আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরণোত্তর তোষা শিরণি !!



১৬ই ডিসেম্বর আসছে। প্রতি বছরই একবার করে আসে। আমাদের জানিয়ে দিতে যে, আমরা কতো বড় অকৃতজ্ঞ! আমরা সেটা গায়ে মাখি না। লজ্জা আমাদের থেকে কতো আলোক বর্ষ দূরে চলে গেছে- কে জানে! আমরা পুরুষরা লজ্জা পাইনা কারণ, লজ্জা নারীর ভূষন! নারীরা পাইনা কারণ পুরুষের সমান অধিকারের যুগ! আর এভাবেই নির্লজ্জতা, নিমকহারামী,অকৃ্তজ্ঞতা ও বেঈমানিকে নিত্য সঙ্গি করেই আমাদের অদ্ভূত জীবন চলা!! আজব এক দেশে বাস করি আমরা। এক দেশে ছিলো এক রাজা...টাইপ দেশগুলোতেও মনে হয় এই অবস্থা নেই! রাজাকারকে রাষ্ট্রপতি বানাই! স্বাধীনতা বিরধীদের গাড়িতে পতাকা টানিয়ে দেই! মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে ফিরেও তাকাই না।

যদি তাকাই-ও, তার শরীরে দেশদ্রোহিতার গন্ধ পাই। তাকে ফাসি'র সু সংবাদ (!) পর্যন্ত শোনাতে দ্বিধা করি না । মেজর জলিলরা ,মুক্তিযোদ্ধারা এভাবেই যুগে যুগে আমাদের দ্বারা পুরোস্কৃত হয়ে থাকে!!! আমরা ছিলাম পাকিস্তান নামক একটি দেশের খাদ্য। ২৪টি বছর অরা আমাদের ঘাড়ে চেপে রয়েছে । লেবু চিপে রস বের করার মতো বের করে নিয়েছে আমাদের শরীরের যত রক্ত।

স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাসতুকু পর্যন্ত নিতে দেয় নি আমাদের! অনেকটা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছিলো তখন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। এই অবস্থায় রুখে দাঁড়ানো হয়ে পড়েছিলো অনিবার্য। রুখে দাঁড়ালো সোয়া সাত কোটি মানুষ। ( নিরব ও রাজাকারের আনুমানিক সংখ্যা বাদ দেয়া হলো) ২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে নিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ মাস ২২ দিনে ৩০ লক্ষ জীবন এবং ২ লক্ষ সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেলাম সতন্ত্র একটি পতাকা,লাল-সবুজ। অথচ; যাদের জন্য আজ আমরা মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, তাঁরা কিন্তু ভোগছে শ্বাস কষ্টে! ফিরে তাকাবার সময় নেই আমাদের! পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা পা হারিয়ে ঘরে বসে আছে আজ ৩৯ বছর হলো।

থাকুক, আমাদের কী! আমরা আমাদের পায়ে সামান্য ব্যাথা হলে ছুটে যাচ্ছি মাউন্ট এলিজাবেত কিংবা কিং ফাহাদে। বোমার বিকট শব্দে শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে মানুষটি বেঁচে আছে ৩৯ বছর ধরে, মরার মতো। আমাদের কী! আমরা তো আমাদের কানের চিকিৎসায় ছুটে যেতে পারছি আমেরিকায়! আমাদের হলোটা কী!! আবার ফিরে এসেছে ডিসেম্বর। কদর বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৬ই ডিসেম্বর আসবে।

কিছু ফুল দেয়া হবে কিছু পদক বিতরণ হবে কিছু আলোচনা সভা হবে কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্টান হবে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কিছু বিতর্ক হবে এই তো!! জীবিত থাকতে খোঁজ-খবর নেয়ার দরকার মনে না করলেও কিছু মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বা এতিম ছেলের ধরে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে একটি তোষা শিরিণি'র প্যাকেট। যার কেতাবী নাম-মরণোত্তর। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করতাম,- জীবিত থাকতে আমরা তোমাদের খোঁজ নিই নি! খুব যখন বাঁচতে চাইছিলে, আমরা এগিয়ে আসি নি! আর আজ,তুমি যখন নেই, আমরা তোমাকে মরণোত্তর পদক দিচ্ছি! তুমি কি খুব খুশি হয়েছো???

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.