আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনন্দের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শেষ নেই

দুর্ভোগকে সঙ্গী করে গতকালও বাড়ি ফেরার বাঁধভাঙা স্রোত নেমেছে নগরীর স্টেশন টার্মিনালে। সড়ক-মহাসড়কে যানজটের দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও হঠাৎ বর্ষণকে মাথায় নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ঈদের আনন্দে স্বজনদের সানি্নধ্য পেতে গ্রামে ছুটে গেছেন। হরতালের কর্মসূচি মাথায় নিয়ে ফিরে আসার অনিশ্চয়তার মধ্যেও নাড়ির টানে গ্রামে ফিরছে মানুষ। গতকাল ভোর থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বাস, ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনাল ছিল ঘরমুখো মানুষের কোলাহলে মুখর। অনেকে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওনা হয়েছেন। চিরচেনা যানজটের রাজধানী গতকাল অনেকটাই ছিল ফাঁকা। আজ থেকে আরও খালি হয়ে যাবে পথঘাট। রাজধানীর গাবতলী, সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে সিট না পেয়ে কেউ বাসের ছাদে, লঞ্চের ছাদে, আবার কেউ কেউ ট্রেনের ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করেছেন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে টার্মিনাল কিংবা স্টেশনের দুর্ভোগ তাদের দমাতে পারেনি।

গতকাল ভোর থেকেই ঘরমুখো মানুষ কেনাকাটা গুছিয়ে ছুটে যান বাস, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে। নির্ধারিত সময়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ না ছাড়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ঘরমুখো যাত্রীরা বলছেন, মহাসড়কে তীব্র যানজট। পথে ভোগান্তি। তবুও বাড়ি যেতে হবে। গতকাল ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও খুলনার মহাসড়কগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। বাস কোম্পানিগুলো বলছে, মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে বেশি গতিতে বাস চালানো যাচ্ছে না। এ জন্য সময় লাগছে দ্বিগুণ। কোথাও তার চেয়েও বেশি।

সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, যে গন্তব্য ৬-৭ ঘণ্টার ছিল এখন ওই পরিমাণ দূরত্ব যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগছে। হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার রুহুল আমিন বলেন, গতকাল গাবতলী থেকে সকাল ৮টায় যে বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায় সেটি দুপুর ১১টায় দাউদকান্দি ব্রিজ এলাকায় গিয়ে যানজটে পড়ে। একইভাবে সকাল সাড়ে ৭টায় এস আর পরিবহনের যে বাস গাবতলী থেকে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ওই বাস সকাল ১০টায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় আটকে থাকে। এ ছাড়া সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে স্বল্প দূরত্বের মিনিবাসগুলো ভেতরে ও ছাদে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও কর্মজীবী নারী-পুরুষ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। যাত্রীদের ভিড়ের সুযোগে অতিরিক্ত ট্রিপও দিয়েছে কিছু বাস সার্ভিস। দুপুরের পর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালগুলোতে মানুষের ঢল নামে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকেও প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন ৩০ থেকে ৫০ মিনিটি দেরিতে ছেড়ে গেছে। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতী সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ছেড়ে গেছে। সিলেটগামী উপবন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের জায়গায় ১টা ১০ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়।

এবার ঈদের পর দুই দিনের হরতাল কর্মসূচি থাকায় অনেকে আগে-ভাগেই ঢাকা ছেড়েছেন। আবার অনেকেই ঈদযাত্রা বাতিল করে দিয়েছেন। অন্যদিকে ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে পরিবহন কোম্পানিগুলো।

এদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল আকস্মিক পরিদর্শনে যান। তিনি দূরপাল্লার বাস সার্ভিসের খোঁজখবর নেন। এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, মহাসড়কের অবস্থা এবার মোটামুটি ভালো। তবুও টানা বর্ষণ হলে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল : ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল গতকালও। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ ছুটে যায় সদরঘাটে। বেশি যাত্রী হওয়ায় এর সুযোগও নিয়েছে লঞ্চ মালিকরা। গতকালও প্রতিটি লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় প্রভাবশালী মালিক ভ্রাম্যমাণ আদালতকেও তোয়াক্কা করছে না। নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো ভাড়া আদায় করছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, আমতলী, চাঁদপুর, পয়সারহাট, লালমোহন, হুলারহাট, টরকি, গলাচিপা ও দৌলতখানসহ বেশ কিছু রুটের ৩২টি লঞ্চের ছাদে যাত্রীবোঝাই হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেলা ১১টার মধ্যে ঘাট ত্যাগ করে। দুপুরের মধ্যে সদরঘাট ত্যাগ করে আরও পাঁচটি লঞ্চ। এসব লঞ্চের ছাদেও যাত্রী ছিল। বিআইডবি্লউটিএ লঞ্চের ছাদে ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করলেও কেউ তা শুনছে না। বুড়িগঙ্গার মাঝখানে নোঙর করে রাখা লঞ্চে নৌকায় করে গিয়ে ডেকের জায়গা দখল করে নেয় যাত্রীরা। সকালে আলোর দিশারী নামের একটি লঞ্চ যখন ঘাটের পন্টুনে এসে নোঙর করে, তখন পুরো লঞ্চটি যাত্রীতে ভরা ছিল। বিআইডবি্লউটিএর এক কর্মকর্তা জানান, এভাবে মাঝনদীতে রাখা লঞ্চে চড়তে গিয়ে গতকাল সকালে সাবু নামে এক যুবক মারা গেছে। এরপরও কারও হুঁশ হচ্ছে না।

নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করে ঈদ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম দেখেন। এ সময় মন্ত্রী অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে না ওঠা এবং লঞ্চের ছাদে ভ্রমণ না করার জন্য যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।

গাবতলী-মহাখালী-সায়েদাবাদ : রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে গতকাল ভোর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও উত্তরের ১৬ জেলার সংযোগ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকালও যানজটের দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীবাহী বাস যতটুকু না চলছে তার চেয়ে বেশি থেমে থেকেছে। সড়কপথের যাত্রীরা মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। ফেরি জটিলতায় এখানে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রুটের জন্য নির্ধারিত বাস ছাড়াও গতকাল মালিকরা অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করেন। এদিকে ঢাকা-মাওয়া রুটের কেরানীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় বিকাল ৪টা থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে অবরুদ্ধ ঘরে ফেরা হাজার হাজার যাত্রী তীব্র দুর্ভোগে পড়েন। এ ছাড়া এক শ্রেণীর পরিবহন মালিক রাজধানীতে চলাচলকারী সিটি সার্ভিসের বাসে দূরপাল্লার যাত্রী তুলছে। সেখানে কোনো অগ্রিম টিকিটের ঝামেলা নেই। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে আসন বিক্রি হচ্ছে। গতকাল কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকার বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ভোর ৫টা থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ভিড় জমিয়েছে কাউন্টারে কাউন্টারে। গাবতলী বাস টার্মিনালে নির্ধারিত সময়ে খুলনাগামী আনন্দ পরিবহনের বাস না ছাড়ায় উত্তেজিত যাত্রীরা টিকিট কাউন্টারে হামলা করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।

কমলাপুর রেলস্টেশন : গতকালও কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ ছিল চরমে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্তঃনগর, মেইল ও কমিউটার সার্ভিসের প্রতিটি ট্রেন বগি ও ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ঘরমুখো মানুষের চাপে সরগরম রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেনের ভেতরে শত শত যাত্রী দাঁড়িয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ ছাদে উঠছেন। কাঁধে ব্যাগ, নানা রকম বাঙ্-পোটরা, কোলে শিশু নিয়ে গলদঘর্ম হয়ে ট্রেন ধরছেন অনেকেই। গতকাল অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেনই সঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে। যেসব ট্রেন আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে সেসব ট্রেনের যাত্রীরা বলছেন, এটা কোনো দেরি নয়, পথে আর দেরি না হলেই হয়। রেল কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় ট্রেন দ্রুতবেগে চালানোও সম্ভব নয়। রংপুর এঙ্প্রেস ট্রেনের যাত্রী লাভলী আক্তার, শিরিন শারমীন ও সুকান্ত জানান, সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রংপুর এঙ্প্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত আসেনি। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খবরা-খবর জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা রেগে যাচ্ছেন। গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, আমি বহুবার বলেছি, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণই আমাদের লক্ষ্য। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

দুই মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি : সড়ক দুর্ঘটনা ও সংস্কারবিহীন সড়কের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গতকাল যানবাহন স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারেনি। এসব মহাসড়কের কোথাও কোথাও মন্থরগতিতে চলতে হয় হাজার হাজার যানবাহনকে। ফলে দিনভর গাড়িতে বসে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। গতকাল রাতে কালিয়াকৈর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের এজি তানিয়া টেঙ্টাইলের শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.