব দয়াশীল হওয়া উঠিত। সবাইকে বেনসনের প্যাকেট খুলিয়া সিগারেট বন্টন করিত। এতে সবাই যেমন অবাক হইত তেমনি রহস্যের গন্ধ খুঁজিয়া বেড়াইত।

অবশেষে তাহার তার রহস্য ফাঁস হইয়া গিয়াছিল। সেইটা হইল – সে বেনসনের প্যাকেটে টু ফাইভ সিগারেট ঢুকাইয়া নিয়া আসিত যাহা ১০ টাকা দিয়ে পুরা এক প্যাকেট পাওয়া যাইত। এই রহস্য উদ্ধারের পর থেকেই সে মনসুর থেকে টু ফাইভ হইয়া গেল। “ফারা মাহবুব” কলেজে সবাই তাহাকে আলাদা চিনিত। সবাই তাহার সাথে খাতির করিত চাহিত।

তাহাকে চিনিবার এবং তাহার সাথে খাতির করিবার আলাদা একটা কারন ছিল। সেইটা হইল কলেজে যে হাতে গুনা কয়েকজন নিজের চার চাকার বাহন নিজেই চালাইয়া আসিত, সে ছিল তাহাদের মধ্যে একজন । প্রথম প্রথম সবাই খাতির জমাইতে চাইলেও খাতির হইবার পর সবাই দূরে যাইবার জন্যে ব্যাস্ত হইয়া পড়িত। তাহার কারন হইল সে বাচালের মত অতিরিক্ত কথা বলিত এবং তাহার মাঝে শতকরা নিরান্নব্বই ভাগই মিথ্যা বিরাজ করিত। একটা সময় মাহবুব তার নিজের অজান্তেই কলেজের সবার কাছে ফারা মাহবুব হইয়া গেল।

“গান্জা সুমন” গান্জা শব্দ শুনিয়া হয়ত ভাবিতে শুরু করিয়াছেন যে আমার বন্ধু সুমন চিলিম আসক্ত ছিল। যাহার কারনে সবাই তাহাকে গান্জা সুমন বলিয়া ডাকিত। কিন্তু বাস্তবে এইরকম কিছু তাহার চরি্ত্রে কোনদিনও পরিলক্ষিত হয়নি। গাঞ্জাতো অনেক দূরে আমি কোনদিন তাহাকে ধুমপান করিতেও দেখি নাই। এখন ভাবিতে পারেন গাঞ্জা না টানিয়া ও কিভাবে তাহার নামের আগে গাঞ্জা শব্দটা যুক্ত হইয়া গেল !! আমাদের সিলেটে অতিরিক্ত চাপাবাজির রুপক অর্থে গাঞ্জা শব্দটা ব্যবহার হইয়া থাকে।

তাহার চাপাবাজির একটা উপমা আপনাদের সামনে তুলিয়া ধরিলাম – একবার ঈদের আগে তাহার সাথে বেশ কয়েকদিন দেখা সাক্ষাত হইতেছিল না। আমরা বন্ধুরা ভাবিলাম হয়ত কোথাও বেড়াইতে গিয়াছে। ঈদের দিন যখন তাহার সাথে দেখা হইল তখন সবাই জিজ্ঞাসা করিল কিরে এত দিন কোথায় ছিলি। সে জবাবে বলিল আর বলিস না ঈদের শপিং করিতে একটু সিঙ্গাপুর যাইতে হয়েছিল । পরে গোপন সুত্রে জানা গিয়াছিল সে তাহার ফুফুর বাড়িতে বেড়াইতে গিয়াছিল ।

এইরকম চাপাবাজি ছিল তাহার কাছে নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার । সবাই তাহার চাপাবাজি শুনিতে শুনিতে বিরক্ত হইয়া একদা সবাই তাহাকে গান্জা সুমন বলিয়া ডাকা শুরু করিল। ------------------------------------------------------------------------ (সবাইকে শেষ পর্ব পড়া দাওয়াত সাথে ঈদের শুভেচ্ছা)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.