আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালীর মুগ্ধ জননী- রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি

অন্ধকার দেয়ালে তোমার আলো জন্ম দেয় মিথ্যে ছায়াকে.....

‘’আমার সোনার বাংলা...আমি তোমাকেই ভালোবাসি...’’...... নাহ,এভাবে না। ‘ব্যাধিই সংক্রামক,স্বাস্থ্য নয়...’...... না,এটাও হলো না আসলে আমি লিখতে চাচ্ছি আমাদের তথাকথিত দেশপ্রেম আর আমাদের মাঝে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ নিয়ে। কিছুদিন আগে টিভিতে শাহরুখ খানের অনুষ্ঠানটি দেখার পর থেকেই আমার মাথাই এই বিষয় গুলো ঘুরছে। হয়ত আমি একটু বেশি হতাশাবাদি। নাইলে আমার আপন জাত বাঙালি জাতি নিয়ে হতাশায় ভুগার কারন কি?? হ্যা, আমি আসলেই আমার আপন জাতি নিয়ে সন্দিহান।

ভাববেন না আমি আমার নিজের দেশকে নিয়ে হতাশ। এই দেশ আমাদের সব দিয়েছে। উর্বর ভূমি,নান্দনিক প্রকৃতি, সবুজ শ্যামলিমা-সব। কিন্তু এই দেশের জঠরে বেড়ে ওঠা আমরা-এই বাঙ্গালিরা? আমরা এই দেশকে কি দিয়েছি? দেশের ভেতরে অনবরত হাঙ্গামাই শুধু নয়,ভীনদেশে গিয়েও আমরা কলহে লিপ্ত। জননী জন্মভূমিকে শুধু লজ্জাই যেন দিতে পারি আমরা।

শাহরুখের অনুষ্ঠান দেখে খুব আজব একটা ফিলিঙ্গস হলো। মনে হলো দেশটাকে নেপালের মত পরাধীন বানাতে আমরা অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। নিঃসন্দেহে বিগত সব প্রজন্মের চেয়ে আমরাই সর্বনিকৃস্ট বাঙ্গালী। ৫২ সালে পাকিস্তানী জালিমরা আমাদের ভাষা ছিনিয়ে নিয়ে উর্দু বলাতে চেয়েছিল। সালাম-বরকতেরা তা মানেনি,রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আজ আমরা নিজেরাই হিন্দিতে ‘বাত’ করতে পেরে আহ্লাদিত!! ৭১ এ পাক হায়েনারা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নিতে চেয়েছিল। আমাদেরই বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিগুলিকে উচিত শিক্ষা দিয়ে দেশ ছাড়া করেছে। আজ আমরাই ‘ইনভেস্টমেন্টের’ স্বার্থে বাঙ্গালী মেয়েদের বিদেশীদের শোবার ঘরে পৌছে দিই (বাটেক্সপো )। এ লজ্জা কোথায় রাখি? ক্ষমা কর শহীদেরা। আমরা ব্রা-পেন্টি পরা বিদেশিদের নাচ দেখে গদগদ হই,স্টেজে বয় ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ড হয়ে নাচা নাচি করি,কিন্তু ভুলে যাই আমাদের জারি সারি ভাটিয়ালি,আমাদের আপন ঐতিহ্য।

মনে রাখবেন,এগুলো আমাদের সংস্কৃতি নয়। আর অন্যের সংস্কৃতিতে ভোলা জাতির কি হয় জানেন তো? অজগর যখন বিশাল ছাগল খেতে যায়,এক পর্যায়ে না পারে গিলতে,না পারে বমি করতে। তখন মানুষ এসে ইচ্ছামত বেচারা অজগরকে দু’এক ঘা দিতে দ্বিধা করে না। বাকিটা বুঝে নিন। আমার এক বন্ধু খুব ক্ষুব্ধ।

তার ভাষ্য, ইলিয়াস নামক ভদ্রলোক খুব খারাপ কাজ করেছেন শাহরুখের সাথে হিন্দিতে কথা না বলে। শাহরুখের মত ‘গুনী’ কে সম্মান দিতে হলেও বাকিদের মত হিন্দিতে কথা বলা উচিত ছিল। আমি দেখে হাসলাম। ‘গুনী’কে সম্মান?? এ ব্যাপারটা তো কখনও আমাদের মাঝে ছিল না। আমরা কি এক মাহবুব আলম (স্প্রিন্টার) কে সম্মান দিতে পেরেছি? তবে কেন তার পুরস্কারের টাকা মৃত্যুর আগে সে পায় না?? আমরা কি আমাদের দুই মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমানকে যথার্থ সম্মান দিতে পেরেছি?? তবে কেন তাদের মৃত্যুর এত বছর পরেও তাদের নিয়ে সংসদের ভেতর কাদা ছুড়াছুড়ি?? আমরা কখনই সম্মান দিতে জানিনা।

যা করতে পারি তা হল পা চাটা। হ্যা,এটাই সত্য। যারা সেদিন শাহরুখকে দেখে গদগদ হয়ে হিন্দিতে ‘আচ্ছে বাত’ করেছে,তারা আসলে পা চাটতেই উদগ্রিব ছিল। পা চাটার অপূর্ব দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বৈশাখি টেলিভিশন। তারা নাকি স্বাধীনতার চেতনায় না কি যেন।

দিনভর গোটা কতক ‘বিশিষ্ট’ ব্যাক্তিত্ব শাহরুখের গুনকীর্তন করে গেল। ফাকতালে হিন্দি সিনেমার গান। একজন তো বলতে লাগলো, ‘শাহরুখ সবসময়ই খুব সদাসিদে। ছোটবেলা থেকেই সে মাটির মানুষ’!! হাহারে। শাহরুখ তার কত দিনের ইয়ার দোস্ত!! শাহরুখের কি দোষ?? সে তার নিজের সংস্কৃতিই তুলে ধরেছে।

তার নিজের ভাষা হিন্দি। তারা ওভাবেই নাচে,ওভাবেই চলে। লজ্জা আমাদেরই,যারা অপসংস্কৃতি দু হাত ভরে নিতে সদা ততপর। ক্ষমা করো হে মাতৃভূমি। তোমার আর তোমার বীর সন্তান শহীদদের মর্যাদা আমরা রাখতে পারিনি।

কবে যে তোমার পতাকা আমরা হাত থেকে ফেলে হরিয়ে ফেলেছি তা নিজেরাই বুঝিনি। ক্ষমা কর মা!!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।